Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
ছোট গল্প__(জীবনের গল্প)শিরোনামঃ__দেবিকাবিভা মিত্র ভদ্র
চিঠিটা পড়া শেষ হতেই নিখিলেশ দু-হাতের মুঠোয় সেটিকে দুমরে মুচরে বুকে চেপে ধরে হাউ হাউ  করে কেঁদে উঠলো। বলতে লাগলো দেবিকা! তুমি ঠিকই বলেছিলে। সেদিনকার তোমার …

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন


ছোট গল্প__(জীবনের গল্প)

শিরোনামঃ__দেবিকা

বিভা মিত্র ভদ্র


চিঠিটা পড়া শেষ হতেই নিখিলেশ দু-হাতের মুঠোয় সেটিকে দুমরে মুচরে বুকে চেপে ধরে হাউ হাউ  করে কেঁদে উঠলো। বলতে লাগলো দেবিকা! তুমি ঠিকই বলেছিলে। সেদিনকার তোমার হৃদয় বিদীর্ণ করা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ প্রায় প্রতিটি কথাই আজ অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে।আজ আমি সত্যিই বড় অসহায়। ভীষন একা গো! আমার দুঃখ, যন্ত্রনা, কাতরতা, নিঃসঙ্গতা সবকিছু দেখবার বা বুঝবার মতো আজ আর কেউ পাশে নেই। তোমার সব কটি কথায় আজ বর্ণে বর্ণে সত্য। এই রকম অনেক কথা নিখিলেশ আপন মনে প্রলাপের মতো বলতে থাকে।সত্যিই তো কে শুনবে ওসব কথা! নিখিলেশ এখন যতোই কাঁদুক হা-হুতাশ করুক না কেন যতোই অনুশোচনা হোক একদিন তো ভুল ওর ও ছিল।

দেবিকা তো একজন ভুলিভালা সাদামাটা মেয়ে ছিল। সাধারণ পরিবারের আর পাঁচটা মেয়ের মতো ওর ও স্বপ্ন ছিল সুখে ঘর কন্যা করার। দুজনে ভালবেসেই তো বিয়ে করেছিল।বহু বছরের পুরোনো প্রেম ছিল ওদের দুজনকার। অনেক ঝড় ঝাপটা সামলে শেষ পর্যন্ত ওদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর বেশ ভালই চলছিল ওদের দাম্পত্য জীবন। সবটাই বেশ ঠিকঠাকই ছিল।দেবিকা নতুন সংসারে এসে শোশুর বাড়ির সকলকেই বেশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিল। বাড়ির প্রত্যেকেই ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। দেবীর মতো রূপ ছিল বলেই হয়তো এই রকম নাম রাখা হয়েছিল কিনা অবশ্য জানিনা।

      নিখিলেশের অবশ্য বরাবরই একটু আত্ম- অহঙ্কার এবং মেজাজি স্বভাব ছিল। একটুতেই রেগে যেত। আসলে ওরা চিরটাকাল খুব অবস্থাপন্ন পরিবার। সুতরাং পয়সার গরম তো একটু থাকবে বৈকি! তবে তাতে ওদের দুজনের প্রেমে কখনো ভাঁটা পড়েনি। কিন্তু হঠাৎ করে কি যে হলো, বিয়ের প্রায় ৫/৬ বছর পর থেকেই নিখিলেশ কেমন যেন একটু একটু করে পাল্টে যেতে লাগলো। কারণ অকারণে দেবিকাকে সন্দেহ করতে লাগলো। সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে বিরাট আকার ধারন করত।সহজ কথাটাকে নিয়ে জিলিপি পেঁচাতো। উঠতে বসতে নানা খোটা শুনতে হোতো। হঠাৎ করে ওর জীবনে এভাবে অশান্তি নেমে আসাটা বোধহয় নিজেও বুঝে উঠতে পারছিল না।

বড়লোক জামাইয়ের মন রক্ষা করতে এবং একমাত্র মেয়ের সুখের কথা ভেবে দেবীকার মা বাবা ও অনেক কিছুই মেনে নিত। সাধ্যমত মন যুগিয়ে চলার চেষ্টা করতো। কিন্তু তাতে ও কোনো ফল হোতো না। দেবিকা  এসব আর কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত সে অতিষ্ঠ হয়ে ডিভোর্স নিল। অবশ্য শোশুর বাড়ির কেউই এমনটা চায়নি। বাবা মা ও অনেক করে বুঝিয়েও আর চিড়ে ভিজতে চায়নি। আসলে অপমানে অভিমানে সে যে একটু একটু করে ভাঙতে বসেছিল। তাই যতোই জোড়া তাপ্পি লাগানোর চেষ্টা করুক না কেন সেই আগের মতো পূর্ণতা কি আর পায়? দেবিকা কাজের ফাঁকে কখনো বা নির্জনে একাকি বসে ভাবতো আর গুমরে গুমরে কাঁদতো। এতো গুলো বছর কেটে গেলো, নিখিলেশ তাকে ভালোবাসার ফল স্বরূপ একটি সন্তান ও দিতে পারলো না। সে মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায় যে ভাগ্যিস তার কোনো পিছুটান নেই।

যাক , ওসব পুরানো কাসুন্দি ঘেটে আর কি লাভ! এই বেশ ঠিক আছে। বিভিন্ন সেবা মূলক কাজের মধ্যে সে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে। তাতে অনেক শান্তি ও আনন্দ আছে, সন্মান আছে। এই ভাবেই সে বাকি জীবনটা ও কাটিয়ে দিতে চায়। কারণ সে জানে , মেয়েদের এ সমাজে চিরকালই দূর্বল করে রাখা হয়েছে।তারা যেন পুরুষের হাতের পুতুল। তাদের ইচ্ছামতো যখন যেখানে খুশি নাচালেই হোলো। নাহ্ ! দেবিকা এটা কিছুতেই মানতে নারাজ।ওসব দিন এখন আর নেই। অনেক আগেই সে সব ঘুচে গেছে।আজ সে চোখে আঙুল দিয়ে সেকথা বুঝিয়ে দিতে চায়। এদেশের নারীরা চিরটাকাল সংগ্রাম করেই বেঁচে এসেছে। তার ও গর্ব হয় যে সেও একজন ভারতীয় নারী, বাংলার নারী। সেই সংগ্রামী রক্ত যে তার শরীরেও বয়ছে। তাই কারো কাছে কোনো মতেই অতসহজে সে হার মানতে চায় না। তার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন পৃথিবীর সমস্ত নারীদের উপর থেকে অত্যাচারের এই কালো ছায়া ঘুচবেই ঘুচবে। সমাজ এখন অনেক বদলে গেছে। তাই নতুন নতুন নিখিলেশরা যতোই গর্জে উঠুক না কেন হাজার হাজার দেবিকারা এই ভাবেই লড়াই করে বেঁচে থাকবে চিরটাকাল, চিরন্তন।