Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

চাষাবাদ ও শিল্পের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়

তরুন চট্টোপাধ্যায় ।দু হাজার কুড়ি সালের মার্চ মাসের চতুর্থ সপ্তাহে শুরু হলো দেশ জুড়ে লকডাউন ।একই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হলো সমস্ত যানবাহন, কলকারখানা থেকে নানা সেক্টর।যে মানুষ যেখানে ছিলেন বাধ্য হলেন সেখানেই থেকে যেতে।করোনার চেন কে ভ…

ছবি সংগৃহীত

 তরুন চট্টোপাধ্যায় ।

দু হাজার কুড়ি সালের মার্চ মাসের চতুর্থ সপ্তাহে শুরু হলো দেশ জুড়ে লকডাউন ।একই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হলো সমস্ত যানবাহন, কলকারখানা থেকে নানা সেক্টর।যে মানুষ যেখানে ছিলেন বাধ্য হলেন সেখানেই থেকে যেতে।করোনার চেন কে ভাঙতে এ ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না সরকারের হাতে।তারপর কখনো থালা ঘটি বাজানো,আবার কখনো প্রদীপ জ্বালা।কিন্তু সেই সময় করোনা নামক অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস টি কোন কিছুর উপেক্ষা না করেই দাপিয়ে বেড়ালো দেশ জুড়ে ।মৃত্যু মিছিল দেখলো দেশ।ঘরবন্দি হলেন মানুষ ।একদিকে প্রশাসনের ভয়,আর অন্য দিকে ভাইরাসের ভ্রুকুটি মানুষ কে করলো দিশেহারা ।কিন্তু পেট।সে কেন শুনবে এই নিয়ন্ত্রণ ।বাঁচতে গেলে তো খাদ্য চাই।আর খাদ্য আনতে গেলে চাই টাকা।কাজ কর্ম বন্ধ ।তাই টাকা নেই।ফলে মানুষ রাস্তায় নামলেন।কেউ কেউ বেশি টাকা দিয়ে যানবাহন যোগাড় করলেও অধিকাংশ ই মাইলের পর মাইল পাড়ি দিলেন পায়ে হেঁটে ।কিন্তু কেন?

                    রাস্তায় হাঁটা মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম ।সকলের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি ওনারা ফিরছেন যে যার দেশে।গ্রামে গঞ্জে।যে গ্রাম ছেড়ে একদিন পাড়ি জমিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে পয়সা উপায়ের লক্ষ্যে ।আজ আবার কেন সেই গ্রামের পথেই।

আসলে যে রুজিরোজগারের জন্য দেশ ছাড়া সেই রুজিরোজগার যদি বন্ধ হয় তখনতো শিকড়ে ফেরা টাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ।

দেশে ফিরে নিজস্ব জমিতে ফসল ফলালেও জুটতে পারে খাদ্য ।অতিরিক্ত ফসল বিক্রি করে আসে টাকা।ফলে কৃষিতে লাভ কম এই অছিলায় একদিন শহরের কলে মিলে কাজ করতে যাওয়া মানুষ এক বাক্যে ফিরে আসেন সেই গ্রামের পথেই।কৃষিকেই সম্বল করে।

আসলে জমির পরিমাণ তো আর বাড়েনি।বরং কৃষি জমি রূপান্তরিত করে মানুষের বসবাসের বাড়ি তৈরে হয়েছে বিপুল পরিমাণে ।একই পরিবারের সকলের আয়ের উৎস হতে পারেনি কৃষি জমি।ফলে মানুষ কে রোজগারের ধান্দায় নামতে হয়েছে পথে।চলে যেতে হয়েছে ভিন দেশ ,ভিন রাজ্যে ।করোনার প্রকট রুপ আবার বাধ্য করলো মানুষ ঘরে ফিরতে।নির্ভরশীল হতে হলো সেই কৃষির কাজেই।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত ।অবশ্যই সিঙুরের পরিপেক্ষিতেই।সে প্রসঙ্গে আসছি না।কারন কৃষি জমি কে রূপান্তরিত করে টাটা দের গাড়ি কারখানা নিয়ে অনেক আলোচনা তো হয়ে গেছে।ফিরে গেছেন টাটারা দোফসলী তিন ফসলী জমি ফেলে রেখেই।সেই জমিতে চাষ হবে কি হবে না সে প্রসঙ্গ আলাদা ।তবে কৃষির সঙ্গে শিল্পের মেলবন্ধন করে রাজ্য এগিয়ে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা তিনি করেছিলেন একথা সত্য ।তবে তাতে ভালো না মন্দ হতো সেকথা একেবারেই আলাদা 

                   কৃষি কে বাদ দিয়ে যে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় তাতো বোঝাই যাচ্ছে ।দিল্লি তে কৃষি বিলের বিপক্ষে লক্ষ্য লক্ষ্য কৃষক আজ রাস্তায় নেমেছেন আন্দোলনে।পাড়ার মোড়ে মোড়ে লকডাউনে নতূন কৃষি পন্য বিক্রি করে পেট চালাচ্ছেন শত শত মানুষ ।অন্য পেশাতে টান পড়লে একমাত্র কৃষিই পারে মানুষ কে নতূন দিশার খোঁজ দিতে।লকডাউনে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের ঢল নেমেছিল পথে গ্রামের পথের উদ্দেশ্যে ।আর তারও মূল কারন এই কৃষি কে লক্ষ্য করেই।আজও তাই বলা যেতে পারে সঙ্কট কালে কৃষিকে ভিত্তি করেই মানুষ বাঁচার পথ খুঁজে পান।সঙ্কট দেখালো কৃষি এ দেশে কতটা জরুরী হতে পারে।কৃষির ওপর ভর করেই মানুষ বাঁচার পথ খুঁজে পান।কৃষি কে বাঁচিয়ে না রাখতে পারলে আমাদের সমূহ বিপদ।

শহরমুখী মানুষ শহরে কাজ খুঁজে না পেলে চলে আসেন গ্রামের পথেই।ভারতকে আর্থিক পুনরুত্থানের পথে ও বৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারে কৃষি।কৃষি হলো বেসরকারি ক্ষেত্রে সোসাল সেফটি নেট।তথ্য প্রযুক্তির সুফল সব সেক্টরে যেমন প্রবেশ করেছে ঠিক তেমন ভাবেই কৃষি ক্ষেত্রে ও তা বিস্তার করবে এটি স্বাভাবিক ।যেমন আজ লাঙ্গল অস্তমিত হলেও হেক্টরের পর হেক্টর জমি চাষ করতে ট্রাক্টর ব্যবহৃত হচ্ছে ।এতে করে চাষ যোগ্য জমি চাষ হচ্ছে অনায়াসেই ।কীটনাশক থেকে শুরু করে নানা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি ক্ষেত্রে ই।এক অতিমারী প্রমান করে দিলো কৃষি আমাদের দেশের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয় ।শিল্প, কলকারখানা থেকে মানুষের আয় হয় একথা সত্যি, তবে শুধুমাত্র শিল্পের ভরসায় না থেকে কৃষির উন্নয়নে জোর দেওয়া টি অত্যন্ত জরুরী ।

                 মানুষের নানা পেশা।আর সেই পেশা কে আঁকড়ে ধরেই মানুষ তাঁর দৈনন্দিন জীবন যাপন করেন।নানা ভাষা নানা মতের মতোই নানা পেশা কে ঘিরেই চলে জীবন চক্র।একটি কাজের সঙ্গে ঘিরে থাকে আরো অনেক কাজ।যেমন কৃষিজ পন্য চাষ করেন কৃষকেরা।কিন্তু সেই পন্য বাজারে নিয়ে যাওয়া থেকে বিক্রির মধ্যে নানা পেশা চলে আসে।আর এটি চক্রাকারে ঘুরতেই থাকে।

প্রতিবেদনেল মূল প্রতিপাদ্য ছিল আমরা ক্রমশই কৃষির থেকে মুখ ফিরিয়ে সরে যাচ্ছিলাম অন্য পেশার দিকেই।নজরে ছিল বেশি পয়সা রোজগার ।কিন্তু এক অতিমারী এসে প্রমান করে দিলো কৃষিই পারে মানুষ কে বাঁচাতে।তাই কৃষির ওপর জোর দিয়ে আমাদের অন্য পেশাতে যেতে হবে।

কৃষি পন্যের মূল্য বৃদ্ধি তে কৃষকেরা যাতে বেশি টাকা রোজগার করতে পারেন সে দিকেও নজর দেওয়া ও জরুরি ।কিন্তু বাস্তবে সে ঘটনা ঘটে না।আলু যখন চল্লিশ টাকা দরে আমরা কিনি তখন সব লাভ টুকু যায় ফড়েদের পকেটে।মাঠ থেকে যে দামে আলু বিক্রি হয় তার লাভের সিংহ ভাগ যায় অন্যের পকেটেই।ফলে চাষীর কপালে ভাঁজ পড়ে।তবুও চাষী চাষ করেন বলেই আমরা ভাতের সঙ্গে আলু পেতে পারি।

হাজারো সমালোচনা সত্বেও বলি আমাদের দেশে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার থেকেও স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা করতে আমাদের রাজনীতি বিদরা বেশি পছন্দ করেন।কারন আর কিছু নয় সস্তা চটক।কারন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার সুফল আসতে সময় লাগে বেশি।সেখানে চটজলদি সুফল পেলে নির্বাচনে জিততে সুবিধা হয়।সে কি কৃষি ক্ষেত্রে কি শিল্প ক্ষেত্রে ।অথচ এমন কিন্তু ছিল না।এই রাজ্যের নিরিখে মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের পরে সেই ধরনের বড় কিছু দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়নি।আর হলেও তা এমন কোন উল্লেখ যোগ্য নয়।ফলে ভুগতে তো হবেই।

দেশের মঙ্গলে রাজ্যের মঙ্গলের জন্য এ কাজ জরুরি ।কোটি কোটি টাকা খরচ করে মন্দির নির্মান, স্ট্যাচু নির্মান, নানা ধর্মের ধর্ম স্হান নির্মান হলেও ভোট আসে একথা বুঝেছেন আমাদের রাজনীতি বিদরা।কিন্তু মানুষের ক্ষিধে তো মেটে না।আর সেই ক্ষুধা নিবারনের জন্য প্রয়োজনীয় হলো কৃষির উন্নয়নে মনোনিবেশ ।

করোনা মহামারী প্রমান করে দিলো আমাদের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা কতটা ঢিলেঢালা ।ধর্মের আফিং খেয়ে ও আমরা নিজেদের বাঁচাতে পারিনি।

তাই প্রয়োজন কৃষি ও শিল্পের হাত ধরাধরি ।হিন্দু যেমন চাষ করেন,ঠিক তেমনই মুসলিম রাও চাষ করেন।হিন্দু হাসপাতালে চিকিৎসা করেন ,মুসলিম রাও করেন।ফলে দেখা যাচ্ছে উন্নয়ন দরকার সব জায়গায় ।

ভারতবর্ষের নিরিখে আমরা চাষাবাদ ও শিল্পের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করাটিই জরুরি ।এ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।