অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: আশ্বিন মাসের শেষ দিন ডাক সংক্রান্তি বাংলার গ্রামীণ হিন্দু চাষিদের পালনীয় একটি লৌকিক কৃষি উৎসব। লোক বিশ্বাস অনুসারে আমন ধানের গর্ভবতী হওয়ার সময়। ধান গাছগুলোকে গর্ভবতী মায়ের মতোই কল্পনা করে।সংক্রান্তিতে দুই …
অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: আশ্বিন মাসের শেষ দিন ডাক সংক্রান্তি বাংলার গ্রামীণ হিন্দু চাষিদের পালনীয় একটি লৌকিক কৃষি উৎসব। লোক বিশ্বাস অনুসারে আমন ধানের গর্ভবতী হওয়ার সময়। ধান গাছগুলোকে গর্ভবতী মায়ের মতোই কল্পনা করে।সংক্রান্তিতে দুই মেদিনীপুরে এই কৃষি উৎসব পালন করে থাকে। মেদিনীপুরে ডাক সংক্রান্তি নলবাঁধা সংক্রান্তি বলেই প্রসিদ্ধ।যা আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে ।
গর্ভবতী মায়েদের মতো সাধ খাওয়ানোর প্রথা হল এই ডাক সংক্রান্তি । এদিন ধানের ক্ষেত্রে নল পোতা হয়। ধান গাছের সুস্থতা কামনা করে ওষুধপালা করা হয় নলপুতা সংক্রান্তিতে ।নলপুতা হয় ওষধি মশলার গুড়ো তৈরি করে বহড় পাতা, কচুপাতায় মুড়ে পুটলি করে নল গাছের অগ্রভাগে পাটের রোয়া দিয়ে ধেঁধে ধানের ক্ষেতে পুঁতে দেওয়া হয়। যে মশলা বাঁধা হয় তার উপাদান গুলি হল কাঁচা হলুদ, কাঁচা নিমপাতা, কাঁচা আদা, কেতকী পাতা, কালোমেঘ, বেলপাতা, ওল,কেঁউ ফুল, তিতা পাটের বীজ ও পাতা, খড়ের গুঁড়ো,আতপ চালের গুঁড়া, শুটকি মাছের গুঁড়ো ।সংক্রান্তির দিন খুব ভোরে কৃষক ওই ওষধি বাঁধা নলকাঠি ও এক ঘটি জল নিয়ে নিজের জমির ঈষাণকোনে জলটা ঢেলে ধান গাছের সুস্থতার উদ্দেশ্যে শ্লোক কাটে ।ধান জমি থেকে জল পেতলের ঘটিতে করে এনে বাড়ির দেবালয়, খামার, বাড়ির চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় । নানান অঞ্চল ভেদে ছড়া বা শ্লোক আলাদা হয় । তমলুকের দিকে বলতে শোনা যায়, " নল পড়ল ভুঁয়ে,যা শনি তুই উত্তর মুয়ে "।
ধান ক্ষেত ছাড়াও দেবালয়, অশ্বথ, বট,বেল গাছের নিচে ও তুলসী তলায় নল গাছ পোতা হয়। তবে এখানে উপকরণ থেকে শুটকি মাছ বাদ পড়ে।মূলত ফসল রক্ষা করার জন্য প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। এই সময় কৃষকদের গৃহে কতকগুলো আচার পালন হয়। অলক্ষ্মীকে ক্ষেত ও গৃহ থেকে সরানো এবং আগামী শষ্যের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেক পরিবারে লক্ষ্মীদেবীর পূজার আয়োজন করেন। দুই মেদিনীপুর জেলায় এই দিন সকালে প্রতি বাড়িতে কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা দিয়ে আলই ও তাল গজার।খাওয়ার প্রথা চালু রয়েছে। আগেরদিন রাতে তৈরী হওয়া পিঠে সপরিবারে খায়।দুই- তিন রকমের পিঠে হয় তৈরী হয়। মধ্যাহ্ন ভোজনের সময় অন্যান্য তরিতরকারি সাথে সাত রকমের শাক ভাজা, বিউলির ডাল,ওলের তরকারী, মাছের টক খাওয়ার প্রথা আছে। এদিন গরুকেও কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা খাওয়ানোর রীতি রয়েছে।