Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

স্মৃতিচারণ - অমৃত মাইতি

স্মৃতিচারণ (৪)অমৃত মাইতি  #উল্লেখযোগ্য বিপদের ঝুঁকি#পাহাড়ে উঠার সামান্য কিছু অভিজ্ঞতা আমার আছে। সেই অভিজ্ঞতায় ঝুঁকি আছে রোমাঞ্চ আছে। কিন্তু পাহাড়ে উঠার কোন বাধ্যবাধকতা নাই ।খেয়ালী এবং আবেগি মন চেয়েছিল একটু পাহাড়ে উঠি। স্মৃত…

 


স্মৃতিচারণ (৪)অমৃত মাইতি

  #উল্লেখযোগ্য বিপদের ঝুঁকি#

পাহাড়ে উঠার সামান্য কিছু অভিজ্ঞতা আমার আছে। সেই অভিজ্ঞতায় ঝুঁকি আছে রোমাঞ্চ আছে। কিন্তু পাহাড়ে উঠার কোন বাধ্যবাধকতা নাই ।

খেয়ালী এবং আবেগি মন চেয়েছিল একটু পাহাড়ে উঠি। স্মৃতির ঝাঁপিতে কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হবে এই ভেবে ভ্রমন করতে গিয়ে পাহাড়ে উঠেছি ।খুব বেশি ঝুঁকি নিই নি পড়ে যাওয়ার ভয়ে । যখনই বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তখনই নেমে এসেছি ধীরে ধীরে। পাহাড়ে ওঠার আগে মানসিক প্রস্তুতি এবং সিদ্ধান্ত মন নিয়ে থাকে। সাহস তো থাকতেই হবে।আমি কিন্তু এখানে উল্লেখ করব এমন কয়েকবার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি ,তার মধ্যে অন্তত দুটি একটি উল্লেখ করতে পারি। বিপদের মুখোমুখি নয় একটা বিপদের জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ঢুকে পড়া। এমন ঘটনার উল্লেখ করব। আশির দশকের প্রথমের দিকে আমি যে অঞ্চলে বাস করি এই অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে

খেজুরি থানা। ঘটনাটি ঘটেছিল নন্দীগ্রাম ও খেজুর থানার সীমানায়। বর্গা চাষীদের সঙ্গে জমির মালিকদের বিরোধ। অধিকার রক্ষার সংগ্রাম। সেই সংগ্রাম লাঠি ভোজালি কাটারি ইয়া বড় তরবারি নিয়ে। আমারই হাতে গড়া ক্ষেতমজুর কৃষক আন্দোলনের মাটি। উভয় পক্ষের হাতে বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র। গ্রামের নাম দক্ষিণ বিরুলিয়া(নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লক)। তখন প্রায় বেলা বারোটা। লোক মুখে রটে গেছে উভয় পক্ষের 

জমায়েত এবং সাজসাজ রব। খবর পেয়ে ছুটে গেছি আমি সেখানে। একা ছুটে গেছি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল একবার পৌঁছে যেতে পারলে বিপদটা নাও হতে পারে। যদি উভয়পক্ষকে নিরস্ত্র করা যায়, সেই আশায় ছুটে গেছি। একটুও কালোক্ষেপ করিনি। যদি দেরি হয়ে যায় যদি কিছু ঘটনা ঘটে যায় ,তাই মাঠে মাঠে ছুটে গেছি সেখানে। উভয়পক্ষ একের মুখোমুখি। চাষী মজুরদের একেবারে সামনে অনন্ত দাস নামে একজন রোগা পাতলা লম্বা কৃষক। তার হাতে এক উন্মুক্ত তরবারি। তার সম্মুখে প্রতিপক্ষ সত্যরঞ্জন পাল এবং পুলিন বিহারী মান্না। অনন্ত যখন বিরাট এক তরবারি নিয়ে লাফিয়ে উঠছে আমি সেই মুহূর্তে ঢুকে পড়লাম উভয় পক্ষের মাঝে। আমাকে দেখে অনন্ত থমকে গেল। প্রচন্ড আঘাত করার জন্য সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়ে মনে শক্তি সঞ্চয় করে সে লাফিয়ে উঠেছিল। তার সেই ক্রোধ কার্যকরী হলো না। আমাকে দেখে থমকে গেল। আমি নিজেই তখন বিপন্ন। কারণ অনন্তের ক্রোধের আগুনে আমিও বলি হতে পারি।।অনন্ত উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে পড়ে গেল। এবং মূর্ছা গেল। উভয়পক্ষ তখন স্তব্ধ হয়ে গেছে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি। পরে অনেকেই বললেন এই দুঃসাহসিকতা দেখানোর আপনার কোন প্রয়োজন ছিল না। আসলে জীবনের শুরু থেকেই তো মানুষ মানুষ আর মানুষ নিয়ে কারবার। প্রতিপক্ষ সত্যরঞ্জন দাস একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং হোমিওপ্যাথী ডাক্তার। আমি বললাম সত্য বাবু দেখুন আপনার পেশেন্টকে এখন। ওই এলাকায় আমার কিছুটা প্রভাব ছিল। সবাইকে সরিয়ে দিলাম সেই মুহূর্তে। পুলিনবিহারী মান্না তিনিও একটি স্কুলের শিক্ষক জমির মালিক। পরবর্তীকালে যতবার দেখা হয়েছে প্রত্যেকবারই বলেছেন ,সেদিন সত্যিই আপনি দেবদূতের ভূমিকায় ছিলেন। আপনি না এলে রক্ত গঙ্গা বয়ে যেত। মাঝে মাঝে এই স্মৃতি যখন ভেসে ওঠে তখন নিজেকেই ধন্যবাদ দিই। বিরুলিয়াতে তখন কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে হরিপদ বারিক ও নিতাই সামন্ত। নিতাই খুব গালাগালি করল আমাকে। আপনি না এলে লড়াইটা জিততে পারতম।খালি হাতে একজন একক ব্যক্তি অন্তত একটা দাঙ্গা বন্ধ করতে পেরেছিলাম। সেদিন নিজেকে সার্থক মনে হয়েছিল।

আর একটি ঘটনা হলো মুগবেড়িয়া ব্লকে জুখিয়া হরিজন পল্লীতে। হরিজনপল্লিকে ঘিরে ফেলেছে বহু মানুষ সশস্ত্রভাবে। হরিজন পল্লীতে তখন ওই এলাকার কৃষক আন্দোলনের নেতা অশ্বিনী জানা নেতৃত্ব দিচ্ছিল। আমি তখন বাজকুলে একটি মিটিং এ ছিলাম। হরিজন পল্লীতে চারদিক থেকে যখন ঘিরে ফেলেছে এবং ঘরবাড়ি ভাঙচুর ,তাদের বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর হচ্ছে ,খবর পেয়ে ছুটে গেলাম সেখানে। অশ্বিনীর আক্রান্ত হওয়ার খবর ছিল।অশ্বিনী প্রাণভয়ে দূরে চলে গেছে। হরিজন পল্লীতে তখন ক্রন্দন রোল। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে একজন। যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছিল আমাকে দেখে তারা ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেল। তারপর একটি সাইকেল ভ্যানে কোন রকমে রক্তাক্ত নিখিল ঘোড়ইকে তুলে দিলাম। ডাক্তারখানায় নিয়ে যাওয়া হল। পুলিশ ছিল নির্বাক দর্শক। বচসা হল আমার সঙ্গে পুলিশের। তবে যারা আক্রান্ত হলো তারাই পুলিশ কিসের আসামি হল।

এমন অনেক ঝুঁকি নিয়েছি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

 



স্মৃতিচারণ (৫)অমৃত মাইতি

#অন্ধকার রাতের অদ্ভুত রোমান্টিক কাহিনী# আমি খুব ছোটবেলায় দেখেছি অন্ধকার পক্ষ হলেই মানুষের মধ্যে এক আতঙ্ক ভয় প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে দেখা যেত। চুরি ডাকাতির ভয়। কেরোসিনের ল্যাম্প আর দু একটি বাড়িতে হারিকেন জ্বলতো। রাত্রি ন'টার পরে গোটা গ্রাম নিস্তব্ধ অন্ধকার। রাত্রি ঠিক রাত্রির মত। এখন গ্রাম গুলোতে রাত্রি নেই দিনের আলোর মতো ঝলমল। ছেলেবেলার রাত্রির সৌন্দর্য এখন চোখের সামনে ভেসে উঠলে বড় কষ্ট হয়। আগে দূরের গ্রামে বা কোন পাড়ায় একটি টর্চের আলো দেখলে মনে হত এক জাগরণ। সাময়িক সেই টর্চের আলো আবার মিলিয়ে যেত। গ্রাম পাহারা দিতাম আমরা বড়দের সঙ্গে। এখন চারিদিকে রাস্তার দুপাশে ঘরবাড়ি হয়ে গেছে। আগে মাইলের পর মাইল গেলে হয়তো একটা ঘর বা পাড়া দেখা যেত। কোন বাড়িতে ডাকাত পড়লে অথবা একটু চিৎকার শুনতে পেলেই চারিদিক থেকে বল্লম আর টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়তো সকলে। চোর চোর ডাকাত ডাকাত ওই দিকে পালিয়ে গেল এভাবেই চিৎকার করতাম আমরা। অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ মনে খেলা করত। তারপর বিভিন্ন পড়া থেকে এগিয়ে আসতে লোকেরা।কোন একটি জায়গাতে সকলের দেখা হতো ।নানান গল্পগুজব করে রাত কাটিয়ে চলে যেত সকলে।যে রাত্রিগুলোতে চিৎকার হতো না সেই রাত্রিগুলোতে মন খারাপ করত। জমিয়ে জমিয়ে পরের দিন স্কুলে যাওয়ার সময় বন্ধুরা নানান ধরনের গল্প আর রোমান্টিকতায় মজে যেতাম। গবেষণা করতাম ডাকাতরা কোন রাস্তা দিয়ে আসে কোন রাস্তায় বেরিয়ে যায়।

    ৬০ এর দশকের শেষের দিকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষক সভার বৈঠক করতাম। কৃষকদের সংঘটিত করতাম। খেতমজুরের মজুরির বৃদ্ধি আন্দোলন। বর্গা চাষীর অধিকার রক্ষার সংগ্রাম এসব নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো আমাদের কঠিন রাজনৈতিক কর্মসূচি। গরিব মানুষের মধ্যে শ্রেণী চেতনা ক্রমশ বাড়ছে। লাল ঝান্ডা গরীবের বন্ধু এটুকু মানুষ বুঝতে শিখেছে। যারা পেটের দায়ে চুরি ডাকাতি করত তারাও উপলব্ধি করতে পেরেছিল তাদের দারিদ্র্যের জন্য বড়লোক দায়ী। চুরি ডাকাতির সাধারণত সঙ্গতি সম্পন্ন বাড়িতেই হত। আমরা যে গরিবের পক্ষে কাজ করি এই উপলব্ধি তাদের মধ্যে ছিল খুবই বদ্ধমূল। অনেক রাতে বাড়ি ফিরতাম আমরা। মিটিং সেরে ফেরার পথে দেখা হতো ওদের সঙ্গে কোন ফাঁকা প্রান্তরে বড় গাছের তলায় বা দিঘির পাড়ে। সাধারণ গ্রামবাসী ফাঁকা জায়গা দিয়ে সাধারণত চলাফেরা করতো না ভয়ে। দু তিনটি ঘটনা উল্লেখ করলে পাঠক বন্ধুদের ভালো লাগবে। একদিন এক বড় পুকুর পাড়ে প্রকাণ্ড এক খিরিশ গাছ আর ভাঙ্গা পাকার ঘাটে কয়েকজন বসে আছে। আমরা জানতাম ওদের এটাই পরিকল্পনার জায়গা। কৃষক আন্দোলন করা মানুষ আমরা ।চিনবে না কেন! ওরা বলতো তোমরা দেখছি আমাদের পেটের ভাত মেরে দিবে। সিগারেট যদি থাকে দাও নাহলে নিয়ে যাও ।

পুকুরটা নাম ছিল খানসামা পুকুর। তারপর চলে এলাম বাড়ি পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে। আরেকদিন রাত্রি নটার সময় আমি আমার শিবরামপুর বাজার থেকে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলাম আমদাবাদ। ওখানে স্কুলে কাজ করতো আমার স্ত্রী। থাকতো ঘর ভাড়া নিয়ে। আমি ওখানেই যাচ্ছিলাম। একটি পাড়া থেকে বেরিয়ে দীর্ঘ একটি মাঠ বরাবর রাস্তা। আমাকে যেতে হবে ওই রাস্তা দিয়ে। পাড়া থেকে বেরিয়ে গেছি ।বাম হাতে একটি খাল পাড়ে শ্মশান। খুব ধীরে ধীরে ফিসফিস শব্দ। ভাবলাম পিছিয়ে যাব নাকি এগোবো। না অতটা সময় ওরা দিল না। বললে কে যায়? আমি আমার নাম বললাম। নাম তো চিনবেই। বললে এত রাতে কেন ?জান চলে যান। বললাম রাত তো বেশি হয়নি। ওরা অসন্তুষ্ট হয়ে বললে কথা বাড়াবেন না চলে জান তো।আর একটি সুন্দর কাহিনী না বলে পারছি না। আমাদের ব্লক এলাকার প্রাণকেন্দ্র রেয়াপাড়া। রিয়াপাড়া ঘাটের কাছে অমূল্য মন্ডলের বাড়ি। রোগা লিকলিকে লম্বা চেহারা। ভীষণ সাহসী দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বহু ইনফরমেশন সেই দিত। তার পেট চলতে চুরি ডাকাতি করে। আমার বাবাকে সে দাদা বলতো। আমাকে বলতো কাকা। আমাকে বাড়ি ফিরতে হতো ফাঁকা ক্যানেল পাড় দিয়ে তিন কিলোমিটার। আমাকে বললে কাকা খবর কি? কেমন আছো? দাদা কেমন আছে? বাড়ি যাবে নাকি? পকেটে টাকা আছে? দুটো টাকা। আমি বললাম আছে। দিয়ে দিলাম অমূল্য মন্ডলকে। বললে যাও চিন্তা করো না। আমি সঙ্গে আছি। এগিয়ে দিতে হবে নাকি? আমি বললাম ,কাকা তুমি যখন আছো তখন এ তল্লাটে আমার কাছে কেউ আসবে না। ঠিক আছে যাও ।আমি ঠিক তোমার সঙ্গে আছি। আমি দু কিলোমিটার হাঁটার পরে দেখলাম আমার পথের উপর পড়ে আছে ভাঙ্গা বট গাছের ডাল। বুঝতে পারলাম কখন ক্যানেল পেরিয়ে পশ্চিম পাশে বটগাছটা থেকে একটি ডাল ছিড়ে কখন পেরিয়েছে ,আমার পথে ফেলে দিয়ে চলে গেছে। পরের দিন বললে কি কাকা ছিলাম তো সঙ্গে?

আমরা গরীব লোক লাল ঝাণ্ডা ভালোবাসি।



স্মৃতিচারণ (৬)অমৃত মাইতি

#প্রয়াত বিপ্লবী মাখন পালের চিঠি#

কমরেড মাখনদা আমাকে তিনটি চিঠি দিয়েছিলেন পোস্টকার্ড এ। একটি চিঠি ও সুখ স্মৃতি উল্লেখ করব এখানে। চিঠিটি লিখেছিলেন ৪/৬/৯৭ তারিখে। পার্টি কমরেডদের সহজভাবে সহজ ভাষায় বোঝানোর জন্য তিনি একটি বই লিখেছিলেন "ত্রয়ী"। আমি তখন অখন্ড মেদিনীপুরের আর এস পির জেলা সম্পাদক। চিঠিটিতে তিনি উল্লেখ করেছেন বইটি আড়াইশো কপি তোমরা নিয়েছো। আরো অন্তত ৫০০ কপি নেওয়ার দরকার। ১৯৮৩ সালে তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ। এবং সেই বছরই ডিসেম্বর মাসে কেরালার কুইলন শহরে দ্বাদশ সর্বভারতীয় সম্মেলনে আমি প্রতিনিধি নির্বাচিত হই। মেদিনীপুর জেলা নিয়ে দলে একটা কৌতুহল ছিল। কারণ বহু বিপ্লবীর জন্ম হয়েছে এখানে এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইতে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে মেদিনীপুরের। তাই মেদনীপুরের মাটিতে আর এস পি গড়ে তোলার আগ্রহ ছিল পার্টিতে। আমাকে দল ব্যবহার করুক বা আমি ব্যবহৃত হই সবটাই কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত। আমার আবেগ আর আগ্রহ না থাকলে দল আমাকে নিবিড়ভাবে কাছে টেনে নিত না। কমরেড নিখিল দাস ছিলেন এমন একজন নেতা যাঁর চোখ এড়িয়ে যাওয়া খুবই মুশকিল। কুইলনে তিনি আমাকে ত্রিদিব চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ করে দিয়েছিলেন। আমি ত্রিদিব চৌধুরীর নজরে পড়লাম। বাঁকুড়ার ছাতনাতে সংযুক্ত কিষান সভার রাজ্য সম্মেলনে আমার সাংগঠনিক আলোচনা ত্রিদিব চৌধুরী মঞ্চে বসে শুনছিলেন। আমাকে ডেকে কথা বললেন। মনে হল কি সৌভাগ্য আমার। ছাতনা সম্মেলনের পরে আমি সংযুক্ত কিষান সভার রাজ্য কমিটির সদস্য হলাম। তার আগে আমাদের জেলা থেকে কাউন্সিল সদস্য ছিলেন দুইজন। আমি প্রথম মেদিনীপুর থেকে সংযুক্ত কিষান সভার রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছিলাম। আমার তখন পেছনের দিকে তাকানোর বা এদিক ওদিক নজর দেওয়ার সময় ছিল না ।জেদ আর আবেগ নিয়ে দৌড়েছি সর্বত্র। জেলায় আমার মাথার উপরে কোন দাদা ছিল না ।আবার পরামর্শ করার মতো তেমন কেউ ছিল না। ১৯৬৬ সালে সিপিআইএমের সদস্যপদ গ্রহণের পর থেকে যেটুকু জ্ঞান অভিজ্ঞতা শিক্ষা দীক্ষা অর্জন করেছিলাম তাই দিয়ে চলেছি তখন মেদিনীপুরের সর্বত্র। বলতে দ্বিধা নাই সেলুলার জেল ফেরত কমরেড সুকুমার সেনগুপ্তের প্রভাব ছিল আমার উপর। আর এস পিতে আমার পার্টি মেম্বারশিপ স্কুটিনি করেছিলেন কমরেড ননী ভট্টাচার্য। তিনি আমাকে খুশি হয়ে সাধারণ সদস্য পদের সুপারিশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি দলের কাছে সুপারিশ করেছিলেন মেদিনীপুরের দায়িত্ব দেওয়া হোক অমৃত মাইতিকে।



    একদিন ক্রান্তি প্রেসে মাখন পাল খবর পাঠালেন দেখা করার জন্য। নন্দীগ্রাম থেকে ক্রান্তি প্রেসে যেতে সময় লাগে। বাড়ি থেকে হাঁটা পথ তারপর অনেকগুলো গাড়ি মেচেদা থেকে ট্রেন। তারপর রিপন  স্ট্রিট। দুপুর গড়িয়ে গেছে আমার  যেতে। মাখন দা ঘুমিয়ে গেছেন। বসে বসে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছেন আরএসপির সর্বভারতীয় সম্পাদক কমরেড ত্রিদিব চৌধুরী । ত্রিদিব চৌধুরী  অর্থাৎ ঢাকু দা।তিনি বসতে বললেন। বললেন মাখন বাবু তো ঘুমিয়ে গেছেন ওষুধপত্র খেয়ে। আপনি তো মেদিনীপুর থেকে এসেছেন অনেক পথ। আবার ফিরতেও হবে। আস্তে আস্তে ডাকলেন, মাখনবাবু মেদিনীপুর থেকে অমৃত মাইতি এসেছেন। আপনি ডেকেছিলেন। মাখন দা উঠলেন আমার সঙ্গে সাংগঠনিক কিছু পরামর্শ করলেন উৎসাহ দিলেন। সবকিছুই গড়ে তুলতে হবে। তোমার অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি। অতবড় জেলাতে ঘোরাঘুরি করার মত আমাদের কোন ফান্ড নেই। রাজ্য দপ্তর থেকে প্রতিমাসে তোমাকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করতে পারি।  বললাম ,আমি শিখেছি একেবারে ব্রাঞ্চ স্তর থেকে উপরের কমিটিতে লেভি ফান্ড দিতে হয় ।উপর থেকে নেওয়ার কথা শুনিনি কখনো। আমি জানি যে যেখানে কাজ করে তাকে সেখানেই মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হয় নিবিড় সম্পর্কের ভিত্তিতে। মাখন দা আমি নিতে পারবো না রাজ্য দপ্তর থেকে কোন সাহায্য। শূন্য থেকে শুরু করা একটা আনন্দ আছে। মাখনদা খুব খুশি হলেন।

(চলবে).....