শতাব্দী প্রাচীন তমলুকের বারুনী মেলা শুরু হলো আজ থেকে । এই মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক লোকো কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। এরূপ এক কাহিনী হল পুরা কালে প্রজাপতি দক্ষ অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন সেই যজ্ঞ উপলক্ষে সমস্ত দেবদেবীকে তিনি আহ্বান জানিয়েছি…
শতাব্দী প্রাচীন তমলুকের বারুনী মেলা শুরু হলো আজ থেকে । এই মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক লোকো কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। এরূপ এক কাহিনী হল পুরা কালে প্রজাপতি দক্ষ অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন সেই যজ্ঞ উপলক্ষে সমস্ত দেবদেবীকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন একমাত্র মহাদেব মহাদেবের শ্বশুর ছিলেন দক্ষ। নানা কারণে দক্ষ তাকে অপছন্দ করতেন । সেই জন্য যজ্ঞে মহাদেব কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যজ্ঞের কথা জানতে পেরে জামাত-শিবের যেমন অপমানিত বোধ করলেন তেমনি দক্ষকন্যা সতী মাতা মনে পিতার এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ হলেন। সতী বিনা নিমন্ত্রণে যজ্ঞ উপলক্ষে পিতার গৃহে উপস্থিত হলেন । এদিকে যজ্ঞস্থলে সতীমাতা কে দেখতে পেয়ে যক্ষ মহাদেবের নিন্দা করতে শুরু করলে প্রতি নিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী যজ্ঞস্থলে দেহ ত্যাগ করলেন। এদিকে সতীর ফিরতে বিলম্ব দেখে মহাদেব তার সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। দক্ষের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সতীকে মৃত অবস্থায় দেখে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে দক্ষের মুন্ডচ্ছেদ করলেন কিন্তু আশ্চর্য দক্ষের কাটা মুণ্ডটি মহাদেবের হাতে আটকে রইল। মহাদেব বারবার ফেলার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হলেন। এরপর তিনি সতীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েেপৃথিবী পরিক্রমনেেের র জন্য বেরিয়ে পড়লেন । প্রলয় নৃত্য মত্ত মহাদেব কে থামানোর জন্য ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের সাহায্যে সতী মাতার দেহকে টুকরো টুকরো করে কাটতে থাকলেন। সতীর দেহের খণ্ডিত অংশ যেখানে যেখানে পড়েছে সেই সব স্থানে সৃষ্টি হয়েছে এক একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র । ৫১ টি সতীপীঠ । এদিকে ব্রাহ্মণ হত্যাজনিত পাপের ফল স্বরূপ দক্ষ মুণ্ড মহাদেবের হস্তচ্যুত না হলে তিনি বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন ।
বিষ্ণুদেব মহাদেব কে উপদেশ দিয়ে বললেন-- যেখানে গমন করলে জিভ, অল্পকালের মধ্যেই পাপ মুক্ত হয়, সকল পাপ বিনষ্ট হয় আপনাকে সেই স্থানের কথা বলব , এই বলে তিনি যে স্থানের বিবরণ করলেন ভারতবর্ষের দক্ষিনে তাম্রলিপ্ত নামে মহা পুরীতে গূঢ় তীর্থ আছে যেখানে স্নান করলে লোকে বৈকুন্ঠে গমন করে । অতএব আপনি তীর্থ তীর্থ দর্শন এর উদ্দেশ্যে সেখানে যান। বিষ্ণুর উপদেশ শিরোধার্য করে মহাদেব তাম্রলিপ্তের উদ্দেশ্যে রওনা হন ।পৌষ সংক্রান্তির দিন তিনি তাম্রলিপ্ত উপস্থিত হয়ে তমলুকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বর্গভীমা মায়ের মন্দির ও জিষ্ণু হরির মন্দিরের মধ্যবর্তী ক্ষুদ্র এক সরোবরে অবগাহন করে স্নান করায় তার হাত থেকে দক্ষের মাথা খসে পড়ল । সেই থেকে তাম্রলিপ্ত কপাল মোচন তীর্থ রূপে খ্যাতি লাভ করেছে । মহাদেব দক্ষ মুণ্ড হস্তচ্যুত হওয়ার পর বললেন কপাল মোচনের স্নান করে জগৎপতি ও বর্গভীমা মায়ের মুখ দর্শন করলে আর পুনর্জন্ম হয় না। এইভাবে তাম্রলিপ্তের কপাল মোচন তীর্থ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো । এই ঘটনা ব্রম্ভ পুরানে উল্লেখ রয়েছে।
কালির গ্রাসে কপাল মোচন সরোবর বর্তমানে বিলুপ্তি হলেও রূপনারায়ণের তীরে উত্তর চড়া সংকরআরা খাল সংলগ্ন একটি বাঁধানো পুকুরে স্নান সেরে গঙ্গাদেবীর নিকট পুজো নিবেদন করে পুণ্যার্থীরা নিজেদের ধন্য মনে করেন ।
বারুণী উপলক্ষে প্রায় সাত দিন ধরে মেলা বসে এখানে মেলা উপলক্ষে প্রচুর দোকানপাট বসে পার্শ্ববর্তী জেলা হাওড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে দোকানদাররা ব্যবসার জন্য এখানে ভিড় জমান এবারে করো না আবহের রেশ ধরে সমস্ত রকম করণা প্রটোকল মেনি আজ উদ্বোধন হলো একান্নতম বারুনী মেলা ১৪ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এই মেলা চলবে মেলাতে রয়েছে মরণোত্তর দেহ দান ও চক্ষু চক্ষুদান অঙ্গীকার আবৃত্তি প্রতিযোগিতা নৃত্য প্রতিযোগিতা সঙ্গীত মিউজিক্যাল চেয়ার চিত্রাংকন পুতুল নাচ বাউল গান ইত্যাদি নানান বিচিত্র সাধের অনুষ্ঠান।
তরুণ ইতিহাস গবেষক জয়দীপ পন্ডা বলেন, তমলুকের বারুনী মেলা বহু প্রাচীন । বহু মানুষ পুণ্য অর্জনের জন্য পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন রূপনারায়ণ নদীতে। স্বামী সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় নারীরা কপাল মোচন সরোবরে স্নান সেরে গঙ্গা মায়ের চরণে অঞ্জলি দেন এমনকি সন্তান যাতে জলে ডুবে অকালে প্রাণ না হারায় তার জন্য জোড়া হাঁস ডিম নিবেদন করেন ।দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার লোক মায়ের দর্শন এখানে হাজির হন চলে সারাদিন ধরে নাম সংকীর্তন পূর্বে বহু সাধু-সন্ন্যাসীরা এখানে ভিড় জমাতে এখন অবশ্য তা দেখতে পাওয়া না গেলেও হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।