পত্রিকার নাম তিত্কি - কুড়মির কলম, কুড়মির মলম। 'তিত্কি' আদতে একটি লিটল ম্যাগাজিন কিন্তু এর ছোঁয়ায় মাথাচাড়া দেয় দাবানল। জঙ্গলমহলের আদিম কুড়মি জনজাতির যাবতীয় পরব সংস্কৃতি, তাদের অভাব অভিযোগ, হাসি কান্না, হক অধিকারের লড়াই এ…
পত্রিকার নাম তিত্কি - কুড়মির কলম, কুড়মির মলম। 'তিত্কি' আদতে একটি লিটল ম্যাগাজিন কিন্তু এর ছোঁয়ায় মাথাচাড়া দেয় দাবানল। জঙ্গলমহলের আদিম কুড়মি জনজাতির যাবতীয় পরব সংস্কৃতি, তাদের অভাব অভিযোগ, হাসি কান্না, হক অধিকারের লড়াই এবং অস্তিত্বের পরিচয় তুলে ধরার প্রচেষ্টায় এই লিটল ম্যাগাজিনের আত্মপ্রকাশ।
বর্তমান জঙ্গলমহলের উত্তাল সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কুড়মি জনজাতি। কারা এই কুড়মি জনজাতির মানুষ? আজ তারা নিজেদের হক্ বুঝে নিতে কেন নেমেছে রাস্তায়? 'জয় গরাম' ধ্বনিতে ক্ষনে ক্ষনে কেন আজ মুখরিত হচ্ছে জঙ্গলমহলের আকাশ বাতাস? এই প্রশ্নগুলির থেকে আজও অনেকটাই অজানা পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশ। কিন্তু কুড়মি জনজাতি নিয়ে বাজার গরম মিথ আর মিথ্যাচারের অভাব নেই। আদিবাসী জনজাতির অন্যতম প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো লজ্জাবোধ ও অন্তর্মুখী যাপন ধারা। কড়মিরাও তার ব্যতিক্রম নয়। এত কিছুর পরেও তাই, সসম্মানে নিজেদের অস্তিত্বের ঘোষণা করে যাবতীয় অপমান বঞ্চনার ক্ষতে শুশ্রুষার স্পর্শ দিতে কুড়মি যুবাপিড়ি আন্দোলনের মুষ্টিবদ্ধ হাতে উঁচিয়ে ধরেছে কলম। স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশক পরেও দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলিত ও উপেক্ষিত জঙ্গলমহলের আদিবাসী জনজাতির বৃহত্তম প্রতিনিধি কুড়মিরা আজ আগদহলি হয়ে কলমের আঁচড়ে ফিরে পেতে চায় তাদের হৃত অধিকার। আজ তাই কুড়মির কলম হয়ে উঠেছে তাদের আঘাতের মলম। এমন এক সময়কে সাক্ষী রেখে ঝাড়গ্রাম থেকে প্রকাশ পেল 'তিত্কি'-র চৈত সংখ্যা।
কুড়মি ও কুড়মালির জন্যে নিবেদিত প্রাণ পত্রিকাটির প্রথম প্রবন্ধটি পাঠকের নজর আটকানোর জন্য যথেষ্ট। লেখাটি অবশ্য কথ্য কুড়মালিতে। এই লেখায় কুড়মিদের একাশি গোষ্ঠীর (Totem) সেই সম্পর্কিত একাশি ট্যাবু (Taboo), গোষ্ঠীতত্ত্ব, টোটেমের জন্ম ও সামাজিক প্রয়োজন নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন ধনপতি মাহাত। তবে পত্রিকার বাকি প্রবন্ধগুলি অবশ্য বাংলাতেই লেখা।
তিত্কির এই সংখ্যায় রয়েছে--
বাঁদনা পরব ও কুড়মি হিতমিতান (সুসম্পর্কিত) জনগোষ্ঠী, কুড়মি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অকথিত ইতিহাস আলোচনায় রয়েছে চূড়ায় বিদ্রোহের মহান শহীদ রঘুনাথ মাহাত, গান্ধীবাদি স্বাধীনতা সংগ্রামী রামেশ্বর মাহাতর কথা। কুড়মিদের আপন পরব বাঁদনা, গঠপুজা ও গহালপুজা, রহৈন, ভেজাবিঁধা এর বর্ণনা। অরূপ কাটিয়ারের লেখায় জানা যায় কুড়মি জনজাতির বিবাহের যাবতীয় নিজস্ব নেগ-নেগাচার (আচার অনুষ্ঠান) সম্পর্কে। রয়েছে কুড়মি সমাজে মেয়েদের ভূমিকা নিয়ে লেখা। অভিজিৎ কাটিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সি.আর.আই রিপোর্টের সামগ্রিক ধারণা দিতে গিয়ে এক ব্যাঙ্গাত্মক কথোপকথনের মাধ্যমে জটিলতা সরিয়ে সরলতম নান্দনিকতার আলো জ্বলিয়েছেন।তবে কবি ভবতোষ সৎপথীর কথ্য কুড়মালিতে অনূদিত রবী ঠাকুরের "চণ্ডালিকা কাব্য"টি পাঠকদের অভিভূত করবে এবিষয়ে সন্দেহ নেই।
তবে এবারের সংখ্যার প্রচ্ছদ ও অলংকরণ নিয়ে কিছু না বললে অনেকটাই বাকি থেকে যায়। অপূর্ব মাহাতর করা এবারের প্রচ্ছদ ও রাকেশ সিংহ দেবের করা অলংকরণের রসদ সংগৃহীত হয়েছে ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের খোভার ও সঁহরাই চিত্র শিল্পধারার দেওয়াল চিত্র থেকে। এই ছবির ধারাপ্রবাহ প্রাগৈতিহাসিক গুহাবাসী জনজাতির গুহাচিত্রের পর্যায়ক্রমিক ধারাকেই সর্বাংশে দর্শায়, যা আজও নিভৃতে মূলত কুড়মি জনগোষ্ঠীর মানুষ চল্লিশ হাজার বছর ধরে বুকে আগলে রেখেছেন।
'তিত্কি'
কুড়মির কলম-কুড়মির মলম
সম্পাদকঃ গৌতম কাড়োআর
তেহরা খেপ।। চৈত সংখ্যা।।
মূল্য- ১২০/-