Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#কাঙ্খিত_সকাল#সোমা_ত্রিবেদী২৮•০২•২০২১
সকালে ঘুমটা এক চেনা অস্বস্তিতে ভেঙে গেলো রুমেলার। বড্ড চেনা পেটের এই ব‍্যাথাটা। তার মানে এ-মাসেও। ধীরে ধীরে উঠে বাথরুমের দিকে এগুলো। হ‍্যাঁ ঠিক তাই। বাথরুমেই কান্নায় ভেঙে পড়ল রুমেলা।
 প্রায় ন ব…

 


#কাঙ্খিত_সকাল

#সোমা_ত্রিবেদী

২৮•০২•২০২১


সকালে ঘুমটা এক চেনা অস্বস্তিতে ভেঙে গেলো রুমেলার। বড্ড চেনা পেটের এই ব‍্যাথাটা। তার মানে এ-মাসেও। ধীরে ধীরে উঠে বাথরুমের দিকে এগুলো। হ‍্যাঁ ঠিক তাই। বাথরুমেই কান্নায় ভেঙে পড়ল রুমেলা।


 প্রায় ন বছরের বিবাহিত জীবন তাদের। সেই দুবছরের মাথায় প্রথম বাচ্চাটা তিন মাসের.... আর তারপর কিছুতেই আসতে চায়না। প্রতি মাসেই ক্লিনিকে ছোটা। গাদা খানেক ইন্জেকশান নেওয়া। সারাদিন রকমারি ওষুধ খাওয়া তো আছেই। অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে কন্সিভ করছেনা, ডাক্তারের এই কথা শুনে প্রাইভেট কম্পানির চাকরিটাই ছেড়ে দিল রুমেলা। শ্বশুর শাশুড়ি গ্রামের বাড়িতে তালা দিয়ে ওদের কোলকাতার ছোট্ট দুকামরার ফ্ল‍্যাটে চলে এলেন, যাতে রুমেলার সাংসারিক পরিশ্রমটাও কমে। সত্যি ওনারা কুটো ভেঙে দুটো করতে দেননা। এমন শ্বশুরবাড়ি পাওয়া ভাগ‍্যের কথা। তবুও কেনোযে কাঙ্ক্ষিত সুখটা অধরা কে জানে। 


অনয় ঘুমের ঘোরেই রুমেলার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। কান্নার কারণ বুঝতে বিন্দুমাত্র দেরি হয়নি। অনয় ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে বাথরুমের দরজায় ঠকঠক করতে থাকে। অনেক কষ্টে রুমেলা কান্না জড়ানো গলায় সাড়া দেয়। রুমেলা বাইরে আসতেই অনয় নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। রুমেলার চেপে থাকা কান্নাটা অনয়ের বুকে আশ্রয় পেয়ে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে লাভার স্রোতের মতন চুড়ান্ত বেগে বেরিয়ে আসে। অনয় থামায় না। তার বোঝানোর ভাষা এই মুহূর্তে অন্তত নেই। সে জানে আবার একটা অপেক্ষা। গোটা একটা মাসের অপেক্ষা। আবারও কিছু ইন্জেকশান, আর সঙ্গে উদ্বেগ।


নিজেদের মাঝের শারীরিক সম্পর্কটাও কেমন জোলো আর স্বার্থ ভিত্তিক হয়ে উঠেছে। আর ওই সময় মনে হয় না এটা নিজেদের মাঝের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। শুধুমাত্র যেন অধরা সুখের সন্ধানে নেমেছে তারা। প্রাণ চঞ্চল রুমেলার মুখের হাসি চলে গেছে। উভয়ই জীবনটাকে বয়ে বেড়ানোর যুদ্ধে নেমেছে মনে হয়। অনয়ের মা আর থাকতে না পেরে একদিন বলেই ফেললেন, তোরা এবার এসব বন্ধ কর। রুমেলার সুস্থ থাকাটাই আমার কাছে বেশি দামি। বাচ্চা হোক বা নাহোক তোরা নিজেরা কেনো নিজেদের নিয়ে সুখী থাকবিনা। বাচ্চা না হলে কি পৃথিবীতে আর কিছু করার নেই বা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আর কোনো কারণ নেই এমন তো নয়। তোরা বরং এডপ্ট করে নে যদি মনে করিস বাচ্চা তোদের একান্তই প্রয়োজন। না উভয়ের কেউই এ কথার উত্তর দিতে পারেনি। আসলে এডপ্টের কথা তারা ভাবেইনি। শাশুড়ি ঘর থেকে চলে যেতে রুমেলার মনে পড়তে থাকে বিয়ের পরে পরের সেই স্বপ্নে সাজানো দিনগুলো। কোথায় হারিয়ে গেল সেসব দিন। সত্যিইতো অনয়ের অফিস থেকে ফেরার আগে আরতো কই নিজেকে একটু সাজিয়ে রাখতে বা বিছানাটা টানটান করতে কিম্বা ফুলদানিতে একটু ফুল সাজাতে ইচ্ছাই করেনা। তখন অফিস করে ঘরের কাজ করেও কতো কি ইচ্ছা হতো মনে। অপরদিকে অনয়েরও মনে হতে থাকে আগে অফিস থেকে ফেরার পথে কতোবার একসঙ্গে ফিরেছে ফোন করে ডেকে কোন এক জায়গাতে মিট করে। কখনও বা জোর করে হাফডে ছুটি নিতে বাধ্য করেছে রুমেলাকে শুধুমাত্র ফাস্ট ডে ফাস্ট শো সিনেমা দেখার তাগিদে। প্রতিটা ছুটির দিনই ছিল তাদের কাছে অত্যন্ত স্পেশাল। সব সময় ঘুরতে না গেলেও ঘরে বসেই একে অপরের কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আর না ফুরোনো কথার পাহাড়ে ছুটির দুটো দিন কিভাবে শেষ হয়ে যেতো। আর এখন মনে হয় কোনো কথাই অবশিষ্ট নেই, মাঝে মাঝে ফোন করে ওষুধ খেয়েছ জিজ্ঞেস করা ছাড়া। উভয়ই বোঝে তারা বড্ড বদলে গেছে বাচ্চা চাই বাচ্চা চাই করে। একটা মেকানিক‍্যাল লাইফ তারা কাটাচ্ছে। পাশের ঘরেই অথচ দুই বৃদ্ধ বৃদ্ধা আজও কতো সহজ সরল জীবনে চলছে। আজও তাদের মাঝে কতো কথা বলা বাকি রয়ে গেছে।


দীর্ঘদিন বাদে রুমেলা আজ দুপুরে বসে আলমারি গোছালো। বহুদিন আগে অনয়ের কিনে দেওয়া কালো শিফোন জর্জেট শাড়িটা গায়ে পরে শাশুড়ির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমাকে কেমন লাগছে মা? সুন্দরী বৌমার দিকে অপলক চেয়ে কাছে এসে বললেন আয় আজ তোকে সাজিয়ে দিই নিজে হাতে। কাজল লিপস্টিকে সাজিয়ে নিজেও চট করে কাপড় ছেড়ে নিলেন, তারপর বৌমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। কোনো নিদিষ্ট জায়গা না, খানিকটা হেঁটে একটা পার্লারে জোর করে ঢোকালেন রুমেলাকে। চুলটা সুন্দর করে কাটিয়ে ফেসিয়াল করালেন আর ফেরার পথে বেশ কিছু ফুল দুজনে পছন্দ করে কিনে বাড়ি ফিরে ঘরে, বাইরের ঘরের ফুলদানি সাজিয়ে ফেললেন। শাশুড়ি বৌয়ে অনেক গল্পও হলো। মাঝে পরিস্থিতি এমনই ছিল যে সারাদিন রুমেলা শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গেও প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলতো না। সব সময় চুপচাপ নিজের ঘরেই থাকত। কিছুটা খিটখিটেও হয়ে পড়ছিল। অনয় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এই পরিবর্তনে নিজেও বেশ খুশি হলো। সেও সকলের সঙ্গে গল্পে যোগ দিল, অফিসের কাজ দুরে সরিয়ে রেখে। রাতে পাশাপাশি শুয়ে রুমেলা আর অনয়ের মাঝে আজ অনেক কথা হলো। পুরোনো ফেলে আসা দিনের কথা। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নিজেদের মধ্যেকার যান্ত্রিকতা কেটে সহজ ভাব ফিরে এলো।


দীর্ঘদিন পর অনয় রুমেলা ঘুরতে এসেছে। বেশি দুরে নয় কাছে পিঠেই। কালনার শিব মন্দির। মন্দির থেকে বেরোতে গিয়ে হঠাৎই মাথাটা সামান্য ঘুরে গেল রুমেলার। সে নিজে বিশেষ পাত্তা না দিলেও অনয় চিন্তিত হলো, এতো ওষুধ রুমেলাকে খেতে হয় তার সাইড এফেক্টে এমন হলো হয়তো ভেবে। বাড়িতে ফেরার পরও বেশ কয়েকদিন এমন সামান্য মাথা ঘোরায় রুমেলার। কালনা থেকে ফিরে থেকে তার শরীরে প্রচণ্ড ক্লান্তি। বড্ড ঘুম পায় তার এখন। শাশুড়ির অভিজ্ঞ চোখে সন্দেহ, তিনি রুমেলাকে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেয়। তখনই রুমেলার মনে পড়ে তার ডেট মিস হয়ে গিয়েছে প্রায় দিন কুড়ি হয়ে গেল। ছুটে যায় ডাক্তারের কাছে। সেখান থেকে অনয় রুমেলা বয়ে আনে তাদের অধরা সুখের বার্তা।


ওটির সামনে ব‍্যস্ত চিন্তিত পদচারনা করে চলেছে অনয়। কাছেই চেয়ারে বসে অনয়ের মা বাবা ইষ্ট নাম জপ করে চলেছেন। ভোরের লালিমা মাখা সূর্য তখন আকাশে আপন দিপ্তি ছড়িয়ে সুন্দর সকাল হয়ে ওঠার ঘোষণা করছে। ঠিক সেই মুহুর্তে নার্স বেবী ট্রে করে নিয়ে এলো একটা ছোট্ট পরী। তার চিৎকারে নিজের আবির্ভাব বার্তা নিজেই জানান দিচ্ছে। অপেক্ষায় থাকা তিনটি মানুষ রুমেলার সুস্থতার খোঁজ নিয়ে সদ‍্য আবির্ভূতার দিকে চেয়ে অনুভব করলেন সত্যি কি মিষ্টি এ-সকাল। বড্ড অপেক্ষার এই সকাল। অনেক দিনের আকাঙ্ক্ষা পূর্তির এই সকাল। ভীষণ রকম কাঙ্ক্ষিত এই সকাল।

                  ______________