দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা, ১১ নভেম্বর: জলের পর চা হল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গৃহীত পানীয় এবং এতে জড়িয়ে রয়েছেন লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্রধারক চাষি। বিশেষ করে ছোট চা উৎপাদকরা, মুখোমুখি হয় অগুন্তি আর্থিক, আবহাওয়া ও অন্যান্য জটিলতার। ভারতের স…
দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা, ১১ নভেম্বর: জলের পর চা হল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গৃহীত পানীয় এবং এতে জড়িয়ে রয়েছেন লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্রধারক চাষি। বিশেষ করে ছোট চা উৎপাদকরা, মুখোমুখি হয় অগুন্তি আর্থিক, আবহাওয়া ও অন্যান্য জটিলতার। ভারতের সব প্রান্তের ও অন্যান্য দেশের 150-র বেশি অংশগ্রহণকারীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতায় এসব প্রত্যাহ্বান আলোচনা ও তার সমাধান বের করতে। এসেছিলেন শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, চিন, ইন্দোনেশিয়া ও নেপালের প্রতিনিধিরা।
দিনব্যাপী কনভেনশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রূপে অংশগ্রহণ করেন ড. শতদ্রু চট্টোপাধ্যায়, ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন (আইটিএ) ও ট্রিনিটি প্রোগ্রাম কমিটির চেয়ারপার্সন নয়নতারা পালচৌধুরী, আইটিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান অতুল আস্থানা, আইটিএ-র অতিরিক্ত ভাইস চেয়ারম্যান হেমন্ত বাঙ্গুর, আইটিএ-র সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহা, ইন্দোনেশিয়ান টি মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের পার্টনারশিপ ডিরেক্টর হেনরি হেনিয়ারধি, প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব সিলোন (শ্রীলঙ্কা)-র চেয়ারম্যান সেনাকা আলাওয়াট্টেগামা, বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহ আলম, নেপাল টি প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুরেশ মিত্তল ও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিআইএসটি)-এর প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তী। এ ছাড়া সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল অল আসাম স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অল বড়োল্যান্ড স্মল টি গ্রোয়াস অ্যাসোসিয়েশন, জলপাইগুড়ি ডিস্ট্রিক্ট স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইন্ডিয়ার সঙ্গে অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণ ভারতের বেশকিছু ক্ষুদ্র চা উৎপাদক প্রতিনিধিরা।
ইন্টারঅ্যাক্টিভ সেশনের মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা আলোচনা করেন চা শিল্পে ক্ষুদ্রধারক চাষিদের ভূমিকা এবং তাদের স্বাস্থ্য ও সুকল্যাণ প্রসারের উপায় এবং তাদের কাজকর্ম-ব্যাবসা পারিবেশিকভাবে দীর্ঘস্থায়ী করা যায়।
সলিড্যারিড্যাড এশিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. শতদ্রু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘অন্যান্য দেশের ও ভারতের এক মিলিয়নের বেশি চা উৎপাদক চা শিল্পের ওপর নির্ভর করে তাদের অস্তিত্বের জন্য। চা শিল্প গ্রামীণ জীবনযাপনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এর পাশাপাশি দেশের উৎপাদনের অর্থনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। চা ব্যাবসায়ে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য, সুকল্যাণ ও পারিবেশিক দীর্ঘস্থায়িত্ব প্রসার হওয়া উচিত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, কিন্তু এই সেক্টর একটি সংকটের সম্মুখীন কারণ ধারাবাহিকভাবে চায়ের মূল্য কমছে, যা ক্ষুদ্র চা-চাষিদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখন, চাষিদের সবল করতে যাতে তারা তাদের ব্যাবসা ভালোভাবে করতে পারে উদ্দেশ্য-চালিত ব্র্যান্ডে, সলিড্যারিড্যাড পরিকল্পনা করছে ট্রিনিটি-র অঙ্গস্বরূপ সোলিট্রেস প্রবর্তন করার, একটি মেক-ইন-ইন্ডিয়া সাসটেইনেবিলিটি উদ্যোগ যাতে জড়িত ক্ষুদ্রধারক চা চাষিরা ও একটি কিউআর কোড প্রযুক্তি যা গ্রাহকদের সুযোগ দেবে চা উৎপাদকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে, এর পাশাপাশি জানতে পারবে গৃহীত নিরাপত্তা ও গুণমান সম্পর্কে। ইতিমধ্যেই 92,000-এর বেশি চা চাষি ট্রিনিটি কর্মসূচির সদস্য হয়েছে এবং 2022 শেষ হওয়ার আগে, লক্ষ্য হল 1,00,000 ক্ষুদ্র চা উৎপাদকদের জড়িত করা। এরকম উদ্ভাবন ক্রমশ ছোট চা-উৎপাদক ও কর্মী সংগঠনগুলিকে সবল করবে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক সংস্থা গঠন করতে, ক্রেতা বা মালিকদের সঙ্গে তাদের সমঝোতার আলোচনা উন্নত করবে, অর্জন করবে আর্থিক স্থিরতা, যৌথ লগ্নি করতে পারবে এবং তাদের সামূহিক যৌথতা বৃদ্ধি পাবে।’
সম্মেলনে, সলিড্যারিড্যাড এইসঙ্গে চালু করেছে অন্যান্য উদ্ভাবনী প্রডাক্ট যা বিশেষভাবে চাষিদের জন্য রূপায়িত যেমন সোলিপ্রোব, একটি তাৎক্ষণিক মাটি বিশ্লেষক, সোলিমেট, একটি হাইপার-লোকাল আবহাওয়া স্টেশন, সোলিবট, একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ চ্যাটবট, ও ব্যালোট্রনিক্স, একটি তাৎক্ষণিক টি লিফ রিডার। সলিড্যারিড্যাড ইন্ডিয়া চায় আরও চাষিদের সঙ্গে সংযোগ এবং তাদের গ্রহণযোগ্য চাষি-বান্ধব উদ্ভাবনী সমাধান অফার করতে। এই লক্ষ্য উপলব্ধি করতে, এটি ইন্টিগ্রেটিং মেকানিক্যাল, টেলিকমিউনিকেশন, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স সিস্টেমের ইঞ্জিনিয়ারদের একটি উৎসর্গিত দল যার অন্তর্ভুক্ত রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং, শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনের জন্য।
ছোট চা নির্মাতাদের প্রত্যাহ্বান সম্পর্কে আইটিএ চেয়ারপার্সন নয়নতারা পালচৌধুরী বলেন, ‘সমগ্র চা শিল্প প্রভাবিত হয়েছে সেইসব উপাদান দ্বারা যা সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনীতি ও পরিবেশ বিরোধী। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে আবহাওয়া পরিবর্তন, মূল্যের স্ট্যাগনেশন, হাই ইনপুট কস্টের ক্রমবর্ধিত অভিঘাত যা উৎপাদন খরচের বাধাস্বরূপ এবং এর পাশাপাশি চাহিদা ও জোগানের মাঝে ভারসাম্য আনতে দেয় না যার ফল অতিরিক্ত জোগান। উপরন্তু, এই শিল্পকে উচ্চ পরিবহণ খরচ বহন করতে হয় পাশাপাশি সঠিক মূল্য স্থির করতে জটিলতার সৃষ্টি সম্মুখীন হয়। এই সব বাধা সত্ত্বেও, এই শিল্প প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রাষ্ট্রসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল পূরণ করতে। এদিকে, আইটিএ-সলিড্যারিড্যাড পার্টনারশিপ যেভাবে কাজ করে চলেছে এবং চা-শিল্পে সর্বাত্মক উন্নয়ন আনছে যেভাবে, এসটিজি-দের জীবনযাপনে সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।’
সম্মেলনে বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি আইটিএ ও সলিড্যারিড্যাডের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ প্রথম ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্মল টি গ্রোয়ার্স কনভেনশন আয়োজনের জন্য এবং চা উৎপাদনকারী সব দেশের ক্ষুদ্রধারক চা উৎপাদকদের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের কাহিনি বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান এইসঙ্গে দেখেছে টেকনিক্যাল সেশন, যেখানে ছিল প্রেজেন্টেশন ও আলোচনা, যা করেছেন শিল্পের ক্যাপ্টেন ও বিশেষজ্ঞরা, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্মল গ্রোয়ার প্রতিনিধিরা। তাঁরা কথা বলেছেন মূল্য ও জোগান শৃঙ্খলের বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি উদ্ভাবনী ডিজিটাল টুল ডেমনস্ট্রেট করেছেন তাদের সুবিধা দেখাতে। অনুষ্ঠান শেষ হয় একটি অ্যাওয়ার্ড সেরেমনি দিয়ে, যেখানে 15 ক্ষুদ্র উৎপাদককে সংবর্ধনা দেওয়া হয় স্পেশালটি চা উৎপাদনে তাদের অসাধারণ অর্জনের জন্য, এরপর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।