Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

আপনা বেগানা ছুটো জায়েঅনির্বাণ মুখোপাধ্যায়---------------------------------- বেশ বেলাতেই ঘুম ভাঙ্গলো আজ। একে ছুটির দিন, তার ওপর বেশ রাত অবধি TV দেখেছি। তাছাড়া এক অত্যন্ত কাছের মানুষের লেখা একটি গল্প পড়েও মনটা ক্লান্ত বিষাদে ঘিরে ছ…

 


আপনা বেগানা ছুটো জায়ে

অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়

----------------------------------

 বেশ বেলাতেই ঘুম ভাঙ্গলো আজ। একে ছুটির দিন, তার ওপর বেশ রাত অবধি TV দেখেছি। তাছাড়া এক অত্যন্ত কাছের মানুষের লেখা একটি গল্প পড়েও মনটা ক্লান্ত বিষাদে ঘিরে ছিল। সব মিলে এক অলস রাত পেরিয়ে সবে উঠেছি, বাইরে থেকে মাইকে ভেসে আসা গানের আওয়াজে মনে পড়ে গেল - আজ সরস্বতী পুজো।  

 সরস্বতী পুজো আর ছোটবেলা সমার্থক বোধহয়। এত কাছ থেকে ঘরোয়া ভাবে আর কোনো ঠাকুরের মূর্তির কাছে যাওয়ার সুযোগ ছোটবেলায় হত না। দুটো কারণে বেশ ভাবিত হয়ে পড়তাম। রাজহাঁসটা ঠাকুরের ভারে চেপ্টে যাবে না তো! আর প্রসাদে যেন শাঁকআলু ছাড়া অন্য ফলও দেয়।

 একটু বড় হয়ে স্কুলে যখন সরস্বতী পুজোয় মেয়েরা শাড়ি পরে আসতো, বেশ হিংসে হত। এই একটা দিন ঠিক নীচের ক্লাসের পছন্দের মেয়েটিকেও বেশ বড় বলে মনে হত। প্রচন্ড ইচ্ছে হলেও খুব মন দিয়ে দেখতে ভয় হত। আশংকা ছিল ধমকে দেবে। তখনও জানতাম না – No risk, no gain.

 সকালবেলায় চান করে সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি দিতাম। একটু সংস্কৃত না জেনেও এই একটা মন্ত্র এক কি অজানা কারণে মনে গেঁথে থাকতো। অঞ্জলির আগে হাতে ফুল নেওয়ার সময় প্রত্যেকবারই মনে হত - একটু কম দিল বোধহয়। ঠাকুর পর্যন্ত পৌছবে তো! অঞ্জলি দিয়ে হাত জোড় করে ঠাকুরকে বলতাম -- বিদ্যে দাও, বুদ্ধি দাও, সব কিছু দাও। নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে বিদ্যে, বুদ্ধির গুরুত্ব সব আগে -- সে ধারনাই ছোটবেলা থেকে আমার হয়েছিল। বাকিটা জানিনা বলেই বোধহয় ঠাকরের ওপরেই দায়িত্ব দিয়ে দিতাম সব কিছুর মানে বুঝে নেওয়ার।

 এখন বোধহয় সবকিছুর পেছনে দৌড়তে গিয়েই অনেক বদলে গেছে সব কিছু। তাই কানে আর ভেসে এলো না -- ওম জয় জয় দেবী চরাচর সারে। ঘুমের ঘোর কাটার আগেই কানে বেজে উঠলো -- তুনে মারি এন্ট্রিয়া রে, দিল মে বাজি ঘন্টিয়া রে। হঠাৎ যেন নিজেকে বড় নিঃস্ব মনে হলো। সেই ছোটবেলা, পুজোর নির্মল আনন্দ, জন্মস্থান থেকে বরাবরের মত ছিন্ন হয়ে আসা নিজেকে নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ র মতই ঐশ্বর্য হারানো নির্বাসিত মনে হলো। বুকের ভেতর গুমড়ে উঠলো এক পুরনো সুর --

"বাবুল মোরা, নাইহার ছুটো হি জায়ে

চার কাহার মিল, মোরি ডোলিয়া সাজায়ে

মোরা আপনা বেগানা ছুটো জায়ে। "