Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#বাঁচতে দাও#দেবকমল চক্রবর্তী                    ...............          " অ্যাই শুনছো,ওঠো না একটু,অ্যাইই--সুমনার চিল চীৎকারে অমল শুধু একটু উঃ আঃ করে আবার পাশ ফিরে শোয়।       কিন্তু সংসারে পুরুষ মানুষের আবদার কতক্ষণ আর ধোপে …

 


#বাঁচতে দাও

#দেবকমল চক্রবর্তী

                    ...............

          " অ্যাই শুনছো,ওঠো না একটু,অ্যাইই--সুমনার চিল চীৎকারে অমল শুধু একটু উঃ আঃ করে আবার পাশ ফিরে শোয়। 

      কিন্তু সংসারে পুরুষ মানুষের আবদার 

কতক্ষণ আর ধোপে টেকে? অগত্যা উঠতেই হোলো অমল কে----" কি হয়েছে কি? চোরে জানালার গ্রিল কাটছে নাকি?"

       " ইয়ারকি মেরো না,ওই দেখো মিত্রবাবু

দের বাড়িতে আলো জ্বলছে।"

       " মিত্র বাড়ির আলো দেখার জন্য তুমি

মাঝ রাতে ডেকে তুললে আমাকে?"--অমল

আবার শোবার চেষ্টা করে।

         " তোমার মোটা মাথায় কি কিছুই ঢোকে না অমল।বুঝতে পারছো না কেন ব্যাপার টা।ওরা রিয়া কে উঠিয়ে পড়তে বসিয়ে দিয়েছে।আর চারদিন পর থেকে অ্যানুয়াল পরীক্ষা,খেয়াল আছে তোমার??"--সুমনা যেন হেরে যাওয়ার আক্ষেপে হাপাতে থাকে--" কতো করে বলেছি যে,মোবাইলে অ্যালার্ম দাও,তা

কানে ঢুকলে তো কথাটা। কি আর হবে? 

তোমার মতো একটা কেরানি তৈরি হবে।দশটা পাঁচটা অফিস। মাস ফুরোলে তিরিশ হাজার। অ্যাই ঋভু,তুই ওঠ তো,ওঠ বলছি"---ছেলেকে প্রায় টেনেই তুলে দেয় সুমনা।

       একরত্তি ছেলে। সবে ক্লাস নাইন। রাত

বারোটা নাগাদ মায়ের হাত থেকে নিস্তার পেয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলো। উঠে বসলো,এক চোখ ঘুম নিয়ে।

        অমলের খুব মায়া হয় ছেলের দিকে তাকালে। মায়ের ভয়ে সবসময় সিটিয়ে থাকে বেচারা।

        সুমনা তখন ছেলেকে টেনে নিয়ে গিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে--" মুখে চোখে ভালো করে জল দে ঋভু।পরীক্ষা যে দরজায় কড়া নাড়ছে--খেয়াল আছে তোর?শোন,পরশু থেকে বাংলা শুরু করবি।এই মাঝের দু দিনে সব সাবজেক্ট গুলো একবার রিভিশন দিতে হবে। হবেই---আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।এখন বরং একবার ফিজিক্যাল সায়েন্স টা নিয়ে বোস। আচ্ছা বল তো,অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের সূত্র গুলো কি কি?.......ভেরি গুড....এবার বল তো,নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র থেকে P=mf কিভাবে প্রমাণ করবি?? অ্যাই...অ্যাইইই ,মাথা ঝুলে পড়েছে কেন সামনে??দেবো দেওয়ালে ঠুকে??"

     চমকে সোজা হয়ে বসে ঋভু---এই চলবে

এখন সারা দিন ধরে।সকাল আটটার সময় 

অমল আর থাকতে না পেরে প্রশ্ন করে বসে-----"হ্যা গো,আমার তো অফিস আছে।

রান্না বান্না কিছু চাপাবে না?"

      " এই কদিন একটু হোটেলে খেয়ে নিয়ে 

আমার একটু উপকার করলে হতো না?

এখন আমি উঠে গেলেই ছেলেও তো ফাঁকি 

মারবে। নিজের দেখার তো মুরোদ নেই। আমি বরং ওকে টিফিন টা খাইয়ে দিচ্ছি ।

তুমি ওর সামনে বসে " শেরশাহের শাসন 

ব্যবস্থা " টা জোরে জোরে পড়ো।শুনলেও

কিছু মনে থাকতে পারে "---সুমনা বাটিতে

কৰ্ণফ্লেস্ক নিয়ে দুধ ঢালতে শুরু করে।

      অমল মৃদু সোহাগ দেখাতে চেষ্টা করে-------"আরে,সেই ভোর চারটায় উঠেছে। একটু ছাড়ো না ওকে।মাইন্ড টা একটু ফ্রেশ করার সুযোগ দাও।তবে তো পড়া মাথায় রাখতে পারেবে "

        " তুমি কি পাগল হয়েছো?এখন ওকে 

ছাড়তে বলছো?? এরপর ওকে ছবি আঁকা 

প্র্যাকটিস করাবো।ব্যাঙের পৌষ্টিক তন্ত্রের

ছবিটা ঠিকমতো নামাতেই হবে ওকে।ঐ মিত্র বাড়ির রিয়া কে এবার কিছুতেই ফার্স্ট হতে দিচ্ছি না।এবার আমার ঋভু সোনা ফার্স্ট হবে।তাই না বাবু??আচ্ছা ব্লিচিং পাউডারের সংকেত কি ঋভু???

      " আচ্ছা মা,এখন আমি যদি বারোটা পর্যন্ত পড়ি,বিকেলে আমাকে একটু খেলতে দেবে তো?---একবুক আশা নিয়ে আবদার 

জানায় ঋভু।

      সেই আবদারে জল ঢেলে দেয় সুমনা---

" এই ক দিন খেলার কথা বললে,ঐ ব্যাট তোমার পিঠে ভাঙ্গবো ঋভু।

      অবশেষে এসে গেলো সেই মাহেন্দ্রক্ষন।

সুমনার জোরাজুরি তে অমল একদিন ছুটি 

নিয়েছে। সুমনা স্কুলে যাওয়ার পথে গাড়ির 

পেছনে বসে সমানে বলতে বলতে চলেছে 

ঋভু কে---" শোন বাবু,যে কোন উত্তর লিখতে গিয়ে কোর্টেশন দিয়ে শুরু করবি। কবির নাম,মূল কাব্যগ্ৰন্থের নাম অবশ্যই লিখবি।রচনা লেখার জন্য কমকরে পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় রাখবি.............."

      " আপনারা কেউ স্টুডেন্টের সাথে হলে

ঢোকার চেষ্টা করবেন না"-----মিসের চীৎকারে সুমনা পিছিয়ে আসে।তখনো ও ঋভুর কানের কাছে বলতে বলতে যাচ্ছে.......

      "চলো,আমরা একটু চা খেয়ে আসি"--

পরীক্ষা শুরু হবার পর,কপালে হাত ঠেকিয়ে অমল কে আবদার করে সুমনা। দেখবে খুব ভালো পরীক্ষা দেবে আমাদের ঋভু।এই কদিন কম খেটেছি ওর জন্য"

    কিছু গার্জেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাইরে বসে আছে। পরীক্ষা প্রায় ঘন্টাখানেক পেরিয়েছে।

     "ঋভু বোসের বাড়ির কেউ আছেন?---মিস কে এগিয়ে আসতে দেখে সুমনা দৌড়ে যায় প্রায়---"কি হয়েছে ম্যাডাম?আমরা দুজনেই আছি "

       " আপনারা একটু আসুন আমার সাথে।

হলে ঋভু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে।খালি বমি করছে। হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে।বড়দি কোন উপায় না দেখে ডাক্তার কে কল করেছে। আসুন বড়দির রুমে।

       সুমনা আর অমল প্রায় ছুটে যায় হেডমিসের ঘরে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ঋভু,এক দিদিমণির কোলে মাথা রেখে।ডাক্তার একমণে পরীক্ষা করছে ঋভু কে। হঠাৎ মুখ খুললেন অভিজ্ঞ ডাক্তার---"শুনুন  মিষ্টার বোস,তেমন চিন্তার কোনো কারণ নেই। খুব বেশি মেন্টাল শক থেকে এমন হয়েছে মনে হচ্ছে। ইভেন আমি

যখন ওকে দেখছি,তখনও ও বলে যাচ্ছে,আমি পরীক্ষা দেবো,নযতো মা মারবে।

     "  কিসের এতো চাপ ম্যাডাম,কি তৈরি করবেন ছেলে কে?? একটা মানুষ তৈরি করার চেষ্টা করুন না বরং।ওকে খেলতে দিন,মিশতে দিন সবার সাথে।ফুল দেখতে দিন,পাখির ডাক শুনতে দিন।কোন চিন্তা করবেন না।এখন ওর কদিন বিশ্রাম প্রয়োজন।পরীক্ষা তো রইলোই।সাথে এই ওষুধ গুলোও চলুক"------

    ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সুমনা।কখন যেন কোলে তুলে নিয়েছে অচেতন ঋভু কে---"আমাকে ক্ষমা করিস সোনা।খুব বাজে মা আমি।তোর খোলা আকাশটাকে আমি কালো মেঘে ঢেকে দিচ্ছিলাম।আজ আমরা বিকেলে দুজনে একসাথে খেলতে 

বেরোবো,কেমন???????