Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

প্রয়াত মেদিনীপুরের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী, শিক্ষক প্রলয় বিশ্বাস

নিজস্ব সংবাদদাতা মেদিনীপুর
...প্রয়াত হলেন মেদিনীপুর বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী,গীতিকার, সুরকার, শিক্ষক প্রলয় বিশ্বাস। বুধবার রাতেও আর পাঁচটা দিনের মতো মেদিনীপুর শহরের গান্ধী মোড়ে  শম্ভু দা'র চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে এসেছিলেন। র…

 নিজস্ব সংবাদদাতা মেদিনীপুর


...প্রয়াত হলেন মেদিনীপুর বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী,গীতিকার, সুরকার, শিক্ষক প্রলয় বিশ্বাস। বুধবার রাতেও আর পাঁচটা দিনের মতো মেদিনীপুর শহরের গান্ধী মোড়ে  শম্ভু দা'র চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে এসেছিলেন। রাত্রি সাড়ে ন'টা নাগাদ শরীর একটু খারাপ লাগায় সুভাষনগরের বাড়িতে ফিরে আসেন।বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই বিপত্তি! হঠাৎই বমি ও  সেরিব্রাল অ্যাটাকে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। 

পরিবার পরিজনেরা ও বন্ধুবান্ধবা তাঁকে দ্রুত মেদিনীপুরের রবীন্দ্র নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন । সেইমতো আই সি ইউ অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে রাত সাড়ে তিনটা নাগাদ উলুবেড়িয়ার কাছাকাছি এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রলয় বাবু।তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব লড়াই  শেষ হয়ে যায়। মাত্র ৫৫-তেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তথা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক  প্রলয় বিশ্বাস। শুধু শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার হিসেবেও শহর ও শহরের বাইরে যথেষ্ট পরিচিতি ছিল তাঁর।

 বৃহস্পতিবার কাকভোরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রলয়বাবুর মৃত্যু সংবাদ  দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই মেদিনীপুর হাসপাতাল চত্বর ও তাঁদের সুভাষ নগরের বাড়িতে ভীড় জমাতে শুরু করে প্রয়লবাবুর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব , সহকর্মী ও গুণমুগ্ধরা।তাঁর অকাল প্রয়াণে একপ্রকার শোকস্তব্ধ হয়ে যান পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে তাঁর গুনমুগ্ধ শ্রোতা, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ছাত্র-ছাত্রীরা।প্রলয়বাবুর অকাল প্রয়াণে মেদিনীপুরের সাংস্কৃতিক জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে। বহু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রলয় বাবুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকজ্ঞাপন করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর বিকেল তাঁর মরদেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের সুভাষ নগরের বাড়িতে সেখানে শ্রদ্ধা জানান অনেকেই।তারপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর কর্মস্থল গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলে। 


সেখানে তাঁর সহকর্মীরা, প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা এবং অভিভাবরা শ্রদ্ধা জানান। তারপর সন্ধ্যায় তাঁর প্রিয় গন্ধীমোড় ছুঁয়ে মরদেহ পৌঁছায় মেদিনীপুর কলেজ প্রাঙ্গণে। সেখানে মেদিনীপুর কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সম্মিলনীর পক্ষ থেকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে অনেকে শ্রদ্ধা জানান।তারপর  রাতে পদ্মাবতী শ্মলান ঘাটে প্রলয় বাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মেদিনীপুর শহরের সুভাষনগর এলাকার বাসিন্দা ইংরেজির শিক্ষক  ও সঙ্গীতশিল্পী প্রলয় বিশ্বাস রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে।

 বড় মেয়ে কলকাতায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে নিয়ে পড়াশোনা করছেন, ছোটো মেয়ে শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী। প্রলয় বাবুর আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের মৌপালে। তবে, বহু বছর ধরেই শহর মেদিনীপুরের বাসিন্দা তিনি। পড়াশোনা করেছেন মৌপাল প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেদিনীপুর চার্চ স্কুল,বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ, মেদিনীপুর কলেজ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যাসাগর শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে। গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলে যোগ দেওয়ার আগে পাকুড়িয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। মিষ্ঠভাষী,মিশুকে প্রলয় বাবু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের থিম সঙ রচনা করে সুর দিয়েছেন। প্রলয়বাবুর বেশ কয়েকটি মিউজিক এলবাম রয়েছে। তিনি যে প্রতিষ্ঠান গুলোতে পড়ছেন সেইসব প্রতিন্ঠানের প্রাক্তনী সংগঠন গুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন। এর আগে ২০১৫-'১৬ নাগাদ একবার হার্টের সমস্যা নিয়ে অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি। তবে, কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন।


 তারপর থেকে সুস্থ ও সুন্দর ভাবেই জীবনযাপন করছিলেন কর্মচঞ্চল ও সৃজনশীল এই মানুষটি। যদিও, নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খেতে হত তাঁকে।প্রলয়বাবুর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী, মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূন কুমার পড়িয়া,কুতুরিয়া জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুণাংশু দে'র প্রমুখ জানান, "এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমরা ভাষাহীন! বুধবারও দেখা হল, কথা হল। আর, তার কিছুক্ষণ পরেই সব শেষ! শুধু এটুকুই বলব, আমাদের সকলের প্রিয় এই শিক্ষক ও শিল্পী মানুষটি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। উনার  পরিবারকে সমবেদনা জানাই!"