Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#সৃষ্টি সাহিত‍্য যাপন #গল্প_ভালোবাসার_জয়#কলমে_মৌসুমী চ‍্যাটার্জী
মাহি ও দিয়া সেই ছোট্টবেলাকার প্রানের বন্ধু। পাশাপাশি বাড়িতে থাকত। একই স্কুলে পড়া সেই মাধ্যমিক দেওয়া পর্যন্ত। এরপর দিয়ার বাবার কলকাতায় ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ায় ওদের বন্ধ…

 


#সৃষ্টি সাহিত‍্য যাপন 

#গল্প_ভালোবাসার_জয়

#কলমে_মৌসুমী চ‍্যাটার্জী


মাহি ও দিয়া সেই ছোট্টবেলাকার প্রানের বন্ধু। পাশাপাশি বাড়িতে থাকত। একই স্কুলে পড়া সেই মাধ্যমিক দেওয়া পর্যন্ত। এরপর দিয়ার বাবার কলকাতায় ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ায় ওদের বন্ধুত্বে একটু দূরত্ব বাড়ল।

মাহি স্থানীয় কলেজেই পড়তে থাকল। আর দিয়া কলকাতার যোগেশ চন্দ্রে ভর্তি হলো। এখন সবাই যে যার মতো ব‍্যস্ত নিজেদের কেরিয়ার নিয়ে। 

মাহির খুব আশা ছিল যে ও কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। একদিন ও এই মনের কথাটা ওর বাবাকে ভয়ে ভয়ে বলেই ফেলল।

প্রথমে ওর বাবা পলাশবাবু কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। একটা মাত্র মেয়ে, তায় দিনকাল ও ভালো নয়। বাড়ি ছেড়ে থাকবে কিভাবে। 

তখন ওর মা শোভাদেবী বুদ্ধি দেন -"আরে চিন্তা করছ কেন? তোমার দিদি তো কলকাতায় থাকে, দিদিকে বললে, সে বরং খুবই খুশি হবে দেখো। বড়দি আর জামাইবাবু  তো সেই একাই থাকে অত বড় বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পরে। আমি ফোন করে দিদিকে জানাই"।

বাহ দারুন আইডিয়া দিয়েছ তো মা, এটা তো আমার মাথাতেই আসেনি বলেই প্রায় লাফিয়ে ওঠে মাহি। আর মাকে ধরে খুব আদর করতে থাকে।

ওরে ছাড় ছাড় দাড়া তোর পিসিমনিকে ফোন করে জানাই।

এরপর মাহির বাবা,মা মাহিকে কলকাতায় ওর পিসিমনির বাড়ি রেখে আসে ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়ে ওনারা ফিরে যান।

মাহি ও মনের আনন্দে ক্লাশ করতে থাকে। একদিন ক‍্যান্টিনে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, হঠাৎই পেছন থেকে কেউ যেন ওর নাম ধরে ডেকেই চলেছে, গলাটাও খুবই চেনা চেনা মনে হলো ওর, তাকিয়ে দেখে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে দিয়া। ও পুরো চমকে যায়। দুজনেই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে এবং দুজন দুজনকেই জড়িয়ে ধরে।

আবেগে ভেসে যায় দুই বান্ধবী। এতোদিন পর দেখা যে। দিয়া বলে তুই এখানে?

আমি তো এখানেই ভর্তি হয়েছি জানায় মাহি। কিন্তু তুই  এখানে?

আরে আমিও তো এখানেই ভর্তি হয়েছি। 

ওমা তাই নাকি!! উফফ দারুন মজা হবে বল এবারে। কতোবছর পর দেখা আমাদের, কতো কথা জমে আছে জানিস মনের ভেতরে।

হাসতে হাসতে বলে মাহি তাই,  এইতো এসে গেছি আর চিন্তা নেই তোর। মনের কথা উজাড় করে বলিস তবে।

ওহ হো দেখেছিস আমার কান্ড তোকে পেয়ে ভুলেই গেছি যে, একজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছি।

কাকে রে?

দাড়া তোর সাথেও আলাপ করে দিচ্ছি, বলেই টানতে টানতে মাহিকে নিয়ে যায় দিয়া।

সরি সরি আয়ুষ এক্সট্রেমলি সরি। আসলে মাহিকে এতোদিন পর দেখে আমি না তোমার কথা একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।

আরে না ঠিক আছে, হতেই পারে বলে আয়ুস।

এই যে এটা হচ্ছে আমার সবচেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড.....

হাসতে হাসতে বলে আয়ুষ জানি মাহি তাইতো?

শুনে মাহি চমকে ওঠে। 

তাই দেখে আয়ুষ বলে চমকাবার কিছু নেই,, আমি এই কবছরে এতো শুনেছি তোমার কথা যে তোমাকে আমার জানা হয়ে গেছে।

তাই শুনে দিয়া হেসে ফেলে। আচ্ছা খুব হয়েছে। দাড়া ওর   পরিচয়টা দিই তোকে ।  ও হচ্ছে আমার খুবই প্রিয় বন্ধু আয়ুষ রায় বুঝলি। ও আমার ক্লাসমেট।

দিয়া আর আয়ুষ কমার্সের স্টুডেন্ট ওদিকে মাহি আর্টসে ভর্তি হয়েছিল।

যাইহোক সেদিন দিয়া আর ক্লাশ করতে দেয়নি মাহিকে। ওরা ঘুরতে চলে যায়, সারাদিন ঘুরে বাইরে খেয়েদেয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরে যায় যে যার মতো। এরপর চলতে থাকে ওদের ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে এখানে ওখানে ঘুরতে যাওয়া, কখনও একসাথে বসে আড্ডা দেওয়া। দিয়া কখনও ছুটির দিনে মাহিকে ওদের বাড়ি নিয়ে যেতো আবার কখনও ও নিজে মাহির বাড়ি চলে যেতো। এইভাবে ওদের বন্ধুত্ব আবারও গাঢ় হতে থাকে। 

দিয়া থাকতো কসবা, আর মাহির পিসিমনীর বাড়ি ছিল ঢাকুরিয়াতে। ওদিকে আয়ুষ থাকতো যাদবপুরে।

আয়ুষ মনে মনে মাহিকে পছন্দ করতো খুবই কিন্তু বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি কখনও। মাহিও মনে মনে পছন্দ করতো আয়ুষকে।

একদিন কোনো কারনে দিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেনি। আয়ুষ মাহিকে বলে চলো আজ তোমাকে আমার একটা প্রিয় জায়গায় নিয়ে যাই। 

মাহি ইতস্তত বোধ করে, বলে না না দিয়া জানতে পারলে কষ্ট পাবে। 

আরে ওকেও ঘুরিয়ে এনেছি। আর দিয়া অমন মেয়েই নয়।  চলো চলো বলে এতো জোড়াজুড়ি করতে থাকে যে অগত‍্যা মাহি যেতে রাজি হয়। কিন্তু মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব থেকেই যায় ওর,, খালি ভাবতে থাকে দিয়া কি মনে করবে? যেহেতু আয়ুষ ওরই বন্ধু আগে। 

এরপর সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে যায় আয়ুষ। সামনে ঝিল আছে,  ঝিলের মধ্যে বোট আছে। চারিদিকে সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ, যা দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। মাহির তো জায়গাটা দেখেই মন ভরে গেল। 

আচ্ছা একটা কথা জানতে পারি?

হুম বলো।

আমাকে দেখলেই তুমি এমন লজ্জা পাও কেন?  আর জানিনা কেন নিজেকে কেমন গুটিয়ে নাও। 

মাহি মৃদু হাসে, মুখে কিছু বলেনা।

আজ তোমাকে একটা কথা বলার জন্য আমি এখানে এনেছি। তোমার কথা যখন থেকে শুনে এসেছি, তখন থেকেই তোমার প্রতি একটা ভালোলাগা জন্মে গিয়েছিল। আর যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিনই তোমার প্রেমে পড়ে যাই। দ‍্যাখো আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারিনা। যা বলি স্পষ্ট বলি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই? তুমি কি রাজি আছো?

এইভাবে আচমকা এই প্রশ্নের মুখে পড়বে বুঝতে পারেনি মাহি। ও বলে আমাকে ভাবার একটু সময় দিতে হবে।

তোমাকে দেখে যেটুকু বুঝেছি তাতে মনে হয় তোমার মনেও একই চলছে। তুমি প্রকাশ করতে পারছনা। হয়তো দিয়ার কথা ভেবে। দিয়া আমার ও খুব ভালো বন্ধু। ওকে নিয়ে চিন্তা করোনা। ওকে আমি বুঝিয়ে বলব। দেখবে ও খুশিই হবে।

এরপর আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে ওরা বাড়ি ফিরে যায়।

বাড়ি ফিরে দিয়াকে ফোন করায় জানতে পারে ওর জ্বর হয়েছে তাই ক্লাশে যেতে পারিনি।

মাহি তারপরের দিনই সকালে ওর বাড়ি চলে যায় দিয়াকে দেখতে। দিয়া বলে কিরে আমাকে ফেলে খুব ঘুরতে গেলি?

মাহি লজ্জায় পড়ে যায়, বলে আমি তোকে ফেলে যেতে চাইনি রে। প্রায় জোর করেই নিয়ে গেল। 

জানি আমাকেও বহুবার নিয়ে গেছে জানিস। তুই এসেছিস খুব ভালো করেছিস। আমায় একটা ছোট্ট উপকার করে দিবি রে?

এইভাবে বলছিস কেন দিয়া। তোর জন্য আমি সব কিছু করতে পারব। তুই যে আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী। বল কি করতে হবে।

দিয়া বলে আগে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে আয়, তারপর বলছি।

মাহি উঠে দরজাটা বন্ধ করে আসে। তারপর দিয়ার কাছে গিয়ে বসে।

দিয়া বলতে থাকে-"জানিস আমি না আয়ুষকে খুব ভালোবাসি, কিন্তু ওকে কিছুতেই মনের কথা খুলে বলতে পারছিনা।

প্লিজ তুই ওকে আমার মনের কথাটা একবার বলে দে। বিশ্বাস কর ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না। যেদিন থেকে ওকে দেখেছি সেদিন থেকেই ওর প্রেমে পাগল হয়ে আছি আমি। কিন্তু কেমন ছেলে দ‍্যাখ একটা মেয়ের মনের কথা কিছুতেই বুঝতে পারেনা। অথচ আমি নাকি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড,ভাব একবার।  প্রতিদিন ওর জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যাতে ওর মঙ্গল হয়।

তুই এত স্মার্ট আর তোর এই মনের কথাটা নিজের মুখে বলতে পারছিস না। 

না রে বহুবার বলতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি, জানিনা কেন।

তুই বলে দে কালকের মধ্যেই। আমি বেশিদিন আর এটা ফেলে রাখতে চাইছিনা। কারণ বাড়ি থেকেও বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।

বেশ আমি বলে দেব। আজ উঠি রে। বলে মাহি ক্লাসে চলে যায়। 

দিয়াও জানায় সে কাল থেকে ক্লাসে যাবে।

এরপর মনের ভেতরে কষ্টটা যেন দলা পাকিয়ে উঠছে গলার কাছে। চোখটাও জলে ভরে উঠছে। মনে হচ্ছে প্রান খুলে যেন একটু কেঁদে নিতে পারলে ভালো হতো। কারণ ও  যে ভালোবেসে ফেলেছিল আয়ুষকে। জীবনের এটাই ওর প্রথম প্রেম। পরিণতি পাবার আগেই যাকে গলা টিপে হত্যা করতে হবে। এইসবই ভাবতে ভাবতে আনমনে হেঁটে চলেছে মাহি।

হঠাৎই ওর সামনে আয়ুষ এসে পথ আটকে দাঁড়াতে ও সম্বিত ফিরে পায়।

আয়ুষ বলে কি ব‍্যাপার তোমার? সেই কখন থেকে তোমাকে ডেকে চলেছি কোনো হুশ জ্ঞান নেই। কি এতো ভাবছ?

মুখটা আস্তে করে ঘুরিয়ে নিয়ে চোখের জলটা মুছে নিয়ে বলে কই তেমন কিছু নাতো। সরি তোমার ডাক আমি শুনতে পাইনি।

আয়ুষ বলতে থাকে কতবার ফোন করেছি রিসিভ  করলেনা একবারও, কি হয়েছে তোমার?

তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।

হুম বলো কি বলবে।

আমি আজ দিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। দিয়া তোমাকে একটা কথা বলতে চায় কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছেনা। তাই ওর মনের কথাটা তোমাকে বলতে বলেছে আমাকে। ও তোমাকে খুবই ভালোবাসে আর তোমাকেই শুধু  বিয়ে করতে চায়।

কি বলছ তুমি অবাক হয়ে যায় আয়ুষ। 

তুমি ভালো করে জানো ওকে আমি কোনদিনও সেই চোখে দেখিনি। ও খালি আমার একটা ভালো বন্ধু। আর তুমি এটাও নিশ্চয়ই বোঝ তুমি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমাকেই বিয়ে করতে চাই।

প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো সেটা সম্ভব নয়। ও আমার সেই ছোট্টবেলাকার বন্ধু। আর জেনেশুনে আমি এটা কখনোই মেনে নিতে পারবনা। আমি চাইনা ওর সাথে আমার সম্পর্কটা নষ্ট হোক কোনো ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। আমাকে তুমি ক্ষমা করো। 

আমি কিন্তু তোমার জন্য অপেক্ষা করব। 

মাহি আর ওখানে দাঁড়ায় না।

রাতে দিয়া ফোন করে জানতে চায় যে মাহি আয়ুষকে ওর মনের কথা বলেছে কিনা।

মাহি জানায় যে সে বলেছে ওর কথা। 

তুই নিজেই এবারে মন খুলে কথা বলে নিস। বলেই ফোন কেটে দেয় মাহি।

ওদিকে দিয়া আয়ুষকে ফোন করে যায় কখনও ফোন ধরে আবার কখনও ধরেনা। সে কলেজে ও আসেনা। বেশ কিছুদিন হয়ে যায় না মাহি কলেজে আসে, না আয়ুষ কলেজে আসে।

কিন্তু আয়ুষ ওদিকে প্রতিদিন মাহির পিসির বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। 

মাহি ওই দেখে ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে  কোনো কথাই শোনেনা। 

দিয়া ফোনে মাহিকে না পেয়ে ওর বাড়ি চলে আসে আর ওখানে আয়ুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়। ও আয়ুষকে কিছু না বলে সোজা মাহির কাছে চলে যায় ও না জেনেই উল্টোপাল্টা মাহিকে দোষারোপ করতে থাকে।

এবং রাগের চোটে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় মাহি পেছন থেকে বাঁধা দিতে যাওয়ায় ওকে এমন জোরে ঠেলে দেয় যার ফলে মাহি সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায় ও গুরুতর আহত হয়। মাহির আর্তনাদে সম্বিত ফেরে দিয়ার। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে যায়।

দিয়ার পিসিমনি ছুট্টে আসে এবং আঁতকে ওঠেন।

দিয়া ঘাবড়ে গিয়ে আয়ুষকে ফোন করে ডেকে নেয় ও মাহিকে নিয়ে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। ও মাথায় চোট পায় সাথে ডান হাত ও ভেঙে যায়।

মাহির এই অবস্থার জন্য কিন্তু 

দিয়ার একটুও আক্ষেপ হয়না। 

সে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।

এরপর আয়ুষ মাহিকে নিয়ে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যায় ওর পিসিমনি ও সাথে যায়।

ওর মাথায় ব‍্যান্ডেজ করা হয়েছে ও হাতে প্লাস্টার করে দেন ডাক্তার। ওকে একদিন ওনারা রাখতে বলেন কারণ যেহেতু মাথায় চোট পেয়েছিল। একটা দিন ওকে ওনারা অবজার্ভে রাখবে বলে। 

পিসিমনি ভয়ে আর বাড়িতে জানাতে পারেননি। কারণ জানে ভাইরা চিন্তায় পড়ে যাবে। সেদিন রাতে আয়ুষ সারারাত নার্সিংহোমে ছিল।

যাইহোক পরেরদিন পিসিমনি এসে মাহিকে বাড়ি নিয়ে যান। 

তিনি বারবার জানতে চায় কেন এমনটা করল দিয়া। কিন্তু মাহি কিছুতেই সে কথা খুলে বলতে পারেনা।

ওদিকে আয়ুষ দিয়াকে অনেক কথা শোনায় ওর এইরকম কাজের জন্য ।


সাথে স্পষ্ট জানিয়েও দেয় যে সে মাহিকে ভালোবাসে। মাহিকে ছাড়া জীবনে অন্য কাউকেই সে বিয়ে করবেনা। 

দিয়া বলে তাহলে এতদিন আমার সাথে যে ঘুরেছ সেইসব কি মিথ‍্যে।

শুনে আয়ুষ বলে আমি তোমাকে খালি আমার একজন ভালো বন্ধুই ভেবে এসেছি এর বাইরে কিচ্ছু না। 

এরপর দিয়া নিজেকে গুটিয়ে নেয় ওদের কাছ থেকে। 

ক্রোধের চটে মাহির খোঁজ ও নেয়না। 

ওদিকে মাহি ঘরবন্দি হয়ে থাকে যেহেতু ওর হাত ভেঙে যাওয়ায়।

পরে জানতে পারে বন্ধুদের কাছ থেকে যে দিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে এক প্রবাসী বাঙালির সাথে।

ও মনে মনে খুব কষ্ট পায়। ভাবে আজ ওর জন্যেই নিজের প্রথম ভালোবাসাকে ও গলা টিপে মারছে। 

অথচ দিয়া এই বন্ধুত্বের মর্যাদা দিল। নিজের মনে নিজেই কাঁদতে থাকে। 

এরপর একবছর কেটে যায়। 

ওদিকে আয়ুষ এখনো পথ চেয়ে বসে আছে মাহির জন্যে।

কিন্তু যেহেতু মাহি দিয়াকে বলেছিল -"আয়ুষের সাথে তার ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক নেই তাই আজও সে আয়ুষকে তার ভালোবাসার কথা বলতে পারছে না"।

মাহির বাড়ি থেকে ওর জন্য সুপাত্রের ব‍‍্যবস্থা করেছে। 

 যেদিন ওর আশীর্বাদ হবে সেদিন আয়ুষ জানতে পেরে,, শেষ চেষ্টা করার জন্য হাই পিকআপে বাইক চালিয়ে মাহিদের বাড়ি যেতে গিয়ে অ‍্যাক্সিডেন্ট করে মারাত্মকভাবে। ওই অবস্থাতেই কোনরকমে খালি মাহিকে ফোন করে কিন্তু মাহি রিপ্লাই দেওয়ার আগেই ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। 

তারপর রাস্তার কিছু মানুষ ওকে স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি করে ও ওর ফোনের লাস্ট কল মিলিয়ে মাহিকে ফোন করে জানায় যে আপনার নাম্বার এই ফোন কলে লাস্টে ছিল তাই জানাচ্ছি এনাকে আমরা নার্সিংহোমে ভর্তি করেছি ওনার অ‍্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আপনি চলে আসুন ওনার বাড়ির লোকদের জানিয়ে দিন । 

ওই শুনেই মাহি কাঁদতে কাঁদতে নার্সিহোমে ছোটে।

গিয়ে দেখে তখনও আয়ুষ অজ্ঞান হয়ে আছে। ওর মাথায় স্টিচ পড়েছে হাতে চট লেগেই সাথে ডান পা ও ভেঙেছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ওর জ্ঞান ফেরাতেই ও মাহি মাহি করে ডেকেই চলে। 

নার্স বাইরে বসে থাকা মাহিকে বলে দেখুন পেশেন্টের জ্ঞান এসেছে উনি কাউকে একজনকে খুঁজছে।

সাথে সাথে মাহি ভেতরে যায়। দেখে তখনও আয়ুষ মাহিকে ডেকে চলেছে।

মাহি কাছে গিয়ে ওর হাতটা আলতো করে ধরাতে, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আয়ুষ ওর সামনেই মাহি দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখেই আনন্দে ওর চোখে জল এসে গেল।

মাহি জানতে চাইল -"কোথায় যাচ্ছিলে তুমি "?

আমি তোমার সাথেই দেখা করতে আসছিলাম।

আমি শুনেছি তোমার আজ আশীর্বাদ। কিন্তু আমি যে আজও তোমার জন্য পথ চেয়ে বসে আছি মাহি। তোমার কাছে কি আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। তুমি শুধু একবার বলো আমাকে তুমি একটুও ভালোবাসো না। 

দিয়াতো নিজে বিয়ে করে সুখে সংসার করছে। তবে তুমি কেন নিজের ভালোবাসা কে এইভাবে গলা টিপে মেরে ফেলছ। বলো প্লিজ বলো, এইভাবে চুপ করে থেকোনা তুমি। 

মাহি কি বলবে বুঝতে পারেনা। মনে মনে ভাবে আজ  তার জন্যই তো আয়ুসের এই অবস্থা। আর সত্যি তো দিয়া নিজের সংসার করছে সানন্দে। তবে তার করতে কিসের অসুবিধা। সেতো তার খোঁজ ও নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনা। তবে সে কেনো তার ভালোবাসাকে এইভাবে মেরে ফেলবে। না আর নয়। 

সম্বিত ফেরে আয়ুসের কথায় -"এর থেকে বোধ হয় আমার শেষ হয়ে যাওয়াই ভালো ছিল"।

সাথে সাথে মাহি ওর ঠোঁটের উপরে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে -"কেন বাজে কথা বলছ, তাহলে আমার কি হতো"?

আয়ুষ চমকে ওঠে ওর কথায়। বলে তাহলে কথা দাও সারাটা জীবন থাকবে আমার সাথে, কক্ষনো কোথাও ফেলে যাবেনা।

মাহির দুচোখ দিয়ে আনন্দশ্রু বেরোতে থাকে,,, বলে-"কথা দিলাম"।

এরপর আয়ুস সুস্থ হয়ে গেলে ওদের চারহাত এক করে দেওয়া হয় মহা ধুমধাম করে। 

                     সমাপ্ত