Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন গল্প --- সম্পর্কের শীতলতাকলমে ---- মহুয়া মিত্র
" দোল পূর্ণিমার নিশি,নির্মল আকাশ,ধীরে ধীরে বহিতেছে মলয় বাতাস,"পূজো শেষ করে পুরোহিত বিদায় নিতে পাঁচালী পড়তে বসেছে আনন্দী। এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো ওর …

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন 

গল্প --- সম্পর্কের শীতলতা

কলমে ---- মহুয়া মিত্র


" দোল পূর্ণিমার নিশি,

নির্মল আকাশ,

ধীরে ধীরে বহিতেছে মলয় বাতাস,"

পূজো শেষ করে পুরোহিত বিদায় নিতে পাঁচালী পড়তে বসেছে আনন্দী। এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো ওর বড়ো প্রিয় উৎসব। তিরিশ বছর আগে যখন এই বাড়ির একমাত্র বউ হয়ে এসেছিল ও, তখনই শাশুড়ি মা ওকে কোজাগরীর দায়িত্ব অর্পণ করেন। সেই থেকে প্রতি বছর নিষ্ঠা ও ভক্তি সহ পূজো করে আসছে আনন্দী। পূজোর প্রায় দিন পনেরো আগে থেকে শুরু হয় প্রস্তুতি। গাছের ডাব, নারকেল নিজে দাঁড়িয়ে পারা থেকে, চালগুঁড়ো, গুড়, খৈ কেনা, নাড়ু-মোয়া-সন্দেশ বানানো, বাজার ঘুরে পছন্দ সই প্রতিমা আনা, পূজোর জিনিস গোছানো, ফল ফুলের বন্দোবস্ত করা, লুচি সুজি খিচুড়ি আরোও কত ভোগ রান্না, সারা বাড়ি আলপনা এঁকে সাজানো এমন সব, সব ও করে একা হাতে। যখন শ্বশুর শাশুড়ি জীবিত ছিলেন তখন তারা পূজো শেষে মা লক্ষ্মীর প্রণাম সেরে বলতেন, -- " আমাদের আসল মা লক্ষ্মী হল আমাদের বৌমা। ওর পূজো পেয়ে মাটির দেবী যেন সত্যি সত্যি জীবন্ত হয়ে উঠেছেন। কি সুন্দর পবিত্রতা চারিদিকে। আমাদের অবর্তমানেও তুমি এভাবেই পূজো করে যেও।"


ক্লান্ত উপোসী শরীরে বল আসতো আনন্দীর। এই আশীর্বাদ বাণীই ছিল ওর পরম প্রাপ্তি।


তারপর যখন ওর তিন ছেলে মেয়ে হল, তখন পূজো করে উঠতে পারতো না আনন্দী, তার আগেই ওদের বায়না মেটাতে পূজোর থালা থেকে ওদের হাতে তুলে দিতে হতো নাড়ু, মোয়া, সন্দেশ। তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে ওরা বলতো, -- " কি দারুণ হয়েছে খেতে মা।" গর্বে বুক ভরে উঠতো আনন্দীর।


এরপর আসা শুরু হতো আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীদের। এত কাজের পর সকলকে প্রসাদ বিতরণ করতে হাঁপিয়ে যেত আনন্দী। তখন ওর বর এগিয়ে এসে ওর হাতে হাতে সাহায্য করত। খুব ভালো লাগতো ওর।


আর ও যখন পাঁচালী পড়তো তখন তো কথাই নেই। সবাই একসাথে ঠাকুর ঘরে বসে জোড় হাত করে শুনতো।


আজও একবার পাঁচালী পড়ার ফাঁকে আড়চোখে চাইল আনন্দী। তারপর একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে পড়ায় মন দিল। কয়েক বছর আগেও এমনটা ছিল না। কিন্তু এখন! সবাই ঠাকুর ঘরে আনন্দীর আশেপাশেই বসে অথচ কেউই পূজো দেখছে না বা পাঁচালী শুনছে না। ওর বর বা ছেলে মেয়েরা সবাই ব্যস্ত যার যার মোবাইলে। 


গত কাল রাতে আনন্দী একবার বলে ছিল আজ যেন সকলেই একসাথে পূজো দেখে। ছেলে মেয়েরা কিছু না বললেও ওর বর বলেছিল, -- " এত বছর ধরে তো ঐ একই পূজো দেখে আসছি। ও না দেখলেও হবে, বরং কাল সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের এক লক্ষ্মীদেবীর মন্দির থেকে লাইভ সন্ধ্যা আরতি দেখাবে, সেটাই ফেসবুকে দেখবো।"


ছেলে বলে উঠলো, -- " সিঙ্গাপুর থেকেও দেখাবে। সত্যি মা, এত আয়োজন করার তো কোন মানে নেই। এখন আর কেউ আসে না বাড়িতে পূজোর সময়। শুধু শুধু এত কষ্ট করে খাবার বানাও তার ওপর লোকের বাড়িতে ছোটো প্রসাদ দিতে। কোনো মানে হয়?"


-- " ছাড়্, তোদের মা শুনবে না, যা খুশি করুক।" বলে ফোনে ডুবে যায় আনন্দীর বর।


আজ সত্যিই পূজোর সময় সবাই থেকেও কেউ নেই ওর পাশে। এত আয়োজন সব মিথ্যে মনে হয় ওর। আগে বাড়ির পূজো ছিল সবার, কত আনন্দ ছিল তাতে। আর এখন সব থাকলেও পরিবারটাই নেই সেই আনন্দে।


খুব খারাপ লাগে আনন্দীর। ভাগ্যিস ওর শ্বশুর শাশুড়ি গত, না হলে খুব কষ্ট পেতেন ওনারা। বাড়ির আনন্দে সবাই থেকেও সবাই সবার থেকে দূরে নিজ জগতে। আর কি সেই আগের সবাই মিলে মজা করার দিনগুলো ফিরবে না এভাবেই দূরত্ব রেখে সকলে একসাথে থাকবে! ভাবে আনন্দী কিন্তু ভেবে পায় না কিছুই।