Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

দীর্ঘ মেয়াদি না স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা, ঠিক করে ভোটের সমীকরণ

সংসার চালাতে গেলে দুটি শব্দ কে খুব বেশি করে মনে রাখতে হয়।তবেই সে সংসার সুখের হয়।এক বাজার মূল্য বেড়েছে অথচ আয় বাড়েনি তাই খরচ কমাও।এটি এক পক্ষ।আর বাজার মূল্য বেড়েছে কিন্তু খরচ না কমিয়ে আয় এর চেষ্টা কর।যাতে করে সংসার যেন ঠিক আগের মত…


তরুণ চট্টোপাধ্যায়
সংসার চালাতে গেলে দুটি শব্দ কে খুব বেশি করে মনে রাখতে হয়।তবেই সে সংসার সুখের হয়।এক বাজার মূল্য বেড়েছে অথচ আয় বাড়েনি তাই খরচ কমাও।এটি এক পক্ষ।আর বাজার মূল্য বেড়েছে কিন্তু খরচ না কমিয়ে আয় এর চেষ্টা কর।যাতে করে সংসার যেন ঠিক আগের মতোই চলে।

কথাটি খুবই সাধারণ ।নিত্য দিন সংসার করা মানুষ জনের সঙ্গে এই দুই শব্দের পরিচয় নিশ্চিত ।কিন্তু দুটি কাজই যে কঠিন তা নিয়ে সংশয় একেবারেই নেই।

আপনি আগে যদি এক কেজি মাছ বাজার থেকে আনতেন,এখনো না আনলে যথেষ্টই অসুবিধা ।কিন্তু মাছের দাম দ্বিগুণ ।কিন্তু রোজগার তো সেই তুলনায় বাড়েনি।ফলে কি ভাবে সামলাবেন।

আবার আপনি যদি এক কেজি মাছ ই আনতে যান,তাহলে আপনার আয় তো বাড়াতেই হবে।নচেৎ পারবেন কি করে।

উদাহরণ টি একেবারেই ঘরোয়া ।আর যা নিয়ে আমাদের সংসার জীবনে প্রতিনিয়ত ই হোঁচট খেতে হয়।আর এই হোঁচট খেতে খেতেই যিনি যে পক্ষে তিনি সেই সিদ্ধান্ত টি নেন।এনিয়ে ভাবনা চিন্তা একেবারেই নিজস্ব ।

কিন্তু দেশের সরকারের আজ সেই অবস্থায় ।শ্যাম রাখি না কূল রাখি।ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলা যাবে না।কারন গদি সামলাতে গেলে তো জনমোহিনী হতেই হবে।না হলে ভোট বাক্সে টান পড়বে।আর কে চান ক্ষমতার অলিন্দ থেকে সরে যেতে।ফলে খুচখাচ ছোট ছোট প্রকল্পের পিছনে খরচ করেই বৈতরনী পার।বড় প্রকল্পের কথা পরে ভাবা যাবে।এখনতো বাঁচি।পরের বার সরকারে বসলে দেখা যাবে গোছের।তাই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা কে ধামা চাপা দিয়ে ছোট ছোট জনমোহিনীর দিকেই নজর।আর সেই কাজে কি রাজ্য কি কেন্দ্র ।সকলের বাক্য সেই এক।অথচ এই ধরনের ছোট কাজ করে সংসার কে বাঁচানো গেলেও দেশ কে যে বাঁচানো যে সন্ভব নয়,তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ।আর তাঁর ফলশ্রুতি প্রতি বছর বন্যা, খরা,সাইক্লোন কে বুকে ধরেই দেশের বেঁচে থাকা।

রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে আধা সত্য আধা মিথ্যার ফুলঝুরি জ্বালিয়ে ভোট নিজেদের অনুকূলে আসে।আর এই সত্য টিকে বুকে ধরেই দেশ চলছে জনমোহিনী ললিপপ খাওয়াতে খাওয়াতে ।আজ তো চলুক ,কাল দেখা যাবে গোছের।যে শব্দ বন্ধনী আমরা নিত্য দেখি সংসারে।জ্বর এসেছে ওষুধ দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া যাক।তিনদিন বাদে জ্বর না কমলে ডাক্তার দেখানো যাবেখন।ফলে ঘুসঘুসে জ্বর থাকছেই।আর তা দেশের পক্ষেও যে এখন প্রযোজ্য ।ফলে সেই জ্বর নিয়ে আমরাও এগিয়ে চলেছি।সমাজবাদের মহান তীর্থ ভারত বর্ষ, আর কতদিন ঘুসঘুসে জ্বর সইবে বলো।

এরকম উদাহরণ লাখো লাখো দেওয়া যেতেই পারে।দেশের আনাচে কানাচে তা রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ।তবে সে সব নিয়ে লিখতে গেলে তো মহাভারত হয়ে যাবে।তাই শুধুমাত্র সুন্দর বনের অভিজ্ঞতা দিয়েই এ লেখার যবনিকা টানতে চাইছি।

সুন্দর বনকে বাঁচাতে নানা পরিকল্পনা সরকার করেছেন বা করছেন।কিন্তু সত্যি সত্যি এখানকার মানুষের মঙ্গল কি হয়েছে এতটুকু ।মৌসুনী থেকে ঘোড়ামারা, জি প্লট থেকে কুমির মারী, বাঁধ ভাঙার ছবিটা তো সেই এক রকম।আর তা নিত্য বছর ধরেই।সেই ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছি এক ছবি।সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে।বাঁধে মাটি পড়ছে,ঠিকাদার কাজ করছেন।আবারও ও বানভাসি হচ্ছেন মানুষ ।লক্ষ্য লক্ষ্য টাকার ফসল জলে ডুবছে।সরকার দান খয়রাতি দিচ্ছেন ঠিকই ।তবে সেই গৃহস্থ ঘরের ছবি।অথচ দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে না।তবে ভোট টানতে জনমোহিনী প্রকল্প তো থাকছেই।

সুন্দর বন কে রক্ষা করতে হলে যেমন ম্যানগ্রোভ অরন্য দরকার সঙ্গে সঙ্গে দরকার কংক্রিট বাঁধ।উওম কুমার অভিনীত অমানুষ ছবিটি যারা দেখেছেন তাঁরা অন্তত জানেন বৃষ্টির জল কেমন করে বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম ভাসিয়ে দেয়।এ বছর ইয়াস এসে পূর্ব মেদিনীপুর সহ সমগ্র সমুদ্র উপকূল ধরেই এক ছবি।অথচ প্রতি বছর ঠিকাদার কাজ করেন।আর এই বাঁধের কাজের বরাত পেতে ঠিকাদার রা অফিসার ও শাসকের দরজায় কেমন ভাবে হন্যে হয়ে পড়ে থাকেন।পাকা বাঁধ তৈরি হলে তখন তো আর প্রতি বছর কাজ পাওয়া যাবে না।

শক্তি পদ রাজগুরুর নয়াবসত গল্প অবলম্বনে এই অমানুষ গল্প টি।সেলুলয়েডের প্রয়োজনে তা অন্য খাতে বইলেও ঠিকাদার দের ছবিটি কিন্তু ম্লান হয়নি।

জানি প্রশ্নগুলো জরুরি হলেও সমাধান কিন্তু ম্যাজিক নয়।লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা খরচ করে ম্যানগ্রোভ রোপন করলেও ব্যাবসার হাতছানিতে তা কেটে ফেলা চলছে।স্হানীয় প্রশাসনের অঙ্গুলী হেলনে তা আজ অবাধ ও আইন সিদ্ধ।দলের সঙ্গে সদ্ভাব থাকলে আর ভোট রাজনিতীর কল্যাণে তা আজ আর অসম্ভব নয়।ফলে পরিবেশের কথা বাদ দিলাম, কিন্তু এই বাদাবনের মানুষের দুর্দশা ।প্রতি বছর দান খয়রাতি দিয়ে কাটা ঘায়ে মলম লাগানো হলেও সেই গুসগুসে জ্বর তো আবার ।

জম্বুদ্বীপ,ডালহৌসি,বুলচেরি বা ভাঙাদুয়ানির মতো এখানে রয়েছে আরো অজস্র দ্বীপ।এগুলির নাম হয়তো সকলে জানেন না।কিন্তু সুন্দর বনের মানুষ তো জানেন।

আয়লার পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর 778 কিলোমিটার বিশেষ ধরনের বাঁধ তৈরির জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার ও বেশি বরাদ্দ করে।আর তা স্হানীয় মানুষের কাছে আয়লা বাঁধ হলেও আসলে কিন্তু কংক্রিট বাঁধ।আর তা একবার তৈরি হলে বেশ কিছু বছর ধরেই এই অঞ্চলের মানুষ কে মুক্তি দিতে পারবে বানভাসির ছবি থেকে।কিন্তু আজ পর্যন্ত মাত্র 84 কিলোমিটার তা তৈরি হয়েছে।কেন্দ্রীয় বরাদ্দের বেশি টাকাটাই ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।কিন্তু এই বাঁধ টি তৈরি হলে তা হতো পাকাপাকি কাজ।

সুন্দর বন একটি উদাহরণ মাত্র ।আসলে দেশের সরকার চাইছেন খেলা, মেলা,এই সব ছোট ছোট প্রকল্প ধরেই এগিয়ে যেতে।বড় পরিকল্পনা ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হলে একদিকে যেমন টাকার বরাদ্দ বেশি করতে হয়,সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা টি শেষ হতেও সময় লাগে।আর ইতিমধ্যেই ভোটের বাদ্দি বেজে ওঠে।কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় সেই প্রকল্পটি কে তুলে ধরা যায় না।আর ভয়তো থাকেই গদি উল্টে যাবার ।আমার তৈরি প্রকল্পের ক্ষির অন্য সরকার খাবে তা কি মানা যায় ।তার থেকে ছোট ছোট প্রকল্প ।খরচ কম।লাভ বেশি।লাভ বলতে এখানে রাজনৈতিক লাভের কথাই বলতে চেয়েছি ।

আবারও সেই সংসারে ফিরি।জীবন বীমার এজেন্ট রা বলেন মানুষের চাহিদা মানি ব্যাক প্রকল্পের দিকেই।কারন অল্প সময়ে কিছু কিছু টাকা ফিরে আসে।মানুষের নজর স্বল্পমেয়াদি জমার দিকেই।কিন্তু যাঁরা দীর্ঘ মেয়াদির দিকে হাঁটেন সেখানে রিটার্ন আসে অনেক বেশি।দেশের ক্ষেত্রে ও সেই এক কথা।

আসলে বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলি ও সেই স্বল্পমেয়াদি পথেই হাঁটা শুরু করেছেন।আগে কিন্তু এ ছবি ছিল না।যত দিন যাচ্ছে এই ছবি আরো প্রকট হচ্ছে ।

সুন্দর বনের উদাহরনে আবারও ফিরি।ফি বছর দান খয়রাতি দিতে দিতে যে টাকা খরচ হয় সেই সব টাকা এক জায়গায় যোগ করলে হয়তো চিরতরে এই সমস্যার মূলে কুঠারাঘাত করা যেতো।কিন্তু তা হয়নি।অদূর ভবিষ্যতে ও হবে না।দান খয়রাতি চলবেই।

ছেলে বেলার কথাতেই ফিরি।ইস্কুলে পড়ার সময় ছিল ফ্রি স্টুডেন্ট শিপ বৃত্তি ।মাসে এক টাকা ছত্তিশ পয়সা।সরকারী ইস্কুল ।ফ্রি শিক্ষা সেদিন ছিল না।অনেক কেই পুরো মাহিনা দিতে হতো।কিন্তু ভালো রেজাল্ট করা ছেলে মেয়েরা এই সুযোগ পেতেন।কিন্তু এই সামান্য টাকা দিতে গিয়ে ও হাজার বার চোখে জল চলে আসতো।আজ কিন্তু দিন বদল।অনেক সহজেই পড়াশোনা করা যায় ।মান বেড়েছে কি কমেছে সে কথা লেখার প্রাসঙ্গিকতা এখানে হয়তো নেই।তবুও বলবো দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ধরেই আজ সাধারন ঘরের ছেলেমেয়েরা ইস্কুলে যাচ্ছেন ।ইস্কুল ছুট কমছে এতো সত্যি ।করোনা কাল না হয় বাদ রাখলাম।

দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা দল কে এগিয়ে দিতে হয়তো অক্ষম ।তাই রাজনৈতিক দল চান না।কিন্তু দেশ কে তো এগিয়ে নিয়ে যায় ।আর দেশ এগিয়ে গেলে ভাবী প্রজন্ম ও এগিয়ে যাবে তাতে সন্দেহ কোথায় ।

যাই প্রশ্ন উঠুক ,দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া গতি যে নেই তা আমরা বুঝলেও দেশের নিয়ন্ত্রক রা কবে বুঝবেন জানি না।সুন্দর বনে শুধু কংক্রিট বাঁধ একটি উদাহরণ ছাড়া আর কিছু নয়।দেশের অর্থনীতি র বুনিয়াদ কে কংক্রিট বাঁধ যে দিতে হবে।নতুবা প্রতি বছর সেই বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে সব তছনছ করে দেবে।

করোনা আজ বা কাল সরে যাবে।কিন্তু অর্থ নিতীর বুনিয়াদ পাকা না হলে তা কুড়ে কুড়ে খাবে দেশের ভাবী প্রজন্ম কেই।তারা আর কেউ নয় আমাদেরি সন্তান সন্ততি।

ঘুস ঘুসে জ্বর আর কতদিন সইবো বলো।