সৃষ্টি সাহিত্য যাপনশিরোনামঃ- নিখাদ বন্ধু কলমেঃ- তপন কুমার রায় তারিখঃ- ১৬/১২/২০
সবিতা আর শুভ পাশাপাশি বাড়ীর ছেলে মেয়ে। শুভ সবিতার চেয়ে তেইশ দিনের ছোট। মধ্যবিত্ত এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম,তাই জীবন যাত্রা প্রনালীও এ…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
শিরোনামঃ- নিখাদ বন্ধু
কলমেঃ- তপন কুমার রায়
তারিখঃ- ১৬/১২/২০
সবিতা আর শুভ পাশাপাশি বাড়ীর ছেলে মেয়ে। শুভ সবিতার চেয়ে তেইশ দিনের ছোট। মধ্যবিত্ত এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম,তাই জীবন যাত্রা প্রনালীও একই রকম। লেংটো বেলা থেকে তারা এক সঙ্গে খেলাধুলো করে মানুষ।তখন এতো ইংরেজি মিডিয়ামের চল ছিলো না, অন্তত মধ্যবিত্ত সমাজে। পাড়ারএকই স্কুলে একই ক্লাশে পড়তো তারা। তাদের মধ্যে মারামারি, আড়ি- ভাব সবই ছিলো। একজন আর একজনকে ছেড়ে বেড়াতে পর্যন্ত যেতে না,তাই দুই পরিবার ওদের কান্নাকাটি এড়াতে একসাথেই বেড়াতে যেতেও বাধ্য হতো। জোর করে একবার শুভরা আলাদা বেড়াতে যাওয়ার জন্য শুভ কান্নাকাটি করে জ্বর বাধিয়ে ফেলল।এদিকে সবিতাও কান্নাকাটি করে খাওয়া বন্ধ করে দিল। শুভর বাবা বেড়ানো বাতিল করে ফিরে আসতে পথ পায় না। ওরা ক্লাশ ফাইভে অন্য স্কুলে ভর্তির সময়ও বাড়ীতে জেদ করে একই কো- এডুকেশন স্কুলে দুজনে ভর্তি হলো। তাই স্কুল যাতাযাত একসঙ্গেই করত। একটু একটু করে বড়ো হচ্ছে কিন্তু কৈশরে পা দিয়ে ছেলে বা মেয়ের মধ্যে যে এক মানসিক সংকোচ আসে তা শুভ আর সবিতার মধ্যে এলো না। সবিতার যেদিন প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়, সেদিন ও কথাটা প্রথম শুভকেই বলেছে। শুভও চোখ গোলগোল করে প্রথম দেহতত্ত্বের কথা শুনেছে সবিতার কাছ থেকে। এমনি করে একদিন শুভকেও পাড়ার বাদলদা প্রথম ঘরে ঢুকিয়ে মাস্টরবেশন শেখায়। সে কথাও সে ফিরেই সবিতাকে জানায় এবং এই গর্হিত কাজের জন্য সবিতার কাছে সপাটে চড় খায়। বড়ো হচ্ছে, সেটাও ওরা বুঝতে পারত না,একজন আর একজনের পাশে অনায়াসে ঘুমিয়ে পড়তো। ওদের এই ধরনটা লক্ষ্য করে পাড়ার লোক বা ছেলে মেয়েরা কিছু বলতো না তা নয়। ওরা হেসে উড়িয়ে দিত। ওদের মধ্যে কোন প্রেম হয়নি কিন্তু গভীর ভালোবাসা ছিলো। শরীর শরীরকে ঘটনাক্রমে ছুঁয়ে গেলে ও কারো মন শিহরিত হতো না। দুজনেই দুজনের কাছে জলের মতো পরিস্কার। সব রকম কথাই দুজনের মধ্যে খুব স্বাভাবিক ভাবে হতো -- যেন দুটো মেয়ে বা দুটো ছেলে কথা বলছে। খিস্তি ও দুজনের মধ্যে খুব স্বাভাবিক কথাবার্তার অঙ্গ ছিল। শুভ ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পেয়েও পড়ল না। সবিতার সঙ্গে প্রেসিডেন্সি তে ইংরেজি অনার্স পড়লো। দুই পরিবার ই ধরে নিয়ে ছিলো শুভ আর সবিতা বিয়ে করবে। এই ভেবেই দুই পরিবার নিশ্চিত ছিলো। সবিতার গ্রাজুয়েশনের পর বাড়ী থেকে বিয়ের কথা পাড়ল, সবিতার বাবা শুভর বাড়ীতে কথা বলবে। বিয়েটা তো করুক, তারপর শুভ যবে চাকরি পাবে, তবে পাবেক্ষন। পাড়ার এই নিয়ে যে নানা কথা বলাতো তা বন্ধ হবে বিয়েটা হয়ে গেলে। সবিতা তীব্র প্রতিবাদ করলো, শুভকে ও বিয়ে করবে কেন? শুভ ওর প্রিয়তম বন্ধু, প্রেমিক নয়। সবিতার বাড়ীতো চমকে উঠলো, --এ কি কথা! এতো দিন ধরে ওদের মিশতে দেখা কি ভুল? সবিতার বাবা শুভদের বাড়ী গেলো কথা বলতে একটু।কোথাও কি মান অভিমানের জন্য এই কতা বলছে? শুভর বাবা ময়েরও ধারনা একই রকম ছিল, - -যে সবিতা শুভর বউ হয়েই আসবে। শুভকে ডেকে কথাটা বলতেই শুভ হেসে উঠলো,- সবিতার সাথে তার কোন প্রেমের সম্পর্ক নেই। তারা একান্তই বন্ধু, নির্ভেজাল বন্ধু। সবিতার বিয়ে ঠিক হলো দেখাশোনা করে। এখন সবিতা অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে, আবেগের চেয়ে যুক্তিকে স্থান দেয় বেশী। শুভর জন্য সবিতার প্রচন্ড কষ্ট হবে, কিন্তু বিয়ে টা তো তাকে অনত্রই করতে হবে। শুভর খুব কষ্ট হচ্ছে সবিতা চলে যাবে ভাবলেই, কিন্তু সবিতার যে বিয়ে হবে একদিন এটাও ও ওর জানাই ছিলো।
সবিতার বিয়েতে শুভ প্রচন্ড খাটাখাটি করল,হয়তো খানিকটা ভুলে থাকতেই। বিয়ের পরদিন সবিতা চলে যাওয়ার দিন শুভকে জড়িয়ে ধরে সবিতা প্রচন্ড কান্নাকাটি করল,শুভও ততটাই কাঁদলো। ওর কান্না দেখে সবিতার বরের মনে কেমন একটা খটকা লাগলো। লাগাটাও হয়তো আশ্চর্য নয়। এমনটা তো খুব স্বাভাবিক ও নয়। বউভাতে শুভ যেতে সবিতা আবার একচোট কেঁদেছিল। সবিতার বর জিজ্ঞেস করেছিল,- কে হয়? প্রেমিক। সবিতা আশ্চর্য হয়ে বলেছিল বন্ধু। একান্তই বন্ধু। বিশ্বাস করে নি। বিয়ের পর সবিতার বর তাকে প্রশ্নে প্রশ্নে উত্যক্ত করে দিত।সন্দেহ টা গেড়ে বসেছিল। বারবার সবিতার কললিস্ট চেক করতো। সবিতার পাড়ায় গোপনে খোঁজ নিয়ে দেখেছিল, লোক ওদের মেলামেশার কথা বলছে। একদিন শুভ যখন সবিতার সাথে দেখা করতে আসছিলো, সবিতার বর লোক দিয়ে শুভকে বেদম পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছিল। শুভকে পুলিশ হাসপাতালে দিয়েছিলো। সবিতা জেনেছিল অনেক পরে। শুভ আর সবিতাদের পাড়ায় যায় নি। সবিতাকেও তার বর দীর্ঘ দিন বাপের বাড়ী যেতে দেয়নি।বন্ধুত্বটা বাইরে থেকে শেষ করে দিলেও মনে কোনদিন শেষ হয়নি। নিখাদ বন্ধুত্ব ছিল।