Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন অটুট বন্ধনআরতী ভট্টাচার্য দাস 9/12/21
রিম্পা আর তমালের পরিচয় ফেসবুকেই,একটা সাহিত্য গ্রুপে লিখতো রিম্পা আর তমাল ঐ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তারপর একটা মিট-এ ওদের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। রিম্পা আহামরি সুন্দরী নয়,কিন্তু স্ম…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন 

অটুট বন্ধন

আরতী ভট্টাচার্য দাস 

9/12/21


রিম্পা আর তমালের পরিচয় ফেসবুকেই,একটা সাহিত্য গ্রুপে লিখতো রিম্পা আর তমাল ঐ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তারপর একটা মিট-এ ওদের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। রিম্পা আহামরি সুন্দরী নয়,কিন্তু স্মার্ট আকর্ষণীয়া। রিম্পাকে দেখামাত্রই সুদর্শন তমাল রিম্পার প্রেমে পড়ে যায়। তারপর একসাথে  সিনেমা দেখা নাটক দেখতে যাওয়া রেস্টুরেন্ট খাওয়া নানা  প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা এভাবেই প্রেম জমে ওঠে।  বছর ছয়েকের মধ্যেই ওরা বুঝতে পারে একে অপরকে ছেড়ে থাকা আর সম্ভব নয়। ওদের প্রেম বিবাহে পরিণতি পায়। 

      তমাল একটা ব্যাঙ্কে কর্মী। ওর পোস্টিং নর্থ বেঙ্গলে একটা ছোট্ট শহরে। এতোদিন ও একটা মেসে থাকতো। বিয়ের আচার নিয়ম পালন শেষ করে ও রিম্পাকে নিয়ে চলে যায়। আগে থাকতেই একটা ছোট্ট বাড়ি ভাড়া করে । পাহাড়ের কোলে নির্জন শান্ত পরিবেশে এই বাড়িটা ওদের দুজনের ভীষণ পছন্দ হয়। ওরা দুজনে হাতে হাত মিলিয়ে বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজায়। আনন্দে কেটে যায় ওদের দিন। দুজন দুজনের পাশে সবসময়  থাকে।আর একটা চোদ্দ পনেরো বছরের নেপালি  ছেলে ওদের সাহায্য করে। 

    রিম্পা ও তমাল ওদের স্কুল কলেজের বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনকে ওদের বাড়িতে আমণ্ত্রণ জানায়। মাঝেমাঝে কলকাতা থেকে অনেকেই কয়েকদিনের জন্য ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসে। 

     একদিন রিম্পার স্কুলের এক বান্ধবী ফোন করে জানায় আগামী মাসে ওর বিয়ে। তাই শনিবার ও রিম্পাদের নিমণ্ত্রণ করতে যাবে। 

     অনিন্দিতা আসবে বলে রিম্পা শনিবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বন্ধুর পছন্দমতো রান্না করতে থাকে। স্টেশন থেকে বাড়ি ঘন্টাখানেকের পথ। পাহাড়ি পথ ।পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায়শই ঝিরঝির করে বৃষ্টি হয় । অনিন্দিতার অচেনা অজানা পথ। তাই হাতে একটু সময় নিয়ে তমাল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় অনিন্দিতাকে আনতে। এদিকে বাইচুং গেছে স্থানীয় বাজারে মাছ মাংস মিষ্টি আনতে। 

  রিম্পা রান্না করছে আপনমনে। বাড়ি একেবারে ফাঁকা। পাহাড়ের কোলে বাড়ি বলে লাগোয়া কোনো বাড়ি নেই। একটা বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি বেশ দূরে দূরে। তাই সহজে কাউকে পাওয়া যায় না। হঠাৎ-ই রিম্পার পিঠে গরম অনুভব হয়। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ওর গায়ের চাদরটা জ্বলছে। ও ভয়ে চিৎকার করে ওঠে কে কোথায় আছো বাঁচাও ,বাঁচাও। ওর কথা পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। ভয়ে ওর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বাঁচার চেষ্টা করে আপ্রাণ,কিন্তু ভয়ে ও কিছুতেই হাত-পা নাড়াতে পারে না। যেন অবশ হয়ে গেছে ওর সমস্ত শরীর। আস্তে আস্তে আগুন বাড়তে থাকে। 

       হঠাৎ-ই ও কারোর স্পর্শ অনুভব করে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। ও চিৎকার করে ওঠে কে?  কে আপনি?আমাকে বাঁচান শিগগির। কিন্তু কথা গলায় আটকে যায়। বেরোয় না গলার স্বর। 

হঠাৎ-ই ও দেখে কেউ যেন ওর গা থেকে চাদরটা খুলে নিয়ে জলভরা বালতিতে ছুঁড়ে ফেলে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। ভয়ে ও জ্ঞান হারায়। 

       বাইচুং বাজার থেকে ফিরে বাড়িতে এসে রিম্পাকে ঐ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চোখেমুখে জলের ছিটে দিয়ে জ্ঞান ফেরায়। 

রিম্পা প্রাণে বেঁচে যায়। 

         এদিকে পথে যেতে যেতে তমালের গাড়ি হঠাৎ-ই ব্রেকফেল করে। গাড়িটা গড়াতে গড়াতে পাহাড়ের খাদে পড়ে যেতে থাকে। তমাল নিশ্চিত মৃত্যুর মুহুর্ত গুণতে থাকে। হঠাৎ-ই তমাল দেখে  আশ্চর্যজনকভাবে গাড়িটা ওপরদিকে উঠছে।এমনভাবে ঘটনাটা ঘটছে দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন গাড়িটাকে ঠেলে ওপরদিকে তুলে দিচ্ছে। অথচ ওর আশেপাশে কাউকেই দেখতে পায়না। তমাল প্রাণে বেঁচে যায়। এমনকি আশ্চর্যের বিষয়  তমালের গাড়িরও কোনোরকম ক্ষতি হয় না। তমাল ঘটনাটা বুঝে উঠতে পারে না। 

         তমাল যথারীতি আবার গাড়ি নিয়ে স্টেশনের দিকে রওয়ানা দেয়। ততক্ষণে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। তমাল ভাবে অনিন্দিতার কথা। ও  এ শহরের কিছুই চেনে না। ও ভীষণ সমস্যায় পড়বে। গাড়িটা স্টেশনের বাইরে পার্ক করে ও হনহন করে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে  শোনে আধঘণ্টা আগেই ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে। 

তমাল প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশন চত্বরের চারিদিক খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও অনিন্দিতাকে দেখতে পায় না। তমাল ভাবে তবে কি অনিন্দিতা এই ট্রেনে আসেনি?পরের ট্রেনে আসবে। ও অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষায় থেকেও ও অনিন্দিতাকে দেখতে পায় না। পরপর গোটা দুয়েক ট্রেন কলকাতা থেকে এসে চলে যায়। কিন্তু না অনিন্দিতা আসে না।  স্টেশন মাস্টারের কাছে জানতে পারে আজ রাতে ছাড়া আর কোনো ট্রেন কলকাতা থেকে এখন আসবে না। তমাল ফিরে আসে বাড়ি। 

      ওরা অনিন্দিতাকে ফোন করে। কিন্তু ফোন পায় না। রিম্পা বন্ধুর জন্য টেনশন করে। ভাবে অনিন্দিতা নিশ্চয়ই ফোন করবে। কিন্তু না কোনো কল আসে না। 

            রিম্পা অনিন্দিতার বাড়িতে ফোন করে। ওর বোন ফোন ধরলে ও অনিন্দিতাকে ফোনটা  দিতে বলে। ওর বোন হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে। 

রিম্পা অবাক হয়। নন্দিতার মুখে সব শুনে রিম্পা আবার  জ্ঞান হারায়। 

         মিনিট দশেক জলের ছিটে দেওয়ার পর রিম্পার সেন্স ফিরে আসে। বলে ওঠে অনিন্দিতা.....

একটু সুস্থ বোধ করলে রিম্পা বলে ওঠে অনিন্দিতা আমাকে ফোন করেছিলো কেমন করে?

ওর গলা আমি চিনি। যদিও ওর সাথে বছর পাঁচেক যোগাযোগ ছিলো না কারণ ও স্টেটসে গিয়েছিল চাকরি নিয়ে। কিন্তু.........। ও কাঁদতে থাকে আকুল হয়ে। 

          তারপর ধাতস্থ হয়ে ও তমালকে নন্দিতার মুখে শোনা সব ঘটনা বলতে লাগলো। 

        অনিন্দিতা এক বছর আগে আজকের দিনেই দেশে ফিরছিলো। এক মাস বাদে ওদের বিয়ে। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো অভিজিৎ-এর সঙ্গে। অভিজিৎ সেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী।বাল্যকাল থেকেই ও ছিল বাগদত্তা ।কথা ছিল ও দেশে ফিরে রিম্পাকে নিমণ্ত্রণ করতে যাবে। রিম্পা যে ওর প্রাণের বন্ধু। রিম্পাকে ছাড়া ওর বিয়ে অসম্ভব। 

     কিন্তু হঠাৎ-ই এই দুর্ঘটনা। প্লেন পৌঁছে গেছিলো। কিন্তু ল্যান্ড করার সময় দুর্ঘটনাটা ঘটে। অভিজিৎ-ও এই প্লেনেই ছিলো। ওরা দুজনে একসাথে দেশে ফিরছিলো। কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি ওদের। 


   সমস্ত ঘটনা শুনে তমাল স্টেশনে যাওয়ার পথে ওর জীবনে যে দুর্ঘটনা ঘটে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করে রিম্পার কাছে। শুনে রিম্পাও তমালকে ওর অনুপস্থিতিতে রিম্পার জীবনে যে দুর্যোগ এসেছিল তার সম্পূর্ণ বর্ণনা দেয়। 

       দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে। তমাল ভাবে ওকে ওভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালো কে? ভাবে তবে কি অভিজিৎ?

       আর রিম্পা ভাবে আজ সকালে কিকরে জ্বলন্ত চাদরটা গা থেকে খুলে জলভরা বালতিতে পড়লো। অথচ একটুও হাওয়া ছিল না ।বাড়িতে কেউ ছিল না। তবে কি অনিন্দিতা?মৃত্যুর পরও বন্ধুকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালো।একেই বলে বন্ধু। 

   

এ প্রশ্নের উত্তর নেই ওদের কাছে।