Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

শিরোনাম —সহকর্মীলেখা —দোলা ভট্টাচার্যতারিখ 4.3.2021
অতনু আমার সহকর্মী। শুধু সহকর্মী নয়, ও আমার খুব ভালো বন্ধুও। আমি আসার বছর দুয়েক আগে এই অফিসে ও জয়েন করেছে। সহজ, শান্ত, স্বল্পভাষী এই মানুষটি খুব সহজেই আমার মন জয় করে নিয়েছিল। …

 


শিরোনাম —সহকর্মী

লেখা —দোলা ভট্টাচার্য

তারিখ 4.3.2021


অতনু আমার সহকর্মী। শুধু সহকর্মী নয়, ও আমার খুব ভালো বন্ধুও। আমি আসার বছর দুয়েক আগে এই অফিসে ও জয়েন করেছে। সহজ, শান্ত, স্বল্পভাষী এই মানুষটি খুব সহজেই আমার মন জয় করে নিয়েছিল। দেখতে দেখতে কতদিন কেটে গেল।প্রমোশনের মুখ দেখিনি আমরা দুজনেই। আমাদের আশেপাশে অনেক কম যোগ্যতা সম্পন্ন, ঘুষখোর কিছু মানুষ ছিল। প্রমোশনের সিঁড়ি বেয়ে তারা কেমন ওপরে উঠে গেল। আমরা রইলাম যথাস্থানে। আমি অবশ্য একলা মানুষ। বিয়ে থা করিনি। মাইনে যা পাই, তাতেই কুলিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে লোটা কম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ভিটের টানে আবার ফিরতেও হয়। অতনুরও খুব ইচ্ছে, আমার সাথে মাঝেমধ্যে বেরিয়ে পড়ার। কিন্তু পারে না। সংসার ওকে আস্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। কোথাও যাবার উপায় নেই ওর। বৃদ্ধা মায়ের একমাত্র অবলম্বন অতনু। অতনু ছাড়া অন্য কোনো ছেলেমেয়েকে উনি ভরসা করতে পারেন না। সদ্য কলেজ পাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই বাবা মারা যান অতনুর। তখন থেকেই সংসারের জোয়াল ওর কাঁধে। উচ্চশিক্ষার ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয়নি তা। ঈশ্বরের কৃপায় এই চাকরি টা তখন পেয়ে গিয়েছিল। এরপর রীতিমত সংগ্রামের জীবন। ছোট ছোট ভাইবোন গুলো কে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তারা প্রত্যেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত। একে একে সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকেরই আলাদা সংসার। মা সরজুদেবী কে নিয়ে একাই থাকত অতনু। সরজুর চাপাচাপি তে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে বিয়ে করতে বাধ্য হল অতনু। মেয়েটির তখন মাত্র একুশ বছর বয়স। অতনুর মাথায় হাত। "মা, তুমি কি পাগল হয়েছো! একটা বাচ্চা মেয়ে! এ আমি পারব না।কেন তুমি বুঝতে পারছ না! আমার যা দায়িত্ব, কর্তব্য ছিল, সব পালন করেছি আমি। আবার কেন নতুন করে বাঁধতে চাইছ। একটু মুক্তি দাও না আমাকে। "  ছেলের আকুতি তে কান দিলেন না সরজু । তাঁর বক্তব্য, "আমাকে সেবা করার জন্য একটা লোক চাই। "

অতনু বলে," সেজন্য আমাকে বিয়ে করতে হবে কেন! একটা আয়া রেখে দিলেই তো হয় "। 

" না। হয় না। ওসব তুই বুঝবি না "। 

" কেন বুঝব না! ঠিকই বুঝেছি আমি। তোমার একটা বিনা মাইনের দাসি চাই। নিজে সারাজীবন সংসারে দাসিগিরি করেছ। আজ চাইছ আর একজন আসুক। তোমার পোস্ট টা তো অনেক দিন ধরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেই পোস্টে বহাল হবে সে। "

এসব কথা গায়ে না মেখেই ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করতে উঠে পড়ে লাগলেন সরজু। একুশ বছর বয়সী পিয়ালীকে নিজে পছন্দ করে ঘরে তুললেন। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংসারে বাঁধা পড়ল অতনু। 

         আমাকে বন্ধু ভেবে সব কথাই বলত অতনু। কখনো ওর বন্ধুত্বের অমর্যাদা করিনি আমি। সেই অতনু আজ রিটায়ার করছে। মনটা খুবই খারাপ হয়ে আছে ওর। বাচ্চা দুটো এখনও খুবই ছোট। সে জন্যেও চিন্তিত বেশ। ওদের দাঁড় করিয়ে দিতে পারবে তো! তার আগেই ওপারের ডাক আসবে না তো! 

      আজ অতনুর ফেয়ারওয়েল ।ওকে নিয়ে একটা ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমে আমাদের বস ছোটখাটো একটা বক্তব্য রাখলেন। ওনার বক্তব্য ছিল অতনু সম্পর্কিত। আজ শুধু অতনু র সম্পর্কেই কথা হবে। অতনু চুপ করে বসে রয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বেশ আপসেট হয়ে আছে। অনেকে অনেক কিছু বলছে ওর সম্পর্কে। এবার এল আমার পালা। কি বলব আমি! 

উঠে দাঁড়ালাম ।অতনু সম্পর্কে তো অনেক কিছুই বলার আছে। কিন্তু সে সময় আমি পাব না। শুধু বললাম, "অতনু আমার ভীষণ ভালো একটা বন্ধু। দেখতে পাচ্ছি, ভীষণ আপসেট হয়ে রয়েছে ও। তাই বলি, আপসেট হবার কিছু নেই বন্ধু। এই দিনটা আমাদের সবার জীবনেই আসবে। চাকরির মেয়াদ শেষ মানে তো জীবনের মেয়াদ শেষ নয়। এখনও দীর্ঘ পথ বাকি আছে বন্ধু। বাকি আছে আরো অনেক কাজ। ভেঙে না পড়ে সামনে তাকাও। নতুন চলার পথ প্রস্তুত। নতুন কর্মক্ষেত্রও প্রস্তুত।  সামনে আছে শুধুই এগিয়ে চলার ডাক। চলো। এগোও। 

কর্মান্তের দিন নয় শুধু আজ, 

কর্ম যে অন্তহীন। 

কর্মের জন্যেই বেঁচে থাকা শুধু, 

কর্মেতে জীবন বিলীন ।

এক কাজ শেষ হলে আর কাজ শুরু, 

পরিবর্তন সে তো হয়। 

জন্মলগ্ন থেকে লড়াই শুরু, 

কর্মে তা পূর্ণতা পায়। 

সবল স্বাস্থ্য আর সতেজ শরীর, 

অন্তরে বল রাখা চাই। 

নতুন জীবন শুরু আজকে তোমার, 

বন্ধু কে শুভেচ্ছা জানাই। 

বলা শেষ হল আমার। সকলে স্তম্ভিত। তারপর শুরু হলো হাততালি। অতনু উঠে এসে জড়িয়ে ধরল আমাকে।  এরপর এই অফিসে অতনুকে আর পাব না। ভেবে চোখে জল আসছে আমার। কিন্তু ওকে তা বুঝতে দিলে চলবে না। অতনুর বাহুপাশ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলাম আমি।