Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

একুশের যাতনাপ্রিন্স মনিরুজ্জামান ২২/০২/২২--------------------------------কুয়াশাচ্ছন্ন হিমেল সকাল। চোখের নজর একদম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী পর্যন্ত   নিবদ্ধ। ফজরের নামাজ শেষ হতে না হতেই মাইকে ভেষে এলো স্রুতিমধুর ভাষার গান।"আমার ভাইয়…

 


একুশের যাতনা

প্রিন্স মনিরুজ্জামান 

২২/০২/২২

--------------------------------

কুয়াশাচ্ছন্ন হিমেল সকাল। চোখের নজর একদম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী পর্যন্ত   নিবদ্ধ। ফজরের নামাজ শেষ হতে না হতেই মাইকে ভেষে এলো স্রুতিমধুর ভাষার গান।

"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, 

 আমি কি ভুলিতে পারি"।

আহ, সে কি আবেগিত সুর ? শুনেই কেমন ছলছল হয়ে গেলো সমবেত কন্ঠের সেই ভাষার গান? 

শীতে জবুথবু হয়ে লেপের নিচে লেপটে থেকে কান দুটো খাড়া করে বিমোহিত হয়ে শুনছিলাম। হঠাৎ মনে হলো আরে হ্যাঁ, আজকে তো অমর একুশে ফেব্রুয়ারী! আলোকদিয়া মাদ্রাসা কমিটি কর্তৃক আয়োজিত  "অমর একুশ" উপলক্ষে  থাকবে কবিতা আবৃত্তি, মুকাভিনয়,কেরা আয়াত প্রতিযোগিতা, দৌড়,বল্লম নিক্ষেপ ইত্যাদি নানা আয়োজন।

 আবৃত্তির  জন্য এবারের নির্বাচিত কবিতা পল্লী কবি জসিমউদ্দীন এর "কবর" কবিতা। আমি নিশ্চিত যে, ১ম,২য় অথবা ৩য়। এর মধ্যে একটা না একটা স্থানে থাকবোই থাকবো।

 আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করার জন্য একদম ঠোটস্থ করে রেখেছি। 

"এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,

ত্রিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে"।

শীতের সকালে বিছানা জুড়ে থাকে বিস্তর আলস্য। সহজে উঠতে মন চায় না। উঠবে কি উঠবো না ভাবছি, এমন সময় সজোরে মায়ের ডাক শুনতে পেলাম।

- গ্যাদা,মাদ্রাসা যাবি না,আইসক্যা না তোর কবিতা আবৃত্তি আছে? 

- উঠছি মা বলেই একলাফে বিছানা ছেড়ে নামলাম। ফ্রেশ হয়ে গায়ে শালটা জড়িয়ে নিয়ে বের হতেই দেখি বাবা উঠোনে দাঁড়িয়ে নিমের ডাল দিয়ে মেস ওয়াক করছে। আমাকে দেখে বাবা বেশ কড়া মেজাজেই বললো, 

- শরিষা শুকিয়ে শুকিয়ে ক্ষেতেই ঝরে পড়ছে। ঠিকা কাজের লোক কোথাও খুঁজে পেলাম না। তোমার আর বাপু কবি সেজে কাজ নেই। তার চেয়ে বরং দুই বাপ ছেলে মিলে শরিষা তুলতে যাই। শরীষা বেচলে দুই পয়সা আয় হবে।

শরিষা ক্ষেতে গিয়ে শরিষা তুলতে তুলতে হাতের আঙুল গুলোতে ফোঁসকা পড়ে গিয়েছিল। মাইকে যখন কবর কবিতার আবৃত্তি শুনছিলাম, তখন দু গাল বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। আবৃত্তি করতে না পারার আক্ষেপ আমাকে আজও তাড়িত করে।

গ্রামের বাড়ী গেলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। হাঁটার ছলে ছুটে যাই বাবার কবরের পাশে।খানিকক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকি। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, অশ্রু স্খলন হয়। দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে দেখি চারিদিকে বেশুমার কবিতার পটভুমি। যেখানে পাওয়ার চাইতে না পাওয়ার পঙতি ইতিউতি করে। কলম থেমে আটকে যায় স্মৃতির ঝড়া পাতার ফাঁকে। আমার আর আবৃত্তি করা হয়ে ওঠেনা। 

**************************