Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#তর্পণ#সর্বানী 
অঞ্জলী আর বিকাশের দুই মেয়ের পর যখন তৃতীয়বার ছেলের আশায় অঞ্জলি মা হলো তখনও বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লোনা।অথাৎ তিনবারের বার ও মেয়েই হলো ।হসপিটাল থেকে ফেরার পর শ্বশুর শাশুড়ী আর আত্মীয় স্বজনের আক্ষেপ শুনে শুনে অঞ্জলী …

 


#তর্পণ

#সর্বানী 


অঞ্জলী আর বিকাশের দুই মেয়ের পর যখন তৃতীয়বার ছেলের আশায় অঞ্জলি মা হলো তখনও বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লোনা।অথাৎ তিনবারের বার ও মেয়েই হলো ।হসপিটাল থেকে ফেরার পর শ্বশুর শাশুড়ী আর আত্মীয় স্বজনের আক্ষেপ শুনে শুনে অঞ্জলী অস্থির।তার উপরে ছোট নাতনীর গায়ের রঙ দিদিদের থেকে চাপা কিন্তু মুখের গড়ন বেশ মিষ্টি। বিকাশ খুব খুশি।কিন্তু মায়ের ভয়ে খুশি প্রকাশ করতে ভয় পায়। একমাত্র ননদের দুই ছেলে থাকাতে ছেলে গর্বে গরবিনী মা এসে প্রায়ই অঞ্জলীকে কথা শুনিয়ে যায় বংশে জল আর বাতি দেওয়ার কেউ থাকবেনা বলে। 


ছোট মেয়েটির নাম বিকাশের ইচ্ছায় রাখা হলো প্রতিমা।ঠাকুমা মুখ বাঁকিয়ে বলেন কানা ছেলের নাম আবার পদ্মলোচন। যাইহোক অঞ্জলী আর বিকাশের স্নেহে তিন মেয়ে বড় হতে লাগলো। বড় দুই নাতনী দাদু ঠাকুমার কিছুটা ভালোবাসা পেলেও ছোট নাতনীকে দাদু ঠাকুমা বিশেষ করে ঠাকুমা একদম সহ্য করতে পারতনা। অঞ্জলী আর বিকাশ মনে মনে কষ্ট পেলেও বাবা মাকে কিছু বলতনা। 


তিন মেয়েই স্কুলে পড়ে, বিকাশ কারখানার ম্যানেজার হয়ে গেছে,বাবা সরকারী অফিসে চাকরী করতেন বলে পেনশন পান।মোটামুটি সংসার ভালোভাবেই চলে যায়।কিন্তু সুখ হয়তো বেশীদিন কপালে ছিলনা। বিকাশ কারখানার একটা একসিডেন্টে মারা যায়। অঞ্জলীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।বড় মেয়ে ক্লাস টোয়েলভে, মেজ মেয়ে মাধ্যমিক দেবে আর ছোটটা ক্লাস ফাইভ। কারখানার থেকে এককালীন সামান্য কিছু টাকা পয়সা পেয়ে শ্বশুর শাশুড়ীর ইচ্ছায় দুই মেয়ের বিয়ের টাকা হিসাবে ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিত রাখতে হয়। শ্বশুর বড় দুই নাতনীর পড়ানোর জন্য কিছু সাহায্য করলেও ছোটজনের জন্য হাত তুলে নিলেন।অঞ্জলী বুঝলো সামনে খুব কঠিন সময়।লড়াইটা ওকে একা লড়তে হবে।অঞ্জলী শ্বশুর শ্বাশুড়ীর আপত্তি সত্যেও সামান্য কিছু টাকা দিয়ে শাড়ির ব্যবসা শুরু করলো নিজের মেয়েদেরকে মানুষ করার জন্য। 


সময়ে থেমে থাকেনা নিজের নিয়মে চলতে থাকে। দুই মেয়ের বিয়ে অঞ্জলী কোনো রকমে দিয়ে দেয়। অঞ্জলীর শাড়ির ব্যবসা আগের থেকে খানিকটা বড় হয়েছে।প্রতিমা এখন কলেজের স্টুডেন্ট পড়াশোনা মায়ের সাহায্যে আর নিজের মেধা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। পাড়ায় খুবই জনপ্রিয় মেয়ে।গান,বাজনা খেলাধুলা সবটাতে প্রথম।কারুর বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবাই খুব ভালো বাসে।ঠাকুমা দাদুর খুব সেবা করা সত্ত্বেও এখনো খুব কাছের হয়ে উঠতে পারেনি।প্রত্যেক মহালায়াতে দাদু আক্ষেপ করে বলতে থাকে সবাই জল পায় আমার এতো হতভাগ্য আমার ছেলেটা জল পায়না

আমি মরলেও জল দেবার কেউ নেই। অঞ্জলীর খুব খারাপ লাগে,সাথে প্রতিমারও। প্রতিমা ঠিক করে মহালায়াতে ও নিজে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে তর্পণ করবে।ওর এইকথা শুনে পিসি, ঠাকুমা দাদু রেগে অস্থির।মেয়ে হয়ে ও তর্পণ করবে এর থেকে অনাসৃষ্টি কান্ড আর কি হতে পারে। কিন্তু প্রতিমা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ।বাবার কথা মনে আছে বাবা যে ওকে খুব স্নেহ করতেন তা ওর মনে আছে।  

প্রতিমা গঙ্গার যায় মহালয়ার ভোরে বাবার তর্পনের উদ্দেশ্য।ঠাকুমা,দাদুর অনেক বাঁকা কথা,পিসির নিষেধ সব কিছুকে উপেক্ষা করে।এক হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে যখন পুরোহিত মশাইয়ের বলা মন্ত্র বলতে থাকে তখন পুব আকাশে সূর্য উঠছে প্রতিমার ঝাপসা চোখে মনে হয় মেঘের রাশির মধ্যে দিয়ে বাবা ওর দিকে তাকিয়ে অনেক আশীর্বাদ করছেন। পরম তৃপ্তিতে প্রতিমার মন ভরে যায়।