বিশিষ্ট সাংবাদিক তরুণ চট্ট্যোপাধ্যায় এর স্মৃতিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য -- এই লেখাটি লিখছি যে সময় ,সে সময়ে আমি কলকাতা থেকে দূরে আছি।আর সেখানে বসে খবর নিচ্ছি আমার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারিরীক খোঁজ …
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য |
বিশিষ্ট সাংবাদিক তরুণ চট্ট্যোপাধ্যায় এর স্মৃতিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য --
তরুণ চট্ট্যোপাধ্যায় |
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমার কেউ আপনজন নন।আমার ফুলটাইম সাংবাদিকতা জীবনে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না।মন্ত্রী ছিলেন অবশ্যই। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন যে সময়ে আমি ব্যাঙ্কে চাকরি করছি।
তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি যে জানি তা নয়।তবে জানতাম কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবারের মানুষ তিনি।অতিরিক্ত ধূমপান করতেন।সিওপিডি র জন্য শ্বাসজনিত কষ্ট তাঁর ছিল।আরো কিছু সংবাদ মানুষ টি সম্পর্কিত।দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুব কাছের মানুষ ছিলেন বলে আমার মনে হয়নি।
মানুষ হিসাবে তিনি ছিলেন অমায়িক। বিরোধীদের সু নজরেই দেখতেন।রাজ্যের শিল্প আনয়ন ছিল তাঁর স্বপ্ন। সব সময়ই চাইতেন রাজ্যের ছেলেমেয়েদের যেন ভিন রাজ্যে যেতে না হয়।রাজ্যের উন্নয়নে দলবাজী তাঁর রক্তে ছিল না।স্বল্প মেয়াদী লাভের থেকেও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার দিকে নজর দিতেন।ফল হিসাবে সিঙ্গুরে টাটার মতো শিল্প পতির আগমন।নিজের ঢাক নিজে পেটাতে দেখিনি।সভা সমিতির সভায় বক্তব্য রাখতেন সুচিন্তিত। নিজের ভাবনার গভীরতা ছিল।অথচ দাম্ভিকতা দেখিনি বক্তব্যের মধ্যে।
সিঙ্গুরে শিল্প হয়নি। কেন হয়নি সে আলাদা প্রসঙ্গ। টাটারা সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমি সিঙ্গুরে শাখা প্রবন্ধক হিসাবে জয়েন করি।নানা গল্প আমার হার্ড ডিস্কে আজও জমা আছে।সেখানে জমি অধিগ্রহণের কিছু ভাবনার মধ্যে ভুল পদক্ষেপ অবশ্যই ছিল।সাংবাদিক হিসাবে তাঁর বেশ কিছু সভা বা অনুষ্ঠান কভার করি। সরাসরি সাংবাদিক জীবন ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও বেশ কয়েকবার দেখা হয়।তবে তা নেহাত ই সাংস্কৃতিক জগত।
উদাহরণ এই কারনে যে তিনি ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও সাধারণ জীবনেই অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট বা বড় সাংবাদিক বলে আলাদা ব্যাবহার চোখে পড়েনি।
আজ তিনি অসুস্থ। তাঁর সাদা পোষাকে কালির ছিটে আজও শত চেষ্টা করেও লাগানো যায় নি।আজও যে আবাসনে থাকেন তাতে আভিজ্জাত্তের ছিটে ফোটা নেই। আজ এই ঘটনা ভাবা যায় না।এই ধরনের সাদামাটা জীবন যাপন
আমি বামফ্রন্টের সমর্থক বা বামপন্থীরা ধোয়া তুলসী পাতা একথা বিশ্বাস করি না।সাংবাদিকতা জীবনে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে বহু লিখেছি।স্থানীয় বামপন্থীদের সুনজরে কখনোই ছিলাম না।বরং আমার এই সাধারণ চাকরি যাতে না থাকে সে চেষ্টাও তারা করেছেন।সম্পাদকের দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে বহু চিঠি লিখেছেন।না আমার চাকরি যায় নি।বরং আমি নিজেই চাকরি ছেড়েছি মধ্য বিত্তের আকাশ যানে চড়ার বাসনায়।
সে প্রসঙ্গ আলাদা।বুদ্ধদেব বাবুকে শ্রদ্ধা করি তার কারন এমন রাজনৈতিক চরিত্র বর্তমানের প্রেক্ষিতে থাকলেও তা সংখ্যার নিরিখে সত্যিই অল্প।
জানি এমন এক নিরামিষ লেখাও কারো কারো পছন্দ হবে না।তীর তো আসবেই। সে আসুক।শিরদাড়া তো বিক্রি করিনি ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমার পছন্দের মানুষ। তাঁর অসুস্থতার আপামর বাঙালির মতো আমিও চিন্তা গ্রস্ত।আমি ও প্রার্থনা করি তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন।অমন সাহিত্য নিবেদিত প্রাণ রাজনিতীবিদ আজ বিরল।
ভালো হয়ে উঠুন আপনি।
সাংবাদিক রা সত্যি কথা লিখুক সেটি আপনি চাইতেন।লেখকেরা সমাজের আরশি এ বিশ্বাস আপনার আছে।আপনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন।আপনাকে আজও বড়ই প্রয়োজন।
আপনার রাজত্ব কালে আপনার দলের সব নেতাকে আমার পছন্দ ছিল না,আজও নেই। আপনি আমার পছন্দের একজন।আজও আপনার সাদামাটা জীবন কে আমি শ্রদ্ধার চোখেই দেখি।
আপনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
তরুণ চট্টোপাধ্যায়।