(কবি পরিচিতি - কবি অর্পিতা কামিল্যা। বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্ণ নাম অর্পিতা কামিল্যা কর্মকার। সাহিত্য অনুরাগী পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা করতে থাকেন।মাত্র বারো বছর বয়সে জেলাস্তরের ছোট থেকে মাঝারি মানের পত্…
(কবি পরিচিতি - কবি অর্পিতা কামিল্যা। বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্ণ নাম অর্পিতা কামিল্যা কর্মকার। সাহিত্য অনুরাগী পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা করতে থাকেন।মাত্র বারো বছর বয়সে জেলাস্তরের ছোট থেকে মাঝারি মানের পত্রিকায় তার লেখা বেরোতে থাকে।এখন বিভিন্ন অফ লাইন অন লাইন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
ইংরাজী সাহিত্য নিয়ে পোস্ট গ্ৰ্যাজুয়েশন করার পর,আইটি ডিপ্লোমা,ডেস্কটপ পাবলিশিং, ছাড়াও একটি ম্যানেজমেন্ট কোর্স করার পর একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরতা।
গানকরা,গান শোনা,ছবি আঁকা, এবং একনিষ্ঠ ভাবে সাহিত্য চর্চা করা তাঁর সখ।
প্রায় এক হাজারের ও বেশী গদ্য ও পদ্য কবিতা, নারীবাদী , সামাজিক, জীবন মুখী,গবেষণা মূলক, হাস্যকৌতুক, ছোট ও বড় গল্প, কল্পবিজ্ঞান,দুটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লিখেছেন।)
: সিঁদুরে সহবাস
অর্পিতা কামিল্যা
সিঁদুরে আম হয়, সিঁদুরে মেঘ হয়,
সিঁদুরে বিয়েও, কিন্তু সিঁদুরে সহবাস!
হমম,--তা হয় বৈকি! ইদানীং দেখছি, শুনছি,
তাই বুঝছি ,আর এক কলম লিখছি--
আমি বড় সাধারণ গৃহবধূ।
সাধারণ মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারের
খুউউউউব সাধারণ।
ছোটবেলা থেকেই আমার মা ও ঠাকুমার
তত্ত্ব ও তথ্যের ভিত্তিতে শিখেছি, শাঁখা সিঁদুর
একজন নারীর জীবনে কতখানি মূল্যবান।
খবরের কাগজে দেখলাম ,টিভিতে দেখলাম
একজন নারী দিব্যি বলে দিলেন,
ওসব মাথায় সিঁদুর লাগানো মিথ্যে!
লোকসভায় স্বামী হিসাবে স্বামীর নাম লেখা মিথ্যে। হয়তো তার কাছে এটা খুব সহজ সরল ব্যাপার!
হয়তো আধুনিকতায় তার একনিষ্ঠ আধিপত্য।
আর এসব দেখে আড়ালে আবডালে
নারী পুরুষ নির্বিশেষে তাকে দুঃশ্চরিত্রা বলছেন।
কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলবে না।
কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ,তাদের চলাফেরার রাস্তায় বৃষ্টির জল জমলে,
বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তোলে।
এমনকি পথদুর্ঘটনা হলেও আগে ছবি তোলে তারপর অন্য কথা!
তাই উগ্ৰ আধুনিকতায় সিঁদুর প্রসঙ্গে, নারীবাদীরা এখন কেউ ঝান্ডা তুলবেন না, আর মিডিয়াও চেঁচাবে না৷ আর যত সব বুদ্ধিজীবীরা তারা ও গেল গেল রব তুলবে না৷
কিন্তু এবার ভাবুন তো যদি উল্টোটা হতো?
এতক্ষণে কি কি হতো? সবাই বলতো একজন নারীকে অপমান,অসম্ভব মানা যায় না!
একজন মহিলা প্রকাশ্যে একটা গোটা বিয়ে অস্বীকার করতে পারে!
কিন্তু একজন ছেলে করলে সে ধর্ষক!
মানে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষন!
ভাবুন তো কি মজার জিনিস!
ঠাকুমা বলতেন নারী নদীর মতো।
আয়ত্তের সীমা ছাড়ালেই সে বন্যা।
আমি নারী, আর সব নারীদের সম্মান করি।
কিন্তু একনারী অন্য নারীর ঘর ভাঙছে।
উন্নত মানের জীবনযাপনের জন্যে কোনো
গড ফাদার এর রক্ষিতা হয়ে থাকছে।
গোচরে অন্ধকারে স্বেচ্ছায় মাড়াই হচ্ছে।
এ সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করি!
আর অবশ্যই চাই নারীদের মধ্যে
থেকেই প্রতিবাদ হোক।
সমাজের পরিবর্তন হোক,সুস্থিরতায়,শালীনতায়।
বন্ধ হোক প্রকাশ্যে অসামাজিকতা।
সিনেমার নটী,কলেজের শিক্ষিকা অন্যের বরের সাথে সহবাস করছে।
আজ একজন করছে কাল অন্য কেউ!
পরশু একশোজন করবে, তারপর সমাজ গোল্লায়!
বলা যায় না কাল হয়তো একজন মহিলা
আপনার সাজানো ঘরটা এসে ভাঙ্গবে!
কারণ পুরুষ বিপথে যায় না, একজন নারী ছাড়া!নারীদের ও সংযমী হতে হবে।
আমি নারী বা পুরুষবাদী নয়,
আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, মানুষ বাদী।
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
নীলার জন্মদিন
অর্পিতা কামিল্যা
স্বামীর অনেক আপত্তি থাকলেও, স্কুটি নিয়ে লোকনাথ বাবার মন্দিরে হাজির নীলা।
নীলা সরকারি চাকরি করেনা। এই বছর লকডাউনে যেমন লক্ষ মানুষ জবলেস নীলাও ঠিক তেমন।
প্রতিবছরই জুন মাসের পুরো স্যালারিটা অনাথাশ্রমে দান করে নীলা। জুন মাস নীলার জন্ম মাস।এভাবেই নিজের জন্ম দিন পালন করে আসছে সেই দুহাজার এগারো সাল থেকে।এবছর চাকরি নেই। তাতে কি, পুরানো সঞ্চয় থেকে জন্মদিন পালন হচ্ছে!
"দিদি তোমার জন্মদিন যেন প্রতিদিন হয়"--আশ্রমের শিশু টি।
"চাইলে প্রতিদিনই মানুষের নতুন জন্ম হতে পারে
ভাই, শুধু মাত্র ইচ্ছেটা থাকতে হবে"---নীলা।
নীলারও নতুন জন্ম হয়েছিল, মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও বেঁচে ফিরে। নীলা তাই এখন বাঁচে, আর বাঁচায়।
🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️🏵️
◆গঙ্গা সাগর◆
(ঘুর্ণিঝড় স্পেশাল এপিসোড)
(সতর্ক থাকুন ইয়াস্ থেকে)
একদিন গঙ্গা, টিভিতে দেখলো নিউজ চ্যানেলে দেখাচ্ছে যে একটা মারাত্মক ঘুর্ণিঝড় আসতে চলেছে! জরুরীকালীন সতর্কতা জারি করা হয়েছে! সে ঝড়ের বেগের তীব্রতা নাকি প্রচণ্ড! গঙ্গা বাড়ির যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যায়। তাদের টিনের চালের ঘর। কে জানে কি হবে। যদিও ডাক্তার বাবুর ফোন থেকে ফোন করে রোজই কথা হয় মা বাবার সাথে তবুও গঙ্গার ভয় করে। আরো একটা চাপা কষ্ট সব সময় গঙ্গাকে অসম্ভব অস্থির করে দেয় , সাগরের সাথে প্রায় এক মাস হতে চললো তার কোনো যোগাযোগ নেই। সে এখন কেমন আছে,কোথায় আছে,গঙ্গা কিচ্ছু জানে না। একে তো মহামারী আতঙ্ক, লকডাউনের পরিস্থিতি, তার উপর ঘুর্ণিঝড়, সেই সঙ্গে মা বাবাকে ছেড়ে থাকা, সাগরের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ নেই সব মিলিয়ে গঙ্গার এখন দুর্বিষহ পরিস্থিতি।
ভীষণ বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে গঙ্গার, এর ই মধ্যে সে কুচুটে পিসিমনিকে বার কয়েক বলে দেখেছে বাড়ি যাওয়ার কথা,কিন্তু শুধু মাত্র বকুনি আর ধমক ছাড়া গঙ্গার কপালে আর কিছুই জুটলো না। সকালে ব্রেকফাস্টের পর--
"সে কি!ঘুর্ণিঝড় আসছে বলে তোর আবার বাড়ি যাওয়ার কি আছে?তুই বাড়ি চলে গেলে আমাদের যে মহা সমস্যা হয়ে যাবে! না না আমি তোকে এখন একদম যাওয়ার অনুমতি দিতে পারছি না, সে তখন এই মাস টা শেষ হলে এক বেলার জন্যে যাবি না হয়।"--ডাক্তার বাবু ও সাফ জানিয়ে দিলেন।
অনেক অনুনয় বিনয় করেও গঙ্গার আর নিজের বাড়ি যাওয়া হলো না। অগত্যা ডাক্তার জেঠুর বাড়িতেই থাকতে হলো।টিভি চ্যানেলের দেখানো আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা অবলম্বন করে রীতিমতো সব কাজ করতে শুরু করে গঙ্গা, বাড়ির ইনভার্টারে ফুল চার্জ দিয়ে রাখলো।এমার্জেন্সী লাইট গুলো,মোমবাতি দেশলাই সব কিছু হাতের নাগালের মধ্যে রাখলো। সকাল বেলার কাজ সেরে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফোন করে মা বাবার খবরাখবর ও নিয়ে, কিছু দিন পর মাস টা শেষ হলেই গঙ্গা তার বাড়িতে যাবে সেই কথাও জানিয়ে দিলো।
সেদিন দুপুর থেকেই আকাশ কালো মেঘে ঢাকা হয়ে গিয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। বিকেলে দিনের আলোয় রাতের সমস্ত খাবার বানিয়ে নিলো গঙ্গা।রিজার্ভার আর জলের ট্যাঙ্কি পাম্প চালিয়ে পুরো ভরে নিলো।
ডাক্তার বাবুর বাড়ি দোতলা। বাড়ির সামনে প্রকান্ড খেলার মাঠ।কল্যানীতে প্রতিটি ওয়ার্ডে এমন একটি করে বড় খেলার মাঠ থাকে।আর সব রাস্তা অনেক চওড়া। ডাক্তার বাবুর বাড়ির তিনতলায় একদিকে একটা চিলেকোঠার ঘর,বাকিটা টিনের শেড দেওয়া আছে। ঘুর্ণিঝড় হলে কি কি আসন্ন বিপদ হতে পারে,তার কিছুটা গঙ্গা অনুমান করে--
"ডাক্তার জেঠু একটা কথা বলি, ঝড় টা আসছে পশ্চিম থেকে পুর্বের দিকে।তার মানে বাড়ির পূব দিকের রুম গুলো অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।বাড়ির পূব দিকের একটা ঘরের খাটের তলা পরিস্কার করে রাখবো?"-গঙ্গা বললো।
"সেখানে কি হবে!"-- অবাক হয়ে ডাক্তার বাবু বললেন।
"যদি ঝড়ের চোটে পড়শী দের আম গাছ ,নারকেল গাছ এই বাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে! তখন? পুব দিকের ঘরে দেওয়াল গুলো তো ভাঙচুর হবে না।যদিও সেরকম দেখা যায় তাহলে খাটের তলা নিরাপদ, আমি যাই ওখান টা পরিষ্কার করে দিয়ে আসি"।--গঙ্গা বললো।
গঙ্গার এসব কান্ড দেখে ডাক্তার বাবু ও ডাক্তার বাবুর ছেলে সৈকত অবাক হয়ে গেলো! গঙ্গা শুধুমাত্র বুদ্ধিমতী নয়, সে প্রত্যুতপন্নমতী ও বটে। এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হলো সে কি অঝোর ধারায় বৃষ্টি! তারপর রাত আট টা সাড়ে টা নাগাদ শুরু হলো সেই বিধ্বংসী ঝড়। কারেন্ট চলে গেছে তো সেই বিকেলে। পৌরসভার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো জল ভরে রাখতে যে যার রিজার্ভার বা ট্যাঙ্কিতে। তাই বিকেল অবধি কারেন্ট ছিলো।ইনভার্টার টা এমার্জেন্সীর জন্যে রাখতে হয়েছে। চার্জ দেওয়া এল ইডি জ্বলছে ডাইনিং টেবিলে। গঙ্গা দেখতে পাচ্ছে,ডাক্তার জেঠুর বাড়ির ডাইনিং এর বড় কাঁচের জানলা দিয়ে, বিদ্যুৎ ঝলকানি তে, মাঠের ওপারে রাস্তার পাশে বড় বড় মেহগনি গাছ গুলো একেবারেই হেলে গিয়ে মাটির সাথে ছুঁয়ে যাচ্ছে। এমন সময় তিনতলায় শেডের উপরে পাশের বাড়ির আমগাছ টা হুড়মুড়িয়ে পড়লো। সবাই ভয় পেয়ে গেছে। রিভু তো ভয় পেয়ে গোঙাতে শুরু করলো।
"দেখেছো জেঠু, ঝড় টা পশ্চিম থেকে পুর্বে বয়ে যাচ্ছে।ঐ ঘরে খাটের তলায় মোবাইল ফোন,টর্চ লাইট,ডাইনিং টেবিলে রাখা শুকনো খাবারের প্যাকেট,জলের বোতল সব নিয়ে ওখানে সবাই থাকি চলো।"-চিৎকার করে গঙ্গা বললো।
ডাক্তার বাবু আর সৈকত , সেই রকম আপৎকালীন পরিস্থিতিতে গঙ্গার যুক্তিযুক্ত কাজকর্মে অনেক নির্ভরযোগ্যতা খুঁজে পেলেন।
সবাই মিলে পূর্ব দিকের ঘরে গেলেন। ঠিক কয়েকটা মূহুর্ত পরেই পাশের বাড়ির নারকেল গাছটা ধড়াম করে ডাক্তার বাবুর পশ্চিম দিকের বারান্দায় স্লাইডিং ফ্রেঞ্চ উইনডো বা লম্বা কাঁচের জানালা ভেঙে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে পড়লো। সারা ডাইনিং এ কাঁচের টুকরো।সোঁ সোঁ করে ঝড়ো হাওয়া ঢুকে ঘরের সমস্ত জিনিস এলোপাথাড়ি ফেলতে লাগলো। ভাগ্গিস পরিবারের সদস্যরা তখন পুর্ব দিকের ঘরে খাটের তলায়।এবং এই নিশ্চিত নিরাপত্তার সুপরিকল্পনা ছিলো একমাত্র গঙ্গার।
অবশেষে রাত দশটার কিছু ক্ষন পর ঝড় থেমে গেলো। যুদ্ধ শেষের নীরবতায় ঘরের মধ্যে তখন ভাঙ্গা নারকেল গাছ,জল থৈ থৈ,আর কাঁচের টুকরো।
পরদিন সকালে--
"এই গঙ্গা এই নে কফি খা।"-- রিভু বললো।
"আমি কফি খাই নে,চা খাই রিভু দাদা"।--গঙ্গা বললো।
"কি!আবার মুখে মুখে কথা! খেতে বলছি খেয়ে নে।"---চোখ বড় বড় করে ভয় দেখিয়ে রিভু বললো।রিভু তো মোটেও সুবিধার ছেলে নয়।সে ও ক্লাস ইলেভেনে পড়ে গঙ্গা পড়াশোনায় ভালো বলে রিভু তো তাকে একদম সহ্য ই করতে পারে না।তাহলে আজ সকালে আবার এই কফি খাওয়ানোর নতুন নাটক টা কেন !গঙ্গার কপালে চিন্তার ভাঁজ
"তুই যদি কফি টা না খাস্,তাহলে মা কে গিয়ে বলবো যে তুই আমার থেকে চেয়ে খেতে চাইছিলিস্।"--রিভু বললো।
গঙ্গার খুব রাগ হচ্ছিলো,নেহাত এই বাড়িতে থেকে করে কম্মে খেতে হবে।না হলে এক থাপ্পড় মেরে এই সব বেয়াদব কে ঠাণ্ডা করার পদ্ধতি গঙ্গার জানা আছে।নিরুপায় গঙ্গা কফির মগ টা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিলো--
"হি হি হি ,কি মজা ,যা দিলাম না,ওটা তে কোমোটের জল মিশিয়েছি ,হা হা হা ,দেখ কেমন লাগে"।----হাত তালি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে রিভু বলতে থাকে।
গঙ্গা মুহুর্তের মধ্যে ওয়াক থু করে ওখানেই বমি করে দেয়।এমন সময় সৈকত এসে রিভু কে টেনে এক টা চড় কশিয়ে দেয়।
"গঙ্গা, আর ইউ ওকে?"-- সৈকত বললো।
গঙ্গা কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।সৈকত গেলো তার পিছু পিছু ।গঙ্গা তখনও বেসিনের ওখানে বমি করেই যাচ্ছে।
সৈকত তখন একোয়াগার্ড থেকে জল নিয়ে গঙ্গার দিকে এগিয়ে দিলো।
"বলি এসব হচ্ছে টা কি? হ্যাঁ?সোমত্ত মেয়ে ছেলে বাড়ি সুদ্ধু সবাই কে কি বশীকরণ করলো নাকি?"---পিসিমনি বললেন।
গঙ্গা আবার ও কিছু না বলে নীরবে চোখের জল ফেলতে লাগলো।
সৈকত পিসিমনির দিকে তাকিয়ে--"পিপি তুমি কি পুরো ঘটনা টা জানো?আমার উপরের বারান্দা থেকে সব টা দেখেছি। আর তাই রিভু কে শাসন করলাম"।---- সৈকত বললো।
"তা বলে সামান্য একটা কাজের মেয়ের জন্যে তুই নিজের ভাই এর গায়ে হাত তুলবি?বিদেশের অতো ডানাকাটা পরী থাকতে শেষে কিনা গঙ্গা?"--ভ্রু কুঁচকে অত্যাশ্চর্য হওয়ার ঢং করে পিসিমনি একটা মারাত্মক অবান্তর কথা বলে ফেললেন।
"বিদেশের ডানাকাটা পরীদের থেকে রূপে গুনে কোনো অংশে গঙ্গা কম নয়,-মাইন্ড ইট।"--কথা টা বলেই সৈকত সেখান থেকে সটান উপরে চলে গেলো।
নিমেষেই গিয়ে গঙ্গার চুলের মুঠি ধরে --"আজ ই এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে বেরো,বেরিয়ে যা বলছি।"--- দাঁত মুখ খিঁচিয়ে হাউ হাউ করে চিৎকার করে পিসিমণি বললেন।
গঙ্গা চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু তা সত্বেও গঙ্গার চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির সদর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পিসি। গঙ্গা সহ্য করতে না পেরে মাথার চুলের সঙ্গে থাকা পিসির হাত খামচে দিয়ে আর এক হাতে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয়। পিসি ছিটকে গিয়ে পড়ে একটু দুরে আর 'মাগো , গেলুম গো' বলে চিৎকার করতে থাকে।সেখানে দৌড়ে গিয়ে হাজির হয় রিভু।সে গঙ্গার গায়ে হাত তুলতে যাবে এমন সময় হাত টা এসে ধরে ফেলে সৈকত। এর পর দুই ভাই এর মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।গঙ্গা গিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে,কিন্তু রিভু গঙ্গা কে ধাক্কা মেরে দরজার দিকে ঠেলে দেয়। আর - দৈবক্রমে !গঙ্গাকে সেখানে এসে ধরে ফেলে সাগর!
"সা আ আ আ গ অ অ র!" সাগরকে জড়িয়ে ধরে গঙ্গা, আর হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
"তোমার পা খান ঠিক হয়ে গেছে!ঘুর্নিঝড়ে তোমার কিছু ক্ষতি হয় নাই তো সাগর?"---কাঁদতে কাঁদতে গঙ্গা বললো।
"এই গঙ্গা বুড়ি টা আমার, আবার কাঁদে দেখো, এই তো আমি হ্যাঁ, দেখো নে আমার পা খান সেরে গেছে।"--- গঙ্গার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে সাগর বললো।
"চলো এখান থেকে, মারধোর খেয়ে থাকতে হবে না। তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না,তাই নির্মল দার কাছে তোমার সব খবর নিয়ে এক্কেরে এখানে চলে এসেছিলাম, এখন দেখছি এই কেস -আর একদম এখানে নয়।"---ধমক দিয়ে সাগর বলে।
ততক্ষণে ডাক্তার বাবু ও সেখানে উপস্থিত।
"এই ছেলেটা কে গঙ্গা!তোমার বয়ফ্রেন্ড!"--- সৈকত বললো।
"আরে হ্যাঁ,ইন ফিউচার ওরা বিয়ে করবে,আমি সব জানি।"-- সৈকতের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার বাবু বললেন।
"ডাক্তার জেঠু ,আমি আর তোমাদের বাড়ি থাকবো নে।"--চোখের জল মুছে ততক্ষণে স্বাভাবিক ভাবেই বলে গঙ্গা।
"কেন?আমরা তো তোমাকে কিছু বলিনি গঙ্গা, এই প্যান্ডেমিক সিচুয়েশনে আমরা সবাই হেল্প লেস্,আর তুমি লিভ করবে বলছো?"--রাগ দেখিয়ে সৈকত বললো।
"ডাক্তার দাদা,তুমি আর জেঠু খুব ভালো মানুষ গো, কিন্তু আমি যে পারতেছি না গো, মা বাবারে কতদিন দেখি নাই, মন টা বড় অস্থির করে। আমারে বাড়ি যেতে দাও নে ।"--- বিনয়ের সাথে বলে গঙ্গা।
গঙ্গার উপর সৈকতের অভিযোগ সত্যি।সাগরের সাথে গঙ্গা কে দেখে সৈকতের অভিমান ও সত্যি।কোথায় যেন সমস্ত অনুভূতির অধিকারের হিসেব টা এখন তার বেহিসেবি।নিজের সাথে নিজের আয়ত্ত্বের গন্ডির বড্ড গন্ডগোল। তাই হয়তো হিসেব মেলাতে গিয়ে সত্যি কারের ভালোবাসা টাকা, পয়সা,রূপ, রঙ,প্রতিপত্তি দেখে বদলে যায় না।গঙ্গা সাগরের, তাই গঙ্গা আর কারোর পানে চাইবেই না।এটাই স্বাভাবিক। আর গঙ্গার প্রতি সৈকতের মায়ার অন্তরালে কোথায় যেন লুকিয়ে ছিলো একটা নিষ্পাপ শ্রদ্ধা আর ভালোলাগা, তাই হয়তো এই সময় সৈকতের এই অদ্ভুত অচেনা অস্থিরতা,সৈকতের মনে অযথা জটিলতা সৃষ্টি।তবে গঙ্গা যেখানেই থাকুক খুব ভালো থাকুক।সৈকতের সেটাই চাওয়া উচিৎ। কিছু কিছু জলধারা যেমন সাগর সৈকত অবধি পৌঁছনোর সুযোগ পায়না! এখানে ও আবেগহীন শুষ্কতার মরুভূমিতে সে প্রেমের জলধারা বিলীন হয়ে গেছে। সৈকতের ভাবনা তাই শুধু মাত্র সৈকতের একান্ত ব্যক্তিগত।