বিভাগ প্রবন্ধঅন্যকে দেখি মঞ্জুশ্রী মণ্ডল৩১/১/২০২১
প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্বতা কিছু থাকে। দোষ ত্রুটি, ভালো-মন্দ নিয়েই মানুষ। কেউই ত্রুটিমুক্ত হতে পারে না। কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই নিজের দোষ ত্রুটি নিজে দেখতে পারে না বা পায় না।তাই নি…
বিভাগ প্রবন্ধ
অন্যকে দেখি
মঞ্জুশ্রী মণ্ডল
৩১/১/২০২১
প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্বতা কিছু থাকে। দোষ ত্রুটি, ভালো-মন্দ নিয়েই মানুষ। কেউই ত্রুটিমুক্ত হতে পারে না। কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই নিজের দোষ ত্রুটি নিজে দেখতে পারে না বা পায় না।তাই নিজেকে সংশোধন করতে পারেনা ।অনেকে দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দিলেও সংশোধন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেনা বা নিজের দোষকে দোষ বলে মনে করে না। সে যাই হোক, প্রত্যেক মানুষের দোষ ত্রুটি থাকবে ই।কেউ একেবারে ত্রুটি মুক্ত হতে পারে না।
কিন্তু মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্যকে তথা অন্যের দোষ-ত্রুটি কে খুঁজে বেড়ানো।
নিজের দোষটা ধরিয়ে দিলে বুঝতে চায় না কিন্তু অন্যের দোষ কে চরম ত্রুটি বলেই মনে করে ।যেমন একশো দিনের কাজ করে যারা তারা ভাবে আমরা পাঁচ ঘন্টা কাজ করে তবে পয়সা পাই তথা বেতন পাই কিন্তু বাইরের অন্য পেশায় যুক্ত মানুষেরা ভাবে একসাথে অনেক জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যে কাজটা দশজনে হয়ে যেত সেটা একশো জনে করছে ।ফাঁকি দিচ্ছে ,বসে বসে টাকা পাচ্ছে। একথা তাদের বলতে গেলে তারা ক্ষেপে উঠবে।
আবার অন্যান্যরা ডাক্তারদের দেখছে। দেখে বলবে দু মিনিট কি পাঁচ মিনিট দেখেই 200 ,300 250 , 500 ইত্যাদি ভিজিট নিচ্ছে। কারো সম্পর্কে বলি হাতে রেখে ওষুধ দেয়।ওরা ফাঁকি দিচ্ছে, সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে। ওদের কত টাকা একটু কম নিলেই পারতো। সরকারি ডাক্তাররাও হাসপাতালে সময় না দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে সময় বেশি দেয় প্রচুর টাকা নেয়। আমরা অন্যরা দেখতে পাই তাকে । যদি বলা হয় তিনি বলবেন আমি আমার ডিউটি ঠিক ই করেছি। এমনও হতে পারে ডাক্তারকে মুখের উপর কেউ বলতে পারবেনা ।চোখের সামনে দেখে যেতে হবে সমালোচনা করতে হবে, কানাকানি করতে হবে।
শিক্ষকদের যারা দেখে তারা বলে বসে বসে মাইনে পায়, ফাঁকি দিয়ে মাইনে পায়। শিক্ষকরা নিজেরা জানে তাদের উপর কত চাপ থাকে। পাবলিকের চাপ ,ছাত্র দের চাপ ,অফিসের চাপ।
হাতুড়ে ডাক্তারদের দেখে বলি,ওরা ডাক্তারদের থেকেও বাড়া। অথচ ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে।
ব্যবসাদার কে দেখে আমরা বলি তারা কম টাকায় কিনে কেউ কালোবাজারি করছে, কেউ বেশি দামে বিক্রি করে, চড়া দামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা লুটছে অথচ সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে না ।
তারা ভাবছে আমরা বহু কষ্ট করে রোজগার করি। অফিসের কর্মচারীদের সম্পর্কে আমরা বলি ওরা আসে যায় মাইনে পায়। কাজকর্ম সব ঠিকঠাক হয় না। কোন কাজের জন্য ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে পাঠিয়ে দেয়। ঘুস নেয়,টাকা দিলে কাজ মিটে যায়।
পুলিশকে দেখে বলি, ওরা ঘুষ খায় ,পক্ষপাতিত্ব করে।
ট্রেণের চেকারদের দেখে বলি মাসের শেষ হলে হাতে টাকার দরকার হলে মুখ দেখে দেখে ওরা খুঁজে নেয়।
উকিলকে দেখে বলি ওরা ইচ্ছা করে ডেট নিয়ে শুধু শুধু টাকা নেয়।
কেরোসিন ডিলার দের কথা বললে বলতে হয় তেলের মাপন থেকে ঢেলে নিয়ে কম তেল দেয়।
রেশন ডিলার কে দেখে বলি যাতে না খোদ্দের আসে সেজন্য ধুপ ধুনা দেয়। জিনিসপত্র ব্ল্যাক করে ,কম দেয় ওজনে।
চাষির সম্পর্কে বলি, ওরা ভালো জিনিস খায় না ।ভালো জিনিস টা বিক্রি করে দেয়, খারাপ ফাটাফুটি জিনিস খায়। ওদেরকে বললে বলবে দুটো পয়সার জন্যই তো এত কষ্ট করা।,
নাপিত একটু দাড়ি চেঁচে পনেরো কুড়ি টাকা নেয়, কোন খাটুনি নেই, ইনভেস্টমেন্ট নেই। এজন্য অনেকদিন ছাড়া ছাড়া দাড়ি কাটতে যাই।
ধোপাকে দেখে বলি ওরা জামাকাপড় কত নোংরা জায়গায় শুকোতে দেয়।
এইভাবে সব পেশার মানুষকেই আমরা বাইরে থেকে বিচার করি ও সমালোচনা করি। নিজের ত্রুটি টা নিজে কেউ বুঝতে পারিনা। আমরা যদি সবাই নিজের দোষ নিজে খুঁজে নিতাম, সংশোধন করতাম তাহলে হয়তো সমাজে অচলাবস্থা হতো না। সমাজের শুদ্ধিকরণ আপনা আপনি হতো। আসুন আমরা সবাই নিজের দোষ ত্রুটি নিজেই খুঁজে বেড়াই। এবং শুদ্ধিকরণের চেষ্টা করি। তাহলে সমালোচনা হবে না। সমাজটা ও সুস্থ হবে।