Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

লেখিকা মনীষা পলমলের তথ্য মূলক লেখা রাঢ়বঙ্গের উৎসব

# রাঢ়বঙ্গের লোক উৎসব---  ভাদু পরব# কলমে -মনীষা পলমল( সুকান্তনগর ,তালবাগিচা পশ্চিম মেদিনীপুর)2/10/21 ভরা ভাদরের আকাশে কৃষ্ণ মেঘ দোলে। রাঢ় বঙ্গের কৃষিজীবীদের অন্তরে জাগে উৎসবের--- পরবের আনন্দ। শস্য উৎপাদনের আকাঙ্ক্ষা ও আশায় …

 



 # রাঢ়বঙ্গের লোক উৎসব---

  ভাদু পরব

# কলমে -মনীষা পলমল( সুকান্তনগর ,তালবাগিচা পশ্চিম মেদিনীপুর)

2/10/21

 ভরা ভাদরের আকাশে কৃষ্ণ মেঘ দোলে। রাঢ় বঙ্গের কৃষিজীবীদের অন্তরে জাগে উৎসবের--- পরবের আনন্দ। শস্য উৎপাদনের আকাঙ্ক্ষা ও আশায় শুরু হয় ভাদু পরবের। যদিও তা স্মরণ উৎসব তবুও আন্তরিক কামনায় এই মাটির মানুষদের পরান কথা ফুটে ওঠে ভাদু গানে গানে।

 রাঢ়বঙ্গের অন্যতম লোকউৎসব ভাদু পরব। সারা ভাদ্র মাস জুড়েই চলে এই লোক উৎসব।

 ভাদু উৎসব উৎসব কিভাবে শুরু হয়েছে সে নিয়ে অনেক জনশ্রুতি আছে। শোনা যায় যে পুরুলিয়ার লারা গ্রামের মোড়ল ভাদ্র মাসে ধান ক্ষেতের আলে এক কন্যা সন্তানকে কুড়িয়ে পান। সেই অনাবৃষ্টির বছরে ওই "মাটির কন্যাকে "ঘরে আনা মাত্রই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে! কন্যার নাম রাখা হয় ভদ্রাবতী! এই রূপে গুণে অতুলনীয় কন্যার কথা রাজা নীলমনি সিং দেও র কানে পৌঁছালে তিনি একে দত্তক নিতে চান। ষোডশী ভদ্রাবতী ভালোবেসেছিল গ্রামের কবিরাজের ছেলে অঞ্জনকে। রাজা সব জানতে পেরে অঞ্জনকে বন্দি করে। ভদ্রাবতী ওই কয়েদখানার চারপাশে করুণ সুরে গান গেয়ে ঘুরতে থাকে। সেই গানে রাজার মন গলে ।অঞ্জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু ভদ্রাবতীর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। কেউ বলে নদীতে আত্মবিসর্জন দিয়েছেন কেউবা বলে মাটির কন্যা মিশে গেছে মাটিতে। সেই শোক স্মরণেই শুরু হয় ভাদু পরবের।

 আবার অনেকে বলেন প্রায় 200 বছর আগের কথা। পুরুলিয়ার কাশীপুরের পঞ্চকোটের রাজা নীলমণি সিংদেও। তার কন্যা ভদ্রাবতী। রাজকন্যার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু বিবাহ করতে আসার পথে ডাকাতদল বরসহ বরযাত্রীদের হত্যা করে। এই আঘাতে ভদ্রাবতী আত্মঘাতী হন। রাজা নীলমণি সিং দেও মেয়ের স্মৃতিকে স্মরণীয় রাখতে ভাদু গানের প্রচলন করেন। কিছু সরকারি নথিতে ঘটনাটির উল্লেখ মেলে। 

বীরভূম বাসীরা মনে করেন ভদ্রাবতী আসলে হেতমপুরের রাজকন্যা। তাঁর সাথে বর্ধমানের রাজপুত্রের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ইলামবাজারের কাছে চৌপারির শালবনে ডাকাতের আক্রমণে মৃত্যু হয় রাজপুত্রের। ভদ্রাবতী সহমরণে যান রাজপুত্রের সাথে। সেই থেকেই মানভূম অঞ্চলে শুরু হয় ভাদু পরবের।


 পয়লা ভাদ্র কুমারী মেয়েরা বাড়ির কুলুঙ্গিতে একটি মাটির পাত্রে ফুল রেখে অথবা পাত্রের ওপরে গোবর দিয়ে তার মধ্যে ধান ছড়িয়ে ভাদু প্রতিষ্ঠা করেন। সেদিন থেকেই শুরু হয় সমবেত ভাদু গান। এই গান রাঢ়বঙ্গের কৃষিজীবী মানুষের মুখের কথা। তাই লৌকিকতা ও সামাজিকতায় আচ্ছন্ন থাকে পদগুলি। মহিলাদের সুখ-দুঃখের বর্ণনা উঠে আসে গানগুলিতে। পাঁচালী সুরে গাওয়া গানগুলি গ্রামীণ মানুষের সমাজচেতনা প্রতিবাদ বর্ণিত হয়। ভাদ্র সংক্রান্তির 7 দিন আগে ঘরে আনা হয় ভাদুর মূর্তি। পদ্মাসনা বা ময়ূর বা হাঁস বাহনা

 মূর্তির গায়ের রং হলুদ হাতে আলপনা। ভাদ্র সংক্রান্তির আগের রাতে হয় ভাদু জাগরণ। রঙিন কাপড় বা কাগজের ঘরে মূর্তি স্থাপন করা হয়। নানা উপাচার সাজিয়ে চলে পুজোর আয়োজন। মূর্তির সামনে সাজিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্থানীয় মিষ্টি। তার সাথে চলতে থাকে ভাদু গান। এই ভোগের বিশেষ মিষ্টি হলে জিলিপি। ভাদু বরণের অঙ্গ এই জিলিপি। ভাদ্রসংক্রান্তির সকাল বা-বিকেলে মহিলারা দলবদ্ধভাবে ভাদু মনি কে মাথায় নিয়ে সারা গ্রাম পরিক্রমা করেন। তারপর বরণ করে নদীতে বা পুকুরে বিসর্জন দেন। এই ভাদু বরণ কে স্থানীয় ভাষায়" ভাদু চুমানো "বলে! এই পরবে নেই কোন পুরোহিত মন্ত্র উপবাস আচার বা প্রাতিষ্ঠানিকতা। আছে শুধু গান যা কৃষিজীবী সমাজের অন্তরের কথা--

" ভাদু কে আস্যেছে লিতে মহুলবনীর চিনিবাস

 যদি ভাদু যাব বল আমরা লিব বনবাস ।"

 কিংবা---" যাচ্ছ ভাদু যাওগো 

পিছন ফিরে চাও গো

 সখীরা সব দাঁডায় আছে 

পদধূলি দাও গো।"

ভাদু বিসর্জনের ঘাটে চলে গানের প্রতিযোগিতা।

 ভাদু গানে সমসাময়িক বিষয় রাজনীতি সামাজিক ঘটনা বর্ণিত হয়। প্রান্তিক কৃষিজীবী সমাজের আকাঙ্ক্ষা খুবই সামান্য----

" ভাদুর লাচে ঘুঙ্গুর দে মা

 মাচান ভরে ডিংলাঝিঙা

 নিমক মরিচ মাডে ভাতে

 মাদলে বোল ঘিজাং ঘিনা।"

 বিশ্বকর্মা পূজার আগের দিন হয় ভাদুবরণ।

 থালা ভরা মিষ্টি র বিকল্প হিসাবে বিরাট বড় জাম্বো জিলিপি সাজিয়ে দেওয়া হয় ভাদুর সামনে।

 প্রান্তিক কৃষিজীবী সমাজের আর্থিক দৈন্য কে সুন্দর ভাবে বিকল্প জিলিপির মিষ্টতায় ঢেকে দেওয়া হয়। এই জিলিপি ভোগ দেওয়ার সামর্থ্য সব কৃষিজীবীর আছে।

 এই নিয়ে সুন্দর লোক সাহিত্য আছে।

 বাঁকুড়ার ছাতনার কেঞ্জাকুডায় শুরু হয় বিরাট জিলিপি বানানো।----

" অবাক দেখেশুনে 

" কেঞ্জাকুডায় অশোক দত্তের দোকানে

 বড় বড় জিলিপি গুলা সওয়া কেজি ওজনে

 আবার খাজা গুলা এক ফুট করে দেখে এলাম নয়নে---"!

 একইভাবে পুরুলিয়ায় বানানো হয় জাম্বো জিলিপি। এছাড়াও গজা খাজা লবঙ্গ লতিকা--- যা এই সীমান্ত বাংলার খুবই আদরের মিষ্টান্ন!


 প্রচলিত কিংবদন্তি অনুযায়ী ভাদুর জন্ম ও মৃত্যু ভাদ্র মাসে। তাই এ মাসে হিন্দু মেয়ের বিয়ে দিতে নেই।

 ভাদ্র সংক্রান্তির বিকেল--- আকাশে কালো মেঘ-- রাঢ় বঙ্গের কৃষিজীবীদের মনের আকাশে ও মেঘের ছায়া--- ভাদু মনিকে যে বিসর্জন দিতে হবে

--" আমার বড় মনের বাসনা

ভাদুধনকে জলে দিব না।"

 গানে গানে ভাদু মনি কে বিদায় জানায় প্রান্তিক বাংলার কৃষিজীবীরা! সমাপ্তি ঘটে একমাস ব্যাপী ভাদু পরবের।

 তথ্যসূত্র- লোকভাষ, বর্তমান পত্রিকা, গুগোল

🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷

# শিরোনাম- নবরাত্রি --- বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য

# কলমে -মনীষা পলমল

2/10/21

আমাদের দেশে বার মাসে তেরো পার্বন। সারা উপ মহা দেশে যে উৎসব গুলি সাড় ম্বরে পালিত হয় ''নবরাত্রি''তাদের মধ্যে একটি

 আমি খড্গপুরের বাসিন্দা। আমাদের শহরকে বলা হয় মিনি ইন্ডিয়া। সারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বাস এখানে। তাই সর্ব ভারতীয় সংস্কৃতির প্রকাশ ঘটেছে এই শহরে। আমার যাপন চিত্রলিপি এই শহরকে কেন্দ্র করেই। শৈশব থেকে এই সংস্কৃতির চর্চা দেখে আসছি এখানে । সেই সর্ব ভারতীয় সংস্কৃতির একটুকরো তুলে ধরার চেষ্টা এই নিবন্ধে।


।ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এর আরাধনা বিভিন্ন কিন্তু সবের মধ্যেই এক ই মাতৃআরাধনার সুর॥

হিন্দু ধর্মে নবরাত্রি কে মহিষাসুরের উপর মা দুর্গার বিজয় বা অধর্মের উপর ধর্মের বিজয় বলে মানা হয় ॥

আবার জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা একে দুঃ খের উৎসব বলে কারণ তারা নিজেদের মহিষাসু রের বংশধর বলে মনে করে॥

''নবরাত্রি'' ন দিন ব্যাপী মাতৃআরাধনার উৎসব॥ বিভিণ্ণ প্রদেশেএই উৎসব বিভিন্ন রূপে পালিত হয় ।

গুজরাটে এই ন দিন ''গরবা'' নাচের মাধ্যমে মায়ের আরাধনা হয় !সুন্দর,চিত্রিত মাটির পাত্রে প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে প্রদক্ষিণ করে মেয়েরা নাচতে থাকে! এই পাত্রটি ''গর্ভের'' প্রতীক ।

''নবরাত্রি'' বছরে চারবার পালিত হলেও,বর্ষাশেষের শারদীয়া নবরাত্রিই মা দুর্গার নামে নিষ্ঠ।ভরে পালিত হয়। পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারতে এই উৎসব মা দুর্গার মহিষাসুরের উপর বিজয় উৎসব হিসাবে পালিত হয় ॥এই রূপ ''মহিষাসুরমর্দিনীর''॥

নবরাত্রি উৎসবের ন দিনে মা দুর্গার নটি বিশেষ রূপের আরাধনা করা হয় ॥প্রত্যেক দিন একটি বিশেষ রঙ সূচিত করে!ভক্তরা ওই বিশেষ রঙের বেশভূষায় সজ্জিত হন॥উৎসব শুরু হয় মহালয়ার পরদিন থেকে!শেষ হয় মহানবমীতে॥


প্রথম দিনের মা য়ের রূপ ,,,,,''শৈলপুত্রী'',,,,শিবসহ চরী মা,ত্রিদেবের মিলিত রূপ,,,ব্রমহা,,বিষ্ণূ ও মহেশ্বরের তেজ সমন্বিতা।প্রথম দিনের রঙ ,,,লাল ,,, যা উদ্যমের প্রতীক ।

দ্বিতীয় দিনে মা ,,,''ব্রমহ চারিনী''। নিষ্ঠ।বতী তপ স্বিনী। ভক্তদের সুখ,শান্তি,সমৃদ্ধি প্রদানকারিনী! এই দিনের রঙ ঘননীল । যা শান্ত অথচ,শক্তিশালী কর্মশক্তির দ্যোতক ॥

তৃতীয় দিনে মা ,,''চন্দ্রঘণ্টা'',,,শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রদান কারিনী॥সাহস ও মহান শক্তির প্রচারক ।এই দিনের রঙ হলুদ॥

চতুর্থ দিনে মা ''কুষ্মাণ্ডা'',,,মহাবিশ্বের সৃষ্টি কত্রী।এইদিনের রঙ সবুজ,,,,, যা প্রাণশক্তির প্রতীক॥

পঞ্চম দিনে মা ''স্কন্দমাতা'',,,,,,কার্তিকেয় জননী,,যিনি দেবকুলের সেনাপতি! এই দিনের রঙ ধূসর॥

ষষ্ঠ দিনে মা যোগীকাত্যায়নের কন্যা,,,''কাত্যায়নী''।বিপুল সাহসের প্রতীক মা কমলা সাজে সজ্জিতা॥

সপ্তম দিনে মা ''কাল রাত্রি''রূপে পূজিতা।অবিন্যস্ত বেশভূষা,নির্ভীক দেহ ভঙ্গী, ত্রিনয়নী মা ,,মা কালীর মতো নিকষ কালো বরণ॥দুধসাদা বসনে সজ্জিত!তাই সপ্তমীর রঙ সাদা॥মায়ের সব চেয়ে ভয়াল রূপ এটি॥

অষ্টমীতে মা ''মহাগৌরী''॥কথিত যে দী র্ঘ দিন জঙ্গলে তপস্যার কারণে মায়ের গাত্র বর্ণ কালো হয়ে যায় ॥মহেশ্বর গঙ্গাজলেস্নান করিয়ে মায়ের গাত্রবর্ণ আবার গৌর বর্ণ করেন॥ মা ''মহাগৌরী'' রূপ ধারণ করেন॥মা শান্ত,সমাহিত ,গোলাপী বর্ণে সজ্জিত॥

নবমীর দিন মা ''সিদ্ধিদাত্রী''।চতুৃর্ভূজা,উজ্জ্বল আকাশের মতো সমাহিতা,,,,,তাই মায়ের সাজ আকাশীনীল!মা সর্ব সিদ্ধিদাত্রী,সফলতাপ্রদান কারিনী॥

শিবের বিষাণের আহ্বাণে মর্ত্যে আগমনীর ঢাক বেজে ওঠে॥গিনি সোনা রোদে,কাশের দোলায়,শরতমেঘের আনা গোনায় আগমনীর সুর তোলে॥শাশ্বত সেই আত্মিক বন্ধনের চির চেনা সুর,মনে গুনগুনিয়ে ওঠে। চিণ্ময়ী মা আনন্দময়ী মৃণ্ময়ী রূপে মর্ত্যে আসছেন ,,,,,,,তাই মাকে আহবান জানি য়ে বলি,,,,,এসো শারদ প্রাতের পথিক

এসো শিউলি বিছানো পথে,

এসো ধুইয়ে চ রণ শিশিরে

এসো অরুন কিরণ র থে॥


বর্তমান সময় খুব সুখের নয়!হিংসায় ,পরমতবিদ্বেষে, ঘৃনায় জরাজীর্ণ॥তাই পূজা পরিক্রমার প্রারম্ভে কামনা করি,,,,এবার আশ্বিনে সম্প্রীতির সানাই বেজে উঠুক আমাদের ভালোবাসার শহরে, ভালোবাসার দেশে॥

॥মনীষা॥

তথ্যসূত্র,,,শ্রীসোমমজুমদার