Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

থলি ভর্তি কুৎসা আর ব্যাক্তিগত আক্রমণ কি হতে চলেছে একুশের নির্বাচনে জয়ের হাতিয়ার

তরুন চট্টোপাধ্যায়রাজনিতীতে দলবদলের মেলা যে শুরু হয়েছে তাতো আর নতূন করে লেখার কিছু নেই। বরং নতূন করে লেখা লিখতে হচ্ছে রাজনৈতিক ময়দান থেকে যে সমস্ত শব্দ উঠে আসছে তা নিয়ে । আর এই সব শব্দ বন্ধ মনি মুক্তোর মতো আচড়ে পড়ছে রাজনিতীর আঙিনা…

 


তরুন চট্টোপাধ্যায়

রাজনিতীতে দলবদলের মেলা যে শুরু হয়েছে তাতো আর নতূন করে লেখার কিছু নেই। বরং নতূন করে লেখা লিখতে হচ্ছে রাজনৈতিক ময়দান থেকে যে সমস্ত শব্দ উঠে আসছে তা নিয়ে । আর এই সব শব্দ বন্ধ মনি মুক্তোর মতো আচড়ে পড়ছে রাজনিতীর আঙিনায় । যা পুরানো দিনে এভাবে ছিল না। থাকলেও তা দু একজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আর জনগন জানতেন এরা মাঠে নামলে এসব বলবেনই । কিন্তু সিংহভাগই ছিলেন তাত্ত্বিক নেতা। যাদের বক্তব্য শুনতে মানুষ আসতেন বহূ দূর দূরান্ত থেকে। কিন্তু কি আর করা যাবে সে রাম ও নেই,নেই সে অযোধ্যার ভূমি। এখন সব মিলে মিশে একাকার ।

একুশের ভোট ঘিরে ভালো বক্তব্য শুনতে হলে অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে বসা ছাড়া আর কোন উপায় তো চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে না। ফলে সেই ব্যক্তি আক্রমণ ও নানা খেউড় কথাবার্তা শুনতে শুনতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন ভোটারেরা। সে কি তৃনমূল বা কি বিজেপি।শক্তিশালী দুই দলের কথা লিখলাম । বাকিরাও এই দোষে দুষ্ট । কিন্তু যেহেতু এরা প্রচারে সে রকম মাইলেজ পাচ্ছেন না মিডিয়াতে তাই তাদের সব কথা জনসমক্ষে আসে নি। কিন্তু বিজেপি ও তৃনমূল দুই শক্তি বার বারই একে অপরকে আক্রমনের কেন্দ্র বিন্দু করতে গিয়ে নানা কথা বাজছে কানে।

কেউ অবশ্য বলছেন বিদ্যাসাগরের দেশের মানুষ তাই কটু কথা বলবো না । বলতেই পারেন এসব। কিন্তু পাল্টা আক্রমণ তো চলছেই। এমনকি রাজনিতীর ময়দানে ব্যাক্তিগত আক্রমণ করছেন না এমন নেতা তো খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে উঠছে। অথচ কেউ হয়তো নাম করছেন কেউ করছেন না। কিন্তু সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে।

দল বদলের আগে একরকম কথাবার্তা আবার দল বদলের পর আর এক। ফলে প্রতিনিয়ত মিডিয়াকে সজাগ থাকতে হচ্ছে কোন নেতা কোথায় কার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন। আবার সেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গি ঠিক কেমন। আবার আক্রমনকারী উদ্দেশ্যে তিনি কি বললেন।। ফলে রোজই চলছে এই নিয়ে বিতর্ক ।

অবশ্য বলতে পারেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো পাঁচটি জিনিসের মতোই রাজনৈতিক ময়দানের ভাষাতেও বদল যে ঘটবে তা অবশ্যম্ভাবী ।তবে তা মাঝে মাঝেই সব সীমাবদ্ধতা কে যে ছাড়িয়ে যাচ্ছে সেখানেই আপত্তি । সব কিছুই যদি লিমিট ছাড়িয়ে যায় সেখানে বাঁধ দেওয়া যাবে কি করে। ফলে সমুদ্রের স্রোতের মতো প্রতিনিয়তই ব্যাক্তিগত আক্রমণ ও কটু শব্দ ঢুকে পড়ছে বাংলার রাজনিতীর উঠানে। আর সেখানে অমর্ত্য সেন থেকে রবীন্দ্রনাথ কেউই যে বাদ যাচ্ছেন না। বলতে হবে তা বুঝি আর না বুঝি। আর সেকথা বলতে গিয়ে নোবেল জয়ীর ভাগ্যে জমি মাফিয়ার মতোই শব্দ চলে আসছে।

কোথাও বিরোধী দলে যাবেন এমন আঁচ করে বলা হচ্ছে ওর কি ক্ষমতা দল না থাকলে আলু বেচতো। আবার কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রীর উঠানে পদ্মের চাষ করতে চাইছেন।

তোলাবাজ, মাফিয়া ,গুন্ডা এসব শব্দ তো এখন রাজনিতীর অভিধানে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে ।চোর ,বদমাইশ, লম্পট এসব তো আছেই।

আজকের রাজনিতীর ময়দানে হাতে মাইক নিয়ে অভিনেতার ঢঙে একবার মঞ্চের এদিক আর ওদিক করাটা এখন নতূন স্টাইল।রাজনীতি যে রঙ্গমঞ্চ নয় একথা বলবেন কে। যাত্রার ঢঙে একই কথা বার বার বলে হাততালি কুড়ানো এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ।

আসলে তথ্য সমৃদ্ধ বক্তব্য এখন আর বলা বা শ্রোতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বারে বারে।সস্তা চটকের পিছনে দৌড়াচ্ছেন প্রায় সকলেই। এছাড়া বিভিন্ন পদে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কে নিয়ে যে যত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন তিনি তত হাততালি কুড়াচ্ছেন। তিনি সব সভা থেকে ডাক পাচ্ছেন। বাজার দর তাঁর ই বেশি।ফলে কে আর খেটেখুটে ভাল তথ্য সমৃদ্ধ বক্তব্য তৈরি করতে যাবেন।আসলে তো হাততালি কুড়ানোটাই আজকের রাজনিতীর মূল অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে । ফলে দিশাহীন বক্তব্য শুনতে শুনতে জনগন ও ভুলতে বসেছেন তাত্ত্বিক বক্তব্যের সুফল।

আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ঝুলি প্রতিদিনই ভারি হচ্ছে সব দলের থলিতেই।

বহিরাগত, মীরজাফর, গদ্দার, তোলাবাজ, ভাইপো,ভাতিজা কি নেই বাংলার একুশের নির্বাচন কে ঘিরে। বাবুসোনা, বাঘছাল পড়া বিড়াল আরো কতকি।কিন্তু নেই দিশা, নেই ইস্তাহার, নেই ভবিষ্যত উন্নয়নের রুপরেখা । নেই সঠিক মূল্যায়ন । ফলে ভোট দাতাদের অনেকেই ঠিক বুঝতে পারছেন কে আসল কে নকল।ইতিমধ্যেই তৃনমূলের বেশ কিছু নেতা মন্ত্রী মেলার মাঠে বিজেপি দলে। আবার বিজেপি থেকে তৃনমূলে । বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁর সহধর্মিণী সুজাতা (অবশ্য ডিভোর্স মামলা চলছে)তো তৃনমূল দলে যোগ দিয়ে বললেন বিজেপি তো এখন বি টিম তৃনমূলের ।ফলে এ টিমেই যোগদান করলেন।

নিতী হীনতায় ভুগছে বিজেপি দল।নিজেদের সংগঠন কে মজবুত করার লক্ষের থেকেও তারা এখন তৃনমূল দল ভাঙতেই বেশি উৎসাহী ।ফলে নব বিজেপি ও আদি বিজেপির সংঘাত সন্মুখ সমরে মুখোমুখি ।

আবার কেউ বলছেন রবীন্দ্রনাথের জন্ম স্হান জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়ির পরিবর্তে শান্তিনিকেতনে ।আবার ক্ষুদিরাম বসুর মতো বিপ্লবী নাকি ক্ষুদিরাম দাস।কি চলছে রাজনিতীর ময়দান ঘিরে।পুরানো নানা গল্প তো আমাদের জানা।এছাড়া ও রাজনিতীতে জ্ঞানি মানুষের মুখ দিয়ে ও বেরিয়ে আসছে মূর্খ শব্দ টি বিরোধী দের উদ্দেশ্যে বার বার ।ফলে বোঝা যাচ্ছে রাজনিতীর উঠানে সত্যি সত্যিই কালো ছায়া ফুটে উঠছে।

বড় কষ্ট ও দুঃখ হয় এই সব কান্ডকারখানা দেখতে দেখতে।তবে কি আমরা রাজনিতীর ময়দান থেকে শিক্ষণীয় কিছু আর কি পাবো না।বিরোধী হলেই কি ভালো মানুষ কেও এইসব কটু শব্দ হজম করতে হবে।অথচ কিছুদিন আগেও এসব ছিল না।এমন অনেককেই দেখা গেছে বিরোধী দের প্রশংসা করতে।কিন্তু আজ সে সব মেঘে ঢাকা তারা।বিধান চন্দ্র রায় বিরোধী জোতি বসুকে কি চোখে দেখতেন সে সবই কি এখন গল্পের বই এর আলমারিতেই তোলা থাকবে।ঝেড়ে মুছে দেখবার কি কোন প্রয়োজন নেই।

আসলে রাজনীতি মানে স্রেফ বিরোধী কে গালিগালাজ ।এটি কি রকম শালিনতা।

অবশ্য সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষা থেকে শুরু করে সমাজের সর্ব স্তরেই একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির হাওয়া বিরাজ করছে।সেটি ভালো কি মন্দ সে বিচার হচ্ছে না।ফলে দল বদল এখন মুরিমুরকির মতো।বিরোধী পক্ষ মানেই শত্রু ।তাই তাঁর প্রতি যে কোন ভাষাই প্রয়োগ করা যেতে পারে।এমনকি প্রশাসনের ও ছাড় নেই এই সব কটু মন্তব্য থেকে।

পুলিশ তুমি যতই মারো মাইনে তোমার একশো বারোর মত শ্লোগান এখন দেওয়ালে দেখা যায় না।দেখা যায় দলদাস বা ক্রীতদাসের মতোই শব্দ ।প্রিয়াকে আমার কেড়েছিস তোরা ভেঙেছিস ঘরবাড়ি ।না এসব উধাও ।তার পরিবর্তে এমন মার মারবো ব্যান্ডেজ বাঁধবার জায়গা পাবি না ।শ্মশানে নিয়ে যাবার লোক থাকবে না।

আরো কত কথা রাজনিতীর অঙ্গনে ।প্রতিদিনই ফুল ফুটছে নানা কটু বাক্যের।

তবে কি বাংলার সংস্কৃতি তে আজ এইসব শব্দ মালাই স্নান নিয়ে নিলো পাকাপাকি ভাবে।আর কি আমরা সংসদীয় গনতন্তের সেই সুমধুর রুপ দেখতে পাবো না।আর কি বক্তব্য শুনতে পাবো না তাত্ত্বিক নেতাদের।

রাজনীতির ময়দানে শিক্ষিত রুচিসম্মত মানুষ তো আজও আছেন। তবে কেন থলি ভর্তি কুৎসা আর ব্যাক্তিগত আক্রমণ জয়ের হাতিয়ার । বদল কি সম্ভব নয়।

ভবিষ্যত ই বলবে সে কথা।