Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

স্মৃতিচারণ -- অমৃত মাইতি

স্মৃতিচারণ (১০ ) অমৃত মাইতি#মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল#১৯৬৭ সাল। টগবগ করছে যৌবন। সংগ্রামের ময়দান।রঙিন স্বপ্ন আর বিরামহীন ছুটে চলার আনন্দ। বিরক্তিকর ক্লাসরুম। কেরিয়ারিস্ট হওয়ার জন্য পড়া নয়। যদিও পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা যথেষ্ট অন…

 


স্মৃতিচারণ (১০ ) অমৃত মাইতি

#মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল#

১৯৬৭ সাল। টগবগ করছে যৌবন। সংগ্রামের ময়দান।রঙিন স্বপ্ন আর বিরামহীন ছুটে চলার আনন্দ। বিরক্তিকর ক্লাসরুম। কেরিয়ারিস্ট হওয়ার জন্য পড়া নয়। যদিও পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা যথেষ্ট অনুভব করতাম। পশ্চিমবাংলার যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ভেঙে দেওয়া হলো। উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলা। চলছে মিটিং মিছিল পিকেটিং ধর্মঘট প্রতিবাদ সভা। সর্বত্র থাকতে হবে। কোনরকম দায়সারা অংশগ্রহণ নয়। সর্বত্র সক্রিয় অংশগ্রহণ। সন্ধ্যার সময় সিনেমা হলে পিকেটিং ভাঙচুর করার জন্য পরের দিন অ্যারেস্ট হলাম হেঁড়িয়াতে। ঘটনা ঘটেছিল অবিভক্ত ভবানপুর থানায়। অ্যারেস্ট হলাম খেজুরি থানায়।

তখন জোর কদমে চলছে জেল ভরো আন্দোলন। কোনদিন কৃষক কোনদিন শ্রমিক ছাত্র যুব মহিলা এভাবে এক একদিন এক একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জেল ভরো।আন্দোলন । ছাত্র দিবসে মুগবেড়িয়া কলেজ থেকে আমার নেতৃত্বে জেল ভরো আন্দোলনে ২৮ জন অংশগ্রহণ করল মেদিনীপুর শহরে। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল তখন উপচে পড়ছে। কিন্তু আমরা নাছোড়বান্দা। সাউথ কোর্ট নর্থ কোর্ট কোথাও পুলিশ আমাদের আটক করলো না। চলে এলাম ডি এম  অফিসের সামনে। ভিতরে গিয়ে চেয়ার টেবিল ভাংচুর করেছি। সেদিন প্রশাসনের ইচ্ছা ছিল না অ্যারিস্ট করার। আমরাও খুব মরিয়া। পুলিশের সঙ্গে তখন একরকম খন্ডযুদ্ধ। আমি একটি ইটের টুকরো চুঁড়লাম। লাগলো বড় সাহেবের কপালে বাম পাশের চোখের কাছে। রক্ত ঝরছে।অ্যারিস্ট হলাম সকলে। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে ঠাঁই পেলাম। ভেতরের দুটো বড় বড় রাজনৈতিক বন্দীদের ব্যারাক ভর্তি হয়ে গেছে। আমাদের নেতাদের সঙ্গে দেখা হল। ওরা স্লোগান দিয়ে রিসেপশন করলো আমাদের। সারাদিন হইচই স্লোগান বক্তৃতা ডিবেট এইসব চলতে থাকলো দিন পাঁচেক। ছাড় পাওয়ার খবর এলো। গেলাম জেলগেটে। একে একে সকলের নাম ডাকা হলো শুধু আমাকে বাদ দিয়ে। জেল সুপারকে বললাম আমার নাম নেই কেন। আপনার নাম আছে, কিন্তু ছাড়া বারণ। আপনার নামে ৩০৭ ধারা মামলা রুজু করা হয়েছে । এটেম্পট টু মার্ডার। জেল গেট থেকে ফিরে গেলাম ।মনটা খারাপ হলো। সবাই চলে গেল একাকী থাকতে হবে কতদিন কে জানে! আমাকে রাখা হলো একটি সেলের মধ্যে। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে ঢোকার পরে ডানদিকে একটি প্রোটেক্টেড আলাদাভাবে ঘেরা বিল্ডিং আছে। তার নাম ৩২ নম্বর ডিগ্রী সেল। নীচে ১৬টি ঘর উপরে ষোলটি। এগুলো এক একটি সেল। আমাকে রাখা হল একেবারে ৩২ নম্বর সেলে। বাইরের দিক থেকে চাবি লাগানো থাকতো সন্ধ্যা ছটা থেকে সকাল ছটা পর্যন্ত। তারপর চাবি খোলা হত। বারান্দাও প্রটেক্টেড। বারান্দার বাম পাশে নিচে নামার জন্য আবার একটি লোহার গেট। নেমে গিয়ে চান বাথরুম সারতাম। সে অংশটিও আলাদাভাবে ঘেরা। থাকলাম বেশ কয়েকদিন।

আমার সেলের গরাদের বাইরে রাত্রে একজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি থাকতো। সেলের মধ্যে একটি মাটির কুঁজোতে জল আর একটি গ্লাস। এক কোণে ছোট্ট একটি সিমেন্ট ঘেরা গর্ত। রাত্রির প্রয়োজন মিটানোর জন্য। কয়েকদিন পরে আমাকে ডাকা হল টি আই প্যারেডের জন্য। Test Identification Parade. সাহস দেখাচ্ছি বাইরে। ভেতরে  ভয়। কয়েকশো কয়েদির সঙ্গে আমাকে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটার পর একটা লাইন একের পর এক মুখ দেখার কাজ চলছে

 যে অফিসারটিকে আমি মেরেছিলাম তিনি এগোচ্ছেন আমার দিকে। তার চোখ মুখ দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে চিনতে পেরেছেন। কিন্তু উনি এইটুকু বয়সের এক ছাত্রকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখলেন। আমাকে আইডেন্টিফাই করলেন না। অনেকগুলো অফিসার ছিল। ছাড় পেলাম কয়েকদিন পরে। তারপর সিপিএম পার্টি অফিসে এলাম । আন্দামান জেল ফেরত বিপ্লবী কমরেড সুকুমার সেনগুপ্ত তখন অবিভক্ত মেদিনীপুরের সম্পাদক। সবকিছু শোনার পরে পিঠে হাত চাপড়িয়ে বললেন সাবাস। পরের দিন বাড়ি ফিরলাম । মা বাবা আগেই খবর পেয়েছিলেন। দুজনেই খুশি। এক মাস পরে দেখা হলো তো। আমার যা পাওনা মায়ের কাছ থেকে তিনি চুকিয়ে দিলেন গালে চুমু খেয়ে। বাবার বন্ধুরা এলেন দেখা করতে। পরে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল আবার গিয়েছিলাম গণআন্দোলনের কারণে। কাঁথি সাব জেলেও আমি ছিলাম দুদিন। বামপন্থী নেতাকর্মীরা একসঙ্গে ছিলাম।

    পরবর্তীকালে টানা ১৮ বছর আমি মেদনীপুর সেন্ট্রাল জেলের ভিজিটার ছিলাম। ১৯৬৬ সালে সিপিআইএমের পার্টি সভ্য আর ৬৭ তে এই আন্দোলন আমার জীবনের নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণযোগ্য ঘটনা। এখন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলের নাম মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার।


স্মৃতিচারণ ( ১১ ) অমৃত মাইতি

#মায়ের স্মৃতি#

আমার মা আমাকে ছেড়ে গেছেন ৪৩ বছর। আমার পক্ষে কতটা বেদনাদায়ক কাউকে বোঝাতে পারবো না। ৪৩ বছর আমার মুখ থেকে মা ডাক বের হয়নি।

আমি মাকে ডাকতে পারি না। কিন্তু মা আমাকে ডাকে।

"-------------

আমার মা আমায় ডেকেছে-

আয় বাছা আয়, আমার কোলে আয়

ওখানে সব থাক,

আয় বাছা আয় ,আমার কোলে আয়

বউ থাক বাচ্চা থাক

গর্ত থাক সাপ থাক

ভূগোল থাক জনতা থাক

থাক সব পড়ে থাক

আয় বাছা আয়,আমার কোলে আয়

খরা থাক বন্যা থাক

সব পড়ে থাক-

তুই আমার কোলে আয়

আয় বাছা আয়,আমার কোলে আয়।

আমার সব আছে। সাহিত্য রাজনীতি সমাজ সংসার সব মিলিয়ে অজস্র লোক শত্রু মিত্র সবই আছে আমার। তবু যেন কে নাই কি নাই ।এক শূন্যতা।

তবু এই শূন্যতা এক একদিন আমার হৃদমাঝারে পূর্ণ হয়ে ওঠে ।স্মৃতি ফিরিয়ে দেয় আমাকে সবকিছু। সব মায়েরাই ছেলেকে কোলে তুলে নেয় । কোলে তুলে নিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দেয় আদর করে। কিন্তু মাকে কোলে তুলে নেওয়া এক সৌভাগ্য। মায়ের ক্যান্সার। মা অসুস্থতার কথা চেপে রাখে ।একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী রাজনীতিবিদ সামাজিক নানান গুণের সমাহারের মানুষ আমার বাবা। এই ব্যস্ত মানুষটিকে মা বিব্রত করে নি। যখন জানলাম তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে। তমলুকে ভালো ক্যান্সারের ডাক্তার আছে। আমার বাড়ি থেকে ছয় কিলোমিটার হাঁটাপথ। তারপর বাস ।তখন নরঘাটে মাতঙ্গিনী সেতু হয়নি। নরঘাটে বিরাট চওড়া নদী। ভাঁটার সময় চড়া পড়ে গেলে মাঝে, দুই দিকে নৌকো থাকে। একটা নৌকো থেকে আরেকটা নৌকায় নদীর মাঝে হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। মাকে নিয়ে যাব কি করে!

নৌকো থেকে মাতো নামতেই পারবে না।বাবা বললেন কি করবি? আমি মাকে তুলে নিলাম আমার কোলে। মাঝখানের চড়া জায়গাটা মাকে কোলে নিয়ে হাঁটছি। যেন গোটা পৃথিবী আমার কোলে ধরা দিয়েছে ।কি আনন্দ কি তৃপ্তি। বুকটা ভরে গেছে আমার। কোন ব্যথা নেই বেদনা নেই শুধু সুখ আর সুখের খনি। মায়ের জন্য এটুকুই করা। মা তার বাম হাত আমার গলায় জড়িয়েছেন পরম নির্ভরতায়। ফিসফিস করে বললেন যা তোর তো দুটি ছেলে, মেয়ে নেই ।মেয়ে হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলাম আজকে। মেয়ে না থাকলে বাপের দরদ কেউ বোঝেনা। ডাক্তারবাবু আমাকে আলাদা ভাবে ডেকে বললেন লাস্ট স্টেজ। অনেকদিন হয়ে গেছে। ফেরার সময় নদীতে জোয়ার। তারপর নদী পেরিয়ে বাস ধরে গড়গ্রাম। সেখান থেকে একটি পালকিতে করে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এখন মা সত্যি আমাকে ডাকে আয় বাছা আয় আমার কোলে আয় ।ওখানে থাক সব পড়ে থাক।

মাকে বিয়েতে তার বাবা একটি হিজ মাস্টার্স ভয়েসের গ্রামোফোন দিয়েছিলেন। মা খুব গানের ভক্ত ছিলেন। গুনগুন করে গান গাইতেন মুকুন্দ দাসের। একেবারে শৈশবে ভোররাতে যখন ঘুমিয়ে থাকতাম তখন মাকে দেখেছি পেতল কাঁসা

মাজছেন। তারপর পুকুর ঘাট থেকে ধুয়ে এনে বলেছেন দেখ কেমন চকচকে হয়ে গেছে। আমি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলাম না। কিন্তু কখন অজান্তে মায়ের বাসন মাজার কথা অন্তরে থেকে গেছে। যা পরবর্তীকালে আমাকে অনেক হাঁটতে শিখিয়েছে।

ঘসামাজা করলে চকচকে হয়। আজও মনে করি জীবনটাকে একটু ঘষামাজা করলে, সময় দিলে চকচকে করা যায়।

হ্যাঁ মা আমারও তোমার কাছে যাওয়ার সময় হলো এবার। জীবনে হয়তো কিছু করেছি কিন্তু রক্তক্ষরণ আর যন্ত্রণা অনেক অনেক গুণ বেশি পেয়েছি। এখন শুধু তোমার কাছে যাওয়ার অপেক্ষা। আজও ভাবি আর স্মৃতিচারণ করি ।কিছু সময়ের জন্য হলেও একটা পৃথিবীকে দুহাতে আগলে ধরতে পেরেছিলাম।


স্মৃতিচারণ (১২) অমৃত মাইতি

#আমি বাবা ও 'প্রবাসী' পত্রিকা#

আমি তখন ক্লাস সিক্সে কি সেভেনে পড়ি। বাবা "প্রবাসী" পত্রিকা পড়তেন। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত সচিত্র মাসিক পত্রিকা "প্রবাসী"। সাদা সবুজের প্রচ্ছদ। প্রথম সংখ্যা ১৩০৮ বঙ্গাব্দ (এপ্রিল ১৯০১)। সূচনা সংখ্যাটি এলাহাবাদের ইন্ডিয়ান প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়েছিল। বার্ষিক গ্রাহক মূল্য ছিল আড়াই টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৪০। প্রথম সংখ্যার লেখক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় কমলাকান্ত শর্মা দেবেন্দ্রনাথ সেন নিত্যগোপাল মুখোপাধ্যায় এবং যোগেশচন্দ্র রায়। পত্রিকাটির অস্তিত্ব ছিল পঞ্চাশ বছর। আমি পত্রিকাটির দিকে তাকিয়ে আছি দেখে বাবা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন পড়ো। তখন পত্রিকাটি পুরনো হয়ে গেছে। "প্রবাসী"পত্রিকায় বাউল কবি গগন হরকরার বিখ্যাত গান ছাপা হয়েছিল। তাঁর ভালো নাম গগনচন্দ্র দাম। তিনি ডাক হরকোরার কাজ করতেন ।কুষ্টিয়াতে জন্মেছিলেন তিনি। সময় পেলেই লালনের কাছে চলে যেতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর খুব সখ্যতা ছিল। গগন হরকরার গান "আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে__"। গগন হরকরার গানে উদ্বুদ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখলেন "ও আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি"। এই পত্রিকাটি বাবা আমার হাতে দিয়ে প্রকৃতপক্ষে আমার মধ্যে সাহিত্যের বীজ বপন করে দিয়েছিলেন। কখনো কখনো কয়েকটি সংখ্যা একসঙ্গে জোড় করা থাকতো। আমি নেশাগ্রস্ত হয়ে গেলাম পত্রিকা পড়ার জন্য। গল্প পড়তে পড়তে গল্পের ছলে কথা বলা রপ্ত হয়ে গেল আমার। ছাত্র রাজনীতি করার সময় সহজ ভাবে গল্পের মত করে দর্শন আলোচনা করতে পারতাম। রাজনৈতিক কারণে লেখালেখি বা সাহিত্য চর্চা করতে আমার সময় অনেক লেগে গেছে। কিন্তু সেই শৈশবেই সাহিত্যের ভিত তৈরি হয়েছিল আমার মধ্যে।

একদিন খবর পেলাম পাশের গ্রাম হানুভূঁইয়াতে মিটিং হবে । ওই গ্রামে ধেনো জমিদারের সংখ্যা বেশি।গীতা মুখার্জি বক্তা। বাবা বেরিয়ে গেলে পিছনে পিছনে দূরত্ব বজায় রেখে আমিও হাঁটা দিলাম। দূরে দাঁড়িয়ে গাছের আড়াল থেকে গীতা মুখার্জির গরম গরম বক্তৃতা শুনছিলাম। বাবা সভাপতি। বক্তৃতা শুনে গরম হয়ে যাচ্ছিলাম। কৃষকের উপর নিপীড়ন অত্যাচারের কাহিনী শুনে প্রতিবাদী হলাম। তেভাগা আন্দোলন, ৪২ শের আগস্ট বিপ্লব এসব করেছেন বাবা। ইংরেজ বাড়ি রেড করেছিল। আমার কাছে বাবা খুব ওজনদার মানুষ ছিলেন। বাবা পাশে বসতে বললেও আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। বাবার সঙ্গে কথা বলতাম খুব বেশি হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। বাবা সংস্কার বিরোধী মানুষ ছিলেন। প্রয়াত হয়েছেন ২০১০ সালে, ৯৬ বছর বয়সে।২০০০ সাল থেকে জীবনানন্দ উৎসব ও মেলা করেছিলাম পরপর কয়েক বছর। দেশ-বিদেশের বহু মানুষজন এসেছিলেন এই প্রত্যন্ত গ্রামে। বাবা খুব খুশি হলেন।২০০৩ সালে বাংলাদেশ গেলাম। আমন্ত্রণ চিঠি দেখে বাবার সে কি আনন্দ।বললেন তুই কষ্ট করে নিজেই দাঁড়াতে পেরেছিস আমি তোর জন্য কিছু করিনি। বললাম ,বাবা তুমি একথা বলছো কেন ?আমি তো সবটাই তোমার কাছ থেকেই নিয়েছি। নিজে জানতে হয়। বাবা বললেন ,ঠিক বলেছিস।

  বাবা সময় পেলে আমাকে নিয়ে মাঠের দিকে যেতেন। বলতেন একটু লাঙল ধর চাষার ছেলে।ধানের চারা উপড়ানো রোপন করা শিখে নে। এভাবেই আমি শ্রমিক কৃষক খেতমজুরদের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলাম। বাড়িতে সুতো কাটার চরকা ছিল। আমি শিখেছিলাম। চরকায় সুতা কাটতে বেশ মজা লাগতো।

বাবা আমাকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড় করিয়েছিলেন। আজীবন সেই মেহনতী মানুষের সঙ্গে থাকার বীজ বাবাই প্রথিত করেছিলেন।

(চলবে)...