Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃজনী-বন্যা-সেরা-সাহিত্য-সম্মাননা

#শিরোনাম_সারপ্রাইজ।#কলমে_তনুশ্রী_পাল #তারিখ_১৬_৭_২০২১
আমি একজন টোটো চালক, আমার নাম সুজয়, টাকার অভাবে আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে পারিনি। বি এ দ্বিতীয় বর্ষে যখন পড়ি তখন বাবার স্ট্রোক হয়, ওই স্ট্রোকে বাবা প্যারালাইজড হয়ে যায়।…

 


#শিরোনাম_সারপ্রাইজ।

#কলমে_তনুশ্রী_পাল 

#তারিখ_১৬_৭_২০২১


আমি একজন টোটো চালক, আমার নাম সুজয়, টাকার অভাবে আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে পারিনি। বি এ দ্বিতীয় বর্ষে যখন পড়ি তখন বাবার স্ট্রোক হয়, ওই স্ট্রোকে বাবা প্যারালাইজড হয়ে যায়। সংসারের সব দায়িত্ব আমার উপর এসে পড়ে সেই জন্য পড়াশোনাটা আর হয়ে ওঠেনি। কি কাজ করব খুঁজে না পেয়ে শেষে টোটো চালাবো স্থির করি। এক বন্ধু আমাকে টোটো মালিকের কাছে নিয়ে যায়, ওই মালিকের কাছ থেকে টোটো ভাড়া নিয়ে আমি চালাই, টোটো তে ভাড়া হোক আর না হোক আমাকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা মালিককে দিতে হয়। টোটো চালিয়ে বাবার চিকিৎসা, মায়ের সুগার, প্রেসারের ওষুধ সব মিলিয়ে   কোনরকমে সংসারটা চলে যায়।


আমার টোটো তে প্রতিদিন এক ধনী বাড়ির মেয়ে কলেজ যেত আবার কলেজ থেকে বাড়ি আসত। মেয়েটির যেমন সুন্দরী ছিল তেমনি তার সুন্দর ব্যবহার ছিল, ধনী  বাড়ির মেয়ে হলেও কোনো অহংকার ছিল না।


ওই মেয়েটি যখন আমার টোটোতে যেত আমি আমার টোটোর আয়না থেকে উনাকে দেখতাম। চোখাচোখি হয়ে গেলে মেয়েটি চোখ নামিয়ে মুচকি হাসত। খুব ইচ্ছে হতো মেয়েটির নাম জানার কিন্তু কোন দিন সাহস করে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি।


মেয়েটির নাম নীলিমা, একদিন কলেজে ওনার বন্ধু এই নামে ডেকে ছিল, তখন থেকে জানলাম। কখন যে আমরা নিজেদের অজান্তে দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম নিজেরাই বুঝতে পারিনি। আমি নীলিমাকে কথাটা বলে উঠতে পারিনি কারণ গরিবের ভালোবাসার মূল্য কেউ দেয় না। কিন্তু নীলিমা একদিন হঠাৎ বলে উঠলো-"সুজয় আমার বাড়িতে আমার বিয়ের জন্য দেখাশোনা করছে", আমি বললাম-"ভালো তো ম্যাডাম সুখবর, আপনার বিয়েতে আমাকে নেমন্তন্ন করতে ভুলবেন না যেন"। নীলিমা বলল-"সুজয় আমি তোমাকেই ভালোবাসি আর তোমাকে বিয়ে করতে চাই"।


আমি নীলিমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি যে উনার আর আমার ভালোবাসা কখনোই পরিণতি পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নীলিমা বুঝতেই চায় না। নীলিমা বলে -আমি যদি উনাকে বিয়ে না করি তাহলে সুসাইড করে নেবেন। আমি খুব ভয় পেয়ে বলতে গেলে বাধ্য হয়ে নীলিমাকে বিয়ে করি।


নীলিমা আর আমার বিয়ের খবর পেয়ে নীলিমা বাবা আমাদের বাড়িতে পুলিশ নিয়ে এসে হাজির হয়। কিন্তু পুলিশ কিছুই করতে পারেনি কারণ আমরা দুজনে ছিলাম প্রাপ্তবয়স্ক। নীলিমার বাবা নীলিমাকে ত্যাজ্য-কন্যা করেন।


এত কিছুর পরেও আমার মনের মধ্যে সংশয় ছিল যে-নীলিমা আমাদের পরিবারকে মেনে নিতে পারবে তো! এত ধনী পরিবারের মেয়ে হয়ে কি করে আমাদের পরিবারকে মানিয়ে-গুছিয়ে থাকবে? কিন্তু আমি নীলিমাকে যতই দেখছি ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি। কি সুন্দর করে আমাদের পরিবারের সাথে মিলে মিশে আছে। বাবাকে যত্ন করে, মায়ের হাতে হাতে কাজ করে দেয়, আমি যখন টোটো চালিয়ে বাড়িতে আসি আমার হাতের সামনে স্নান করার জন্য জল, গামছা সবকিছু এনে দেয়, সবসময় মুখে মিষ্টি হাসি লেগেই আছে।


আমি যখন টোটো চালায় তখন দেখি কত দম্পতি  শপিং করতে যায়, কত কি জিনিস কিনে, রেস্টুরেন্টে খেতে যাই। আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। এত ধনী পরিবারের মেয়ে নীলিমা অথচ আমি কোন সুখ দিতে পারিনি। দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল, কাল আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। তাই কিছুদিন ধরে টাকা জমিয়ে আজ নীলিমার জন্য একটা শাড়ি আর একটা লাল গোলাপ কিনলাম। রাত বারোটা বাজলেই শাড়ি আর লাল গোলাপটা দিয়ে  -"হ্যাপি অ্যানিভার্সারি নীলিমা" বলে সারপ্রাইজ দেবো।


টোটো চালিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে আগে শাড়ি আর গোলাপটা লুকিয়ে রেখে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার ভান করে চুপচাপ শুয়ে থাকি। নীলিমাও রাতের খাবার খেয়ে আমার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মনে মনে ভাবলাম নীলিমা কি ভুলে গেছে আজ রাত বারোটা পেরোলেই আমাদের অ্যানিভার্সারি! যাই হোক আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম রাত ১২টার।


হঠাৎ দেখলাম নীলিমা উঠে রান্নাঘরে গেল, আমি ভাবলাম জল খেতে গেছে হয়তো কিন্তু দেরি দেখে চুপি চুপি রান্নাঘরের দিকে  গিয়ে দেখি নিলিমা কি যেন করছে। আনেকবার দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুই দেখতে না পেয়ে রুমে এসে আবার শুয়ে পড়লাম তখন ঘড়িতে বারোটা বাজতে৪ মিনিট। মনে মনে বললাম আর কিছুক্ষণ পরে আমি নীলিমা কে সারপ্রাইজ দেব।


প্রায় বারোটা, আমি রান্নাঘর দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছি আর মনে মনে ভাবছি নিলিমা কি করছে কে জানে। হঠাৎ দেখি নীলিমা রান্নাঘর থেকে কি যেন একটা নিয়ে আসছে, অন্ধকার বলে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। কি যেন একটা নিয়ে এসে টুলে রেখে লাইট অন করে বলল-"হ্যাপি অ্যানিভার্সারি সুজয়"।

আমি চোখ খুলে অবাক, টুলে দেখি একটা কেক, আমি নীলিমাকে বললাম-এটা তুমি কোথায় পেলে? নীলিমা বলল-"তুমি যে টাকা আমাকে হাত খরচ করতে দাও সেখান থেকে টাকা জমিয়ে এই কেক বানিয়েছি আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর জন্য"। আমি বললাম-"কেক ওভেন তুমি কোথায় পেলে"?  প্রেসার কুকারে বানিয়েছি মশাই  বলে নীলিমা একটা টি-শার্ট বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল এই নাও তোমার গিফট। আমার চোখে জল চলে এলো কিছু বলে উঠতে পারছিনা। আমিও নীলিমাকে শাড়ি ও গোলাপটা দিয়ে বললাম-"হ্যাপি অ্যানিভার্সারি নীলিমা"। নীলিমা শাড়ি ও গোলাপটাকে জড়িয়ে ধরে বলল খুব সুন্দর হয়েছে সুজয়, আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি নীলিমাকে বললাম-"আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আজ নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম"।


নীলিমা মা-বাবাকে পাশের রুম থেকে ডেকে নিয়ে এলো, আমরা দুজনে মা-বাবাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিলাম। তারপর নীলিমার হাতে বানানো কেক এর উপর একটা মোমবাতি জ্বেলে ফু দিয়ে নিভিয়ে কেক কেটে  পরস্পরকে কেক খাইয়ে আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালন করলাম। আমি নীলিমাকে বললাম-"তুমি এত অল্পতে কি করে খুশি হও"? নীলিমা বলল-"সব না পেলেও যতটুকু পেয়েছি ততটুকুই বা কত জনে পায়?"


নীলিমার এই কথা শুনে আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। সত্যি এই চিন্তা ভাবনা যাদের মধ্যে আছে কষ্টের  পৃথিবীতে তারাই প্রকৃত সুখী। অতিরিক্ত আশা মানুষকে সুখে থাকতে দেয় না। ওরা যেটা পেয়েছে আমি সেটা পাইনি এই মানসিকতা যাদের তারা কখনো সুখী হতে পারেনা। বরং আমি যেটা পেয়েছি সেটা অনেকেই পায়নি এটা চিন্তা করলে দেখব আমাদের জীবন কত সুন্দর হয়ে উঠেছে। চিন্তা ধারা পরিবর্তন না আনলে জীবনে সুখী হওয়া কখনোই সম্ভব নয়।