#সারপ্রাইজ#ছোট_গল্প#জয়ন্ত_অধিকারি
"এইবার কিন্তু...আমি আমাদের অ্যানিভার্সারিতে, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব। " বলে শুভময়।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে প্রমীলা উত্তরে বলে, "এই বয়সে আর সারপ্রাইজ দিতে হবে না তোমাকে। আর তাছ…
#সারপ্রাইজ
#ছোট_গল্প
#জয়ন্ত_অধিকারি
"এইবার কিন্তু...আমি আমাদের অ্যানিভার্সারিতে, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব। " বলে শুভময়।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে প্রমীলা উত্তরে বলে, "এই বয়সে আর সারপ্রাইজ দিতে হবে না তোমাকে। আর তাছাড়া সব কিছুই তো আমাকে দিয়েছ তুমি। নতুন করে আর ওসব কিছু করতে হবে না। মেয়ে জামাইয়ের ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছে। ওরা পরের দিন আসবে। আর ওদিকে ছেলে ও কী একটা কাজে আটকে গেছে ! সে ও পরের দিন সকালে আসবে বলেছে। বুঝলে ? এই বয়সে, এই সব আদিখ্যেতা ছেড়ে দাও। "
"না না প্রমীলা। তোমার আমার কাছে এই অভিযোগটা অনেকদিনের। এটা আমি...হেহেহেহে। "
"মানে ? আমি তোমার কাছে...আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। "
"সময় আছে এখনও কয়েকটা দিন। ভেবে দেখ মনে করতে পার কিনা। আমি যাই। একটু আড্ডা দিয়ে আসি। অলরেডি তমালদা মেসেজ করেছে। " বলতে বলতে বেরিয়ে গেল ষাটোর্দ্ধ শুভময়। ওর চলে যাওয়া দেখতে দেখতে প্রমীলা ভাবতে শুরু করে। কি সারপ্রাইজ ? শুভ কি বলছে ? ধুর। বুড়ো বয়সের ভীমরতি। যত্ত সব।
দশ দিন পরে অ্যানিভার্সারির ঠিক আগের দিন রাতে সাড়ে এগারোটার সময় :
প্রমীলা ঘরের এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বলে ওঠে, শুভ গেল কোথায় ? এখনও ফিরছে না কেন ? সোসাইটির মিটিং তো ঘন্টাখানেক আগে শেষ হয়ে গেছে। এত রাত হচ্ছে কেন ? আর ফোনটাও ধরছে না কেন ও ?
ভয়ে ছেলেকে ফোন করে ও। ছেলে ও ওর দিক থেকে কয়েকবার চেষ্টা করে বলে, "না মা। বাবা ফোন ধরছে না। দেখ ! তোমাকে ওই যে সারপ্রাইজ দেবে। সেটার জন্যই হয়ত...."
"না রে মিতুল, এত দেরি তো..."
"আর একটু অপেক্ষা কর। ঠিক চলে আসবে। আর তুমি একটু নিচে গিয়ে দেখ। মনে আছে তো আগের বার বাবা কি করেছিল ? সেই তোমাকে না জানিয়ে ক্লাবটা ফুল দিয়ে সাজিয়ে ওখানে রাতে বারোটার সময় নিয়ে গিয়ে..."
"তোর বাবাকে নিয়ে আমি পাগল হ...এই দাঁড়া, দরজায় বেল বাজছে। পরে কথা বলছি তোর সাথে।"
দরজা খুলে শুভময়ের দিকে তাকিয়ে রেগে জিজ্ঞেস করে প্রমীলা, "কোথায় ছিলে এতক্ষন ? একটা মানুষ যে ঘরে অপেক্ষা করছে..."
"আরে...প্রমীলা। তুমি এরকম করছ কেন ? আর তাছাড়া একটু পরে আমাদের...অ্যানিভার্সারি। তোমার সারপ্রাইজ ! " বলতে বলতে ভেতরে আসে শুভময়।
দরজা বন্ধ করতে করতে প্রমীলা জিজ্ঞেস করে, "তা সেটা কি শুনি ? "
"তোমার তো আমার ওপরে খুব রাগ। তাই না প্রমীলা ? আমি নাচতে পারি না ! অনেক পার্টিতে তুমি আমাকে নিজের পাশে চেয়েও আমাকে পাও নি। মনে আছে ? আর তাই তুমিও নাচতে না। অন্যদের দেখিয়ে বলতে ওই দাদা আর বৌদিকে দেখ। বা অমুক কে দেখ। ওরা নাচতেও পারে না তবুও একসাথে..."
"হ্যাঁ ! তো ? "
"আমি নাচব আজ তোমার সাথে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি ও ওই নাচ শিখেছি। যাতে এই অ্যানিভার্সারিতে আমি তোমার সাথে নাচতে পারি। বুঝলে ? যাও। একটা ভাল গান চালাও তো। আমরা বারোটা পর্যন্ত নাচব একসাথে।"
শুরু হয় মিষ্টি মধুর একটা গান। সুরের ছন্দে ভেসে যায় দুজনে। শুভময়ের ডান হাত প্রমীলার কোমরে, প্রমীলার বাঁ হাত শুভময়ের কাঁধে, ওর মাথা শুভময়ের বুকে। একইসাথে, নির্দিষ্ট ছন্দে মিলছে পা, দুলছে দুটি শরীর। চোখ বন্ধ করে প্রমীলা।
হঠাৎ জোরে জোরে দরজার বেলটা বেজে ওঠে। প্রমীলা চমকে বলে, "এখন আবার কে এল ? তুমি বোস। আমি দেখছি। "
দরজা খুলে তাকায় প্রমীলা। সামনে দাঁড়িয়ে আছে তমালদা আর শুভময়ের আড্ডার আর ও কয়েকজন। তমালদার হাতে শুভময়ের ভাঙাচোরা ফোন। তমাল প্রমীলার দিকে তাকিয়ে বলে, "শুভ, শুভকে বাঁচানো গেল না। "
"মমম মানে ? কি যাতা বলছেন ? "
"মিটিং শেষে আমরা সবাই একটু বাইরে গিয়েছিলাম। প্রায় দু মাস ধরে শুভ আমাদের আড্ডাতে আসত না। ও তোমাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে কিছু একটা করছিল। ওকে হাতের কাছে পেয়ে আমরা সবাই একসাথে গেলাম ওই কালুর দোকানে। আর ফেরার সময় একটা গাড়ির সাথে শুভর ধাক্কা...আর আমরা ওকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম। কিন্তু...ওখানেই...আমরা কি করে যে তোমাকে...দেরি হয়ে গেল প্রমীলা। এই, এই যে। ওর ফোনটা। "
"মজা করার জায়গা পান নি ? এই, এইতো শুভ ঘরেই আছে। ও তো আমার সাথে এই একটু আগে...শুভ ? শুভ ? কোথায় তুমি ? " বলতে বলতে ভেতরের দিকে তাকায় প্রমীলা। বাইরের শূন্য ঘর পেরিয়ে দৌড়ে যায় ও ভেতরে। শুভ কোথাও নেই।
গানটা তখনও বেজে চলেছে...
"কে প্রথম কাছে এসেছি কে প্রথম চেয়ে দেখেছি
কিছুতেই পাই না ভেবে কে প্রথম ভালবেসেছি
তুমি না অমি..."
সমাপ্ত