Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

"শাণিত মস্তিষ্কের অপর নাম--ক্লাইভ লয়েড"

অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়, কোলকাতা- সেই প্রথম,১৯৬৬সালের ১৩ই ডিসেম্বর। ৬ফুট ৬ইঞ্চি লম্বা শ‍রীরের এক তরুণ।যার দৃপ্ত পদচারণায় পরবর্তী কয়েক দশক ক্রিকেট বিশ্ব মজেছিল।একাধারে মুগ্ধতা ছড়ায় তার ব‍্যাটিং প্রতিভা ও অসাধারণ ক্রিকেটিয় ব‍্যক্তিত্ব।…

ক্লাইভ লয়েড

অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়, কোলকাতা-

 সেই প্রথম,১৯৬৬সালের ১৩ই ডিসেম্বর। ৬ফুট ৬ইঞ্চি লম্বা শ‍রীরের এক তরুণ।যার দৃপ্ত পদচারণায় পরবর্তী কয়েক দশক ক্রিকেট বিশ্ব মজেছিল।একাধারে মুগ্ধতা ছড়ায় তার ব‍্যাটিং প্রতিভা ও অসাধারণ ক্রিকেটিয় ব‍্যক্তিত্ব।তার নাম 'স‍্যার ক্লাইভ হুবার্ট লয়েড। সংক্ষেপে ক্লাইভ লয়েড। মুম্বাইয়ের ব্রাবোর্ণ স্টেডিয়ামে জীবনের প্রথম টেষ্ট খেলতে নেমে ইনিংসের গোড়াতেই ক‍্যাচ দিলেন স্লিপে দাঁড়ান অজিত ওয়াদেকরের হাতে। ক‍্যাচটি ধরে রাখতে পারেননি ওয়াদেকর। বল মাটিতে গড়িয়ে পড়ল।ধূলো থেকে উঠে দাঁড়ালেন লয়েড। খেললেন ৮২ রানের এক চোখ ধাঁধানো ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসেও খেললেন ৭৮ রানের ম‍্যাচ জেতান ঝোড়ো ইনিংস।


লয়েডের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৪ সালের ৩১শে অগাষ্ট গায়নার জর্জটাউনে। মাত্র ১৯বছ‍র বয়সে পেশাদার লীগে তার পদার্পণ ঘটে। ১৯৬৮ সালে ল‍্যাঙ্কশায়ারের হয়ে খেলার জন‍্য চুক্তিবদ্ধ হন লয়েড। ছিলেন মূলত মিডল্ অর্ডার ব‍্যাটস ম‍্যান ও পয়েন্ট ফিল্ডার। ১৯৬৮ সালে ত্রিনিদাদে ইংল‍্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেষ্ট শতক। ১৯৭৪ সালে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন এবং প্রথম পা রাখেন ভারতের মাটিতে। অধিনায়ক হিসাবে অভিষিক্ত হয়েই লয়েড বেঙ্গালুরুতে সেেঞ্চুরি করেন। সিরিজের শেষ টেষ্টে করলেন তার টেষ্ট জীবনের সর্বোচ্চ স্কোর২৪২। বলা বাহুল‍্য,নতুন অধিনায়কের পক্ষে এ যেন এক স্বপ্নের উড়ান। বয়স যে প্রকৃত পক্ষে একটা সংখ‍্যা মাত্র,তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ লয়েড। বয়েস যতই বেড়েছে, সেই ভাবে বেড়েছে তার ব‍্যাটিং গড়। তার অধিনায়োকোচিত ইনিংসে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ প্রথম বিশ্বকাপ জিততে সক্ষম হয়। সালটা ১৯৭৫,প্রুডেন্সিয়াল কাপ।স্বভাবতই ম‍্যান অব দ‍্যা ফাইনাল বাছতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি নির্বাচকদের।


১৯৮৩র বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ।কিন্ত 'হরিয়ানা হ‍্যারিকেন'কপিল দেবের ভারতের কাছে হেরে ছিটকে যায়।

ঘটনাটি লয়েডের মনে এতটাই ধাক্কা দেয় যে,তিনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নেতৃত্ব থেকে অবসর চেয়েছিলেন।

কিন্ত ঐ সাড়ে ছ ফুট দৃঢ়চেতা ব‍্যক্তিত্বর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছিল তদানিন্তন ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। তার সীমাহিন ব‍্যক্তিত্ব, দল পরিচালনার ক্ষুরধার মস্তিষ্ক,তাকে অধিনায়কত্ব করার সর্বকালীন রেকর্ডের সীমায় পৌঁছে দেয়। সাতহাজার রান,শতাধিক টেষ্ট খেলার কৃতিত্ব এবং সর্বপরি দুবার ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার গৌরব অর্জন ক‍রেন লয়েড। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪র ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ২৭ টি টেষ্টে অপরাজিত থাকার অবিিশ্বাস্য কৃতিত্বের পিছনে ছিল লয়েডের দুরন্ত ক্রিকেটিয় মস্তিষ্ক এবং অসাধারণ ব‍্যটিং প্রতিভার সমন্বয়।

লয়েড তার ক্রিকেট জীবনে ১১০টি টেষ্ট খেলেছেন।৪৬.৬৮ গড় রানে সর্বোপরি ৭৫১৫ রান,যার মধ‍্যে সেঞ্চুরির সংখ‍্যা১৯টি।অপরাজিত ছিলেন ১৪ বার এবং সর্বোচ্চ স্কোর ২৪২।

তার ব‍্যাটিং প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে প্রখ‍্যাত সাংবাদিক এবং ক্রিকেট কমেন্টেটর(বি.বি.সি,ও দ‍্য গার্ডিয়ান) বলেছিলেন "A stroke of a man knocking a thistle top with a walking stick".।

শুধুমাত্র বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক বলেই নয়,"শাণিত মস্তিষ্কের আপর নাম ক্লাইভ লয়েড"হিসেবেই ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় তিনি থেকে যাবেন।