Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
গল্প শিরোনাম_নিয়তি কেন বাধ্যতে ✍️পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় 
শনি-রবিবার অফিসের ছুটির দিন মেখলার, সারা সপ্তাহের সাফাই অভিযান চালায় ও এই দুটো দিন বাড়িতে, ঘরের ঝুল ঝাড়া, জামাকাপড় কাচা, ফার্নিচারগুলোর ডাস্টিং যতোটা পারে ন…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন


গল্প 

শিরোনাম_নিয়তি কেন বাধ্যতে 

✍️পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় 


শনি-রবিবার অফিসের ছুটির দিন মেখলার, সারা সপ্তাহের সাফাই অভিযান চালায় ও এই দুটো দিন বাড়িতে, ঘরের ঝুল ঝাড়া, জামাকাপড় কাচা, ফার্নিচারগুলোর ডাস্টিং যতোটা পারে নিজের হাতে করতে চেষ্টা করে । আজকে শনিবার, ঘরের ঝুল ঝাড়তে ঝাড়তে ভাবছিলো গতকাল বেরোনোর আগে নতুন বস শ্যামল বসুর বলা কতগুলো। সামনের সোমবার বসবে শ্যামলদা মেখলার সাথে ডিপার্টমেন্টের চলতি প্রজেক্টের এক্সপেন্স নিয়ে। যেহেতু এই প্রজেক্টে মেখলা প্রথম থেকে আছে এবং সিঙ্গেল পয়েন্ট অফ কন্টাক্ট, তাই ওকেই নির্ভরযোগ্য মনে করেছে শ্যামল বসু। 


অফিসে ঘোরতর পলিটিক্স করা লোক এই শ্যামল বসু। মেখলা এই ডিপার্টমেন্টে বদলি হবার আগে যেখানে ছিল তার বস ছিল বাবলু চক্রবর্তী। দিল্লীর দুনম্বরি লোক, ভীষণ বদ এই বাবলুর এক গ্লাসের ইয়ার হচ্ছে শ্যামল বসু, এই অফিসের বহু পুরোনো পাপী। আগে শ্যামল মেখলার গতিবিধির খবর লাগতো বাবলুকে সুযোগ মত আর বাঁশ খেত মেখলা। একেই মেখলার ওপরে বাবলুর আর ওর ডিপার্টমেন্টের অনেকেরই ক্ষার আছে ওকে বাবলুর সমসাময়িক টেকনিকাল সফটওয়্যার এক্সপার্ট  সৌমাল্য বিয়ে করেছে বলে। 


ভেবেছিল ওরা সৌমাল্য বিয়ে করেছে তো কী আছে, সৌমাল্য যা মেজাজী ছেলে অশান্তি হওয়া অনিবার্য আর তারপর টিকতে না পেরে ছেড়ে বেরিয়ে যাবে মেখলা, ওকে ঠারেঠোরে সেকথা বলেওছে ওরা, " দেখো, কতদিন টিকতে পারো সৌমাল্যর সাথে? " মেখলা পাত্তা দেয়নি, দেখতে দেখতে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তাদের বিয়ের দশ বছর হল, একটা সাত বছরের ফুটফুটে মেয়েকে ঘিরে এখন মেখলা আর সৌমাল্যর জীবন আবর্তিত হচ্ছে আর ওদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া আজও অটুট, বরং মেখলার প্রতি সৌমাল্য আর ওর পরিবারের নির্ভরশীলতা আরো বেড়েছে এই কয়েক বছরে । তাই এদিকে সুবিধে হল না দেখে মেখলাকে রাতারাতি অন্য ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফার করে প্রজেক্ট লোকেশন হেড করে পাঠিয়ে দিল বাবলু নিজাম প্যালেসে। সেখানে ই-গভর্নেন্স প্রজেক্ট অনলাইন হতে ওকে আবার ফিরিয়ে আনলো অফিসে আর সেই প্রজেক্টের মাথায় বসিয়ে দিল শ্যামল বসুকে। কিন্তু শ্যামলদা বস হয়ে গিয়ে হঠাৎ মেখলার প্রতি বেশ সদয় ব্যবহার করছেন। মেখলা জল মাপছে ঠিক কোন দিক দিয়ে আবার বাঁশ রেডি হচ্ছে সেটা বুঝতে, ওর অভিজ্ঞতায় ও জানে কিছু একটা ঝামেলা তো পাকবেই। কারণ এই চক্রে সবকটা লোক যেগুলো ওপরে গিয়ে বসেছে, সব অযোগ্য লোক যারা হাতে ক্ষমতা পেয়েছে। যেহেতু গভর্নমেন্ট অফিস তাই চাকরিটা খেতে পারছে না, কিন্তু রোজের অশান্তি আছেই। 


শনিবার দুপুরে খেয়েদেয়ে মেয়েকে নিয়ে শুয়েছে। সাড়ে পাঁচটায় মেখলা দেখলো ওর ফোনটা বাজছে, তুলে দেখলো প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ ফোন করছে। বসেদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হলেও এই প্রজেক্টের সবার সঙ্গে মেখলার খুব ভালো সম্পর্ক। ওকে সবাই ভালোবাসে ওর ব্যবহার আর আন্তরিকতার জন্য। কিন্তু ছুটির দিনে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ তো ফোন করেনা!!!! কে জানে সন্দীপের আবার কী ব্যথা হল!!! 


এসব ভেবে ফোনটা ধরতেই সন্দীপ বলল, " দিদি, টিভিটা দেখেছো? " 


মেখলা বলল, " না তো!" 


সন্দীপ বলল, " আগে খুলে দেখো। " 


মেখলা বলল, " কী দেখবো রে? " 


সন্দীপ বলল, " শ্যামলদা আর ওর ফ্যামিলিকে দেখাচ্ছে। শ্যামলদা তারাপীঠ যাচ্ছিল নতুন গাড়ি কিনে আজকে, ছেলে আর বৌকে নিয়ে। তুমি তো জান, শ্যামলদার ফিটের ব্যারাম ছিল। সেই যে গো, কিছুদিন আগে সেই অজ্ঞান হয়ে গেছিল অফিসে কথা বলতে বলতে, তুমিই তো জলের ছিটে দিয়ে চোখে মুখে তারপরে ডাক্তার অরুণ চৌধুরীকে কল দিয়েছিলে। ডাক্তার কিন্তু শ্যামলদাকে গাড়ি চালাতে বারণ করেছিল। সোমবার আগের গাড়িটা বেচে দিয়ে নতুন ওয়াগনার নিয়েছিল শ্যামলদা। ছেলেটা এবারে সাউথ পয়েন্ট থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে, বুধবার ছেলের পরীক্ষা শেষ হতে যাছিল তারাপীঠে সপরিবারে পুজো দিতে। ড্রাইভ করতে করতে হঠাৎ ফিটের এট্যাক হয় আর শ্যামলদা সোজা গাড়ি শুদ্ধু একটা আঠারো চাকার লরির পেছনে গাড়িটা গুঁজে দিয়েছে। তিনজনেই স্পট ডেড। তুমি টিভিটা খোলো, দেখো দেখাচ্ছে এখনো.... গাড়িটা দেখলে আঁতকে উঠবে গো তুমি, সত্যি বলছি। " 


মেখলা ছুট্টে গিয়ে খুলল টিভিটা, সেখানে লাইফ কভার করছে, বেঁকেচুরে দুমড়ে মুচড়ে গাড়িটাকে চেনা যাচ্ছে না আর শ্যামলদাকে চেনার উপায় নেই, গোটা মুখে কাঁচ ভেঙে ঢুকে বিকৃত হয়ে গেছে,শ্যামলদার মিসেস আর ছেলের শুধু মুখটা বোঝা যাচ্ছে যেহেতু ওরা পেছনের সিটে ছিল। সৌমাল্য দেখলো মেখলা দেখতে বসে কেমন কাঁপতে কাঁপতে সরে গেল টিভির সামনে থেকে। মেখলা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ঘটনাটা। সৌমাল্যও দেখলো খবরটা, এতদিন তা প্রায় পনেরো বছর ও চেনে শ্যামলকে, তার এই পরিণতি মানতে খুবই খারাপ লাগছে ওরও। 


সোমবার অফিসে গেল মেখলা, সেদিন শ্যামলদার ভাই এলো ওর অফিসের ড্রয়ার খুলে চেকবই, পাসবই, আরো ডকুমেন্ট যা যা ছিল সব নিয়ে গেল, মেখলাই সার্ভিস ম্যানেজারের সঙ্গে গিয়ে লোক দিয়ে ড্রয়ার খোলালো, জিনিসগুলো তুলে দিল শ্যামলদার ভাই অমলকে । শ্যামলদার সঙ্গে এই ভাইয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না, ভাই একাই থাকতো, একটা ছোটখাট চাকরি করতো, কোনোরকমে চলে যেত তার। আজকে এই দুর্ঘটনার কারণে রাতারাতি শ্যামলদা পরিবার সমেত নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে শ্যামলদার ভাই মালিক শ্যামলদার দুনম্বরি করে জমানো আশি লাখ টাকার ব্যাংক ব্যালান্সের আর দুকোটি টাকার প্রভিডেন্ড ফান্ডের, উৎপাতের কড়ি চিৎপাতে একেবারে । ভাইয়ের মুখেই অফিসের সবাই শুনলো মাস দুয়েক আগে শ্যামলদার বাড়িতে বাজ পড়ে বিশাল চিড় ধরেছিলো, যেটা সদ্য একমাস আগে শ্যামলদা সারিয়েছিলেন ছেলের পরীক্ষার আগে। যোধপুর পার্কের এতবড়ো বাড়িতে এখন শুধু শ্যামলদার ভাই আর শ্যামলদার বৃদ্ধ অশীতিপর বাবা আছেন নীচের তলায়, ওপরে আর কেউ রইলো না।বাবাকে জানানো হয়নি শ্যামলদার এই সপরিবারে মৃত্যুর কথা সেটা ভাই বলল। 


অফিসে সবাই হায়! হায়! করছিলো শ্যামলদার জন্য, ডাক্তার অরুণ চৌধুরী বারবার বলছিলেন, " কতবার বারণ করেছিলাম ওকে, ড্রাইভার রাখো, নিজে ড্রাইভ কোরো না, ভীষণ রিস্ক হয়ে যাবে। " শুনলেই বলতো, "আরে... অতো চিন্তা করবেননা, কিচ্ছু হবে না আমার । " সার্ভিস ম্যানেজার সোমনাথ রায় বললেন, "ও গাড়ি নিয়ে তারাপীঠ যাচ্ছে শুনেই বলেছিলাম অন্ততঃ লং ডিসটেন্সের জন্য একটা ড্রাইভারকে সঙ্গে নে, বলল,"কিচ্ছু হবে না দেখিস। একসঙ্গে তিন তিনটে প্রাণ চলে গেল তো!!! আহারে.... ছেলেটা জানতেও পারলো না যে ওর রেজাল্ট কেমন হল!!!" বলতে বলতে সোমনাথের গলাটা ধরে গেল। শোনা কথা বাড়িতে বজ্রপাত নাকি মৃত্যুর বার্তা আনে, সেটাই কী হল এভাবে!!!মেখলার শুধু বাজতে লাগলো কানে একটাই কথা, " নিয়তি কেন বাধ্যতে!"নিয়তিই যেন টেনে ছিল শ্যামলদাকে তারাপীঠে ঐভাবে বিনা ড্রাইভারে যাওয়ার

জন্য। 


যেটুকু ভালোর দিকে গড়িয়েছিল শ্যামলদার সঙ্গে মেখলার সম্পর্ক, নতুন বস লক্ষ্মীকান্ত ব্যানার্জী এসে সেটা একেবারে জলাঞ্জলি গেল কারণ এই লোকটার দুর্নাম আছে দুর্নীতিপরায়ণ আর চাকরি খাওয়ার ব্যাপারে।


23.11.21