Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ধারাবাহিক উপন্যাস: চন্দ্র গোধূলি

ছবি:গৌতম মাহাতো
..............................
চন্দ্র গোধূলি: পর্ব তিন
তাপস দত্ত
--------------------
 সুতৃষ্ণা কুটিল চোখে তাকাল চন্দ্রের দিকে।
-কেন তোমার জানার প্রয়ােজন কি? তাছাড়া তােমার হাতে ও ফুলগুলি

কার জন্য ?

-চন্দ্র মুখ …

ছবি:গৌতম মাহাতো
..............................
চন্দ্র গোধূলি: পর্ব তিন
তাপস দত্ত
--------------------
 সুতৃষ্ণা কুটিল চোখে তাকাল চন্দ্রের দিকে।
-কেন তোমার জানার প্রয়ােজন কি? তাছাড়া তােমার হাতে ও ফুলগুলি

কার জন্য ?

-চন্দ্র মুখ নামিয়ে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কি জানো সে কোথায় ?
সুতৃষ্ণা কিছুক্ষন তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে চন্দ্রকে যেন বিচার করে দেখল।

-ও লাইব্রেরীতে আছে, নােট তুলছে। তারপর ধীরে ধীরে চলে গেল ওর
কাছ থেকেদূরে।

চন্দ্র এগিয়ে গেল। লাইব্রেরীতে প্রবেশ করার পর দেখল পুৱাে ঘরটাই ফাঁকা।
বেঞ্চের এককোনে গােধূলি তন্ময় হয়ে নোটস তুলছে। চন্দ্র কিছুটা এগিয়ে গেল
ভয়ার্ত হৃদয়ে। গোধূলি পিছন ফিরে নেট তুলে চলেছে।

-না আজ থাক-পরে ....হবে-মনে করে ফিরে এলাে একবার। তবুও মনে
সাহস এনে চন্দ্র ওর সামনের বেঞ্চে গিয়ে মুখােমুখি বসলাে। হাতে রক্ত গােলাপের
গুচ্ছ। চন্দ্র বুকে যেন হৃৎপিন্ডের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।

চন্দ্রকে সামনে দেখে গােধূলি মাথা সামান্য উপরে তুলল। গােধূলি জিজ্ঞাসু
দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকাল। চন্দ্র যন্ত্র মানবের মতাে গােলাপ গুচ্ছ ওর দিকে
বাড়িয়ে দিয়েই বলে ফেলল আজ ভ্যালেন্সটাইন্স ডে তাই তােমার জন্য এই গোলাপ
.....কথাটা শেষ করতে হয়নি চন্দ্রকে, শেষ করেছিল গোধূলি।চন্দ্র চলে যাচ্ছিল
গোলাপ গুচ্ছ তুলে দিয়ে।

- দাঁড়ান। গােধূলির জোরালাে কণ্ঠস্বর। আপনারা কি ভেবেছেন আমায় ?
এই আপনাদের মত ছেলেদের জন্য মেয়েরা কলেজে আসতে পারে না। ছিঃ,
আপনাদের এত মন। তাহলে চলে যান না কোন বেশ্যার বাড়ি। আমার সামনে আর
কোনোদিন দাঁড়াবেন না। চলে যান এখান থেকে। ফুলের গুচ্ছটা ছুঁড়ে ফেলে দিল
মেঝেতে। চন্দ্র ধীরে ধীরে মেঝে থেকে গােলাপ-এর টুকরাে গুলাে তুলে নিয়ে—

 বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুধু দুটি কথা বলেছিল।

-আমি যদি তােমায় সত্যি ভালোবেসে থাকি তাহলে তোমার একদিন না
একদিন আমার কাছে আসতেই হবে। আর একটা কথা, আর কোনাে দিন এই
ছেলে তোমাকে বিরক্ত করতে আসবে না। এবং কলেজ দেখতে পাবে না। নিজের
অজান্তে চন্দ্রের চোখের কোনে যে এক বিন্দু জল ঝরে এসেছে তা লাইব্রেরী থেকে
বেরুবার আগেই মুছে ফেলল।

সেই শান্ত সুন্দর মেয়েটির সৌম্য দৃষ্টি নীল আকাশের মাঝে হারিয়ে ছিলাে।
যেন মনে হয়ে ছিলাে সে অসীম দীগন্তে সে একাকিনী যাত্রি। চন্দ্র মনে মনে ভাবল
আমি তােমার চলার পথের সঙ্গী হতে চেয়েছিলাম।
আর..তুমি..
....কিনা? দুঃসহ বেদনায় চন্দ্রের হৃদয়টা যেন ঝংকার দিয়ে
উঠল বারবার।
চন্দ্রের মনে হলো, এই পৃথিবীতে ও কি জন্য এসেছে? ওর জন্য কি সব সুখ
শূন্য মনে হয়। আমার বেঁচে থাকা মানে গােধূলির ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সত্যি তাে আমার সব শেষ; যেন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে চন্দ্রের।
ভাবতে ভাবতে চোখের জলে ঝাপসা হয়ে এলাে।

বেলা নেমে এসেছে। সন্ধ্যার আয়োজন বিশ্বমাতা কর্মে ব্যস্ত হয়েছেন।

রাতের আঁধার নেমে এসেছে। রঞ্জন, কল্পতরু,মলয় ওরা চিন্তিত হয়ে পড়ে।
চন্দ্র মেসে এখনাে ফিরে আসেনি। এক এক করে প্রতিটি মেসে আলো নিভে আসতে
লাগলাে।চন্দ্র যখন ফিরল তখন শুধু মাত্র কল্পতরু জেগে। বাকি সবাই ঘুমিয়ে
পড়েছে। চন্দ্রের চুল গুলাে এলােমেলাে। চোখ দুটি লাল হয়ে উঠছে। যেন ওর
উপর দিয়ে এক ভয়ঙ্কর ঘূর্নি ঝড় বয়ে গেছে।

কলসি থেকে ঠান্ডা জল গ্লাসে গড়িয়ে খেল।
কল্পতরু প্রশ্ন করে কিরে এত রাত করলি ? গোধূলির কাছে গিয়েছিলি?
 চন্দ্র নীরব হয়ে গেছে। ও বুঝেছি তুই গিয়েছিলি ওর কাছে,ও ফিরিয়ে
দিয়েছে তাই না?
-অত ভাবছিস কেন চন্দ্র ?ওই রকম হয় রে!আমি না বলেছিলাম তুই শুনলি না।



আমি জানি তুই প্রচুর আঘাত পেয়েছিস, কেউ না জানুক চন্দ্র, আমি তাে
জানি। তুই এই প্রথম কারাে সঙ্গে প্রেম করবি, ঘর বাঁধবি বলে আশা করে ছিলি।
তাও হলাে না।

যাক যা হওয়ার হয়েছে। দু মুঠো খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়, কাল ক্লাস আছে।
চন্দ্র এতক্ষন চুপ করেছিলাে। ওর হৃদয় ভরা কান্না পৃথিবীর আকাশ বাতাসকে
ভরিয়ে তুলল।

-আমি ওকে ভালবাসি কল্পতরু! আর ও আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে ওর কান্নায়
যেন কণ্ঠরােধ হয়ে গেল। বাইরে সারি সারি ঝাউগাছের হাওয়ায় কান্না যেন গুমরে
গুমরে ভাসতে লাগল আকাশে বাতাসে।
সকলে ঘুমিয়ে পড়েছে। দু-একটি জোনাকি মিটিমিটি আলো ছড়াচ্ছে,
আঁধারময় পৃথিবীতে। ঝি ঝি পোকা তার বিরহের কান্নায় ভরিয়ে তুলেছে সমগ্র
বনপ্রান্তর।

চন্দ্র বেরিয়ে এলাে মেসের বাইরে। শুক্ল পক্ষের চাঁদে পরশ লেগেছে। আর
যেন তাই মেঘগুলাে সারিসারি ভেসে ভেসে চাঁদের পরশে স্নান করছে হাল্কাবাতাস,
করুন সুরে বয়ে চলেছে।

-সুখ তুমি কোথায়? প্রেম তুমি কোথায় ?
ভালবাসার পবিত্র বন্ধন, তােমরা কোথায় ?
-তােমরা আমায় বলে দাও, কোথায় পাব তােমাদের ?
হ্যাঁ ওই তো শুকতারা! হয়ত ওর কাছে ?
-আচ্ছা চন্দ্র একটা কথা বলব?
-কি কথা বৌদি ? তুমি কোনো দিন কোনাে মেয়েকে ভালবেসেছ ?
-হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন বৌদি ?
 —যা বলছি তোমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, যদি না বলতে চাও বলো না।

জোর করব না তােমায়। জানাে চন্দ্র তােমায় দেখলে কেমন যেন করুনা হয়।
স্নেহ করতে ইচ্ছে করে।

ঊষা বৌদি বিছানা থেকে উঠে। জানালার সামনে এসে দাঁড়ায়। আকাশের
দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে জানাে চন্দ্র তোমার দাদা আজ আট মাস
কোম্পানির চাকরিতে দিল্লী চলে গেছে। এখন যােগাযােগ বলতে মাসে একটি
করে চিঠি।

-জানাে চন্দ্র মাঝে মাঝে বড্ড একা মনে হয়। ছােট বেলায় আমি কবিতা
আবৃত্তি করতাম। আমাদের বনশালে যে তিস্তা নদী বয়ে গেছে, সেখানে রােজ
বিকেলে শান্ত নদীর জলের সঙ্গে কথা বলতাম। মাঝে মাঝে ছােট ছােট ঢেলা ছুঁড়তাম,
 ছুঁড়তাম,আর ও যেন এঁকে বেঁকে আমায় বলত, এই বােকা মেয়ে জানিস আমায়
কথা বলতে নেই।

-চন্দ্র অবাক হয়ে বলে-বৌদি তুমি ও কবি হতে পারতে, এই সুন্দর কথাতে
তোমার সুন্দর ছন্দ পাওয়া যায়।

-আমি আর কি চন্দ্র? তুমি-ই তাে কবি। যার মধ্যে উদাস সৌন্দর্য-এর
মায়া মমতা আছে সেই তো কবি।

-না বৌদি আমি আ-বা-র কবি! আমি নয় বৌদি।

-তুমি লুকোলেও আমি শুনেছি তোমার কবিতা। মাঝ রাতে তােমার কবিতা
আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। আমি তাকিয়ে দেখতাম ওই আকাশে আলাে ভরা
নক্ষত্রের মতাে তােমাকে। তােমার কবিতা দেহ মনে কেমন যেন কান্নার ঝংকারে—
চন্দ্র ভেতরে এলো

সত্যিই তাে ওর বাঁচা মরা সমান। তাই রাত্রির কালাে নিবীড় অন্ধকারে চন্দ্র
মৃত্যুকে মেনে নিতে চায়।

উপরের আংটা থেকে একটা গামছা বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়। ছােট একটা ফাঁস
তৈরি করে ফেলে চটপট করে। ছােট একটা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে ফাঁস নেওয়ার
আগে প্রিয় বন্ধুদের মুখটা দেখে নেয়। চলিরে বন্ধু বিদায়....।

হঠাৎ শব্দে কল্পতরু জেগে ওঠে। অন্ধকারের মধ্যে কে যেন ঝুলে পা দুটোকে
কাতরাচ্ছে। কল্পতরু চিৎকার করে বন্ধুদের জাগিয়ে তুলে চন্দ্রকে নামিয়ে আনে।
অজ্ঞান হয়ে গেছে। ওরা চন্দ্রকে নার্সিংহােমে ভর্তি করে দেয়। তারপর কোনাে
কথাই মনে নেই। গােধূলি এসেছিল কিনা তাও জানার আগ্রহ দেখায়নি চন্দ্র।

তারপর চন্দ্র পার্ট ওয়ান দিয়েছে, পার্ট টু দিয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে
বেড়াতে বেড়াতে আজ এই মুকুন্দরামপুরে।
 চন্দ্র বাস্তব জগতে ফিরে আসে। অতীতের কথা গুলাে মনে হলেই একটা
চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। চন্দ্র পাশ ফিরে শোয়। কটা যে বাজে! শীত শীত

করছে চন্দ্রের। তবুও দক্ষিণের জানালাটা খুলে দেয়। একরাশ চাঁপা ফুলের গন্ধ
লাফিয়ে ঘুরের বুক ভরিয়ে দিলাে।

বাড়ির সম্মুখ প্রান্তে খুব বড় চাপা গাছ আছে ঊষা বৌদিদের। চন্দ্র জানালার
পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল। আকাশে চাঁদ উঠেছে। দু-একটি করে
তারাও ফুটেছে। সত্যিই ফাল্গুন যে বসন্ত নিয়ে আসে তা মলয় বাতাস বলে দেয়।

এতক্ষন লক্ষ করেনি চন্দ্র দরজার দিকে। দরজায় কার ছায়া পড়েছে।
-কে? জিজ্ঞাসা করে চন্দ্র। ছায়া ওর সামনে এগিয়ে আসে।
-কে? ও ঊষা বৌদি। এসাে এসাে ভিতরে এসাে।
-বৌদি কোন উত্তর করে না। এবার কথা বলে ঊষা বৌদি।
-আচ্ছা চন্দ্র একটা কথা বলব?
-কি কথা বৌদি ? তুমি কোনো দিন কোনাে মেয়েকে ভালবেসেছ ?
-হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন বৌদি ?
 —যা বলছি তোমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, যদি না বলতে চাও বলো না।

জোর করব না তােমায়। জানাে চন্দ্র তােমায় দেখলে কেমন যেন করুনা হয়।
স্নেহ করতে ইচ্ছে করে।

ঊষা বৌদি বিছানা থেকে উঠে। জানালার সামনে এসে দাঁড়ায়। আকাশের
দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে জানাে চন্দ্র তোমার দাদা আজ আট মাস
কোম্পানির চাকরিতে দিল্লী চলে গেছে। এখন যােগাযােগ বলতে মাসে একটি
করে চিঠি।

-জানাে চন্দ্র মাঝে মাঝে বড্ড একা মনে হয়। ছােট বেলায় আমি কবিতা
আবৃত্তি করতাম। আমাদের বনশালে যে তিস্তা নদী বয়ে গেছে, সেখানে রােজ
বিকেলে শান্ত নদীর জলের সঙ্গে কথা বলতাম। মাঝে মাঝে ছােট ছােট ঢেলা ছুঁড়তাম,
 ছুঁড়তাম,আর ও যেন এঁকে বেঁকে আমায় বলত, এই বােকা মেয়ে জানিস আমায়
কথা বলতে নেই।

-চন্দ্র অবাক হয়ে বলে-বৌদি তুমি ও কবি হতে পারতে, এই সুন্দর কথাতে
তোমার সুন্দর ছন্দ পাওয়া যায়।

-আমি আর কি চন্দ্র? তুমি-ই তাে কবি। যার মধ্যে উদাস সৌন্দর্য-এর
মায়া মমতা আছে সেই তো কবি।

-না বৌদি আমি আ-বা-র কবি! আমি নয় বৌদি।

-তুমি লুকোলেও আমি শুনেছি তোমার কবিতা। মাঝ রাতে তােমার কবিতা
আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। আমি তাকিয়ে দেখতাম ওই আকাশে আলাে ভরা
নক্ষত্রের মতাে তােমাকে। তােমার কবিতা দেহ মনে কেমন যেন কান্নার ঝংকারে—
--------------------------------
................... চলবে