Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

স্বপ্নাদেশ পেয়ে ৩৮৯ বছর আগে তালপাতার কুঁড়েঘরে দক্ষিণা মূর্তি শ্যামা কালীপুজো আজও অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে মুখার্জি পরিবার

বাবলু বন্দ্যোপাধ্যায়।   কোলাঘাটআজ থেকে ৩৮৯ বছর আগে স্বপ্না দেশ পেয়ে তালপাতার কুঁড়েঘরে দক্ষিণামূর্তি শ্যামা কালীপুজো শুরু করেন রামনিধি মুখোপাধ্যায়। বর্ধমানে মহারাজা ব্রম্ভোওর জমি দান করেছিলেন কোলাঘাটের বরিশা গ্রামের রামনিধি মু…



বাবলু বন্দ্যোপাধ্যায়।   কোলাঘাট

আজ থেকে ৩৮৯ বছর আগে স্বপ্না দেশ পেয়ে তালপাতার কুঁড়েঘরে দক্ষিণামূর্তি শ্যামা কালীপুজো শুরু করেন রামনিধি মুখোপাধ্যায়। বর্ধমানে মহারাজা ব্রম্ভোওর জমি দান করেছিলেন কোলাঘাটের বরিশা গ্রামের রামনিধি মুখোপাধ্যায় কে। আজও বংশানুক্রমে শ্যামা পুজো চলে আসছে বহু পৌরাণিক প্রথা ও নির্দিষ্ট রীতিনীতি মেনে। সময়ের বিবর্তনে গড়ে উঠেছে সুদীর্ঘ পাকা স্থায়ী ঠাকুর ঘর। অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য পাশেই তৈরি হয়ে রয়েছে তালপাতার কুঁড়েঘর। বিগত বছরের পূজার জাগারি প্রদীপ ও চাঁদ মালা যেখানে বিজয়া করা হয় সেই প্রতিষ্ঠিত পদ্ম পুকুরে ভাসিয়ে দিয়ে ওখান থেকেই প্রতিমা নির্মাণের মাটি তোলা হয়। মাটি এনে পরিষ্কার বেল পাতায় বাঁশ কলম ও নতুন আলতা দিয়ে মায়ের বীজ মন্ত্র লিখে বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় ওই মাটির বেল পাতার দিয়ে পুজো পাঠ সহকারে মায়ের চরণে ও হৃদয় স্থলে স্থাপন করা হয়। মৃন্ময়ী রূপদানে মায়ের মূর্তি খড় দিয়ে বাধার পর মন্ত্রপুত লেখা বেলপাতা গুলি একত্রিত করে মায়ের ও শিবের এবং বাহনের হৃদয় স্থানে রেখে মাটির কাজ শেষ হয়। গঠন বৈচিত্র্যে মায়ের কোমরে থাকে দ্বাদশ টি কাটা হাত এবং মুণ্ডমালা ৫১ টি, হাতে একটি মোট ৫২টি মুণ্ডমালা ,বর্ণমালার ৫২ টি অক্ষরকে স্মরণ করে গড়ে তোলা হয় মূর্তি। অলংকারে সাজানো হয় মাকে, বংশানুক্রমে  সাজসজ্জা  প্রস্তুত করেন  কোলাঘাট ব্লকের রাইন গ্রামের মালাকার বংশের কারিগররা। ভোগ নিবেদিনে ও বৈচিত্র উল্লেখযোগ্য বিচে কলার গর্ভথোর, শাক এবং খেসারী ডালের বড়ি দিয়ে ঘন্ট হয়। ডাল খিচুড়ি সাদা ভাত গুড়পিঠে লুচি পায়েস বিড়ির ডালের বড়ির পাশাপাশি রুই মাছ ও ফুলকপি দিয়ে ঝোল হয়। প্রথাগতভাবে দুটি ছাগ বলি হয়। সেই ছাগ পশুর দাঁড়ি থাকতে হবে। প্রথমে গ্রামের দেবদেবীকে পূজো দিয়ে বাড়ির পুজো শুরু হয়। পুজোর পর আট দিন মন্দিরে বলির খাড়া রাখা হয়। এই প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী কালীপুজোর এই বংশের অন্যতম সদস্য উত্তম মুখার্জি জানান সময়ের বিবর্তনে একবিংশ শতাব্দীর অনেক কিছুই বদলে গেলেও আমরা সাধ্যমত নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে সেই চলে আসা প্রাচীন প্রথা উপাচার নৈবর্ত রীতিনীতি সাধ্যমত বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছি। উল্লেখযোগ্য নিজের হাতেই কালী মায়ের মূর্তি করেন এবং নিজেই পুজো আরাধনার প্রধান দায়িত্ব পালন করেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এলাকার প্রাচীর  এবং ঐতিহ্যবাহী এই কালীপুজোর অপেক্ষায়। বহু মানুষের সমাগম ঘটে। সবাই ভক্তি নিষ্ঠা সহকারে পূজা দেন এবং অঞ্জলি নিবেদন করেন। আজও কোলাঘাটের বুকে এই পুজোকে কেন্দ্র করে লোকমুখে কত কাহিনী গল্প এবং জনশ্রুতি শুনতে পাওয়া যায়। ভক্তিমতী মানুষদের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা পূরণে বরাবরের মতো এবারও জোর কদমে  প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কোলাঘাটের মুখার্জী বাড়ির কালীমাতার আরাধনার আয়োজন। এই মুখার্জি বংশের পূর্বসূরিদের দানকৃত জমিতেই শতবর্ষ উত্তীর্ণ হওয়া কোলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রূপে বিবেচিত।