Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#চিকেন_কাটলেট#ছোট_গল্প #জয়ন্ত_অধিকারি  
"হ্যালো ! হ্যালো বেলা ? বেলা...শুনতে পাচ্ছ ? "
"কি ব্যাপার ? আজ আমার অঞ্জনের মন খুব ভাল মনে হচ্ছে !" 
"আরে, আমার তো নাচতে ইচ্ছে করছে। তুমি যদি সামনে থাকতে তোমাকে জড়িয়ে…

 


#চিকেন_কাটলেট

#ছোট_গল্প 

#জয়ন্ত_অধিকারি  


"হ্যালো ! হ্যালো বেলা ? বেলা...শুনতে পাচ্ছ ? "


"কি ব্যাপার ? আজ আমার অঞ্জনের মন খুব ভাল মনে হচ্ছে !" 


"আরে, আমার তো নাচতে ইচ্ছে করছে। তুমি যদি সামনে থাকতে তোমাকে জড়িয়ে ধরে..."


"সস্স ! কি হচ্ছে ! এত জোরে চেঁচাচ্ছ কেন ? মা বাবা আছে। শুনতে পাবে। "


"ওহ, হ্যাঁ হ্যাঁ ! আরে শোনো না। আজ আমি চাকরিটা পেয়ে গেছি ! অবশেষে সব সমস্যার সমাধান হল। " 


"তাই ? কি মজা , এবার আমার ও খুব আনন্দ হচ্ছে, অঞ্জন। "


"তাহলে ? আমার ওপরে আর কোনও সন্দেহ নেই তো ? আমার যোগ্যতা নিয়েও নিশ্চয়ই তোমার মনে প্রশ্ন নেই !" 


"অঞ্জন, আমি ওভাবে বলিনি। তোমার ওপরে আমার সব সময়েই বিশ্বাস ছিল। আছে। শুধু বাবা...মা..."


"আমাদের আর কাউকে ভয় পেতে হবে না বেলা। এখন তো আর কোনও বাধা রইল না। আমি তাহলে কাল সকালেই আসছি মা কে সাথে নিয়ে। তোমার বাড়িতে। তোমার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে সব কথা পাকা করে আসি। বিয়েটা আমরা চট করে সেরে ফেলি। কেমন ? "


"কি ? আরে দাঁড়াও দাঁড়াও। একটু ধীরে অঞ্জন। আমাকে একটা কথা বল দেখি। ওরা কত মাইনে দিচ্ছে ? কোথায় থাকব আমরা ? তোমাদের ওই বাড়িটার অবস্থা এখন একদম...মানে, আমি ওখানে গিয়ে থাকতে পারব না অঞ্জন। জানি, তোমার বাবা তার নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বাড়িটা বানিয়েছিলেন। কিন্তু আজকের দিনে ওই রকম বাড়ি..."


"আরে, তোমাকে ওসব কিছুই ভাবতে হবে না বেলা। এখন মাসে কুড়ি হাজার দেবে। মাসছয়েক পরে পার্মানেন্ট হয়ে গেলে, ওটা বেড়ে পঁচিশ হবে। সব কেটেকুটে হাতে আসবে বাইশ মত। আর ধীরে ধীরে এই বাড়িটা সরিয়ে নেব ঠিক। পরে আর ও বড় বাড়ি হবে আমাদের। কিন্তু শুরুটা তো করি আমরা ! দুজনে আমরা একসাথে থাকলে, সব ঠিক হয়ে যাবে বেলা। "  


"কি বললে ? মাসের শেষে মাত্র বাইশ ? তাতে আমার কি হবে ? না মানে, আজকের দিনে সংসার চলবে ভাল করে ওই সামান্য টাকায় ? আমি, তুমি, তোমার মা। তিনজন। কোনও ধারণা আছে আজকাল জিনিসপত্রের কি রকম দাম বেড়ে গেছে ? তুমি পারবে প্রত্যেক মাসে আমাকে কিছু গিফ্ট করতে? পারবে ডমিনোজ - ম্যাকডি - কেএফসি'তে মাসে একবার করে খাওয়াতে? পারবে আমাকে বছরে একবার কোথাও নিয়ে যেতে ?  বিদেশে ঘোরাতে? ওই টাকায় কিছুই হবে না অঞ্জন !" 


"কি বলছ তুমি বেলা ? তুমি না আমাকে ভালবাসতে ? এই তোমার ভালবাসা...বেলা ? "


"ভালবাসা আছে তার নিজের জায়গাতে। কিন্তু জীবনে চলতে গেলে শুধু ভালবাসাতে হয় না অঞ্জন। বাস্তববাদী ও হতে হয়। সবকিছু স্বপ্ন দেখে হয় না। কয়েকদিন আগে কি ছিল তোমার ? ওই তো গিটার বাজিয়ে, কাঁধে ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতে এখানে ওখানে। আর সময় পেলেই...পাহাড়ে গিয়ে বসে থাকা। হয় না। ও ভাবে হয় না অঞ্জন।"  


"কিন্তু, কিন্তু আমার তো সব কিছু স্বপ্ন তোমাকে ঘিরে বেলা। আমি ও তো সেটাই জানতাম। তাহলে, সেই সব কিছু কি..." 


"ছাড়ো ওসব ভালোবাসা ! টাকা, আমার প্রচুর টাকার দরকার অঞ্জন। আমি সুখে থাকতে চাই। তোমার মত হাড়-হাভাতে কে বিয়ে করে কি পাব আমি ? আর ওই কুড়ি পঁচিশে আজ কিছুই হয় না। বুঝলে ? আচ্ছা শোনো, অনেক হয়েছে। এখন আমি রাখছি ! আর কোনও দিন আমাকে ফোন কোরো না। "


ফোন ছেড়ে দেয় বেলা। অন্যদিকে ফোনের রিসিভার ধরে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে অঞ্জন - শূন্য দৃষ্টিতে। 


তুমিও পারলে না বেলা  ? তুমিও , আমাকে এইভাবে...আমার জীবনেও 'ওই' গানটা এই ভাবে সত্যি হয়ে গেল ? জলভরা দৃষ্টিতে বুথের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে বাইরে অঞ্জন। 


ফোন রেখে দেওয়ার পরে বেলার কাঁধে এসে হাত দেয় ওর বাবা , পাশে দাঁড়িয়ে মা। ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে ফ্যালফ্যাল করে বেলা। বাবার বুকে মাথা রেখে ও ধীরে ধীরে বলে, "তুমি চিন্তা কোরো না বাবা। আমি জানি তোমরা দুজনে আমার জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছ, সেটাই সবথেকে ভাল। "


"হ্যাঁ রে মা। আমরা তো তোর মা বাবা, আর তুই তো আমাদের একমাত্র সন্তান। আমরা কি তোর খারাপ চাইতে পারি ? আমার ওই বন্ধুর ছেলেটা, ও মাসে প্রায় ষাট করে পায়, নিজের বাড়ি, গাড়ি সব আছে। আর কয়েকদিন পরে ওকে ওর কোম্পানি বাইরে পাঠাবে। তুই দেখিস মা ! তুই খুব সুখে থাকবি। খুব ভাল থাকবি। "  


++++++++++


বছর পনেরো পরে...


শহরের নামী হোটেলের একটা হল আজ সেজে উঠেছে আলোতে আলোতে। ভেতরে চলছে গান, অনেক সুবেশা সুসজ্জিত নারী পুরুষের আলাপ আলোচনায় মেতে উঠেছে সন্ধেটা। একটু পরেই হঠাৎ কারোর কোনও ইশারায় পুরো হলরুমটা অন্ধকার হয়ে যায়। সামনের স্টেজের ওপরে আলো এসে পড়ে। একজন হাসতে হাসতে সবার উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে নাড়তে উঠে আসে ওপরে। দাঁড়ায় ওই আলোর বৃত্তের মাঝে।  হাততালি দিয়ে ওঠে সবাই। খুব চেনা চেনা লাগছে ওই ভদ্রলোককে। একটা সন্দেহ...কিন্তু এটা কি সত্যি হতে পারে ? 


বেলা পাশে দাঁড়ান নীল কে জিজ্ঞেস করে, "কে ওটা ? "


"আমাদের বস। অঞ্জন। অঞ্জন সান্যাল। পুরো দশখানা দেশের মার্কেটিং আর অপারেশন একাই দেখেন। সারাক্ষন প্লেনে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।   কবে যে ওনার মত এরকম পজিশনে যেতে পারব ! খুব অল্পদিনে নিজের পরিশ্রমে আজ উনি এই জায়গাতে চলে এসেছেন। কাল তো অফিসে আমার সাথে ওনার একটা মিটিং আছে। দেখি। প্রোমোশনের কথা তুলব। "


পাশেই বসে আছে বারো বছরের রঞ্জনা। ওর মন এখন প্লেটের ওপরে রাখা কেকের টুকরোর ওপরে। বেলা হঠাৎ ওর মাথায় হাত রাখে। রঞ্জনা মুখ তুলে তাকায়। বেলা ওর দিকে তাকিয়ে বলে, "একটা কথা সবসময় মনে রাখবি রুনু। আমরা মা বাবারা - আমরা সবসময় তোদের, আমাদের সন্তানদের ভাল চাই।  কিন্তু আমরাও ভুল করি। আর তাই বড় হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত তুই নিজেই নিবি। আর সেই সিদ্ধান্তের ওপরে বিশ্বাস রেখে লড়াই করার সাহসটা যেন তোর থাকে। আমরা মা বাবা হলেও, আমরা কিন্তু ঈশ্বর নই। আমরাও মানুষ। আমরাও ভুল করি..."


নীল জিজ্ঞেস করে বেলাকে, "কিছু বললে ? "


"না ! না। মেয়ের সাথে একটু কথা বলছিলাম। তুমি যাও। ওই যে - তোমার টিমের লোকজন তোমাকে ডাকছে। আমি কিছু একটা খাই এবার। খুব খিদে পেয়েছে। তুমি কি কিছু খাবে ? নিয়ে আসব কিছু তোমার জন্য ? "


বাফের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বেলা। একটা চিকেন কাটলেট তুলে নেয় ও প্লেটে। আজ অনেকদিন পরে আবার মনে পড়ে যাচ্ছে রাস্তার সস্তা হোটেলের বদ্ধ কেবিনে মুখোমুখি বসে কাটলেট খাওয়ার কথা...


চিকেন কাটলেটটা এত নোনতা লাগছে কেন আজ ? 


সমাপ্ত