#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
বৈশাখী আমার বোনসিরাজুল ইসলাম।
বৈশাখী আমার বোন। দুরন্ত বৈশাখের উন্মাদনায় ভরা, মাতাল হাওয়ার মতই সে চঞ্চলা প্রাণবন্ত আর হাসিখুশী। সৌন্দর্য্য সৌকর্যের মোহময়তা তার সারা অঙ্গে। বড্ড নিখূঁতভাবে, অখন্ড অবসরে বড়বেশী সম…
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
বৈশাখী আমার বোন
সিরাজুল ইসলাম।
বৈশাখী আমার বোন। দুরন্ত বৈশাখের উন্মাদনায় ভরা, মাতাল হাওয়ার মতই সে চঞ্চলা প্রাণবন্ত আর হাসিখুশী। সৌন্দর্য্য সৌকর্যের মোহময়তা তার সারা অঙ্গে। বড্ড নিখূঁতভাবে, অখন্ড অবসরে বড়বেশী সময় নিয়ে কারুময় করে ফুটিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। ফলে যে কোন মানুষেরই হিংসে হওয়া স্বাভাবিক বোনের রূপসুধা দেখে। বসন্তের ফুলপাখিরাও লজ্জা পায় তার অনিন্দ্যসুন্দর রূপলাবণ্যের কাছে। বোনের কাজল কালো ডাগরডোগর হরিণচোখে ব্যথার নদী উচ্ছ্বলে থাকে স্বজনের সামান্য কষ্টে। তখন তার চোখে প্লাবিত হয় ভরা বর্ষার নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা। শিপ্রানদীর মত জল থইথই আবেগগুলো নিয়ে সে তখন দশভূজা দুর্গার মতন দুর্গতিনাশিনী হয়ে সামলায় ঘরকন্না। স্বামী সন্তান নিয়ে পয়মন্ত সংসার তার। সুখি সুখি এক গৃহকোণ। অতিথি মেহমান আপ্যায়নে তার ভান্ডার যেন সাক্ষাৎ মা লক্ষীর গৃহকোণ। নিরন্ন ফেরেনা কেউ কোনদিনও বোনের গেরস্থালী আঙিনার দরজা থেকে। বেনোজলে ভেসে আসে কত অচেনা পরগাছা, তবুও নেই তার কোন পরোয়া। স্মিতহাসীর আলতো ছোঁয়ায় সামলায় সে সবকিছু।
নিতান্ত পল্লীবালার মতই বোন পৌষালী অহনা শীতার্ত ভোররাতে উঠে ঢেঁকিঘরে ঢোঁকে। ঢেঁকি পাড় দিয়ে ভারা ভেনে চাল কুটে আটা তৈরি করে। সেই প্রচন্ড শীতেও তখন তার মুখে জমে যায় বিন্দু বিন্দু শ্বেদবিন্দু। হাসিমুখে আঁচলে মুখ মোছে। সকালের সোনারোদ গায়ে মেখে এলোচুলে গোবর নিকোনো উঠোনে মাদুর বিছিয়ে, তাতে সুনিপূণ হাতে আল্পনা আঁকে চালকুমড়ো বড়িতে।
দুপুরের অলস বেলায় দখিনের জানালা খুলে বোন আমার উদাসী দৃষ্টি ছড়িয়ে দেয়। আ-দিগন্ত অবারিত মাঠের বুকেরদ ছেঁয়ে থাকা হলুদবরণ শর্ষ্যের ক্ষেতে। বিমুগ্ধতায় ভরে ওঠে মনপ্রাণ। কবিতার পংক্তিমালায় ভরে ওঠে তার মন। কাব্যর ডিঙি না'য়ে চড়ে সে তখন জলাঙ্গীর তীর ছুঁয়ে ঘুরে আসে। অথবা মেঘে মেঘে স্বপ্ন সাজিয়ে হয়ে যায় সে রূপকাহিনীর " এলিস ইন দ্যা ওয়ান্ডার ল্যান্ড " এর ছোট্ট এলিস। তন্ময়তায় ভরে আসে তার ডাগরডোগর কাজলকালো হরিণ চোখের পাপড়ি। তিরতির আবেশে কাঁপে স্বপ্নগুলো।
নরম হয়ে আসে বিকেলের মরা রোদ। তৈজসপত্তর গুছিয়ে নিয়ে বসে পড়ে বোন আমার রসপুলি, চিতই, ভাঁপাপিঠা, কাস্তেপোড়া অথবা তেলেরপিঠা তৈরিতে। খড়ির আগুনে মাটির হাঁড়িতে ওপাশে টগবগ ফোটে বাসমতী চাল, মশুরের ডাল, ভালোলাগার আবেশে ভরে মন। নিকোনো উঠোনে তখন অজানা বাতাসে টুপটাপ ঝরে পড়ে শ্বেত-শুভ্র শিউলীফুল।
সাঁঝের আকাশে প্রগাঢ় অন্ধকারে দিকচক্রবাল ছেঁয়ে যায়। দূরের মসজিদ মন্দির থেকে ভেসে আসে আযান, আরতীর আরাধ্য সুর। ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে সাঁঝবাতি।
অষ্টমঙ্গলায় জ্বলে ঘিয়ের পিদিম। সে প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে আমার বোনের মুখ। কমনীয়তায় ভরা সে মুখ। বিচ্ছুরিত আলোতে উজ্জ্বল বোনের নাকে মটর-দানার সোনার নাকফুল। বিভা ছড়ানো সে মুখ বড্ড মায়াভরা মনকাড়া। সে মুখ আমি ভালোবাসি।
"ও আমার মনপাখি ময়না / এরচেয়ে বেশী আর ভালোবাসা যায় না!"
আমার সমস্তদিনের নিদ্দিষ্ট সময়ের নিমগ্ন প্রার্থনায় আমি কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, বোনের নামটাকে যপমালা করেঃ-, "সুখি হও, আয়ুস্মতী হও, প্রিয় বোন আমার।"
একজনমের সামান্য এই প্রার্থনাটাটুকু যেন কবুল হয় ; দয়াময়ের অসীমতায়। আমিন। সুম্মা আমিন।
বৈশাখী আমার বোন
©সিরাজুল ইসলাম।
২২-১২-২০২০