সৃষ্টি সাহিত্য যাপন স্মৃতির_সরণীআরতী ভট্টাচার্য দাস শব্দসংখ্যা- অনধিক ৫০০
সুমিতদা ,সুমিতদা দরজার সামনে থেকে টবটা সরান।গাছটা গায়ে লাগছে-চিৎকার করে ঔদ্ধত্য স্বরে বলে ওঠেন ওপরের ফ্ল্যাটের রণজিৎবাবু। চোখে দেখতে পায়না শালারা ........…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
স্মৃতির_সরণী
আরতী ভট্টাচার্য দাস
শব্দসংখ্যা- অনধিক ৫০০
সুমিতদা ,সুমিতদা দরজার সামনে থেকে টবটা সরান।গাছটা গায়ে লাগছে-চিৎকার করে ঔদ্ধত্য স্বরে বলে ওঠেন ওপরের ফ্ল্যাটের রণজিৎবাবু। চোখে দেখতে পায়না শালারা ..........বাচ্ছা অন্ধ কানা।
ফ্ল্যাটের সামনের ছাড় অংশে কয়েকটি টবে কিছু ফুলের গাছ লাগিয়েছে সুমিতবাবুর স্ত্রী।
চোদ্দ বছরের ছেলে বাপ্পাই টবটা সরিয়ে দিতে দিতে বলে ,এভাবে গালাগাল দিচ্ছেন কেন?খেয়াল করিনি সরিয়ে দিচ্ছি।
কি বললি যতবড়ো মুখ নয় ততবড়ো কথা। নাক টিপলে দুধ বেরোয় এখনো।
তাতে কি?আপনি ওভাবে আমার বাবাকে বলবেন কেন?আপনি তো জানেন ওনি (প্রতিবন্ধী)পারবেন না।আমি তো সরিয়ে দিচ্ছি। আপনি ওভাবে আমার বাবাকে বলবেন কেন?
দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। তোর মুখের আজ বন্ধ করে দেবো ।
ওপর থেকে নেমে আসে পচাত্তর বছরের রণজিৎবাবু ও তার চল্লিশোর্ধ ছেলে গৌতম।
বেরিয়ে আয় শালা,.......'বাচ্চা। আজ তোর মুখ জন্মের মতো বন্ধ করে না দিই তো আমার নাম.......,নাহলে আমি মানুষ নই।বেজন্মার বাচ্ছা। বেরিয়ে আয় বলছি। দুজনের হাতে লাঠি থানইঁট।
সুমিতবাবু ও তার স্ত্রী ফ্ল্যাটের কলারশিপল বন্ধ করতে এলে অশ্লীল ভাষায় কাপড় ধরে টানাটানি ও চৌদ্দ পুরুষকে নগ্ন করে বাপবেটা।
এলাকার লোকজন তামাশা দেখে,যেন কাঠের পুতুল। সুদের ব্যবসা করেন রণজিৎবাবু। সকলে ধার বাকি নেয় তার কাছে।ভয়ে সকলের মুখ বন্ধ। তারপর শুরু হয় ভাঙচুর। একের পর এক কুড়িটা টব ভাঙে,জানালার শার্সি গুঁড়োগুঁড়ো।
ফোন করো পুলিশে,সুমিতবাবুর স্ত্রী রুমি বলে ওঠেন।
কর শালা......বাচ্ছা,দেখি পুলিশ কিকরে।
গৌতম নিজেই স্ত্রীকে নিয়ে চলে যায় থানায় সুমিতবাবুর নামে ডায়রি করতে।
চুরি আবার শিঙ্গাজুরি।
রুমি স্মৃতির সরণীর কানা ঘুপচিতে বিচরণ করে।
মনে পড়ে যায় রুমির বাল্যকালের কথা। রুমিদের পৈতৃক অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। নিজেদের একটা বাড়ি এ ছিলো স্বপ্ন। ওরা পাঁচঘর ভাড়াটে ও বাড়িওয়ালার সাথে পাঁচ ভাইবোন মাবাবা একটা ছোট্ট ঘরে দিব্যি আনন্দে কাটিয়েছে। কোনোদিনও বুঝতেই পারেনি ওটা ওদের নিজেদের বাড়ি নয় আর প্রতিবেশীরা ওর কাকু-কাকিমা,জেঠু জেঠিমা নয়। বুক দিয়ে আগলে রাখতো ওদের। শ্রদ্ধা-সম্মান,আদর-সোহাগের আঁচলে জড়িয়ে থাকতো।
রুমির দিদি সুমি ভীষণ পড়াশোনায় অমনোযোগী ছিলো শৈশবে।কিন্তু গুলি খেলায় পটু ছিলো। খেলার সঙ্গী ছিল ছোটকা ওরফে ভাড়াটে পঁয়তাল্লিশোর্ধ রমেনবাবু ।প্রতিবার হারিয়ে হরলিক্সের কাঁচের বোতল ভর্তি করতো কাঁচের গুলিতে। এজন্য বেধড়ক মারও খেতো বাবার কাছে।
এই সুমি খাটের তলায় কি করছিস রে?
চুপ চুপ আস্তে। খাটের তলা থেকে বেরিয়ে এসে সুমি বলে। বাবা মেরে ফেলবে ছুটকি,গুলিগুলো থাক ওখানে।
এই আমার খাটের তলায় তোর গুলি রাখার জায়গা? মুচকি হাসে ।
আমি বাবাকে বলে দেবো আজ। পড়াশোনা না করে খালি গুলি খেলা।
এইতো পড়তে যাচ্ছি। প্লিজ প্লিজ বলো না ছুটকি। মেরে ফেলবে।
বারান্দা থেকে সুমি সুমি কোথায় তুই সাতসকালে?
ও তুই এখানে?আজ তোকে মেরেই ফেলবো,খালি গুলি খেলা। লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।
ছোটকা বাঁচাও বাঁচাও বাবা মেরে ফেললো।
বড়দা প্লিজ মেরো না ওকে,পায়ের কাছে অধোবনত হয়ে সুমিকে বুকে জড়িয়ে বলে ছোটকা।
ছুটকি বলে ওঠে,তুমিই যত নষ্টের গোড়া।মেয়েটা একদম পড়াশোনা করছে না খালি গুলি।
এবার থেকে আমি ওকে পড়াবো। সুমি যা মা বই নিয়ে আয়। আগে দুঘণ্টা পড় তারপর আবার খেলবো।
বাবার রাগ জল হয়ে যায়। পরস্পর পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে।