#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
💘'এবং দ্বিতীয়' অর্পিতা কামিল্যাপরিস্থিতি মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন । সেটি স্থান কাল পাত্র বিচার না করে, হঠাৎই চলে আসে। আর সেই জন্যেই হয়তো মানুষ না চাইলেও অনেক সময় অকারণে প্রেমে পড়ে। সবার ভাগ্যেই প্রে…
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
💘'এবং দ্বিতীয়'
অর্পিতা কামিল্যা
পরিস্থিতি মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন । সেটি স্থান কাল পাত্র বিচার না করে, হঠাৎই চলে আসে। আর সেই জন্যেই হয়তো মানুষ না চাইলেও অনেক সময় অকারণে প্রেমে পড়ে। সবার ভাগ্যেই প্রেম যেন পূর্ব নির্ধারিত থাকে। অনেক বিবাহিত জীবনেও অনেক সময় একজন বাইরের মানুষের অনুপ্রবেশের কারনে সংসার ভেঙে যায় ! পরিস্থিতির কারণেই ভুল হয় !আবার পরিস্থিতির থেকে শিক্ষা পেয়েই মানুষ আর নতুন করে কোনো ভুল করে না। অথবা নতুন করে আবারো বাঁচে!
(পর্ব-1)
"ওই,প্লিজ দেখো না,এই শাড়ি টা পরবো?এই শাড়িটার সাথে এই ব্লাউজ টা? নাকি ঐ ব্ল্যাক সিফন এর সাথে এই স্টোন সেটিং সুন্দর ব্লাউজ টা দিয়ে ?" -- বন্যা।
"যেটা খুশি পরো,কিন্তু লক্ষীটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রেডি হয়ে নাও, সাড়ে নয়টা বাজে! এর পরে কেউ বার্থডে পার্টিতে যায়?-- হ্যাঁ ঐ কালো শাড়ি টা পরে নাও,তোমার গায়ের রঙ তো সোনার মতো, যা পরবে তাই সুন্দর মানায়"। --চন্দন ।
"আমি তো কবেই রেডি হয়ে থাকতাম, তোমারই তো কোনো ঠিক ছিলোনা আসার, শুধু কাজ আর কাজ, বাব্বা! আমার জন্যে তোমার সময় কোথায়? -তবুও যদি তোমার নিজের বাড়ির তরফের কোনো আত্মীয় স্বজনদের কিছু ইভেন্ট হতো, তাহলে ঠিক তোমার মায়ের চাপে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে। এখন তো উনি দিদিভাই এর ওখানে গেছেন ,মা এর শাসন টাও নেই--এমনই বাচ্চাদের মতো , মা যা বলে তাই করে।মায়ের ছেলে কোথাকার"--বন্যা ।
"আরে বাবা ঠিক আছে, এতো বক বক কোরো নাতো, আরো তোমার দেরী হয়ে যাবে, এসো আমি শাড়িটা ধরে দিই, ঝটপট করো, কাম অন- কাম অন , হারি আপ" --চন্দন।
"আরে -এ তাড়াতাড়ি করেই করছি তো,সারাদিন একা একা থাকি,কারো সাথে যে দুটো বলবো,তাও তো হয় না, তবু ভালো এতোদিন 'কনিকা' টা ছিলো,দুটো মনের কথা বলে শান্তি হতো"-- বন্যা।
"মন খারাপ করছো কেন, ওখানেই তো যাচ্ছি তোমার বান্ধবীর বাড়ি, ওরই তো ছেলের জন্ম দিন ! আমি আবার ভাবছিলাম তোমার কি আর এতো দেরী করে গেলে হবে! গল্প করার সময় কমে যাবে! (একটু হেসে) একদম রেডি হয়ে বিকেলে চলে যেতে , না হয় আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম"--চন্দন ।
"এই একদম চুপ করো,আমি কিন্তু সত্যি সত্যি রেগে যাবো বলে দিচ্ছি,শুধুমাত্র তোমার সাথে যাওয়া টা একটা আলাদা মাত্রা, আমার ভালো লাগে তোমার সঙ্গে কোথাও যেতে ,নাহলে তিন দিন আগে থেকেই ফেসিয়াল করে রাখতাম, শাড়ি গয়না গুছিয়ে রাখতাম, একা একা যাবো!,হমম(বিরক্ত হয়ে) যতসব! আমার কথা যেন কতো ভাবো! কত সময় যেন আমার জন্যে! এই ছয় বছর এ আমি যেন তোমার কাছে- একেবারেই একঘেঁয়ে হয়ে গেছি !সুন্দর যে বলছো,তোমার সময় আছে?আমার দিকে তাকানোর?" ---কথা গুলো এক নিশ্বাসে আক্ষেপ এর সুরে বলে ফেললো বন্যা।
সারাদিন একা একা হাঁফিয়ে ওঠে সে।কতোক্ষণ আর টিভি দেখে, ফোন ঘেঁটে সময় কাটে। চন্দন সত্যিই একদম সময় পাচ্ছেনা। ইন্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে মাঝে মধ্যে সাইটে যেতে হয়। এখন সুপারভাইজার হয়ে গেছে বলে আরো ব্যস্ত হয়ে গেছে। বন্যার অভিযোগ গুলো অনেটাই সত্যি।
বন্যা রেডি, চন্দন তাকিয়ে দেখছে ,গায়ের রঙ যেন ভরা জ্যোৎস্নার মতো, কালো সিফন আর স্টোন বসানো পাড়ের শাড়ি আর সুন্দর ব্লাউজে, মনে হচ্ছে যেন একটি অপ্সরা, তারা ঝলমল করা রাতে, স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে! ঠোঁটে ন্যাচার্যাল ম্যাট গোলাপি লিপস্টিক, আর মায়াবী চোখ দুটোতে হালকা আইলাইনার, হালকা আইশ্যাডো, আরও মোহময়ী হয়ে উঠেছে সে। দুই কানে হীরের দুল,গলায় সোনার চেনের সাথে ছোট্ট হীরের লকেট। হীরের সেট টা গত বিবাহ বার্ষিকীতে উপহার হিসেবে দিয়েছিলো চন্দন তার প্রিয়তমা স্ত্রী বন্যাকে। মনে করে মোবাইলে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখে বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন, প্রথম দেখা স অ অ ব, লোড করা আছে এলার্ম ভিত্তিক। এগুলো নিয়ে অনেক অশান্তি করে বন্যা। তাই বুদ্ধিমান ইন্জিনিয়ার চন্দন, কায়দা করে বন্যার অশান্তির বন্যায় বাঁধ দিয়ে,বন্যা রোধ করে রাখে।
এমনিতেই ছয় মাসের আলাপচারিতা,তারপর বিয়ে মোট ছয়টি বছর তারা একসাথে আছে। এখনো সন্তান হয়নি।এবার তারা সন্তান এর জন্যে আগ্ৰহী হয়েছে।আর পাঁচটি বিবাহিত জীবনে যেমন সুখ দুঃখ ভালো মন্দ মিশিয়ে জীবন কাটে এদেরও ঠিক তেমনই। টিভির রিমোট নিয়ে ঝগড়া, চন্দন দেরী করে বাড়ি ফিরলে ঝগড়া, চন্দন কোনো জিনিস এর দাম বেশী দিয়ে কিনে আনলে ঝগড়া, এগুলো হয়। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর আবারো ভাব হয়ে যায়।
অবশেষে রাত দশটা নাগাদ তারা 'কনিকা' দের বাড়ি পৌঁছালো। কনিকার ছেলে রূপক,তারই জন্ম দিন। কনিকা ও বন্যা খুব ভালো বান্ধবী। কিছু দিন আগে কনিকারা বন্যাদের বাড়ির পাশেই ভাড়া থাকতো।এখন কনিকা নিজেদের বাড়ি করেছে আর ওখানে চলে গেছে। রূপকের জন্ম দিনের পার্টিটা প্রায় অনেকটা বড় করেই হচ্ছে। গৃহপ্রবেশ এর পার্টিটা ছোটখাটো করে সেরে দিয়েছিলো কিনা,তাই। তবে কনিকা ও বন্যা খুব বেশী দিন এর চেনা নয়।ঐ বছর দুই হবে।
বন্যা আর চন্দন জন্ম দিনের উপহার দেওয়া পর্ব সেরে,সবার সাথে দেখা করে,তারপর খাওয়ার টেবিলে বসেছে, একেবারেই এলাহী ব্যাপার স্যাপার।
মে মাসের গরমে ,খোলা আকাশের নীচে খোলামেলা জায়গায়,খুব ভালো আ্যরেন্জমেন্ট, একদিকে একটা ছোট্ট স্টেজ করা হয়েছে।ওখানেই সব বাচ্চা গুলো গান, নাচ,আবৃত্তি যে যার মতো করছিলো।
এমন সময় হঠাৎ গীটারের সাথে গাইছেন একটি পুরুষ কন্ঠ ,একটি নতুন গান কানে এলো বন্যার।
একেবারে আনকোরা!খুব ভালো গানের গলা।জানা গেলো গানটির লেখক ও সুরকার গায়ক ছেলেটি নিজেই। 'কে এই ছেলেটা! কোনো সেলিব্রেটি নাকি ! খুব হ্যান্ডসাম একেবারে হিরো মাফিক চেহারা।' বন্যা মনে মনে বলে।
জানা গেলো ঐ ছেলেটি কনিকার নিজের ভাই 'অরন্য'। ডাকনাম 'রনি'।ব্যাঙ্গালোরে কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছিলো। এই জাস্ট পড়াশোনা শেষ করেছে। ভাগ্নের জন্ম দিনের পার্টি তে দিদির বাড়ি এসেছে। এর আগে রানাঘাটে সে তেমন ভাবে আসেনি। বা যদিও এসেছিলো বন্যার সাথে তার দেখা হয়নি।
"পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো ভাই, খুব ভালো গাও তুমি,গান নিয়েই ক্যারিয়ার করতে পারো তো? এতো সুন্দর গান লেখো, সুর দাও গীটার বাজাও।একেবারে মালটি-ট্যালেন্টেড"--বন্যা।
একটু হেসে-" হা হা হা হ্যাঁ দিদি,আপনি আমার দিদি জামাইবাবুকে একটু বোঝাতে পারবেন?ওরা তো শুধুমাত্র চাকরি করতে বলে! এ সব দিয়ে নাকি কিস্সু হয়না"-- রনি ।
"সে কি!তোমার এমন প্রতিভা! চাকরির চাপে হারিয়ে যাবে? জানো, তোমার জামাইবাবু মানে আমার হ্যাজব্যান্ড 'চন্দন' কি ভালো ছবি আঁকেন কিন্তু কাজের চাপে সেই গুন এখন কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।"--বন্যা ।
" ভাই,একদিন আমাদের বাড়িতে এসো,তোমার গান শুনবো ,আজ উঠি অনেক রাত হতে চললো"--চন্দন।
বাড়ি ফিরে এসে-বেরোনোর সময় বন্যার যে অনুপম সৌন্দর্য চন্দনের চোখ আটকে দিয়েছিলো কয়েকটি মহুর্তের জন্যে--, সেই আকুলিত হৃদয়ের টানে ,রাতে বন্যাকে কাছে টেনে ভরিয়ে দিলো স্বর্গ সুখে। আর এভাবেই রাত কেটে ভোর হলো।সকাল হলো। ব্রেকফাস্ট হলো, চন্দন রেডি হলো সাইটে বেরিয়ে গেলো।বন্যা তখন আবারো একা!
দুপুরে শুয়ে শুয়ে--বন্যা ভাবে, গত রাতের ঐ কনিকার ভাই এর কথা , ওর গান,ওর প্রেজেন্টেবল কথাবার্তা সব --'কি যেন নাম ও হ্যাঁ রনি না অরন্য।
যাইহোক ও তো ভাই হয়।কনিকার ভাই মানে আমার ও ভাই।' মনে মনে বন্যা বিড় বিড় করছিলো।
হঠাৎই ফোন টা বেজে উঠল--
"হ্যালো--ও কনিকা, বলো, সব ভালো ভাবে মিটলো তো গত কাল, কত রাতে ঘুমোলে সব?"
--- বন্যা।
"হ্যাঁ গো সব মিটেছে, বলছি যে শোনোনা আমরা সব প্ল্যান করছি গ্যাংটক যাওয়ার ফেরার পথে দার্জিলিং হয়ে একেবারে ফিরবো, আমি ,রূপক আর ওর বাবা, আমার ভাই রনি, আর আমার মাকে ও সঙ্গে নিয়ে যাবো ভাবছি।-- চন্দনদাকে বলো,তোমরাও চলো না, প্লিজ আমাদের সঙ্গে,খুব মজা হবে "
---কনিকা।
এভাবে কিছুক্ষণ ফোনে বার্তালাপ,বন্যা যা হোক করে বোঝালো কনিকাকে-- চন্দন যে কতোটা ব্যস্ত আজকাল ,বন্যার জন্যেই চন্দনের সময় নেই তা আবার বেড়াতে যাওয়া! সেটাও আবার এক সপ্তাহ ধরে! প্রায় নেগেটিভ ধরে রাখতে বললো। তবুও রাতে চন্দন বাড়ি ফিরে এলে বলবে,চেষ্টা করবে বললো।
রাত নয়টার দিকে চন্দন বাড়ি ফিরলো,যথারীতি ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কড়া চা এর সাথে টিভির সামনে রাজনৈতিক দলের চামচা গুলোর ঝগড়া বিবাদ দেখতে লাগলো।কিংবা চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলার খবর। তারপর রাতে ডিনার টেবিলে সিকিম,দার্জিলিং এর বেড়াতে যাওয়ার কথাটা পাড়লো বন্যা।
"নর্থ বেঙ্গলে আমার একটা প্রোজেক্ট ভিজিট করতে যেতে হতো কয়েক দিন পর।ঠিক আছে আমি ওটা এগিয়ে নিচ্ছি, তাহলে এক কাজে দুই কাজ হয়ে যাবে। তুমি ওদের বলে দিও যে আমরা যাবো"
---চন্দন।
বন্যা তো খুব খুশি, সেই বিয়ের দুই বছর পর গোয়া গিয়েছিল ওটা কেই বন্যা হানিমুন বলে মনে মনে ভেবে নেয় তারপর থেকে তো চন্দন শুধু বিজি বিজি আর বিজি। জীবন টা যেন হিজিবিজি হয়ে গেছে। 'যাক্, একটু প্রান ভরে অক্সিজেন নেওয়া যাবে। ও হো- রোদ, বৃষ্টি , সিকিম , বরফ , দার্জিলিং , মোমো, চা, শপিং ও মাই গড, কি এক্সাইটিং' বন্যা ভাবতে থাকে।
বন্যা আর থাকতে পারলো না ঐ রাত বারোটার সময় ই প্রচন্ড পরিমাণে এক্সাইটমেন্ট নিয়ে ফোন করলো বান্ধবী 'কনিকা' কে। কিন্তু ফোনটা রিসিভ করলো অরন্য।
"হ্যালো-আমি অরন্য, আসলে রূপক আমার কাছে শুয়েছে। দিদির ফোনটাতে গেম খেলছিলো।এই ঘরেই ফোন টা আছে। আচ্ছা আমি দিদি কে কাল সকালে বলে দেবো। ও একটা কথা বলবো দি-- তোমাকে তুমি করে বলছি,আর তোমাকে এতো সুন্দর দেখতে আমার মনে হয়েছে এতো সুন্দর যেন আর কোনো দিন কাউকে দেখিইনি। এতো সুন্দর কেউ কি করে হয়! পা থেকে মাথা পর্যন্ত তুমি খুব সুন্দর।আর আমার গান গাওয়াটা কি ভালো ভাবে পজিটিভলি নিলে।আমার মনে হয়েছে তোমার মনটা ও কতো সুন্দর। কি মিষ্টি দেখতে তুমি, চন্দনদা খুব লাকি,এমন সুন্দর মনের মেয়ে পেয়েছে। আচ্ছা দি আমি যদি কিছু ভুল বলে থাকি তাহলে মাফ করে দিও,বাট ইউ আর সো সুইট দি,সো সুইট।"
--- রনি ।
এতোগুলো কথা শুনে 'বন্যা' হকচকিয়ে গেলো,কি বলবে বুঝতে পারলো না। খুব যে খারাপ কথা কিছু বলেছে ঐ ছেলেটি তাও নয়। যে প্রতিবাদ করবে। আবার অকপটে এমন প্রশংসা মাঝ রাতে কিছু টা বিব্রতও করে দিয়েছে বন্যাকে। যাইহোক এতো রাতে কাউকে ফোন করা উচিৎ নয়। এটা হয়তো বন্যারই বাড়াবাড়ি।তাই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু মন্তব্য করলো না। শুধু মাত্র থ্যান্কিউ বলে রেখে দিলো।রাতে আর চন্দন কে কিছুই বললোনা বন্যা ।
যথারীতি যেমন সকাল হয় তেমন আর একটি দিন শুরু হলো।হাতে মাত্র একটি দিন এর মাঝে সব গোছগাছ করতে হবে।শীতের পোষাক গুলো নিতে হবে গুছিয়ে।এমন কিছু যেন ফ্যাশনেবলও হয় আবার আরাম দায়কও হয়। যদিও চন্দনের জিনিসপত্র গোছানোই থাকে। ও তো মাঝে মাঝেই এখানে ওখানে সাইটে গিয়ে দু এক দিন বাইরে গিয়ে থাকে। তবুও বেড়াতে যাওয়ার জন্য উপযোগী, শীতের পোষাক আর এটা ওটা তো নিতে হবে।আর তার সাথে বন্যার সাজুগুজুর জিনিস পত্র।
এসব কিছু গোছানো চলছে কিন্তু তার মাঝেই অরন্যের বলা গত রাতের কথাগুলো মনে পড়ছে। 'এগুলো ছেলে মানুষী কথা বার্তা না কি ছেলেটা আসলে বদ- অথবা ছেলেটা খুব সরল সোজা,যাই হোক,কনিকা আর বন্যা প্রায় সম বয়সী।আর কনিকার ভাই কনিকার চেয়ে আড়াই বছর এর ছোট।তাই রনি বন্যার চেয়ে খুব একটা ছোট নয়।আজ কাল কার ছেলে পিলে সব মোবাইল ঘেঁটে কতো কিছু অসামাজিক অসংযত জিনিস পত্র শিখতে থাকে। এদের এখন খুব বৌদিবাজি টেনডেন্সি।কোনো সভ্যতা বলে বস্তু নেই। যাগ গে। বেড়াতে গেলে ওকে ইগনোর করতে হবে'- বন্যা ভাবে।
বেড়াতে যাওয়ার গোছ গাছ চলতে থাকে। বন্যা সাত পাঁচ ভাবতে থাকে।স্নান সেরে বন্যা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, খোলা চুল একটি ক্লিপ দিয়ে আটকে যত্ন করে সিঁদুর পরলো,সিঁদুর পরার পর শাঁখা পলা নোয়া সব কিছু তে সিঁদুর ঠেকিয়ে মনে মনে চন্দনের দীর্ঘায়ু কামনা করে, তার আরাধ্যা,মা সিদ্ধেশ্বরীর কাছে।রানাঘাটের খুব জাগ্ৰত ঠাকুর মা সিদ্ধেশ্বরী।যে যা মনোষ্কামনা করে ঠাকুরের কাছে তাই পুরন করেন মা সিদ্ধেশ্বরী।
'মা মাগো, আমাদের বেড়াতে যাওয়াটা খুব স্মুদলি যেন হয়।,ঠিক ঠাক মতো গিয়ে আবার ঠিক মতো ফিরে আসতে পারি যেন,ঐ সব পাহাড়ী বিপজ্জনক রাস্তায় আমাদের সমস্ত বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করো মা।' মনে মনে এই প্রার্থনা করে বন্যা।
তারপর চুল খুলে ,আয়নার সামনে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে,আচ্ছা! সে কি, সত্যিই খুব সুন্দরী, অনায়াসে যে কোনো বলিউডের অভিনেত্রী ফেল মেরে যাবে তার কাছে! মনে মনে একটা অহংকারের হাসি হাসে।
ফোন টা বেজে উঠলো,একটা আননোন নাম্বার থেকে কল টা এসেছে!!!--
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
💘'এবং দ্বিতীয়'(2)
অর্পিতা কামিল্যা
"আননোন নাম্বার! কে আবার! ধ্যাততেরিকা! আমার বলে কত কাজ পড়ে আছে- হ্যালো-কে?" -- বন্যা।
"হ্যালো, দি- মিষ্টি দি,আমি রনি, দিদির ফোনে তোমার নাম্বার ছিলো,ওখান থেকে নিয়েছি, তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করার ছিলো।"-- রনি ।
"মিষ্টি দি? আমার নাম তো মিষ্টি নয়! তাছাড়া আমি তোমার কি এমন উপকার করতে পারবো যে এমন করে বলছো?"--বন্যা।
"না তুমি খুব মিষ্টি, মানে রানাঘাটের স্পেশাল পান্তুয়ার মতো,না না পান্তুয়া তো কালো কালো,তুমি তো খুব ফর্সা, রসগোল্লার মতো। তোমার গাল গুলো রসগোল্লার মতো। তাই মিষ্টি বললাম। প্লিজ রাগ করো না। আমার উপকার টা করে দাও"।--রনি।
(খানিকটা বিরক্ত হয়ে)" এই তুমি তো খুব পাকা ছেলে দেখছি ,আমি না তোমার দিদি, তাহলে এসব ফাজলামোর কথা বার্তা গুলো কেন বলছো?, আমি একদম পছন্দ করিনা এগুলো।এখন কি করতে হবে তুমি বলো?"-- বন্যা।
"না থাক,যে সাধারন কথার অন্য রকম মানে করে,তাকে আমার সমস্যার কথা বলে লাভ নেই, রাখি, ভবিষ্যতে মেপে মেপে কথা বলবো"--রনি।
ফোন টা কেটে গেলো,বন্যা একটু আশ্চর্য হলো,'কি ছেলে রে বাবা,একেতো নিজে থেকে ফোন করেছে, আবার ফাল্তু বক বক করছে! বেশ হয়েছে বকে দিয়েছি,না হলে বেড়াতে গেলে বক বক করে পুরো মাথা খেয়ে নিতো ,কিন্তু! কি যেন একটা সমস্যার কথা বললো,কি হতে পারে! যাকগে যার সমস্যা সে নিজে বুঝে নেবে আমার কি'-বন্যা মনে মনে বলে।
আবারো গোছানো শুরু করে, প্রথমে বাড়ি থেকে
কনিকার বাড়িতে আগে যেতে হবে, ওখান থেকেই লাক্সারি এ সি বাস , তারপর যাত্রা শুরু।
দুপুরের পর--কনিকার বাড়িতে গিয়ে বন্যা ও চন্দন দেখলো এক মহা ঝামেলা বেঁধেছে, রনি বলছে ও গীটারটা সাথে নিয়ে যাবে, আর সবাই আপত্তি করছে।বিশেষ করে রনির মা আর জামাইবাবু 'রমেশ'।
"একটা গীটার সাথে করে নিয়ে যেতে চাইছে,একটা গান পাগল ছেলে, এতে বাধা দেওয়ার কি আছে।" ---থাকতে না পেরে বলে ই ফেললো বন্যা।
"হ্যাঁ এই উপকারটা করার জন্যে ই তখন ফোন করেছিলাম, আমি জানি তুমি বললে রমেশ দা বা দিদিভাই আপত্তি করতে পারবে না।"--রনি।
অবশেষে গীটার সহই বাসে উঠলো রনি, ঠিক পাশাপাশি দুটো সিট ,সোজাসুজি রনি, বন্যাকে দেখতে পাবে এমনই বাসের সিট কপালে জুটলো বন্যার। যাত্রা শুরু সন্ধ্যা ছয় টায়,খুব ফুরফুরে মেজাজে বন্যা ও চন্দন, পুরো হানিমুন ফ্লেভার। মাঝে মাঝে গীটারের টিউনিং এর আওয়াজ আসছে, রনি হয়তো কিছু সুর ভাঁজছে,বা কিছু চেষ্টা করছে।
রাতে-- বহরমপুরে একবার বাস থামলো,বাস থেকে নামলো চন্দন ।কিন্তু বন্যা নামেনি।সোজাসুজি সিটে রনি ও রনির মা অঞ্জলী আন্টি বসেছিলো। অঞ্জলী আন্টির পিছন থেকে রনি শুধু বার বার বন্যার দিকে তাকিয়ে আছে,বন্যার খুব অদ্ভুত লাগলো, সাথে সাথে বন্যার ফোনে মেসেজ এলো 'থ্যাংকস দি, লাভ ইউ দি'
বন্যা তাকিয়ে একটি মিষ্টি হাসি দিলো,আবার ও মেসেজ এলো 'সো সুইট,রসগোল্লা'
বন্যা আবার ও হাসলো,কিন্তু ততক্ষণে চন্দন এসে গেছে, বাস ও ছেড়ে দিয়েছে,রাতে বাসের ভিতর লাইট বন্ধ থাকছিলো,এভাবে ফারাক্কা ব্রীজ পেরোলো, বন্যা কখন চন্দনের বুকের দিকে হেলে ঘুমিয়ে গেছে টের পায়নি,হঠাৎ চন্দন ডাকলো, বন্যা উঠে দেখলো যে কি সুন্দর সকাল হয়ে গেছে, সবুজ সবুজ চা এর বাগান আর পাহাড়।
সকালে উঠে দিনের আলোয় বন্যা লক্ষ্য করলো, যতবার রনির দিকে দেখেছে, রনি ততবারই বন্যার দিকে তাকিয়ে আছে।ইচ্ছে করে বন্যা তখন আর রনির দিকে তাকালো না। ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি পৌঁছে গেছে, শিলিগুড়ি তে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলো সবাই।
তারপর--- একটি গাড়ি ধরে প্রথমে গ্যাংটক,তারপর দার্জিলিং। যে গাড়িটি ভাড়া করা হলো রনি প্রাণপণ চেষ্টা করে বন্যার পাশে সিট নিলো,বন্যার একপাশে চন্দন আর একপাশে রনি,মাঝখানে বন্যা।
যেতে যেতে--
"কাল সারা রাত ধরে একটা গান লিখেছি,সুর করেছি। তোমাকে নিয়ে, আমার অনুপ্রেরণা দেবী, সরস্বতী ঠাকুর, আফটার অল- আমার সৃষ্টিতে পাহাড়- ঝর্ণা- মেঘ-বৃষ্টি-নীল- সবুজের সমারোহের হাজার- ভাবনা।তোমাকে নিয়ে গান আর সুর ভরেছে"---রনি।
"তাই নাকি ভাই,তুমি আমাকে নিয়ে গান লিখেছো, তাই বুঝি লুকিয়ে লুকিয়ে অনুপ্রেরণা খুঁজছিলে আমাকে দেখে দেখে"--বন্যা।
(একটু হেসে) তা ঠাকুর তো ,সবাই দেখে আর প্রনাম করে,তুমি তোমার বন্যাদি কে একটা প্রনামী দিও, কেমন"--চন্দন।
চন্দন এর বাক্যবাণে রনি ইতস্ততঃ বোধ করে ইষৎ সংযত হয়ে গেলো। গ্যাংটকে পৌঁছতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেলো, সবাই আগে ওখানে লাঞ্চ করলো। এবার হোটেলে যে যার রুমে। মোট তিন টি রুম।একটিতে বন্যা ও চন্দন, একটিতে কনিকা, রমেশ আর ওদের ছেলে রূপক,আর একটিতে রনি ও অঞ্জলী আন্টি।
রুমে ঢুকে--
"গ্যাংটকে বেশ ঠান্ডা, আমাদের রানাঘাটের শীতের সময় এমন ঠান্ডা থাকে বলো,বাথরুমে গরম জল আছে, যত খুশি ঢালা যাবে,একেবারে ফ্রেশ হয়ে আসছি ,তারপর টেনে একটা ঘুম দেবো"।--- চন্দন ।
"হমম, কিন্তু স্নান টা আমি আগে করবো,তুমি না।"
---বন্যা।
"এই যা,আমি আগে বলেছি,আমি আগে করবো,না হলে চলো একসাথে স্নান করি"।
--- চন্দন।
এভাবেই হাসিখুশি পাশাপাশি -
স্নানের জলে বাষ্পে ভাসি-
ভালোবাসা বাসি-
কাছাকাছি-
আবারো আরো-
কম্বলের তলায় দারুণ ভাতঘুম,সুখী দাম্পত্যের।
সন্ধ্যায় চা কফি খাওয়া দাওয়া, সবাই কনিকার রুমে , প্ল্যানিং হচ্ছে জিরো পয়েন্ট যাওয়ার। আবারো গাড়ি ঠিক করতে হবে। এর মাঝে বন্যা আবার লক্ষ্য করলো, রনি ঠিক এক দৃষ্টিতে বন্যার দিকে তাকিয়ে আছে।বন্যার এবার খুব অস্বস্তি হলো, কেউ দেখলে কি ভাববে! এগুলো কেন করছে সে? বন্যা তো একটুও প্রশয় দেয় নি ওকে।
সন্ধ্যায়-- এমন সময় রনি নিজের রুমে চলে গেলো,আর গীটার নিয়ে জোরে জোরে গান গাইতে লাগলো, রক সঙ হলেও কথা গুলো খুব টাচি , সুন্দর সুর,এবং-- বন্যা নিমেষেই আবার ও মুগ্ধ হলো।
রাতে-- ডিনারের পর,সবাই যে যার রুমে, হঠাৎই বন্যার ফোনে রনির মেসেজ, --
'মিষ্টি তুমি আমার গান টা শুনবে না? তোমার জন্য সারা রাত ধরে লেখা গান, আর তুমিই শুনবে না?আমার ফোন টা রিসিভ করো প্লিজ গান টা শোনাই'
সাথে সাথেই রনির ফোনটা এলো,বন্যা রিসিভ করলো,ফোনের ওপারে রনির গান আর গীটার, আর এপারে বন্যার এক রাশ মুগ্ধতা।
গানটি শুনে ফোন টা কেটে দিয়ে ,বন্যা মেসেজ করলো 'বাহ্ খুব ভালো,গুড নাইট'
পরদিন সকালে সবাই ফ্রেশ হয়ে, ব্রেকফাস্ট করে না জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। পাহাড়ী বিপজ্জনক রাস্তায় বন্যার খুব ভয় করছে। চন্দনের হাত টা মাঝে মাঝে ধরছে, গাড়ির জানলায় চোখ পড়লে নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করা যায় কিন্তু নীচের দিকে সোজাসুজি খাড়া হাজার ফিট খাদ্।
মাঝে মাঝে মেঘ এসে গাড়ির কাঁচ ভিজিয়ে দিচ্ছে।গাড়ি যত উপরে উঠছে ঠান্ডা ততই বাড়ছে।অবশেষে একটা জায়গায় গাড়ি থামলো,সেখানে বরফ পাওয়া গেলো,সবাই বরফ নিয়ে মাতামাতি শুরু করলো। কিন্তু বন্যা লক্ষ্য করলো রনির সেই আকুল নয়নে তার দিকে তাকিয়ে থাকা।গাড়িতে ও বহু বার এমন করেছে। এদিকে বরফের মধ্যে সবাই ছবি তুলছে যে যার মতো। আর বন্যার ছবিও চন্দন তুলছে এমন সময় একটা বরফের ঢিবির উপর যার পিছনেই খাদ।
ওই বরফের ঢিবির কাছাকাছি একটা পোজ দিয়ে ছবি তুলতে গেলো বন্যা,--এমন সময় হঠাৎই আচমকা বরফের মধ্য বন্যার পা হড়কে গেলো, আর রনি কোথায় যেন ছিলো ,কোথা থেকে এসে ঝট করে বন্যার হাত ধরে পড়ে যাওয়াটা আটকে দেয় আর এই তখনই জাপটে নিজের বুকে টেনে চেপে ধরে। বন্যার ভয় পেয়ে চিৎকার করে 'ও মাগো' বলে আশপাশের লোকজন ও চমকে উঠে। বন্যা কিছু বলতে পারল না ভয়ে হাত পা কাঁপছে তখন তার,চন্দন আর বন্যা কে খুব বকলেন অঞ্জলী আন্টি,
"এতো রিক্স নিয়ে কেন ছবি তুলতে হবে? হ্যাঁ, আজ রনি না থাকলে কি যে হতো,পা হড়কে গেলে এখুনি নীচের খাদে পড়ে যেতে ভাগ্গিস রনি ছিলো"।
---অঞ্জলী আন্টী।
বন্যা মনে মনে মা সিদ্ধেশ্বরী কে ধন্যবাদ জানালো।
ছল ছল চোখে চন্দন এর দিকে তাকিয়ে থাকলো।চন্দন এসে বন্যা কে পিঠে হালকা আদরের চাপড়ে,
"কিছু হয়নি--কাম অন কাম অন বি স্টেডি,ইউ আর ব্রেভ,কাম অন"।--চন্দন।
গাড়িতে ফেরার পথে বন্যা চুপচাপ ছিলো,এবং সে বুঝতে পারলো,রনি তাকে বাঁচিয়েছে ঠিকই কিন্তু জাপটে জড়িয়ে ধরাটা এক্স্ট্রা ছিলো। আর তার সঙ্গে বন্যার শরীরের আপত্তিকর জায়গায় হাত দিয়ে একটা অন্য রকম মানে বোঝাতে চেয়েছে রনি। কি মারাত্মক সুযোগ সন্ধানী শয়তান ছেলে টা।
তাই প্রান বাঁচানো টা গৌন হয়ে গেলো,আর শয়তানী টা মুখ্য হয়ে গেলো বন্যার কাছে। বন্যা কি করবে বুঝতে না পেরে আবার ও চুপচাপ থাকলো। আর সন্ধ্যা নাগাদ হোটেলে যে যার রুমে।
রাতের খাবার খাওয়ার পর, চন্দন আর রমেশ একটু আধটু ড্রিংক করবে বলে ড্রিংকস আর ফ্রায়েড কাজুবাদাম নিয়ে চন্দন আর বন্যার রুমটিতে গিয়ে আসর বসালো। ওদিকে কনিকার রুমে কনিকা তার ছেলে রূপক কে নিয়ে শুয়ে পড়েছে।
অঞ্জলী আন্টির তখন প্রচণ্ড পায়ে ব্যাথা ,বাতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।এতোটা জার্নি কি ষাটের কাছাকাছি বয়সী মানুষের সহ্য হয়। বন্যা অঞ্জলী আন্টির কাছে গিয়ে বসলো,
"আমি একটু বাম লাগিয়ে দেবো? আমার কাছে পেইন রিলিফ আছে, একটু দিয়ে দিই"।---কথা টা বলেই বন্যা নিজের রুম থেকে ব্যাথার মলম আনতে গেলো আর চন্দন কে বলে এলো যে অঞ্জলী আন্টির পায়ে একটু মালিশ করে দিতে যাচ্ছে।বেচারী আন্টি খুব কষ্ট পাচ্ছেন।অঞ্জলী আন্টির পায়ে ব্যাথার মলম মালিশ করে দিচ্ছে বন্যা, আন্টি শুয়ে শুয়ে তার ফেলে আসা জীবনের লড়াই এর গল্প শোনাতে শুরু করলেন। রনি তখন ঐ রুমে থাকা একটি সোফায় বসে টিভি দেখছিলো। কিন্তু টিভির থেকে বেশী বন্যা কে দেখছিলো।বন্যা যেন দেখেও দেখেনি,এমন একটা ভাব করলো।
অঞ্জলী দেবী অনেক বছর আগে তার স্বামী কে হারিয়েছেন । হঠাৎ হার্ট এটাকে মারা যান তিনি।কাউকে চিকিৎসা করার সুযোগ টুকুও দেন নি ।তারপর স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর চাকুরীটি অনেক বন্দোবস্ত করে অঞ্জলী দেবী পেয়েছেন।
"তখন হুলো (রনি কে ঐ নামে ডাকেন অঞ্জলী দেবী) খুব ছোট্ট। ক্লাস ফাইভে পড়ে,আর কনা (কনিকা) ক্লাস এইটে। তোমার কাকু হঠাৎই চলে গেলেন।আমার জীবনে অন্ধকার নেমে এল।কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না। কত কষ্ট করে এদের মানুষ করলাম, কনা কে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিলাম,এখন হুলোর একটা ভালো চাকরী হয়ে গেলে, তোমার মতো টুকটুকে একটা বৌমা নিয়ে আসবো,ব্যাস আর কি,আমার কাজ শেষ, তারপর তোমার কাকুর যেখানে গেছেন আমি নিশ্চিন্তে যেতে পারবো"। ----- অঞ্জলী আন্টি কথা গুলো বলতে বলতে ঘুমিয়ে ঢুলে পড়ছেন। তবুও বন্যার মালিশের জন্যে অনেক টা আরাম পেয়েছেন সেটা বললেন আর সেই সঙ্গে অনেক আশীর্বাদ করলেন বন্যা কে, এবং বন্যা যেন নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে সেটাও বললেন।বলেই ঘুমিয়ে গেলেন।
বন্যা উঠে চলে আসছিলো,এমন সময় --
" আমাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়ার ও প্রয়োজন বোধ করলে না! যেওনা দাঁড়াও কথা আছে"।
----- রনি।
বন্যা ও ভাবছিলো রনিকে থামাতে হবে,পারলে দু চার কথা শুনিয়ে দেবে, কিন্তু এখানে নয়। অঞ্জলী আন্টি ঘুমাচ্ছেন ,ডিসটার্ব হবে।এই জন্যে বেলকনিতে চলে এলো বন্যা, ওখানে কেউ কিছু টের পাবে না। রনি ও বন্যার পিছু নিয়ে বেলকনিতে এলো।
"তোমাকে ধন্যবাদ দেবো,না অপমান করবো? প্রাণ বাঁচানোর পর যে অসভ্যতাটা ইচ্ছে করে করলে ,ঐ রকম বুঝি সব মেয়েদের সাথেই করো? এদিকে আন্টির কতো বড় বড় স্বপ্ন তোমাকে নিয়ে,আর তুমি একটা ভালো পরিবারের ছেলে হয়ে,ছি! ছি!"।
---বন্যা।
রনি আর বন্যাকে কোনো কথাই বলতে দিলো না --বন্যার ঠোঁটে রনি নিজের ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল চেপে ধরে ।
"চুপ---তুমি আর কোনো কথা বলবে না"--রনি।
বলেই বন্যাকে আবার জাপটে ধরে একটা জবরদস্তি চুমু খাওয়ার চেষ্টা করলো। বন্যা হতভম্ব হয়ে গেল।একটা চড় কষিয়ে দিতে যাবে,রনি হাত দুটো কে ধরে ফেললো,বেলকনির উল্টো দিকের দেওয়ালে ঠেসে ধরলো ---
"হে ইউ- লিসেন---আমি জীবনে কোনো মেয়ের দিকে তাকাই নি--তোমাকেই --শুধুমাত্র তোমাকে প্রথম দেখাতেই---ভালোবেসেছি-- তুমি আমার প্রথম প্রেম। ইউ আর মাইন।ইউ আনডারস্ট্যানড্।আমি না তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তও বাঁচবো না---আর আমি তোমাকেই বিয়ে করবো,ঐ চন্দনের থেকে অনেক সুখে রাখবো, আই প্রমিস- তোমাকে বলে দিলাম, আর তোমার যা করার তুমি করে নাও গে যাও"।
---- দাঁতে দাঁত চেপে চ্যালেন্জ ছুঁড়ে দেওয়ার সুরে বলে রনি।
"ইউ আর আ সাইকো--ড্যাম---লিভ মি--ইউ ব্লাডি ইডিয়ট, ডোন্ট ইউ নো আই এম ম্যারেড- এন্ড আই লাভ চন্দন"---বন্যা।
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
💘'এবং দ্বিতীয়'(3)
অর্পিতা কামিল্যা
বন্যার দুহাত ব্যালকনির উল্টো দিকের দেওয়ালের সাথে জোরে চেপে ধরে রেখেছিলো রনি। তখন বন্যা তার একটা হাঁটু মুড়ে সজোরে উপরের দিকে একটা আঘাত করলো, সেটা একেবারে রনির তল পেটে গিয়ে লাগলো, রনি যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠে,বন্যার হাত গুলো ছেড়ে দিলো। এভাবে কোনোক্রমে রনির আক্রমণ থেকে নিজেকে মুক্ত করলো বন্যা।
দৌড়ে পালিয়ে আসে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে হাঁফাতে থাকে বন্যা।রুমে দেখলো রমেশ নেই, আর চন্দন প্রায় নেশার ঘোরে একদম বাহ্যজ্ঞানহীন। বন্যা কি করবে বুঝতে না পেরে, অসহায়ের মতো হয়ে চুপচাপ বসে থাকলো কিছু ক্ষন। একটু পরে খানিকটা ধাতস্থ হলে, বাথরুমে হাত মুখ ধুতে গেলো। একদম যাচ্ছেতাই লাগছে তার, সে নিজেই বুঝতে পারছেনা ঠিক কি রকম অনুভূতি টা হচ্ছে তার!
বাথরুমে আয়নার সামনে বন্যা নিজের মনে বলতে থাকে 'আচ্ছা যা কিছু হয়েছে আমার অমতে হয়েছে।তাহলে আমি কেন নিজেকে খারাপ ভাববো! রেপড্ হয়ে যাওয়া মেয়েরাও কি এমন নিজেরা নিজেদের ঘেন্না করে! তারা আর কি কি করে! এই মাঝরাতে স্নান করবো!আমি পবিত্র হতে পারবো? আমি কি অপবিত্র হয়ে গেলাম!'
অস্ফুট আস্ফালনে বন্যা,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যেন নিজের বিবেককে দেখতে পেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,বন্যা যেটা করেছে, সেটাই কি ঠিক করেছে? রনি এর আগেও অসভ্যতা করেছিলো, একটা খারাপ প্রবৃত্তির মানুষকে কি এতো প্রশয় দিতে হয়? বেলকনিতে একলা পেয়ে এমন করতে পারে, বন্যার সেটা আগেই ভাবা উচিত ছিলো। বন্যা সুযোগ করে দিয়েছে রনিকে।
রনির দিক থেকে দেখতে গেলে, রনি বন্যাকে ভালোবাসছে তাই বন্যার সাথে এমন পাগলামো করছে, পাগলামো কি এমনইটাই হয়। রনি কিন্তু রেপ করতে যায় নি। আর চন্দন! সে কিন্তু কোনো দিনও এমন পাগলামো করেনি বন্যার জন্যে। চন্দনের ভালোবাসায় এই পাগলামোটা তো নেই!
কিন্তু তাই বলে অসামাজিতার আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেকে বেঁধে রনি জোর জবস্তি করবে কেন?এটা ভালোবাসা নাকি ভালোবাসার নামে যৌনতা, বন্যা কি চায় সেটাই তো আসল। জোর করে কিছু হয় নাকি!
সর্বোপরি বন্যা বিবাহিতা,তাই তার আলাদা সন্মান, এইটুকু যার বোধ নেই, সে আবার কেমন!এভাবে একটা ঘেন্না, বিরক্তি, বিদ্রোহ মেশানো অনুভূতিতে বন্যার নিরাপরাধ মনের কষ্ট গুলো চোখের জল হয়ে বেরিয়ে যেতে থাকলো, সে নির্দোষ,সে কোনো অন্যায় করেনি, যা হয়েছে জোর করে হয়েছে ,বন্যার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে।
শাওয়ারটা খুলে দিয়েছে বন্যা, উপর থেকে উষ্ণ গরম জলের ধারা বন্যার চোখের জলের সাথে মিলে মিশে যাচ্ছে। বার বার বন্যার মন, বন্যার শরীর কে, ঠোঁটকে বোঝাতে চাইছে, বন্যার কোনো দোষ নেই।
স্নান সেরে ,বিছানায় চন্দনের পাশে এলো, অনেক রাত অবধি এপাশ ওপাশ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে শেষে ভোরের দিকে একটু হয়তো বা ঘুমোলো,আবার ও ঘুম ভেঙ্গে গেলো,এভাবেই প্রায় ঘুমহীন একটা রাত কাটালো, জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই বোঝা গেলো একটা ঝকঝকে সকাল হয়েছে। জানালার কাঁচ ভেদ করে আলো ঢুকছে ঘরে, জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে দুরে পাহাড়ের গায়ে দেশলাই বাক্সের মতো অনেক অনেক বাড়ি। যাইহোক কিভাবে চন্দনকে সবটা খুলে বলবে বন্যা সেই ভাবনাটা বন্যাকে ক্ষত বিক্ষত করতে লাগলো ভিতরে ভিতরে অনবরত।
পরদিন সকালে স্বাভাবিক ভাবেই একটু দেরী করে ঘুম থেকে উঠলো চন্দন। বন্যা ভেবেই রেখেছে চন্দন কে সবকিছু খুলে বলে দেবে। সকাল সাড়ে এগারোটায় রুমে ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেলো। ব্রেকফাস্ট এর পর্ব সারা হলো।বন্যা তখনও কথাটা চন্দন কে বলে উঠতে পারেনি। এমন সময় একটা চেঁচামেচি শুনতে পেলো বন্যা। চিৎকারটা অঞ্জলী আন্টীর রুমের দিক থেকে আসছে।
বন্যা ও চন্দন ঐ ঘরে গিয়ে দেখলো অনেক বার ডাকাডাকি করার পর ও রনি ঘুম থেকে উঠে নি, সেন্সলেস এর মতো পড়ে আছে।ডাক্তার ডাকা হলো,ডাক্তার এসে অনেকক্ষন ধরে পর্যবেক্ষণ করলো, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রনিকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলো। ঘন্টা খানেক পর নার্সিংহোম তরফ থেকে জানানো হলো যে রনি ডেইলি একটি ড্রাগ নেয়, সে একজন ড্রাগ এডিকটেড পার্সন । ড্রাগের ওভার ডোজ নিলে একটা এটাক্ হয়, রনির ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে!
রনি ড্রাগ এডিকটেড! অথচ রনির পরিবারের লোকজন কেউ এই ব্যাপারে কিছু জানতোই না।অঞ্জলী আন্টী কথাটা শুনেই কেঁদে উঠে বললো-
" না না এ মিথ্যে, রনি কখনো এমন হতে পারে না।বাড়িতে তো কয়দিন আছে আমি তো কিছু বুঝতে পারি নি!
"সেই ক্লাস সেভেন থেকে হস্টেলে,বাবা কে তো পায় ই নি, আর তোমাকেও পায়নি, কিভাবে এই সব হলো, তুমি কি করে জানবে মা?"-- কণিকা।
একটু পরেই রনির জ্ঞান ফিরে এলো। এদিকে দুপুর গড়িয়ে গেছে প্রায়। বিকেল হতে চললো,অথচ লাঞ্চ হয়নি কারোরই। তখন অঞ্জলী দেবী সবাইকে রুমে ফিরে যে যার মতো খাবার খেয়ে যেন রেস্ট নিতে বললেন। বন্যা ও চন্দন রুমে ফিরে এলো ,বন্যা চুপ করে আছে। চন্দনকে তখনও কিছু বলাই হলো না।
লাঞ্চ করার পর সন্ধ্যায় শুধুমাত্র চন্দনের সাথেই গ্যাংটক শহরটা ঘুরে ফিরে দেখতে গেলো বন্যা।
যদিও একটুও ইচ্ছে করছিলো না তার,তবুও চন্দন অনেক জোরাজুরি করে নিয়ে গেলো, বন্যা ঘোরাঘুরি করছে ঠিকই কিন্তু থেকে থেকে একটা একটা প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে। বন্যা বেশ বুঝতে পারছে, রনি ড্রাগ এডিকটেড হওয়ার সাথে সাথে একটি মানসিক রুগী ও। এবং ছেলে টি বন্যার জন্যে তো বিপজ্জনক বটেই, এমনকি যেকোনো মুহুর্তে চন্দনের ও ক্ষতি করে দিতে পারে। এরা সব পারে, এমন তো বহু শোনা যায়! এমনকি মানুষ খুন ও করতে পারে।
গ্যাংটক এর মার্কেটে টুকটাক কেনা কাটা করার সময় চন্দনকে বন্যা বললো -"আর ভালো লাগছে না।ওরা যে যার মতো থাকুক , চলো আমরা ফ্লাইট ধরে কোলকাতা চলে যাই।"
"কেন? তোমার শরীর খারাপ লাগছে নাকি? কি হয়েছে? রনির ব্যাপারটা আ্যবসার্ড লাগছে? আর যদি সেটা ই হয়।তাহলে আমরা এভাবে এড়িয়ে চলে গেলে রমেশ ,কনিকা, অঞ্জলী আন্টি আমাদের কতোটা খারাপ ভাববে,একবার ভাবো তো?"--চন্দন।
"হ্যাঁ রনিকে আমার একদম পছন্দ নয়"--বন্যা।
"রনি একটা ভালো ছেলে, দারুণ গান গায়, ভালো পড়াশোনায়, আর সর্বোপরি ওই ছেলে টাই তোমার প্রান বাঁচিয়েছে, হ্যাঁ রনি হয়তো কোনো কুসঙ্গে পড়ে, সঙ্গদোষে ড্রাগ এডিকটেড হয়েছে, এটা রনির জীবনের খারাপ পরিস্থিতি। ওকে ওখান থেকে টেনে বের করে আনতে হবে। আলোচনা করতে হবে,সবাই মিলে ,যৌথ উদ্যোগে, দরকার হলে রিহ্যাবে রাখতে হবে । সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাতে হবে,মানুষের বিপদে পাশে থাকতে হয় বন্যা,এভাবে পালিয়ে যেতে নেই"--চন্দন।
বন্যা চন্দনের মুখের দিকে একটা অবাক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো, সত্যি বন্যা কতটা ভাগ্যবতী! তার জীবন সাথী একটি ভালো মানুষ। আর কি চায় একটা মেয়ে।চন্দন সব দিক দিয়ে ভালো। একেবারেই মিস্টার পার্ফেক্ট পতি পরমেশ্বর। বন্যা চন্দনের হাত ধরে এম জি মার্গের পথে হাঁটতে লাগলো।একটা ভালো রেস্টুরেন্টে ডিনার সেরে হোটেলের রুমে ফিরে এলো। এসে শুনলো রনি নার্সিং হোম থেকে চলে এসেছে। আরসে এখন অনেকটা সুস্থ। রাতের খাবার খেয়েছে, আর ঘুমিয়েছে।
পরদিন সকালে গ্যাংটক থেকে দার্জিলিং আসার পরিকল্পনা আগে থেকেই করা ছিলো। সকালের ব্রেকফাস্ট সবাই নীচের তলায় হলঘরে করলো। রনি ও সেখানে গিয়েছিলো, কিন্তু বন্যা লক্ষ্য করলো রনি মাথা নীচু করে ব্রেকফাস্ট করছে, কারোর সাথে কথা বলছে না এমনকি, বন্যার দিকে একবারো তাকালো না। যাইহোক সবাই যে যার রুমে ব্যাগপত্র গোছাতে শুরু করলো। বন্যার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে, কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হচ্ছে, রাতে ভালো ঘুম হয়নি রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে, অথবা টেনশনে, সব মিলিয়ে একটি জটিলতার কারণে বন্যা প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে।
ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে চন্দন এগিয়ে এগিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছে ,আর বন্যার হাতে একটা ছোট্ট সাইড ব্যাগ, বন্যা একটু পিছনে, সেই সময় হঠাৎই মাথাটা কেমন যেন ঘুরলো, সিঁড়ি তে বসে পড়তে যাবে বন্যা।
" কি হলো! পড়ে যাচ্ছো যে আমি ধরবো?"--রনি (পিছন থেকে)
"খবরদার!তোমার কি এতটুকু লজ্জা নেই?"--বন্যা
" আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমি তোমাকে সত্যিই বড় ভালোবাসি আর ভালোবাসাতো কোনো অন্যায় নয়, আমি সারা জীবন শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো, তুমি না বাসলেও বাসবো,আমি কোনো দিন কিছু বলবোনা প্লিজ হেল্প মি,প্লিজ হেল্প। আই নিড ইউর সাপোর্ট। সব কিছু কিভাবে যে হলো--
এম সো সরি, সরি, এন সো সরি ফরগিভ মি"
কথাগুলো বলতে বলতে খুব অদ্ভুত ভাবে পাগলের মতো রনি কাঁদতে লাগলো, আবার দু চোখে জল ও গড়িয়ে পড়ছে। খুব আশ্চর্য ব্যাপার।
"রনি ,এটা একটা সিঁড়ি, রাস্তা এটা , আর কেউ এসে পড়লে,কেউ দেখলে, কি ভাববে?এসব পাগলামী বন্ধ করো"
--বন্যা কথা গুলো বলতে বলতে নীচে নেমে এলো, রনি তার পিছনে পিছনেই আসছিলো। এমন সময় হোটেলের একটি ছেলে-
" সাহাব,আপকি ন্যায়ি ন্যায়ি সাদি হুয়াহে,বহত খুব সুরৎ জোড়ি হো,সদা সলামত রহো জি"-- এই বলে কিছু টিপস্ চাইলো, বন্যা কথা গুলো শুনে আবারো বিরক্ত হলো, কিন্তু রনি খুশি হয়ে তাকে পাঁচশো টাকা দিয়ে দিলো। পাগল আর কাকে বলে ,এই ভালো তো এই মন্দ। এই হাসি তো এই কান্না।
সবাই ওখানের বাস স্ট্যান্ডে এসে, একটি গাড়ি নিয়ে দার্জিলিং এর উদ্দেশ্য রওনা দিলো। এবার আর বন্যার কাছে গিয়ে রনি বসলো না। পিছনের সিটে চুপচাপ বসে আছে। ঐ মাথা নীচু করেই।বন্যার দিকে আবার ও তাকাচ্ছে না।গাড়ি চলছে, সেই বিপজ্জনক পাহাড়ি রাস্তা। চুলের কাঁটার মতো এক একটা বাঁক, মৃত্যু যেন প্রতি পদে পদে হতেই পারে।
বেলা তখন প্রায় দেড় টা, গাড়ি টা রাস্তায় এক জায়গায় থামলো।সেটি তিস্তার পাড়েই একটি দারুণ মনোরম পরিবেশে, একটা খাওয়ার হোটেলে। প্রায় অনেকেই সেখানে এসে গাড়ি থামাচ্ছে । অন্য যাত্রী বা পর্যটকদের জন্য একটি লাঞ্চ করার বা টয়লেটের ব্যাবস্হা। সবাই লান্চ করলো গরম রুটি, এবং ভাত ও সবজী সহ পেঁয়াজ ও আচার সব মিলিয়ে একটা কম্প্লিট থালি।
বন্যা এমনিতেই একটু ধীরে সুস্থে খায়। তার উপরে সে তো অসুস্থ গত রাতের ঘটনার পর থেকেই। বার বার গা গুলোচ্ছে, বমি চলে আসছে ওর। খাওয়ার পর সবাই টয়লেট সেরে গাড়িতে উঠে আসে।বন্যা যেহেতু একটু দেরী করলো,তাই চন্দন তাড়া দিচ্ছিলো,বন্যা তখন বাথরুমে না গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।
দুই তিন ঘন্টা পর ,গাড়ি তখনও দার্জিলিং পৌঁছায় নি। তখন বন্যার খুব গা বমি বমি ভাব। যখন দার্জিলিং এ পৌঁছলো তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে।হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো ! ম্যালের ওখানে তখন খুব অন্ধকার! তারপর বৃষ্টি তে গাড়ি থেকে নামতে সবার দেরী হচ্ছে।বন্যা চন্দন কে বললো, সে বাথরুমে যাবে। ঐ বৃষ্টির মধ্যে অন্ধকারে, টর্চ জ্বেলে চন্দন ও রমেশ সব ব্যাগপত্র এবং বাকিদের এক এক করে নামাতে ব্যস্ত, তাই বন্যাকে একটু অপেক্ষা করতে বললো।
এদিকে বন্যার খুব শরীর খারাপ লাগছে, তখন অঞ্জলী আন্টী বললো -
"চলো এখানে কোথাও টয়লেট আছে নাকি খুঁজে দেখি" ওখানের স্থানীয় লোক টয়লেট দেখিয়ে দিলো, কিন্তু ম্যালের থেকে অনেক গুলো সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে টয়লেট।অন্ধকারে টর্চ জ্বেলেই নীচে নামতে হবে। আন্টীর পা এ ব্যাথা। এতো সিঁড়ি ভাঙতে পারবে না। তাই রনি কে সাথে যেতে বললেন। এই জিনিসটাতে বন্যার প্রচন্ড আপত্তি ছিলো । কিন্তু সেমতাবস্থায় আর কি করা যায়, তাই ব্যাপার টা মেনে নিলো। নীচে গিয়ে বন্যা দেখলো নীচ টা আরো অন্ধকার, প্রচন্ড বাজে বিচ্ছিরি টয়লটের গন্ধ ,বন্যার গা গুলিয়ে গেলো আর ক্রমাগত বমি করতে থাকলো।
"এই নাও জল,চোখে মুখে দাও, টয়লেটে যাবে তো যাও, আমি আছি তো ভয় নেই"-- রনি।
একটু পরে বন্যা একটু ঠিক হলো। রনি কিন্তু তখন অনেকটা ডিসট্যান্সে দাঁড়িয়ে, কাছাকাছি আসেনি। তারপর ভদ্রলোকের মতোই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো ওরা। তখনো বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু কারেন্ট চলে এসেছে, রাস্তার পাশেই ওদের হোটেল বুকিং ছিলো। ওরা বুঝতে না পেরে ওখানেই অপেক্ষা করে।
বাকিরা সব ততক্ষণে হোটেলে চলে গেছে, কিছুক্ষণ পর রমেশ, হাতে দুটো ছাতা নিয়ে এলো ওদের কাছে। একটা ছাতা রনিকে দিলে রনি একটু এগিয়ে গেলো, আর একটি ছাতার নীচে বন্যা আর রমেশ হোটেলে যাওয়ার পথে- এমন সময় রমেশ, বন্যার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো--" কাল রাতে তোমার আর রনির কান্ডটা স্বচক্ষে দেখলাম, প্রমাণ ও রেখে দিয়েছি আমার ফোনে, মনে রেখো,আমি মদ খেলেও কিন্তু তোমার হাবির মতো মাতাল হয়ে যাই না। "
কথা টা শুনেই বন্যার বুকের ভেতর টা ধড়াস করে উঠলো।
💘 'এবং দ্বিতীয়'(5)