Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন আজও আমি আর্মি কনভয় দেখলেই শিউরে উঠি! মাথার ভেতরে বেজে ওঠে সাইরেন! ট্যাররররর মেশিনগানের অবিশ্রান্ত শব্দের কোলাহল। বুক-পাঁজরে দুদ্দাড় পাড় ভাঙার শব্দ। স্বজন হারানোর তীব্র ব্যথায় ছলকে ওঠে গহন সমুদ্র। ধ্বংসলীলা পৌ…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন 

আজও আমি আর্মি কনভয় দেখলেই শিউরে উঠি! 

মাথার ভেতরে বেজে ওঠে সাইরেন! ট্যাররররর মেশিনগানের অবিশ্রান্ত শব্দের কোলাহল। বুক-পাঁজরে দুদ্দাড় পাড় ভাঙার শব্দ। স্বজন হারানোর তীব্র ব্যথায় ছলকে ওঠে গহন সমুদ্র। ধ্বংসলীলা পৌচাশিক উল্লাসে ধর্ষকামী কামার্ত-সোল্লাস। ভীতা-সন্ত্রস্তা কোমলকৌমার্য আর্তনাদের বহতা নদী। যে জলে মিশে গেছে দামালের ঝাঁঝরা করা বুকের তরতাজা রক্তধারা।


সময়কাল ১৯৭০/৭১।

তবুও আজও আমার মগজের কোষাগারে সুইসুতোয় নক্সী করা রয়ে গেছে স্মৃতির বুনিয়াদ। আমি আতঙ্কিত হই ; আমি সন্ত্রস্ত হই সাজোয়া বহরের জলপাই রঙের কনভয় আর উর্দিপরা রোবটিক মুখ দেখে।


প্রজন্মরা জানেই না কী বিভৎস আগুনের দিন পেরিয়ে আসতে হয়েছে আমাদের। আমাদের উত্তরসূরিদের।


সম্বিলিত ছবিটা একটা পাঁকা ইদারার। বাবুদের ইদারা। অচ্ছূৎ নীচুজাত / শ্রেনিপেশায় ছোটলোকের সাধ্য নেই সে ইদারার স্বচ্ছতোয়া টলটলে জল ছুঁয়ে দেখার।আকন্ঠ তৃষ্ণায় মরে গেলেও মেলে না তাদের ভাগ্যে এক বিন্দু পিপাসার জল।


ভাগ্যের কী নির্ঘম পরিহাস! যে জলের একচ্ছত্র আধিপত্য কেবল মাত্র বাবুদের। সে জলে এখন সমান ভাবে এখন রোজ হাসরের দিনের অপেক্ষায় বাঙালী- অবাঙালী। বিহারী মেড়ো। কচি-শিশু, অনূঢ়া কিশোরী আর কৌমার্যময়ী সদ্য তারুণ্যে পা রাখা যৈবতী কন্যা।


হ্যাঁ ! এটা সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কূপ! যেখানে অসহায়া শিশু-কিশোরী-যুবতী মেয়েদেরকে তাদের বাবা মায়ের বুক থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসে পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে এঁটো কলাার খোসার মতন ফেলে দিয়েছে ধর্ষকেরা; মানুষরূপী পাপিষ্টর দল। নরপিচাশের পৌচাশিক উন্মাদণায় রেহাই পায়নি হিন্দু-মুসলীম জাতীধর্মের মেয়েরা। 


একাত্তরের অস্থিতিশীল সময়ে পাক হানাদার আর তাদের দোসরেরা মেতেছিলো নারকীয় উন্মাদনায়।

পরবর্তিতে মুক্তিকামী দলের সহচরেরা অবলিলায় ধর্ষণ করেছে অসহায়া বিহারী মেড়ো অবাঙ্গালী যুবতীদেরকে। কদর্য্য উল্লাস পাশবিক নির্যাতন শেষে তাদেরকে হত্যা করেছে বড্ড নির্মমভাবে। {পাকশী রেলষ্টেশন সংলগ্ন ষ্টাফকোয়াটারটা ছিলো পাক হানাদারদের এবং পরিবর্তে মুক্তিবাহিনীর টর্চারসেল।সেখানে যুবতী নারীদেকে নিয়ে এসে রাতের পর রাত বিকৃতকাম চরিতার্থ করতো উভয় পক্ষই। দাঁতে কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছে কত মা মেয়ের স্তনার্গ ; বেয়নেট কিম্বা ধারালো অস্ত্রে খুবলে নিয়েছে যৌনাঙ্গ। সম্প্রতি সেই কোয়ার্টার টা ভেঙে ফেলা হয়েছে পরিত্যক্ত সম্পদ।হিসাবে।}  তারপর সেসব মৃত অর্ধমৃত শরীরগুলো ফেলে দিয়েছে ওই পাঁকা ইদারার টলটলে জলে। শিশুদেরকে দু'পায়ে পিষে কিম্বা মুরগী ছেড়ার মতন দু'পা ধরে ছিড়ে ফেলেছে। যুবকদেরকে নদীর পাড়ে নিয়ে যেয়ে ধারালো রামদা'য়ের কোপে আলাদ করে দিয়েছে ধড় থেকে মাথা। তারপর সেই মাথা আর দেহ লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে প্রমত্তা পদ্মার জলে।  বুক কাঁপেনি তাদের এতটুকু। কারণ তারাও তো শিখেছে সেসব অস্থিরতার দিনগুলোতে বিহারীদের কাছে মেড়োদের কাছে। শিখেছে পাক হানাদারদের কাছে। 

কিন্তু সবাই কি সে অন্যায়ে জড়িত ছিলো? প্রশ্নটা প্রায়শঃ আমায় প্রশ্নবিদ্ধ করে, জর্জরিত করে কেন! 


তাই তো যখন অখ্যাত এই ইদারার পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করি, মনে হয় কারা যেন অস্ফুটস্বরে কাঁদছে। কাদের অভিসম্পাতের দীর্ঘশ্বাস ভেসে আসছে আমার ঘাড়ে আমার কর্ণকূহরে। পা দু'টো শ্লথ হয়ে আসে। 


আমার স্বচোখে দেখা একটা কাহিনি এ রকমঃ-

স্বাধীনতাত্তোর সময়ে মুক্তিসেনারা একদিন এক অশীতিপর বৃদ্ধ বিহারীকে ধরে নিয়ে এলো তাকে হত্যা করবে বলে। তার অপরাধ সে অবাঙালী!

আর অবাঙালী মানেই দেশ দশের শত্রু। সত্যমিথ্যা যাচাই না করেই সেই শ্বেত-শুভ্র দাড়িওয়ালা বিহারীকে ধরে নিয়ে এসেছে :যিনি পবিত্র কোরআনের হাফেজ।

অস্তগামী সূর্যালোকে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো মরা নদীর পাড়ে কষাঢ় বাঁধ বাগানের অন্ধকারে। তাকে দিয়ে তার কবর খোড়ালো মুক্তি সেনারা।

তিনি পবিত্র কোরআন পাঠ শেষ করলেন। পাঠ শেষ হতেই মোসলেম নামে মুক্তিসেনা গ্রেনেড চার্জ করলো। দুর্ভাগ্য গ্রেনেডটা ফাটলো না। তা দেখে বিহারী হাফেজ ক্লীষ্ট হাসি হেসে উর্ধাকাশে তাকিয়ে আল্লাহকে ডাকলেন,"ইয়া আল্লাহ! তুম হি মেরা মালিক হো! "

আত্মদম্ভে মরিয়া হয়ে উঠলো মোসলেম। রাইফেলের সুতীক্ষ্ণ বেয়নেট বাগিয়ে ছুটে যেয়ে ঘ্যাঁচাং করে বিঁধিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো বৃদ্ধ বিহারী হাফেজকে।তারপর মাটি চাপা। একজন হাফেজ, তার না হলো জানাজা, না পেলো সে অন্তিমকালের পরিধায়ী কাফন।


কচিমনে সেদিন সে ঘটনা স্বচোখে দেখে হয়তো ব্যথা পেয়েছিলাম।সারারাত তন্দ্রাহীন ভাবে কেটেছে আমার। আতঙ্কে কেঁপেকেঁপে উঠেছি বারবার। ভোরবেলা দুঃস্বপ্নে প্রলাপ বকছি। মা এসে গায়ে হাত দিয়ে দেখেছেন আমার শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে । টানা একমাস সময় নিয়েছিলো সে জ্বর সারতে। শুকিয়ে বিছানায় সেঁটে গিয়েছিলাম সেই একমাস সময়ে। কী দুঃসহ সময়টা! 


সেই দুঃস্বপ্নটা আজও আমায় তাড়া করে ফেরে বলেই অখ্যাত এই ইদারার ধারে এসে দু'চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে। কষ্টদলা পাঁক খায় উদাসী চিলের মতন। 


 যুদ্ধবাজি কাকে কতোটা সুখ দেয় কিম্বা কেড়ে নেয় সেটা তারা ভালো জানে যারা এর সুফল পেতে চায়। অসহায় নিরিহ জীবনে তার কোন প্রয়োজন নেই।

ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের কষ্ট কাকে বলবো?? কে শুনবে!! 


©সিরাজুল ইসলাম।

সকালঃ ০৬:৩০ মিঃ।

১১/০৫/২০২২খ্রিঃ।

{#ছবিঃ পাকশী রেলষ্টেশনের নীচে কৈবর্ত পাড়ার পাশে বধ্যকূপ। কয়েকশত নিরিহপ্রাণ নৃশংসতার শিকার।}