Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#উইকেন্ড_স্পেশাল#ছোটগল্প_জয়ী#পিউ_হালদার_‌আশ২৮/০৪/২০২১       শ্যামলী ওর এখনকার নাম। আগে নাম ছিল মিঠু। মিঠু মুখার্জী। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবার একটা ছোট্ট মুদিখানা দোকান। পরিবারে পাঁচ ভাই বোন। মিঠু ছিল সেজ মেয়ে মানে তিন …

 


#উইকেন্ড_স্পেশাল

#ছোটগল্প_জয়ী

#পিউ_হালদার_‌আশ

২৮/০৪/২০২১

       শ্যামলী ওর এখনকার নাম। আগে নাম ছিল মিঠু। মিঠু মুখার্জী। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবার একটা ছোট্ট মুদিখানা দোকান। পরিবারে পাঁচ ভাই বোন। মিঠু ছিল সেজ মেয়ে মানে তিন নম্বর মেয়ে ওর পরেও একটা বোন এবং সবশেষে মনস্কামনা পূর্ণ করে একটা ভাই। 

     মোট সাতটা লোকের পেট চালাতে হিমশিম খাবার জোগাড় সন্তোষ বাবুর। তার‌ওপর ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচ। মিঠুর দুই দিদির একজন মাধ্যমিক পাশ করেই বিয়ে হয়ে যায় আর মেজো দিদি নাইনে পড়তে পড়তেই একটা ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। মিঠু পড়াশুনায় খুব ভালো ছিল। ওর ইচ্ছা ছিল যে করেই হোক কাজ করে হলেও পড়াশুনা টা চালিয়ে যাবে। সেইমতো পড়াশুনা টা মন দিয়ে করতে থাকে। মাধ্যমিক পাশ করে ইলেভেনে ভর্তি হয় ওদের স্কুলেই। বেশ চলছিল পড়াশুনা। নিজে টিউশন করে নিজের পড়াশুনার খরচ চালাতো।

       গরীব ঘরের মেয়ে মিঠুর রূপের ঝলকে পাড়ার ছেলেরা চোখ ফেরাতে পারে না। শুধু পাড়ার কেনো রাস্তায় বেরোলেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে সবাই ওর দিকে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দ্যাখে ওর বাবার দোকানে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। দূর থেকে দেখে মনে ভীষণ জরুরী কিছু আলোচনা। ও ভাবে বাবার দোকানে তো কতরকম লোক আসে, কতকিছু নিয়েই আলোচনা করতে শুনেছে সে। কিন্তু আজকে ওর বাবার মুখ দেখে বুঝতে পারে ব্যাপার টা খুব সিরিয়াস কিছু। ও আর ওখানে কিছু না বলে সোজা সাইকেল নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়ি এসে হাত মুখ ধুয়ে একটু খেয়েই টিউশন পড়াতে যাবার জন্য তৈরী হতে থাকে।সবকিছুর মধ্যে ও ওর মাথায় এক‌ই চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে লোকটা বাবাকে কি বলছিল এত সিরিয়াস হয়ে? 

       ও তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে টিউশন পড়াতে চলে যায়। কিন্তু মন কিছুতেই বসাতে পারে না। একটু তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়ি বলতে টিনের চাল দেওয়া দুটো ঘর ছোট ছোট আর সামনে একফালি বারান্দা যেখানে ওর মা রান্না করে। ঘরের দাওয়ায় পা দিতেই বাবার কথা শুনতে পায় 

    "বুঝলে মিঠুর মা, মিঠুর জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আজ শহর থেকে এক বাবু এসেছিল আমাদের গ্রামে। ওরা নাকি কিসব সার্ভে টার্ভে করে। গ্রামে গরীব ঘরের যেসব মেয়েরা টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে পারে না তাদের ওরা শহরে নিয়ে গিয়ে থাকা খাওয়া এমনকি পড়াশুনার ব্যবস্থা ও করে দেবে। কিন্তু তার বিনিময়ে ওদের কিছু কাজ করে দিতে হবে। ভাবছি মিঠু কে পাঠিয়ে দেবো। এখানে তো না পায় ভালো খেতে না পায় ভালো পরতে, দিনরাত খেটে মরছে দুটো পয়সার জন্য। মিঠুকে আগে পাঠাই তারপর না হয় টুসু কে..... "

      না বাবা আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না। সেরকম হলে আর ও টিউশন নেবো, খাটবো, তবু তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না, আমাকে কোথাও পাঠিয়ে দিও না বাবা। আমি মরে যাবো। 

     মিঠুর মা বলে "মাথা ঠাণ্ডা কর মা। দ্যাখ বাবা তো তোর ভালোর জন্যই বলছে। তোর বাবা কি কখন ও তোদের খারাপ চেয়েছে? ওখানে কোনো অসুবিধা হবে না তোর। ভালো খেতে পাবি, মন দিয়ে পড়াশুনা করতে পারবি হ্যাঁ বিনিময়ে ওদের কিছু কাজকর্ম করে দিতে হবে "

       হ্যাঁ মা এখানেই আমার প্রশ্ন? কি কাজ করতে হবে যে তার বিনিময়ে ওরা খেতে পরতে দেবে? আবার তার সঙ্গে লেখাপড়ার খরচ......... না মা আমি যাবো না। 

      ওরকম করে না রে মা। তোদের যাতে ভালো হয় সেই ব্যবস্থাই তো করতে হবে। 

     একসপ্তাহ পরে দুটো বড় গাড়ী এসে গ্রামের প্রায় দশ জন মেয়েকে নিয়ে যায়। আর যাবার আগে ওদের পরিবারের হাতে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে যায় আর বলে যায় ওদের মেয়েরা প্রথম প্রথম মাসে একবার করে আসবে তারপর দুমাস অন্তর, এইভাবে আসা যাওয়া আসতে আসতে কমাতে হবে। গ্রামের মুখ্যু সুখ্যু বাবা মায়েরা তাই মেনে নেয় মেয়ের একটু সুখের জন্য। যে সুখ তারা দিতে পারে নি সেই সুখ যদি অন্য কোথাও গিয়ে তারা পায়। 

       শহরে গিয়ে গ্রামের মেয়ে গুলো হতভম্ব হয়ে যায়। এ কোথায় তারা এসে পড়লো? কি বড় বড় আকাশ ছোঁয়া বাড়ি। ঝকঝকে রাস্তা। ওদের যে বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেটা ও বেশ বড় বাড়ি, তিনতলা। অনেক গুলো ঘর। ওদের সবার জন্য আলাদা আলাদা ঘরে ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিঠুও এবার বেশ খুশি হয়। ওদের যা যা বলে আনা হয়েছে প্রথম কয়েক মাস সেভাবেই চলেছে। কিন্তু মাস ছয় যাবার পর থেকেই ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। প্রথমেই মিঠুকে পাঠানো হয় একটা নতুন বাড়িতে। ও অবাক হয়ে যায়। 

      সেখানে অনেক মেয়েরা আছে ওর বয়সী, ওর থেকে ছোট আবার কেউ কেউ বড়। আর আছে একটা মাসি। মালতী নাম। সবাই মালতী মাসি বলে ডাকে। মিঠুকে সেই শহরের বাবু মালতী মাসির কাছে দিয়ে আর অনেক টাকা নিয়ে চলে যায়। মিঠু অনেক করে বলে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পায়ে ও ধরে কিন্তু বাবু থুতু দিয়ে টাকা গুণতে গুণতে শ্লেষের হাসি হেসে ওকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে চলে যায়।শুরু হয় মিঠুর নতুন জীবন। 

       এখন আর মিঠু মিঠু না। ওর এই জীবনে নাম হয়েছে শ্যামলী। প্রথম প্রথম কিছুই বুঝতে পারতো না। শুধু দেখতো খোপরী খোপরী ঘর, একটা করে চৌকিতে পরিপাটি করে বিছানা পাতা। ঘরে জানলা দরজায় পর্দা টাঙানো। আর সব মেয়েগুলো বিকেল হলেই চোখে মুখে রঙ মেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো আর বাবুদের ডেকে ঘরে নিয়ে আসতো। ক'দিন পর থেকে শুরু হোলো শ্যামলীর ট্রেনিং। কিভাবে সাজগোজ করতে হবে, কিভাবে দাঁড়াতে হবে, কিভাবে বাবু ধরতে হবে আর সবশেষে কিভাবে ঘরে নিয়ে এসে তাদের মনোরঞ্জন করতে হবে।ও কোনোদিন এসব শোনেনি। বেশ অবাক হয়ে যায়। যে ওর বাবা ওকে এ কোন জায়গায় কাকে বিশ্বাস করে ছেড়ে দিলো? বাবা মায়ের ওপর প্রচন্ড অভিমান হয়। সেই অভিমান আসতে আসতে রাগ থেকে ঘৃণার পর্যায়ে চলে আসে। একবার রাতের অন্ধকারে ও পালিয়ে ও এসেছিল। লোক কে জিজ্ঞাসা করে করে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছিল। ভেবেছিলো আর ফিরে যাবে না। এখানে থেকে আবার পড়াশুনা শুরু করবে। 

          কিন্তু বাড়ি ফিরে এসে দ্যাখে অন্যরকম পরিবেশ। কোথায় তাদের সেই টিনের চালের বাড়ি, কোথায় সেই মাটির দাওয়া যেখানে ওর মা রান্না করতো আর ভাই বোনেরা মিলে আনন্দ করে খেতো। এযে পাকা বাড়ি, সাজানো গোছানো ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম। বাড়ির ভিতরে ঢুকে দ্যাখে বড় খাটে বসে মা বাবা ভাই বোন সবাই মিলে গল্প করছে আর ওদের হাসিতে যেনো ঘর ফেটে যাচ্ছে। মিঠু ওরফে শ্যামলী ঘরে ঢুকতেই ওর বাবা মা ভাই বোন কেমন যেনো চুপ করে যায়। ও ঘরে ঢুকে ওর মাকে জড়িয়ে ধরতে গেলেই ওর মা ছিটকে দূরে সরে গিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। ওর মায়ের এই ব্যবহারে ও অবাক হয়ে যায়। ওর তাকিয়ে থাকা দেখে ওর মা বলে "বেশ্যা মেয়েছেলে, লজ্জা করে না তোর গ্রামে ঢুকতে? কে তোকে এই বাড়িতে আসতে বলেছে। কার অনুমতিতে এসেছিস তুই এই বাড়িতে? পড়াশোনার জন্য তোকে শহরে পাঠানো হয়েছিল, তুই সেসব না করে বেশ্যাবৃত্তি করে রোজগার করা শুরু করেছিস? ছিঃ! ভাবতেও ঘেন্না লাগে যে তোর মতো মেয়েকে আমি পেটে ধরেছিলাম? 

       মা কি বলছো তুমি এসব? আমি তো যেতে চাইনি, তোমরাই  তো পাঠিয়েছিলে আমাকে জোর করে। তোমরা তো নিশ্চয়ই জানতে? কি বাবা তুমি জানতে না? আমায় কোথায় পাঠাচ্ছো? কত টাকা নিয়েছিলে তুমি ঐ শহরের বাবুর কাছ থেকে?? 

       ওর বাবা বলে বিশ্বাস কর মা ওরা আমাকে যা বলেছিলো আমি তোকে সেই ভেবেই পাঠিয়েছিলাম।তখন আমাকে মোটা টাকা দিয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু এত বলেছিলো যে তোকে পুরোপুরি তৈরি করে পাঠাবে। সেই টাকা দিয়েই এইসব বাড়ি ঘরদোর হয়েছে।কিন্তু কিছুদিন আগেই ঐ লোকটি এসেছিল আমাদের বাড়িতে আর বলে গেলো যে তুই নাকি ওদের ওখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বেশ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিস। আর বললো তুই নাকি কিছু টাকা আমাদের জন্য পাঠিয়েছিস। এই দ্যাখ সেই টাকা তোর মা ধরেওনি। যেমন দিয়ে গেছে সেরকম‌ই আছে। 

         ওর মা বলে "কেনো এতো কথা বলছো ওর সাথে? আমাদের বাড়িতে কোনো বেশ্যার জায়গা নেই। (টাকাটা ওর মুখে ছুঁড়ে মারে) বেড়িযে যা এখান থেকে তোর অসৎ উপায়ে অর্জন করা টাকা নিয়ে। 

      মা! কি  বলছো তুমি? আমার কথাটা শোনো মা। আমি বেশ্যা ন‌ই মা। ওই লোকটা আমাকে ওর ডেরায় কিছুদিন রেখে তারপর আমাকে ঐ জায়গায় পাঠিয়ে দেয় ঐ মাসির কাছে মোটা টাকার বিনিময়ে। আমি ওনার পায়ে ধরে ভিক্ষা চেয়েছিলাম আমাকে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু উনি আমাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বেড়িয়ে যায়। আমি ওখানে দুই রাত কাটিয়েছি ঠিক কথাই কিন্তু আমি অসতী হ‌ইনি মা বিশ্বাস করো। আমি আর ওই ভাগাড়ে ফিরে যেতে চাই না মা। তোমাদের কাছে থাকতে চাই। 

        বেড়িয়ে যা বলছি। ভালো কথায় বলছি বেড়িয়ে যা। নাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো। তোর জন্য আমাদের গ্রাম ছাড়তে হবে দেখছি। এই বয়সে তোর বাবাকে নিয়ে ভাই বোনেদের নিয়ে কোথায় যাবো এত সুন্দর বাড়ি ঘর দোর ছেড়ে?ভালোয় ভালোয় বলছি বেড়িয়ে যা।জীবনে আর কোনোদিন ও তোর মুখ দেখতে চাই না। আমরা জানবো আমাদের মেয়ে মরে গেছে। 

      মা গো এত বড় কথা তুমি আমাকে বলতে পারলে? আজ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি মা  আমার জন্য‌ই আজ তোমরা এই ইমারতে বাস করতে পারছো সেটা আমার জন্যই। আমাকে বিক্রি করে বাবা এতো টাকা পেয়েছিলো আর সেই টাকাতেই তোমাদের এত অহংকার। বেশিদিন থাকবে না মা তোমাদের এই অহংকার। চূর্ণ হয়ে যাবে। ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যাবে তোমার এই সাধের সাজানো সংসার। তখন এই বেশ্যা মেয়েকেই তোমার মনে পড়বে। আমার ঠিকানা টা রেখে গেলাম, প্রয়োজন তো পড়বেই একদিন না একদিন। তখন গিয়ে টাকা নিয়ে এসো। 

      এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে সেদিন ফিরে এসেছিলো শ্যামলী। তারপর থেকে ওর স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যায় মালতী মাসির বাড়ি। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হোতো। লাইনে দাঁড়াতে লজ্জা পেতো। কতদিন ফিরে এসে ঘরের দরজা আটকে বসেছিল, কিন্তু মাসি ঘর খুলতে বাধ্য করেছিল আর তারপর চলেছিল অকথ্য অত্যাচার, মারধোর। সেদিন রাত্রে খাবার টুকুও জোটেনি। তবে ওখানে ওর একটা খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছিল। শিখা ওর থেকে একটু বড়, বয়সেও অভিজ্ঞতা তেও। শিখার ভালোবাসায় আদরে খুব তাড়াতাড়ি কাজটা শিখে গিয়েছিল শ্যামলী। আসতে আসতে বাবুদের নয়নের মণি হয়ে যায় ও। কি ভাবে বাবুদের হাত করতে হবে, কি ভাবে মনোরঞ্জন করে মোটা টাকা উপার্জন করতে হবে সবটা শিখে যায়। 

        এইভাবেই চলছিল শ্যামলীর জীবন। গ্রামে বেড়ে ওঠা একটা সহজ সরল মেয়ে এখন পতিতালয়ের বাসিন্দা। মাঝে মাঝে বাড়ির লোকের কথা ভাবলেই ওর দুচোখ জলে ভরে যায়। ছোট ছোট ভাই বোন গুলো ছিল বড় আদরের। গ্রামের পুকুরে সাঁতার কাটা বন্ধুরা সবাই মিলে। মাঠের আল ধরে হেঁটে যাওয়া। সবকিছুই ওর কাছে এখন অতীত। 

          তিন চার বছর পর একদিন ওর ঘরে এক সুদর্শন যুবকের আগমন ঘটে। নাম সুমন। শ্যামলীর কথাবার্তা আচার ব্যবহার দেখে ও অবাক হয়ে যায়। আর পাঁচটা মেয়ের মতো গায়ে পড়া নয়। গা দেখানো নয়। অতি ভদ্র ব্যবহার অথচ কত সহজেই মানুষের মন জয় করতে পারে। প্রথম দিন সুমন ওর সাথে সারা সন্ধ্যে টা কাটায় শুধুই গল্প করে। ওর ভদ্র ব্যবহার দেখে সুমন ওর কাছ থেকে সবকিছু জানতে চায়, ওর মনে হয়েছিল শ্যামলীর মতো মেয়েদের এখানে মানায় না। কোনো বিপাকে পড়েই এখানে আসতে বাধ্য হয়েছে। প্রথম দিন দু ঘন্টা সময়টা  ওরা শুধুই গল্প করে কাটিয়ে দেয়। সুমন ওকে ছুঁয়েও দেখে না আর শ্যামলী ও দূরে মেঝেতে বসে ওকে সবকিছু বলছিল। কিন্তু প্রথম দিন সবকিছু বলা হয়ে ওঠেনি। সুমনকে ফিরে যেতে হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট পেমেন্ট করে দিয়ে যায় ও। এইভাবে কয়েকদিন পর পর ই ও আসতে থাকে আর শ্যামলীর জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছু ঘটনা জানতে পারে। 

          সুমন খুব ভদ্র ঘরের ছেলে। প্রথম প্রেমে আঘাত পেয়ে দিশেহারা হয়ে এক বন্ধুর প্ররোচনায় এসেছিল এই মালতী মাসির বাড়িতে। সেখান থেকেই শ্যামলীর সাথে আলাপ। মনে মনে ওরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু একজন পতিতার যে কাউকে ভালোবাসতে নেই, তাই ও আসতে আসতে সুমনকে অ্যাভয়েড করা শুরু করে। কিন্তু সুমন বারবার ফিরে ফিরে আসে শ্যামলীর কাছে। 

            এদিকে সুমন ওর বাড়িতে বাবা মা কে শ্যামলীর কথা জানায়। একদম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব শোনার পর সুমনের মা সিদ্ধান্ত নেয় সুমনের সাথে শ্যামলীর বিয়ে দেবে। কিন্তু ওর বাবা আপত্তি জানায়। তারপর উনি নিজের মনে সব ঘটনা গুলো কে অনুধাবন করার পর এই বিয়েতে উনি ও মত দেন। বাকি থাকলো আত্মীয়স্বজন। ওর মা বলে সেসব ব্যাপার উনিই সামলে নেবেন। বাইরের লোক কে অত ঢাক পিটিয়ে  বলার কি আছে আমার ছেলের বৌ একজন পতিতা। আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা তো আমার দেখার কথা নয়। এখন ও আমার ঘরের লক্ষ্মী হতে চলেছে সেটাই বড় কথা।

           কিন্তু পতিতালয় থেকে একটা মেয়েকে বের করে নিয়ে আসা অত সোজা কথা নয়। মাসি জানতে পারলে মেরেই ফেলবে। এদিকে শ্যামলী মনে মনে প্রস্তুত হয়েই আছে যে ওকে এর মধ্যেই একদিন সুমনের হাত ধরে বেড়িয়ে যেতে হবে। সামনের সপ্তাহে ওদের বিয়ে। ওর সব কথা জানে একমাত্র শিখা।ও ই ওদের পালাতে সাহায্য করে। একদিন সন্ধ্যায় শিখা ওর জন্মদিন বলে সবাইকে নিজের হাতে বানানো সরবৎ খাওয়ায়। ওতে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল। একমাত্র শিখা আর শ্যমলী খায়নি। রাত দুটো নাগাদ সবাই যখন ঘুমে অচেতন তখন শিখা পতিতালয়ের দরজা উন্মুক্ত করে দেয় শ্যামলীর জন্য চিরদিনের মতো। চলে যাবার সময় দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদে। শেষে শিখাই বলে "নে বোন এবার তুই যা তোর ভগবানের হাত ধরে বিদায় নে। ভোর হয়ে আসছে, সবার ওঠার সময় হয়ে আসছে।কেউ যদি উঠে পড়ে তো কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না। হয়তো তোদের দুজনকেই মেরে ফেলবে। যা চলে যা"।

                ওখান থেকে  ছুটতে ছুটতে বেড়িয়ে আসে বড় রাস্তার ওপর যেখানে সুমনের বন্ধুরা গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই ওরা পৌঁছে যায় সুমনদের বাড়ি।সুমনের বাবা মা পরম স্নেহে ওকে অভ্যর্থনা জানায়। শ্যামলী সঙ্গে করে কিছুই আনেনি। সুমনের মা নতুন জামা কাপড় দিয়ে বলে আগে স্নান করে তারপর এই পোষাক গুলো পরে আসতে। শ্যামলী স্নান করে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ওরা সবাই খাবার টেবিলে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। তারপর সবাই মিলে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে। 

       কয়েকদিন পর আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব দের উপস্থিতিতে ওদের চার হাত এক হয়ে যায়। খুব ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করেছিল সুমনের বাবা। শ্যামলীর শ্বশুরবাড়ি তে এসে শাশুড়ী মা নতুন নাম দেয় জয়ী। অনেক যুদ্ধ জয় করে আজ ও এই নতুন সংসারে প্রবেশ করেছে। তাই ও জয়ী। এমন পরিবার আর সুমনের মতো ছেলে পাওয়া ভাগ্যের কথা। 

           আজ জয়ী স্বামী শ্বশুর শাশুড়ী কে নিয়ে সুখে সংসার করছে দুবছর হতে চললো। আর একটা সুখবর ও আছে সবার জন্য জয়ী মা হতে চলেছে।