Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপনশিরোনাম- বৃদ্ধাশ্রমকলমে-পাপাই দাস_____________১০/১/২০২১
সাদা পাতলা চাঁদর দিয়ে ঢাকা তার শরীর, বয়সের ভারে তিনি এখন আর আগের মতন চলাফেরা করতে পারেন না, দুচোখ ভরা স্বপ্ন গুলো কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসে তার দুটো চোখের পাত…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

শিরোনাম- বৃদ্ধাশ্রম

কলমে-পাপাই দাস

_____________১০/১/২০২১


সাদা পাতলা চাঁদর দিয়ে ঢাকা তার শরীর, 

বয়সের ভারে তিনি এখন আর আগের মতন চলাফেরা করতে পারেন না, দুচোখ ভরা স্বপ্ন গুলো কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসে তার দুটো চোখের পাতায়, 

মায়া মমতায় স্নেহে বড় করে তুলেছিলেন তার সোনার টুকরো ছেলেটাকে, কতই না স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি তার ছেলেকে নিয়ে, 

আজ সব পড়ে আছে ভগ্ন হৃদয়ের কারাগারে, 

বার্ধক্যজনিত কারণ তাকে এতটাই দূর্বল করে দিয়েছে যে, চাইলেও আজ তিনি ঠিক মতন কথা বলতে পারে না,সারা শরীর যেন তার আজ যন্ত্রণার আতর-ঘর, সেবা সুস্থতা করার জন্য কোন লোকও নেই। 

দুবেলা দুমুঠো যা কপালে জোটে খেয়ে নেন, টেবিলে প্লাস্টিক ভর্তি ঔষুধ গুলো পড়ে আছে, সময় করে ঔষুধ গুলো দেওয়া মতন কেউ নেই। 

একাত্বিতের জীবনের বসবাস যেন তাকে আরও দূর্বল করে তুলেছে। 


স্বামী মারা গিয়েছে বিগত দশ বছর হলো, একমাত্র আপন মানুষটা এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে কোনদিন ভাবতেও পারেননি তিনি, চনমনে ছিলেন  কোন রকম রোগ ছিল না তার স্বামীর শরীরে। 


কিন্তু সেদিন তার ছেলের সাথে রাগারাগি মাঝে এতটাই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন যে শরীরটা খারাপ হয়ে যায়, চিকিৎসালয়ে যাওয়ার আর সুযোগ দেননি, তার আগেই সব মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন  চিরনিদ্রায়। 

কঠিন এই জীবনের একমাত্র ভালোবাসার মানুষটিও আজ তার পাশে নেই, নিয়তির কাঠগড়ায় কে দোষী কে নির্দোষ তা বিবেচনা করারও হয়তো সময় নেই আর, 

একটিমাত্র ছেলে তাও  সঙ্গে নেই, জীবনের এই একাত্বিতের প্রবাস যে সবকিছুকেই হার মানিয়ে যায়, পরিত্যাক্ত এই মনের যন্ত্রণা গুলো ক্রমশই বেড়ে যায়। 


যে ছেলেকে স্নেহে যত্নে  সাবলীলভাবে বড় করে তুলেছেন, পড়াশুনা করিয়ে মানুষের মতন মানুষ বানিয়েছেন সেই ছেলে নেই  তার পাশে। 

জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার চাহিদায় ছেলের  প্রতিদানের বিনিময়ে জুটেছে একরাশ অবহেলা। 


সেই চেনা পরিচিত স্বামীর ঘর ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাকে, সেখানে নাকি বিশাল বড় এক ফ্লাট তৈরি হচ্ছে,তার ছেলে আজ মস্ত বড় ইঞ্জিনিয়ার, ছেলের তত্ত্বাবধানে সেই বিশাল ফ্লাটের কাজ এখনো নাকি চলছে, ছেলে এখন আর খোঁজ রাখেন না, হয়তো বা ব্যস্ততার চাপে জন্মদাতা মাকে সে গিয়েছে ভুলে, নির্দ্বিধায় মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন আজ তার মনে ঘুরপাক খায়, নিজেকে শান্তনা দেওয়া মতন কোন ভাষা হয়তো তিনি আর খুঁজে পান না। 


বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হৃদয়, চেয়ে থাকেন ছেলের আসার পথ চেয়ে, বৃদ্ধাশ্রমের সেই সবুজ ঘাসের গলিচা পড়া ফুলে বাগানের সামনে শত অপেক্ষায় তিনি  আজও দাড়িয়ে থাকেন, তার ছেলের একটি বারে জন্য আসার অপেক্ষায়  ........ 

হাজারও প্রশ্নের ভীড়ে শত অনাকাঙিক্ষত মনে প্রশ্ন জেগে যায় তার , ছেলে কি আসবে একটি বারে জন্য? 

সেই বৃদ্ধশ্রমের  সবুজ ঘাসের গলিচা পড়া বাগানে তার মা কে একটি বার দেখতে, প্রশ্নের আড়ালে প্রশ্ন থেকে যাবে হয়তো মনে,

‌ঝাপসা হয়ে গেছে তার চশমার ফ্রেমটি, রোজ  দাড়িয়ে থাকেন,  আজও তিনি প্রতীক্ষা কে যান,  সেই পথের দিকে  তাকিয়ে . ....... 


_____পাপাই    ১০/১/২০২১