Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

মাছের ঝোলঅর্পিতা কামিল‍্যা
"কত বড় লোকের বেটি গো তুমি হ‍্যাঁ?মাছ ভাজার জন্য কড়াইয়ে এই এক কাঁড়ি তেল নিয়েছো?" সত্তরোর্ধ্ব শাশুড়ির বাপ তুলে গঞ্জনা দেওয়া টা এই দশ বছরে একেবারেই গা সওয়া হয়ে গেছে ভাগীরথীর।সকাল থেকেই শরীর টা খার…

 


মাছের ঝোল

অর্পিতা কামিল‍্যা


"কত বড় লোকের বেটি গো তুমি হ‍্যাঁ?মাছ ভাজার জন্য কড়াইয়ে এই এক কাঁড়ি তেল নিয়েছো?"

 সত্তরোর্ধ্ব শাশুড়ির বাপ তুলে গঞ্জনা দেওয়া টা এই দশ বছরে একেবারেই গা সওয়া হয়ে গেছে ভাগীরথীর।

  

সকাল থেকেই শরীর টা খারাপ লাগছে তার,নয় মাসের অন্তস্বত্তা সে,আগের দু দুটি মেয়ের পর এই নিয়ে মোট তিন বার!তাই এই শরীরের খারাপ লাগাটা তার খুব চেনা।অনেকটা অন্য মনস্ক হয়েই সে বেশী তেল দিয়ে ফেলেছিল,এমনিতে পাকা গিন্নী সে।


কম কাজ তার,সকালে একবার জলখাবার বানিয়ে,দুই মেয়ে কে স্কুলে পাঠানো, স্বামী কে দোকানে পাঠানো তারপর আবার ও রান্নাবান্না, আজ আবার কাজের মেয়েটি ও আসেনি।


শ্বশুর বাড়ির লোকজনের মন জুগিয়ে চলা মেয়েটি নীরবে কড়াইয়ে বাড়তি তেলটা হাতা দিয়ে তুলে রাখার চেষ্টা করে,আর নিজের অজান্তেই মনে মনে ভাগ্যের পরিহাস দেখে নিজের উপর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

বাপের বাড়ি তার, বড়লোক নয় মোটেও,সাধারণ মধ্যবিত্ত,দুই দিদির পর মা বাপ আশা করেছিল এবার তাদের নিশ্চয়ই ছেলেই হবে,সে দারুণ আশায় জল ঢেলে জন্ম হয় ভাগীরথীর! অবহেলায় ভাগীরথী থেকে নাম হয়ে যায় 'অভাগী'!

বছর ষোলোর দোরগোড়ায় বিয়ে,বয়সে দ্বিগুণ একটি বর ও জোটে তার!পড়াশোনায় ভালো সেই মেয়েটিকে বই, খাতা,পেন ফেলে ধরতেই হয় সংসারের হাল।

......তার পর 'প্রিয়েরে দেবতা করে,দেবতা কে প্রিয় ক‍রে' খুন্তি ,কড়াই হাতা,ভালোবাসায় লাল সিন্দুর আলতা।

মাছ গুলো ভাজতে দিয়ে মশলা টা বেঁটে ফেলতে হবে, মাছের ঝোল টা বেশ লাল লাল হবে অভাগীর স্বামীঅবিনাশ বাবুর সেই লাল ঝোল ভারি পছন্দের।মাছ ভাজা হয়ে গেলে ,খানিকটা তেল কমিয়ে তেলের মধ্যে প্রথমে চিনি দিবে সে, চিনি টা বেশ লালচে হয়ে তেলের উপরে ভেসে উঠলে,জিরে আর শুকনো লাল লংকা বাঁটা,আর টমেটো দিয়ে ঐ লাল রঙের মাছের ঝোল হবে,

গ‍্যাস ওভেনে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রান্না করতে খুব একটা কষ্ট হয় না তার।

কিন্ত এটা তার নয় মাস চলছে ,শীল নোড়ায় মশলা বাটা যেন খুবই ঝুঁকিপুর্ন । ওদিকে বয়স্ক শাশুড়ি বাতের ব‍্যাথায় এক্কেরে সারা, আর কয়দিন ধরে শাশুড়ির জন্মাষ্টমীর পূজার যোগাড় করতে গিয়ে খুব হয়রানি ও হয়েছে অভাগীর!

তারপর ও বরের পছন্দের সেই লাল লাল মাছের ঝোল, স্বামী টি তার খুব ভালো মানুষ।

পর পর দুই মেয়ে হবার পর যখন অভাগী সত্যি সত্যি নিজেকে হতভাগী মনে করেছে , শাশুড়ি যা খুশি বলেছে অভাগী কে,শুধু অবিনাশ বাবু কোনো দিনই কিছু টি বলেন নি।

তাই তাকেও এবার একটা বংশধর দিতে চায় অভাগী।মনে হয় এবার এ ঠিকই ঠাকুর মুখ তুলে চাইবেন,

 মশলা বাঁটতে যাবে!

এমন সময়!

 হঠাৎই গর্ভ যন্ত্রণা শুরু!

তারপর হাঁকডাক!...গাড়ি... হাসপাতাল.. অবশেষে....আবারও মেয়ে...।

কি করবে এবার অভাগী! ঠাকুরের উদ্দেশ্যে অভিযোগী ছল ছল চোখে ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে কে কোলে নিয়ে মনে মনে বলে,কেন কোনো ভাগীরথী হয়ে যায় অভাগী,মন যে রয়না নীরবে , আজ হোক সে দারুণ অস্থির চঞ্চলা, বাঁধ ভাঙা হোক,হয়ে যাক প্রতিবাদীনী, স্বেচ্ছাচারিনী,কল্লোলিনী,স্রোতস্বিনী

হোক কলরব,বলুক তার হয়ে প্রতিটি নারী,আমাদের বাঁচতে দা আআআআআআও।


খানিক বাদে অবিনাশ বাবু সদ‍্যজাত মেয়ে কে দেখতে এলেন, আদর করে কোলে তুলে হাসিমুখে বললেন,"খুবই মিষ্টি তো আমাদের পুচকি পরী,তোমার বড় দুই মেয়ে একজনকে ডাক্তার আর একজন কে ইন্জিনিয়ার বানানোর কথা রোজই বলিতো।আর আমাদের এই ছোট্ট পরী কে পাইলট বানাবো,আকাশে উড়ে উড়ে বেড়াবে এই পরী"।

কথা শুনে আনন্দে ভরে গেল অভাগীর মন, আর হাসপাতালের জানলা দিয়ে বাইরেটা যতটুকু দেখা যাচ্ছে,বৃষ্টি হবার পর কি সুন্দর ঝকঝকে রোদ উঠেছে।