Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#ঘোরানো_প্যাঁচানো_বলেই_সুন্দর#অরিন্দম_ভট্টাচার্য 
আজ গুরুপূর্ণিমা। আকাশের দিকে তাকালে শুধু গোল রূপালী থালার মতো ধবধবে সাদা চাঁদটাই নজরে আসছে। যেদিকেই তাকাই, জ্যোৎস্নার বন্যা চতুর্দিকে, একেবারে ধবধব করছে চারপাশ। আমার বন্ধু অনিমেষের…

 


#ঘোরানো_প্যাঁচানো_বলেই_সুন্দর

#অরিন্দম_ভট্টাচার্য 


আজ গুরুপূর্ণিমা। আকাশের দিকে তাকালে শুধু গোল রূপালী থালার মতো ধবধবে সাদা চাঁদটাই নজরে আসছে। যেদিকেই তাকাই, জ্যোৎস্নার বন্যা চতুর্দিকে, একেবারে ধবধব করছে চারপাশ। আমার বন্ধু অনিমেষের সদ্য কথা ফোটা বাচ্চাটাও জ্যোৎস্নাময় মায়াবী পরিবেশে আবিষ্ট। মায়ের কোলে শুয়ে, বাইরের পরিবেশের দিকে আঙ্গুল বাড়িয়ে ও বলল -- মা-- লো--দ।

উপস্থিত আমরা বন্ধুরা সবাই হো হো করে হেসে ফেললাম।

অনিমেষের স্ত্রী রিয়া শশব্যস্ত হয়ে উঠলো সন্তানের ভুল ভাঙিয়ে তাকে সঠিক শব্দটা শেখানোর জন্য -- না-- সোনা! ওটা রোদ নয়। ওটাকে জ্যোৎস্না বলে। বলো, জ্যো-ৎ-স্না।

বাচ্চাটা মিষ্টি স্বরে বলল -- জ্যো-ন্-না--

-- জ্যো-ৎ-স্না

-- জ্যো-ন্-না---

মা ছেলের দু'তিনবার এইরকম জ্যোৎস্না-জোন্‌না খেলা চলার পর আমি বললাম -- তোরা একটা জিনিষ লক্ষ্য করেছিস? বাচ্চাটার গলায় মিষ্টি জ্যোন্‌নাটাই কি সুন্দরভাবে প্রকৃত জ্যোৎস্নাটাকে রিপ্রেজেন্ট করছে! 


হীরক বলল -- সত্যি! ওর মুখে কি মিষ্টি লাগছে শুনতে।


আমি বললাম -- সেটা ঠি‌ক‌ই। কিন্তু আমি আরো বড়ো করে কিছু একটা বোঝাতে চাইলাম।


অতীশ বললো -- তোর এই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে মানে করা ছাড়তো! এখন একটু হালকা গান গল্পে জমুক না আড্ডাটা! মান্নার ঐ গানটা গা তো দেখি -- "ও চাঁদ সামলে রাখো জোছনাকে"


-- আরে গানটা তো গাইছি। কিন্তু ঐ যে "ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে" কথাটা বললি না? আমি ঐ জিনিষটাকে নিয়েই বলতে যাচ্ছিলাম। কিছু জিনিষকে ঘোরালে প্যাঁচালেই তার মিষ্টতা বাড়ে, তার সৌন্দর্য বাড়ে।


-- কি রকম?


-- এই যে এতো সুন্দর জ্যোৎস্নাটা দেখছিস, এটা আসলে একটা ঘোরানো প্যাঁচানো রোদ। ঐ বাচ্চাটা প্রথমে ঠিক কথাই বলেছিল, "লো--দ"।সূর্যের আলো, মানে রোদটাইতো চাঁদে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসে, যাকে আমরা জ্যোৎস্না বলি। কিন্তু পুরোটা তো আর আসে না, রোদের বাকি সবটুকু শুষে নিয়ে কেবলমাত্র তার মিষ্টি আভাকেই পৃথিবীতে জ্যোৎস্না রূপে ছড়িয়ে দেয় চাঁদ।


-- তা ঠিক। কিন্তু এর সাথে বাচ্চাটার কি সম্পর্ক?


-- আরে! এখনো বুঝলি না? ঐ বাচ্চাটা‌ই তো এখানে চাঁদের কাজ করলো রে! মায়ের মুখের 'জ্যোৎস্না' শব্দটাকে তো ও প্রতিফলিত‌ই করলো, কিন্তু নিজের মতো করে। আমাদের কানে যখন এসে পৌঁছালো "জো-ন্‌-না", তখন ওটা আর কোনো শব্দ নয়, ওটা 'জ্যোৎস্না' শব্দটার মিষ্টি আভা মাত্র।

আর কিছু নয়, এটাই বলতে চাইছিলাম আমি। এবার গাই -- ও--  চাঁ---দ, সা--ম-লে রাখো-- জোছনা-কে--- গলা ছেড়ে জমিয়ে ধরলাম গানটাকে।


সবাই চুপ। গান কেউ শুনছে বলে মনে হলো না। হয়তো ভাবছে ঘোরানো প্যাঁচানো রোদটার কথা। নয়তো তার সৌন্দর্যের কথা। অতীশ হঠাৎ রাগ দেখিয়ে অঙ্গ-ভঙ্গি করে বলে উঠলো -- ধুৎ তোর! মাথাটাথা ঘুরিয়ে দিয়ে এখন "সামলে রাখো জোছনাকে" করতে এসেছে। চুপ করতো---