অরুন কুমার সাউ, তমলুক: গ্রামের মেঠো পথে যেতে যেতে অনেক ঝোপঝাড় ও লতাপাতা চোখে পড়ে। এদের সবগুলোই যে আমাদের পরিচিত তা নয়। সবকিছুর নাম আমরা জানিনা। যেগুলো ছোটবেলায় দেখেছি সেগুলো এখন অনেক দেখা যায় না। এমন কিছু বনলতার খোঁজে নেমেছি…
অরুন কুমার সাউ, তমলুক: গ্রামের মেঠো পথে যেতে যেতে অনেক ঝোপঝাড় ও লতাপাতা চোখে পড়ে। এদের সবগুলোই যে আমাদের পরিচিত তা নয়। সবকিছুর নাম আমরা জানিনা। যেগুলো ছোটবেলায় দেখেছি সেগুলো এখন অনেক দেখা যায় না। এমন কিছু বনলতার খোঁজে নেমেছিল তমলুক ফ্লাওয়ার লাভারস অ্যাসোসিয়েশন। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইছামতি উপন্যাসে উল্লেখিত ১৩১ টি লতার সন্ধানে নেমেছিল সদস্যরা।
"ইছামতি" উপন্যাস লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বনে জঙ্গলে, পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে এই উপন্যাস লিখেছিলেন। সেই উপন্যাস প্রকাশের এ বছর ৭৫ বছর। এই উপন্যাসে গাছ, লতা, গুল্ম, শাক, বনলতা ইত্যাদি মিলিয়ে মোট ১৩১ টি উদ্ভিদের উল্লেখ আছে। এই উদ্ভিদ গুলির খোঁজে বেরিয়েছিল তমলুক ফ্লাওয়ার লাভার অ্যাসোসিয়েশন।ফোল্ডারটিতে প্রকাশিত হয়েছে কাঁটা আলু, বনআঙুর, গোয়ালি লতা, গাঁদাল, পুরুল , গুলঞ্চলতা, কেলে লতা, বন ঝুমকো লতা, লতা ফুটকি, আলকুশি, বনপুই, মাকাল, শ্যামলতা, কায়াকোরা, অনন্ত লতা, বন সিম, কাঁচফল, ওলট চণ্ডাল, ভুই কুমড়া, দই পাতা, লতাপলাশ, লতা কাঞ্চন বনলতা উদ্ভিদের ছবিসহ বৈশিষ্ট্য ,প্রকৃতি, ভেষজ কথা । ফোল্ডারটিতে উদ্ভিদগুলি সম্পর্কে প্রতিবেদন লেখার কাজ করেছেন বীতশোক পট্টনায়ক, জয়ীনন্দন মাইতি, প্রান্তিক ধাড়া।
প্রকৃতির কোলে এদের সব সময় দেখা যায় না। আর বর্তমান প্রজন্ম তো একেবারেই এই সকল উদ্ভিদের থেকে অনেক অনেক দূরে। এই সকল বনলতাদের সাথে কোন রকম ভাবে পরিচিত নই। ফোল্ডারে প্রকাশিত সকল উদ্ভিদ সবই জংলি লতা। একসময় গ্রাম তো বটেই মফস্বলে শহরেও এগুলো যত্রতত্র দেখা যেত। গ্রামের কাঁচা রাস্তার ধার, পোড়ো জায়গা, আদারবাদারে যাদের দেখা মিলতো এখন তারা অনেকেই বিপন্ন।
তমলুক ফ্লাওয়ার লাভার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানান এসব বুনোলতা নিয়ে অনেক বই পত্র ও ইউটিউবার রয়েছেন তবে প্রকৃতির কোলে এদের দেখা পাওয়া যেন এক আবিষ্কার। আমাদের কাছে প্রকৃতি পাঠের মাস্টারমশাই সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শুধু সাহিত্যিক নন একজন প্রকৃতি পর্যবেক্ষক। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে ব্যারাকপুরে, ঘুরে বেড়িয়েছেন ইছামতি বাঁওরে, গাছ গাছালির পাতা উল্টে পাল্টে দেখেছেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কতশত উদ্ভিদের কথা তিনি তার উপন্যাসের মধ্যে স্থান দিয়ে গেছেন। যেগুলো একদম মনগড়া নয়, আর তার সন্ধান করতেই এই অনুসন্ধানমূলক কর্মসূচি।
তমলুক ফ্লাওয়ার লাভার অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে প্রান্তিক ধাড়া বলেন, প্রকৃতিতে থাকা এই সকল বনলতা গুলি জীব বৈচিত্র্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে পরিবেশে থাকা একান্ত প্রয়োজন। শুধু তাই নয় এই সকল বুনো লতাগুলোর ভেষজ গুনাগুন রয়েছে যথেষ্ট। আমাদের চোখের আড়ালে কোথাও ঘাপটি মেড়ে বসে আছে এই সকল বুনলতা গুলো। তবে এরা দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মাঝে মাঝে জঙ্গল পরিষ্কারের কাজ হয় যারা পরিষ্কার করেন তারা গাছগুলো গুরুত্ব না বুঝে নির্বিচারে কেটে দেন। কোথাও কোথাও আবার কাটা ঝোপঝাড়ে আগুন লোক ধরিয়ে দিতে দেখা যায় ।