Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপনইভেন্ট- সৃজনী বন্যাগল্প- প্রেমের মিলনকলমে- বিভা মিত্র ভদ্রতাই ২২/০৯/২১
প্রতি বছরের মতো এবছরও বিশ্বাকর্মা পূজোর আয়োজনের সব দায়িত্ব থাকলো মৃদুলের উপর। হ্যাঁ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ফাইনাল ইয়া…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

ইভেন্ট- সৃজনী বন্যা

গল্প- প্রেমের মিলন

কলমে- বিভা মিত্র ভদ্র

তাই ২২/০৯/২১


প্রতি বছরের মতো এবছরও বিশ্বাকর্মা পূজোর আয়োজনের সব দায়িত্ব থাকলো মৃদুলের উপর। 

হ্যাঁ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র মৃদুল। কলেজের অধ্যাপক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সে ভীষণ প্রিয়। একটা হাসি খুশি চনমন মনের ছেলে মৃদুল। দেখতে ও ভারি সুন্দর।

একটু আগে পুরোহিত পূজো করে চলে গেছে। সিনিয়র মেয়েরা সবাই কে প্রসাদ বিতরণ করছে। দুপুরে জম্পেশ করে খাওয়া দাওয়া আড্ডা হবে। তারপর সন্ধ্যায় আরতী ও ধূনোচি নাচ সেরে একটা  

জলসা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম বর্ষ থেকে ফাইনাল বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে যে যা জানে গান, বাজনা, নাচ, আবৃত্তি সব হবে। অনুষ্ঠানটি অধ্যক্ষ বলেছেন অন্যান্য বছরের মতো এ বছর বেশি রাত করলে হবেনা। আটটা সাড়ে আটটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করে রাতের ডিনার সেরে দশটায় কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে।

যাইহোক সবাই যে যার মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওদিকে মৃদুল সেই সকাল থেকেই লক্ষ্য করেছে ক্লাসরুমের এক কোণে চুপচাপ শান্ত ভাবে একটা সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। মুখে হাসি ছাড়া কথা খুব কম। হালকা গোলাপি রঙের শাড়ির সঙ্গে নীল রঙের ব্লাউজে দারুণ দেখতে লাগছিল। মৃদুলের চোখ যেন সরতেই চাই না। বান্ধবী দের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে ও এই বছর কলেজে ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম বর্ষের ওদের বিভাগেরই ছাত্রী চিত্রলেখা। অতবড় নাম বলে সবাই চিত্রা বলেই ডাকে। দারুণ নাচ জানে। তেমনি গান গায়। তুই শুনলে ফিদা হয়ে যাবি। সন্ধ্যা বেলায় জাস্ট জমে যাবে। তুই তো প্রত্যেক বছর গীটার বাজিয়ে একাই ফাটিয়ে দিস। এবছর চিত্রাও গান গাইবে। একেবারে ফাটাফাটি ব্যাপার হবে দেখে নিস। মৃদুল হেসে বলে, কেন তোরাও তো অনুষ্ঠানে আছিস নাকি? ওরা একসঙ্গে বলে ওঠে , হ্যাঁ আমরা আছি ঠিকই। কিন্তু আজকের হিরোইন আর হিরো তোরা দুজন। মৃদুল বলে_মানে? বান্ধবীরা_আহা! ন্যাকা!! কিছুই যেন বুঝতে পারছোনা চাঁদু! মানে তুই আর চিত্রা আবার কে? তারপর সবাই একসঙ্গে হো হো করে হেসে উঠলো। দূর থেকে চিত্রা    কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছিল যে ওকে ঘিরেই ওদের মধ্যে কিছু একটা চলছে। ও ঐসব এরিয়ে নিজের গানের খাতায় কোন কোন গান গাইবে তা নির্বাচন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

তারপর যথাসময়ে জলসা শুরু হয়ে যায়। সবাই মোটামুটি ভালো গাইছে, আবৃত্তি করছে। অনুষ্ঠান একটু একটু করে জমে উঠছে। এরপর চিত্রার গানের শেষে মৃদুলের গীটারের অর্কেস্ট্রা দিয়েই অনুষ্ঠান শেষ হবে। সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে। 

শুরু হলো চিত্রার গান। প্রথম গানেই একেবারে মাত করে দিলো।

পরপর তিনটি গান গেয়ে নেমে যেতে চাইলো। কিন্তু কেউ তাকে নামতে দিতে চাইনা। তখন আরো দুটো গান গেয়ে শেষ করলো। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলো। যেমন গান তার তেমন মিষ্টি সুর। কলেজের সবাই ওর প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ। মৃদুল অবাক হয়ে শুনছিল আর দেখছিল। মনে মনে খুব ইচ্ছা জাগলো ওর সাথে আলাপ করার।  

ভাবলো ঠিক আছে পরে একদিন নাহয় ভালো করে আলাপ করে ভাব জমানোর যাবে। এখন তো ওর গীটারের অর্কেস্ট্রা। তাই গীটারের সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল। চিত্রাও স্টেজ থেকে নেমে আসতে লাগলো। এমন সময় নামতে গিয়ে হঠাৎ ই তারে হোঁচট খেয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। সেই সময় মৃদুল ওকে ধরে নেয়। মৃদুলের বাহুতে আটকে পড়ে লজ্জায় একবারে ও সিঁটিয়ে যাচ্ছিল। কলেজে কতজনের মাঝখানে এমনটা ঘটল। ভেবে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছিল। 

পরের দিন বিসর্জনের পর মৃদুল ও চিত্রার মধ্যে আলাপ পরিচয় হয়। মৃদুল জানায় সে প্রথম দেখাতেই তাকে ভালবেসে ফেলেছে। চিত্রার এতে সম্মতি আছে কিনা। অগত্যা লাজুক চিত্রা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই। তারপর চুটিয়ে চলে ওদের প্রেমপর্ব। এরপর মৃদুল কলেজ পাশ করে বেরিয়ে ভালো চাকরি পেয়ে চলে যায়। কিন্তু মুঠোফোন ওদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। চার বছর পর চিত্রাও কলেজ পাশ করে ভাগ্যক্রমে মৃদুল যেখানে কাজ করে সেখানেই কাজ পেয়ে যায়। দুজনে খুব'ই খুশি। তারপর কিছুদিন পর ওরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। মৃদুলের বাবা মা ব্যাপারটা সব জানে। কিন্তু চিত্রার বাবা মা ঘুণাক্ষরেও এসব বিষয় কিছুই জানেনা। তাই তার মনে একদিকে যেমন চিন্তা। তেমন অন্যদিকে ভয় কিভাবে ব্যাপারটা বাড়িতে জানাবে। এবং উনারাও শুনে কি রিয়াক্ট করবেন। মৃদুল ভরসা দেয় অত চিন্তার কোন কারণ নেই। তার বাবা মাই নিজেরা গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব জানিয়ে সব ঠিকঠাক করে আসবেন। তাই হোলো। এবং দু'পক্ষের মিলিত সহযোগিতায় মহা ধুমধামে ওদের বিয়ে হয়ে যায়। আজ ওরা সুখি দম্পতি। সারা জীবন একসাথে চলার অঙ্গিকার নিয়ে এগিয়ে চলেছে সংসার জীবনে।