আমার আর কৃষ্ণ সাজা হলোনা / অঞ্জন ভট্টাচার্য
গায়ের রং কালো নিয়ে জন্মেছিলাম তাই বাবা আমার নাম রেখেছিল কৃষ্ণাভ,ঠাকুমা আমায় আদর করে কালাচাঁদ বলে ডাকতো,মা বলতো - তুই যে আমার কালোমানিক।বাবা-মায়ের আদর যত্নে ছোটবেলা থেকেইআমার শরীর - স্বা…
আমার আর কৃষ্ণ সাজা হলোনা / অঞ্জন ভট্টাচার্য
গায়ের রং কালো নিয়ে জন্মেছিলাম
তাই বাবা আমার নাম রেখেছিল কৃষ্ণাভ,
ঠাকুমা আমায় আদর করে কালাচাঁদ বলে ডাকতো,
মা বলতো - তুই যে আমার কালোমানিক।
বাবা-মায়ের আদর যত্নে ছোটবেলা থেকেই
আমার শরীর - স্বাস্থ্য বেশ ভাল,
হয়তো সেই জন্যই দূরসম্পর্কের এক কাকা
ঠাট্টা করে আমাকে কালাপাহাড় বলতো।
একটু বড় হতে না হতেই কৃষ্ণাভ থেকে কেষ্ট হলাম,
একইভাবে কখন যেন কেষ্ট থেকে কেষ্টা হয়ে গেলাম!
স্কুলের মাষ্টার মশাইরা - বন্ধুরা কৃষ্ণাভ নামে ডাকলে খুব ভাল লাগতো,
কিন্তু পাড়ায় কেউ যখন কেষ্টা বলে ডাকতো ঠিক তখনই মনে পরতো রবি ঠাকুরের 'পুরাতন ভৃত্য' কবিতা টা।
কলেজের বন্ধুরা আমার নাম দিয়েছিল কালীচরণ।
কখনও কখনও নিজেদের দেওয়া নাম ভুলে গিয়ে আমাকে কালীরাম বলে ডেকে বসতো!
ছাত্র সংসদের নেতা আবার কালিয়া নাম রেখেছিল আমার।
বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র শ্রীরাধা সবার আড়ালে নীচু গলায় কৃষ্ণ বলে ডাকতো আমায়।
পৌরসভা তে চুক্তি ভিত্তিক লোক নেওয়া হচ্ছে শুনে বেকারত্বের জ্বালা কাটাতে যেদিন দরখাস্ত হাতে গেছিলাম পৌরপিতার কাছে, সেদিন পৌরপিতা আমাকে দেখে বলেছিল - সারাজীবন কালিদাস হয়ে না থেকে চেহারা টা কাজে লাগা বরং , তাতে আমারও সুবিধে আর তুই ও বহাল তবিয়তে থাকবি!
এলাকায় শান্তি নষ্ট করার জন্য দুষ্কৃতকারী হিসেবে প্রথম যেদিন ধরা পড়েছিলাম, পুলিশের খাতায় আমার নাম লেখা হয়েছিল কালুয়া। দলের নেতা সংবাদমাধ্যমে বলেছিল - সমাজবিরোধীদের সাথে দলের কোনও সংশ্রব নেই। বুজে আসা গলায় বাবা সাংবাদিকদের কাছে বলেছিল - ও আমার ছেলে না। মা শুধু মুখে আঁচল চাপা দিয়েছিল।
কালুয়া থেকে কালু মস্তান হয়ে আজ আমি বিশিষ্ট সমাজসেবী! পৌরসভার আগামী নির্বাচনে নতুন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী আমি! হয়তো আর কয়েকদিন পরেই মনোনয়ন পত্রে নিজের নাম লিখবো কৃষ্ণাভ!
ঠাকুমা বেঁচে নেই। সেরিব্রাল স্ট্রোকে বাবা কথা বলার শক্তি হারিয়েছে। শাদা পাজামা পাঞ্জাবী তে সুসজ্জিত আমাকে দেখে মা আর আদর করে কালোমানিক বলে ডাকে না। এখন মাঝে মাঝেই মনে পড়ে স্কুলের বন্ধুদের কথা মাষ্টার মশাইদের কথা। আর খুব মনে পড়ে শ্রীরাধাকে। আমার আর কৃষ্ণ সাজা হলোনা।
২৫.০৩.২০২১