Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কবিতা শর্ট ফিল্ম ও সিনেমার ভাষা

অচিন্ত্য নন্দী
আমার এক বন্ধু তার সাহিত্য পত্রিকার জন্য বিভিন্ন কবির কিছু কবিতা সংগ্রহ করে দিতে অনুরোধ জানিয়ে ছিল ।আমাকে আমি আমার কবি বন্ধুদের কবিতা সংগ্রহ করে তাকে দিও ছিলাম। যথা সময়ে প্রকাশিত হয় ঢাউস পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটি।…


অচিন্ত্য নন্দী
আমার এক বন্ধু তার সাহিত্য পত্রিকার জন্য বিভিন্ন কবির কিছু কবিতা সংগ্রহ করে দিতে অনুরোধ জানিয়ে ছিল ।আমাকে আমি আমার কবি বন্ধুদের কবিতা সংগ্রহ করে তাকে দিও ছিলাম। যথা সময়ে প্রকাশিত হয় ঢাউস পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটি। আমি খুব নিরাসক্ত ভাবেই সেই বন্ধুটির কাছে কবিদের জন্য জন্য সংখ্যা চেয়েছিলাম । আর বন্ধুর জবাব শুনে আমি তো হা হয়ে গেলাম। বলে কিনা ৭, ৮ লাইনে একটা কবিতার জন্য দিতে হবে ২০০টাকা দামের এই মোটা পত্রিকা? আবদার? স্বপ্ন দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র সম্পর্কে সেদিনও অনেক দর্শক এমন ধারণায় পোষণ করতেন।
অনেক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ৭০ মিনিটের কম সময়ের ছবি গ্রাহ্য হয় না। কোথায় সাহিত্য কবিতা বা ছোট গল্প এমন ব্রাত্য নয়। কিন্তু এমনটাই চলে আসছে সিনেমা অনেকদিন ধরে ।ফুট, সেন্টিমিটার ,মিনিট, সেকেন্ড দিয়ে কি শিল্পের মাপজোক সম্ভব? মনে প্রশ্ন জাগে কেন বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র উৎসব গুলিকে স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য ভাগ করা হবে?
আবার একথাও ঠিক আজকের দিনে ভালো সিনেমা বা আর্ট হাউস সিনেমাটিকে টিকে থাকতে গেলে যেকোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে একটা পুরস্কার প্রাপ্তি খুব জরুরী। কারণ তা ব্যাপক বিজ্ঞাপনের কাজ করে। আজকের দিনে বিজ্ঞাপনী দৃষ্টি শক্তির ও কাজ করে । কিন্তু কবিতা ক্ষেত্রে কোন কবি একটি কবিতা জন্য নয় কাব্য গ্রন্থের জন্য পুরস্কৃত হন। যদিও একটি কবিতা জন্য বিখ্যাত ও কালোত্তীর্ণ হয়েছেন অনেক কবি।
সময়ের সাথে সাথে শিল্পের পরিবেশন পদ্ধতি ও পাল্টে পাল্টে যায় ।এখন সিনেমা দেখাটাও অনেকটা ব্যক্তিগত। ছবিটি সিনেমা হল বা মাল্টিপ্লেক্স এ কবে মুক্তি পাবে সে দিকে সবসময় তাকিয়ে থাকতে হয় না। আছে টিভি চ্যানেল, নেট, ইউটিউব, ডিভিডি ইত্যাদি। তাতে যে পরিবেশন বা ডিস্ট্রিবিউশন  প্রথা চলচ্চিত্র নির্মাতা পক্ষে গেছে ,এত সহজে তা বলা যাবে না। আলোচনা সাপেক্ষ। তবে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি অল্প সময়ের হওয়ার সুবাদে দিব্বি পার পেয়ে যাচ্ছে। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি আর ডিজিটাল প্রযুক্তি হাত ধরাধরি করে আছে ।একটা নাক উঁচু ভাব তো কাজ করে। ৬/৭ বছর আগে ও বিদেশের অনেক নির্দেশককে জিজ্ঞেস করেছি ,'ডিজিটাল শিল্পোত্তীর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব '?প্রায় একই উত্তর-" হয়, তবে সেলুলয়েডের কোন বিকল্প নেই"। কিন্তু আজ ?খোদ বলিউডেও সর্বত্র ডিজিটাল ডিজিটাল। সেলুলয়েডে ছবি করা খুব দুষ্কর," মন্তব্য চলচ্চিত্র নির্মাতা গোবিন্দ নিহালনীডর"। সিনেমার কিছু পরিচালকদের তো সেদিনও বলতে শুনেছি - 'আমরা সেলুলয়েডে ছবি করি আর ওরা ডিজিটাল! আর আজ? ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন অনেক জায়গায় সেলুলয়েডের উচ্চতায় পৌঁছতে পারেনি আবার সেলুলয়েড ডিজিটালের ব্যক্তিকে অতিক্রম করতে পারেনি ।এমনটাই হয়,সময়ের চাকার সঙ্গে সিনেমার চাকাও ঘোরে।সিনেমা যেন এক সমুদ্র। প্রযুক্তিতে যেখানে যা আবিষ্কৃত হয় তার ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে সিনেমা নামের সমুদ্রে। ফরাসি কবি ও চলচ্চিত্র সমালোচক জ ককতো সাহেব, আপনিতো এক সময় বলেছিলেন," যেদিন ঝর্ণা কলমের দামে ক্যামেরা আর কাগজের দামে ফিল্ম রোল কিনতে পাওয়া যাবে সেদিনই চলচ্চিত্র হয়ে উঠবে শিল্প।" আজ তো ডিজিটাল পদ্ধতিতে খুব কম খরচে সিনেমা তৈরি হয়। কিন্তু সিনেমা নির্মাতার মনোযোগ কি সব সময় শিল্প সৃষ্টির দিকে?
‌ফরাসি চলচ্চিত্রকার জ লুকগোদার তো বিশ্বখ্যাতি তার অন্য ধারার সিনেমা সৃষ্টি জন্য। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গোদারের ছবিটির নাম "গুড বাই টু ল্যাঙ্গুয়েজ"( ভাষা তোমাকে বিদায় সম্ভাষণ )ছবিটি আমার দেখা হয়ে ওঠেনি কিন্তু ছবিটির নাম জেনে মনে শঙ্কা জাগে - কোন অভিমানে গোদার বিদায় জানাচ্ছেন ভাষাকে? এই  ভাষা সিনেমার ভাষা নয়তো?