Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#সৃষ্টি সাহিত‍্য যাপন#শেষ_ইচ্ছে#কলমে_মৌসুমী চ‍্যাটার্জী
নীলা আর ওর মা নমিতাদেবী আজ মাস তিনেকের জন্যে শান্তিনিকেতনেই ওদের যে বাগানবাড়ি আছে সোনাঝুরির কাছে সেখানে এসেছে।ওদের দুজনেরই খুবই প্রিয় এই জায়গাটা। বেশ নিরালা, কোনো হৈচৈ নেই। শ…

 


#সৃষ্টি সাহিত‍্য যাপন

#শেষ_ইচ্ছে

#কলমে_মৌসুমী চ‍্যাটার্জী


নীলা আর ওর মা নমিতাদেবী আজ মাস তিনেকের জন্যে শান্তিনিকেতনেই ওদের যে বাগানবাড়ি আছে সোনাঝুরির কাছে সেখানে এসেছে।

ওদের দুজনেরই খুবই প্রিয় এই জায়গাটা। বেশ নিরালা, কোনো হৈচৈ নেই। শান্তিপ্রিয় একটা জায়গা।

আজ নীলা ওর বাবাকে হারিয়েছে দেখতে দেখতে ছটা বছর হয়ে গেল। মা এখন ওর সবকিছু। খারাপ লাগে এই ভেবে যে ও যখন থাকবেনা তখন ওর মা পুরো একা হয়ে যাবে। কিভাবে ওর মা কাটাবে একা একা ওর দিনগুলো।

মা আর মেয়ের মধ্যে ভীষণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মাকে ছাড়া ওর এক মূহুর্ত ও চলেনা।

মা ও তেমনি মেয়েকে চোখে হারায়।

আজ দুজনেরই খুব কষ্ট হচ্ছে ওদের বাবার জন্যে। আজ থেকে ছয় বছর আগেই নমিতাদেবী তার স্বামী তন্ময় ও মেয়ে নিয়ে এখানে বসন্ত উৎসব কাটিয়ে গেছে।

কিছুতেই দিনটা ভুলতে পারছেনা ওরা। এইজন্যই এখানে এই ছয়বছর আসেনি।

কিন্তু নিরুপায় হয়ে আজ এখানে মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছেন উনি।

এরপর দুপুরে ওখানকার স্থানীয় এলাকায় একটা রেস্তোরাঁ আছে,, ওদের বাড়ি থেকে হেঁটে জাস্ট মিনিট পাঁচেকের পথ। দারুণ সুস্বাদু রান্না হয় ওখানে। আর খুব যত্ন করে খাওয়ানো হয় প্রতিটি মানুষকে। ওখানকার সব মানুষই ওদেরকে চেনে।

ওদের দেখে এগিয়ে এলেন রেস্তোরাঁর মালিক,, আপ‍্যায়ন করে বসালো তারপর ম‍্যানেজারকে ডেকে তাকে দায়িত্ব দিলেন যেন ওদের কোনরকম ত্রুটিবিচ্যুতি না হয়।

নমিতাদেবী নীলা যা যা খেতে ভালোবাসে তাই অর্ডার করলেন ---- শুক্তো, মাছের মুড়ো দিয়ে ডাল, ঝিরিঝিরি আলুভাজা, আলুপোস্ত, গলদা চিংড়ির মালাই কারি, ইলিশ মাছ ভাজা তার সাথে মাছের তেল, শেষ পাতে চাটনি ও দই আর একটা করে রসমালাই যা নীলার খুবই প্রিয়।

খেয়েদেয়ে নমিতাদেবী ওদেরকে একেবারে রাতের খাবারটা চিকেন স্ট্রু ও রুটির অর্ডার টাও করে দিলেন এবং বলে দিলেন যাতে ওনাদের ডেলিভারি করে দেয়। বলে ওনারা ফিরে গেলেন। ঠিক করলেন আজ আর কোথাও বেরোবেন না পুরো রেস্ট করবেন। সেই কাল ঘুরতে যাবেন।

বাড়িতে ঢুকেই খেয়াল করেন যে-- নীলা ওর ব‍্যাগটা রেস্তোরাঁতেই ফেলে এসেছে।

নীলা বলে - "ওঠে যা কি হবে, তুমি রেস্ট করো আমি গিয়ে নিয়ে আসি তবে। ওর মধ্যে আমার জরুরি অনেক ডকুমেন্টস ও আছে"।

কিচ্ছু হবে না,  ওরা ঠিক তুলে রেখে দেবে দেখবি। আমরা কাল গিয়ে নিয়ে আসব।

তুমি ঠিক বলছ?

আরে বাবা হ‍্যাঁ বলছি তো। ওখানে কত বছর ধরে যাচ্ছি বল তো। আর ওরাও আমাদের ভালোভাবেই চেনে। নে জামাকাপড় চেঞ্জ করে ওষুধ ঠিকমতো খেয়ে শুয়ে পড় দেখি। আমিও শুয়ে নিই।

বলেই ওরা যেযার মতো রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।

সন্ধ্যায় খুব ইচ্ছে করছিল নীলার একটু আশেপাশে ঘুরতে যেতে কিন্তু ওর মা না নিজেও বেরোল না নীলাকেও বেরোতে দিলো।

এরপর রাত ঠিক আটটার সময় রেস্তোরাঁ থেকে রাতের ডিনার নিয়ে হাজির হলো ওখানকার ম‍্যানেজার সাহেব নিজেই।

তাই দেখে নমিতাদেবী বলেন-"একি আপনি নিজে এলেন কেন??

আপনাদের তো ডেলিভারি করার লোক আলাদা থাকে"।

হ‍্যাঁ ম‍্যাডাম কিন্তু আপনারা আজ দুপুরে এই ব‍্যাগটা ওখানে ফেলে এসেছেন, তাই সেটা ফেরত দেওয়ার জন্যেই আমি নিজেই চলে এসেছি।

আরে অনেক ধন্যবাদ। এসো না একটু বসেই যাও, আলাপ করে নিই তবে তোমার সাথে। আমি তুমি করে বলছি এই কারণে যে তুমি অনেকটাই ছোট আমার থেকে, তাছাড়া মনে হচ্ছে আমার মেয়ের থেকেও মনে হয় ছোটই হবে।

আরে না ঠিক আছে কোনো ব‍্যাপার না।

ভেতরে নিয়ে বসায় তাকে।

ভেতর থেকে নীলাও বেড়িয়ে আসে। 

ওর মা ওর হাতে ব‍্যাগটা তুলে দেয়।

তাই দেখে রজত বলে একটু ব‍্যাগটা খুলে চেক করে নিন ম‍্যাডাম সব ঠিকঠাক আছে তো।

নীলা বলে তার কোনো দরকার হবেনা কারণ আপনাদের উপরে আমাদের পুরো আস্থা আছে।

কথায় কথায় রজত জানায় সে সবেই গ্রাজুয়েশান শেষ করেছে এবং একজনের মাধ্যমে এই রেস্তোরাঁর চাকরিটা পায় আজ মাস সাতেক হয়েছে। সে এখান থেকে আধ ঘন্টার দূরত্বে থাকে। সে একাই থাকে কারণ বাবা মা কেউই বেঁচে নেই। তাদের একটা অ‍্যাক্সিডেন্টে হারিয়ে ফেলে রজত সে যখন উচ্চমাধ‍্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই। তারপর সে  চলে যায় মামারবাড়ি। এতদিন ওখানেই থাকত।

এখন এই চাকরিটা পেয়ে আবারও নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছে।

নীলা মাঝে কফি করে আনে সবার জন্যে। 

রজতকে ওদের সবার খুব ভালো লেগে যায়। খুবই আন্তরিকতা আছে ছেলেটার মধ্যে। এখনকার মত নয় সে।

এরপর যাওয়ার সময় রজত নমিতাদেবীকে বলে যায় -"আন্টি আপনাদের যখনই কোনো কিছুর দরকার মনে হবে আমাকে সাথে সাথেই জানাবেন কোনো দ্ধিধা করবেন না। আজ আমি আসি। 

রজত ওদের সাথে একদম আত্মীয়র মতো মিশে গেল। ফোন করেও খোঁজ খবর নেয়। 

ওদিকে নীলার মনের গহন কোণেও রজত বসবাস শুরু করে তারই অগোচরে।

একদিন ওদের দুজনকে নিয়েই রজত আশেপাশে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা সেই মতো নীলা রেডি, মা রেডি হয়েছে কিনা দেখতে গিয়ে দেখে মা তার শুয়ে আছে।

দেখে বলে ওঠে সে-"কি হয়েছে মা তোমার? 

শরীর খারাপ নাকি?

এখনো শুয়ে আছো, তাহলে রেডি হবে কখন?

রজত তো এক্ষুনি চলে আসবে।

চোখ খুলে নমিতাদেবী বলেন -"তেমন কিছু না,, মাথাটা খুবই ধরেছে রে মামুনি। তুই ঘুরে আয় রে। আমি ঘর অন্ধকার করে চোখ বুজে একটু শুয়ে থাকি, আর একটু আগেই ওষুধও খেলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাব"।

না না থাক মা আমি রজতকে বরং ফোন করে না করে দিই আসতে। আমি বাড়িতেই থাকি তোমার কাছে। তোমার কখন কি লাগবে।

আরে পাগলি মেয়ে আমার কিচ্ছু লাগবেনা, সোনা যা তো ঘুরে আয়, কত সুন্দর সেজেছিস খুব ভালো লাগছে তোকে।

তারপর রজত আসায় দুজনে বেড়িয়ে পরে। 

বেশ কিছুক্ষণ ঘোরার পর নীলা বলে ওঠে-"দেখতে দেখতে আজ আমাদের এক মাসের উপরে আলাপ হয়ে গেল বলো তাইনা।

রজত মৃদু হেসে বলে হ‍্যাঁ।

অথচ তুমি কিন্তু আমাকে সেই পর পর করে রেখেছ। ঘুরতে গেলেও দশ হাত দুরে দুরে হাঁটো,, কেন আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে গায়ে স্পর্শ লাগলেই তোমাকে খেয়ে ফেলব।

আরে তা নয়।

তাহলে????

প্রথম দিন থেকেই আমি  খেয়াল করেছি তোমার চোখ কিন্তু কিছু বলতে চায় অথচ তা তুমি চাইলেও বলো না। কিন্তু কেন রজত তা কি জানতে পারি?

রজত চুপ করে থাকে বেশ খানিকক্ষণ তারপর বলে আমাদের মনে হয় এবারে ফেরা উচিৎ কারণ আন্টির শরীর খারাপ।

আজ আমি এটা ক্লিয়ার না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে ফিরছিনা।

আমি জানিনা তুমি কি শুনতে চাও। তাছাড়া সেটা কখনই সম্ভব নয়।

কেন সম্ভব নয় সেটা কি জানতে পারি?

দেখ আমি ছোট বাচ্চা নই আমরা একে অপরকে ভালোবাসি সেটা মুখে প্রকাশ করতে না পারলেও এটা আশাকরি দুজনেই বিশ্বাস করি যে আমরা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছি এবং আমরা আমাদের দুজনকেই খুবই পছন্দ করি। এটা তো নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেনা তুমি??

রজত আস্তে করে বলে ওঠে হুম অবশ্যই তাই। কিন্তু আমি তোমার থেকে তিন বছরের ছোট আর সেটা আন্টি কখনোই মেনে নেবেন না। তাই আমাদের ভালোবাসা কে আমাদের মনের মাঝেই থাকতে দাও। সব ভালোবাসার পরিণতি সুখের হয়না।

দেখো আমি আমার মাকে ভালো করেই চিনি। আমার সুখের জন্যে সে সবকিছুই করতে পারে। আমি এতবড় হয়েছি আজ পর্যন্ত নিজের জন্যে কখনও কিছু চাইনি ওদের কাছে। অবশ‍্য না চাইতেই আমি সবকিছুই পেয়ে গেছি। যাইহোক তোমার যদি আপত্তি না থাকে তো আমি আমাদের বিষয়ে মাকে জানাব।

বেশ বলো, তবে আমি যদি তোমাকে চেয়ে নিই আন্টির কাছে সেটা ভালো হতনা বেশি।

আচ্ছা বাবা তাই হোক।

আর সেটা কালই বলবে তুমি কেমন।

আচ্ছা, চলো এবারে ফেরা যাক।

ওরা ফিরে আসে, নমিতাদেবী তখনও শুয়েই ছিলেন। আসলে ওনার মাথার আর দোষ কি, যা চাপের মধ্যে উনি চলেছেন তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। 

ওনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এত ঠাণ্ডা থাকতে পারতনা।

রজত ফিরে যায়। 

রাতের বেলায় খেয়েদেয়ে শোওয়ার পর নীলার শরীরটা পুনরায় খারাপ করে।

ডাক্তারের কথামত ওষুধ সব ঠিকঠাকই চলছে। 

নমিতাদেবী বলেন-"মা রে কাল থেকে কদিন একটু বেড রেস্টে থাক আর খাবার গুলো আবারও আগের মত লাইট খা সোনা আমার, কথা শোন একটু"। 

নমিতাদেবী পরেরদিন রেস্তোরাঁয় নিজে বসে খেয়ে আসেন আর মেয়ের খাবার অর্ডার দিয়ে লাইট করে বানিয়ে আনেন এবং ওদের বলে আসেন ওরা দুবেলাতেই যেন খাবার ডেলিভারি করে দেয়। আর সব খাবারই স্পেশালই কেয়ার নিয়ে ওরা যেন লাইট করে বানিয়ে দেয়।

রজত কথা দেয় নিজে দাড়িয়ে থেকে ওদের রান্না করিয়ে নেবে।

এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যায় নীলার ঘরে বন্দি থেকেই। ওর মন পড়ে থাকে রজতের কাছে। ওদের কথা হয় ওই হোয়াটসঅ‍্যাপে।

নীলার চাপে একদিন রজত নমিতাদেবীকে ফোন করে ও বলে -"আন্টি আপনার সাথে আমার বিশেষ কিছু কথা বলার আছে, যদি একটু সময় দেন আমাকে"।

নমিতাদেবী বলেন -"চলে এসো বাড়িতে, এতো সংকোচ করছ কেন"?

না বাড়িতে নয় আন্টি, প্লিজ এখানে যে কফিশপ টা আছে আপনি ওখানে আজ ঠিক পাঁচটায় চলে আসুন। আমি আপনার জন্যে ওখানে অপেক্ষা করব"।

বেশ ঠিক আছে। বলে ফোনটা  কেটে দেয় কিন্তু মনে মনে ভাবেন, কি এমন কথা থাকতে পারে রজতের যা বাড়িতে বলতে পারল না। আমাকে বাইরে দেখা করতে বলল।

এই নিয়ে মেয়েকে আর কিছু বলল না।

বিকেলে বেড়োবার সময় নীলাকে বলল যে সোনা আমি একটু দরকারি কাজে বাইরে যাচ্ছি। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ফিরে আসব। তুই সাবধানে থাকিস কেমন। আর যদি শরীর খুব খারাপ হয়ে পড়ে তবে আমায় সাথে সাথে ফোন করে জানাবি।

ওকে মা তুমি নিশ্চিন্তে যাও।

ওখানে পৌঁছে দেখে রজত বসে আছে আগের থেকেই।

আমি কি দেরী করে আসলাম বসতে বসতে বলেন নমিতাদেবী।

না না আন্টি আমি সময়ের আগেই এখানে এসে বসে আছি।

বলো কি এমন কথা বলতে চাও তুমি যা বাড়িতে বলতে পারলেনা। আমাকে এখানে আনলে ডেকে।

হ‍্যাঁ বলব তো বটেই, আগে দুটো কফির অর্ডার করি। আপনি কি কফি খাবেন আন্টি?

কোল্ডকফি।

বেশ আমি ও ওটাই পছন্দ করি। বলে দুটো কোল্ড কফির অর্ডার দেয় রজত।

তাড়াতাড়ি বলো নীলাকে একা রেখে এসেছি।

আন্টি কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছিনা। তবে একটা কথা বলি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না। এই কথাটা নীলাই আপনাকে বলতে চেয়েছিল কিন্তু আমি বললাম যে আমিই আপনাকে নিজের মুখে বলতে চাই।

সেটা হলো আমরা দুজন দুজনকে খুবই পছন্দ করি ও ভালোবাসি। আমরা চাই আপনার অনুমতি নিয়ে বিয়ে করতে।

অসম্ভব বলে ওঠেন নমিতাদেবী।

এটা জানত যে এমন একটা রিয়‍্যাকসন হবেই। তাইতো বাড়িতে বসে কথা বলতে চায়নি রজত।

আমি জানি আন্টি আপনি আমার বয়স নিয়ে আপত্তি করছেন। কিন্তু একবার ভাবুন দুটি মানুষের মনের যদি মিল থাকে সেক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্যটা কোনো বাধা হওয়া উচিৎ নয়।

প্লিজ দেখুন আমার 

আজ মা বাবা কেউই বেঁচে নেই। আপনি আমার মায়ের মত। আপনি প্লিজ অমত করবেন না। আমি কথা দিচ্ছি আপনার মত না পারলেও ওকে অনেক সুখে রাখব আমি জীবনের শেষ পর্যন্ত।

যেটা হওয়ার নয় তা কল্পণাও করোনা রজত।

তোমার ভালোর জন্যে বলছি তুমি ওকে ভুলে যাও। আজকের পর থেকে ওর সাথে কোনো যোগাযোগ তুমি রেখোনা আর।

কিন্তু কেন সেটা কি আমি জানতে পারি আন্টি??

কি আমার অপরাধ?

কেন এত বড় শাস্তি আমাদের দিচ্ছেন আপনি।

শাস্তি নয় রজত তোমার ভালোর জন্যে বলছি আমি। তুমি সরে গেলে তোমার জীবন টা বাঁচবে।

আমি আর একটা কথাও এই ব‍্যাপারে বলতে চাইনা। আমি উঠছি।

প্লিজ আন্টি আপনি করতে পারেননা শুধুমাত্র বয়সের জন্যে। আমাদের দুজনের সারাটা জীবন জড়িয়ে আছে শুধুমাত্র আপনার একটা সিদ্ধান্তের উপরে।

তোমার সারা জীবনের কথা ভেবেই বলেছি আমি রজত। 

কেন বুঝতে চাইছ না তুমি??

নীলার হাতে তো আর বেশী সময় নেই। ও আর মাত্র কিছু মাসের অতিথি আমাদের কাছে।

মানে!!!!

এ আপনি কি বলছেন আন্টি।

নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেন না নমিতাদেবী,, মন খুলে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।

রজত কি বলবে সে তো হতভম্ব হয়ে যায় এই শুনে, বলে আন্টি আপনি কি বলছেন এইসব আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আপনি কাঁদবেননা এইভাবে। আমাকে একটু খুলে বলুন। 

আমি যে এইভাবে মন খুলে কতদিন কাঁদতে পারিনি রজত। শুধুই ভালো থাকার অভিনয় করে চলেছি এই রঙ্গমঞ্চে,, জানি শেষ দৃশ্য পড়ার আগে যে আমার ছুটি নেই।

নীলার ক‍্যান্সার হয়েছে এখন ওর লাস্ট স্টেজ। ও জানে ওর এমনি শরীর খারাপ,, ঠিকমতো ওষুধপালা খেলেই ও আবারও আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে। ওর হাতে মাত্র দুটো মাস আর পড়ে আছে। 

তাহলে তুমি বলো এই জেনে শুনে কেউ তার মেয়েকে কোনো ছেলের জীবনের সাথে জড়িয়ে দেয়।

তাই বলছি তুমি এইসব কথা প্লিজ নীলাকে বলোনা। 

আর তুমি আজকের পর আর যোগাযোগ করোনা। এতে তোমারই ভালো।

আপনি মা হয়ে যেমন চাইছেন যে নীলা যাওয়ার আগে ইচ্ছে মত সুন্দর ভাবে তার জীবন টাকে উপভোগ করে যাক। যাতে আপনার যেন কোনো আক্ষেপ না থাকে। তেমনি এই বিয়েটাকে কেন্দ্র করেও নীলা অনেক স্বপ্ন দেখছে আন্টি। আর সত্যি কথা বলতে আমি তো যেহেতু ওর থেকে বয়সে ছোট তাই ভালো লাগা সত্বেও ওর কাছে প্রকাশ করিনি।

ওই কিন্তু এগিয়ে এসেছিল আন্টি। 

তাই ওর এই ইচ্ছেটাও আমি পূরণ করতে চাই। আপনি অমত করবেন না। আমি আর দেরী করতে চাইনা। এই দুদিনের মধ্যেই ওকে বিয়ে করে আমার কাছে নিয়ে যেতে চাই। যাতে ওর সব স্বপ্ন পূরণ হোক।

কিন্তু তারপর তোমার কি হবে সেটা ভেবে দেখেছ একবার?

এইভাবে পাগলামি করোনা তুমি।

আজ তোমার বাড়ির লোকজন বেঁচে থাকলে তাঁরা কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিতেন না।

যখন তারা নেই, তখন তাদের কথা ভেবে কি লাভ বলুন। বরং নীলা তো এখনো বেঁচে আছে। আমরা তো তাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে ও একবার দেখতে পারি শেষ চেষ্টা করে।

নমিতাদেবীর কোনো কথাই আর শোনেনা রজত।

দুদিনের মধ্যেই বিয়ের আয়োজন করে নীলাকে বিয়ে করে নিয়ে সে চলে যায় তার বাড়ি। নীলার শেষ স্বপ্ন পূরণের জন্যে।

                   সমাপ্ত