মানবেন্দ্র পাত্রের কবিতাগুচ্ছ
।।মা।।
সহজ আলোতে এসে
আজ পর্যন্ত চুমু খায়।
আলোক চুম্বনে ফোটে অজস্র স্নেহজ বকুল।
আগলে রাখে তার এই প্রিয়তা সম্বল।
এঁটো করে দেয় যখন
কনিষ্ঠ আঙুলটি চেয়ে--
সেই সময়েও জানি,জানি তার নাড়ীর দোপাটি।
জেনেছি কি…
মানবেন্দ্র পাত্রের কবিতাগুচ্ছ
।।মা।।
সহজ আলোতে এসে
আজ পর্যন্ত চুমু খায়।
আলোক চুম্বনে ফোটে অজস্র স্নেহজ বকুল।
আগলে রাখে তার এই প্রিয়তা সম্বল।
এঁটো করে দেয় যখন
কনিষ্ঠ আঙুলটি চেয়ে--
সেই সময়েও জানি,জানি তার নাড়ীর দোপাটি।
জেনেছি কি?
আঁচলে কত কত ক্ষয়িত সময়
কত রাত--
তবু
সমস্ত অন্ধকার মুছে
জেগে থাকে মা'প্রত্যয়!
তারও পরে
শেকড় চরে গেলে অনেক গভীরে,
গাছ টি বড় হয়ে গেলে
একদিন ঠিক
চিনে ফেলি নাড়ীর আকৃতি।
নাড়ীটি প্রতিমা হয়ে ওঠে...
------------------------
।।ঘর।।
চিলেকোঠা আর আমি সকাল সন্ধ্যা জেগে থাকি
চড়ুই সংসারে
এই আমার সহজাত প্রেম।
আদ্য অক্ষর মেনে যাপন করি
এই অর্ধেক সন্ন্যাস
তপোব্রত চোখে আলোকিত ডিম,
আর
কুসুম মাখা চোখে চেয়ে চেয়ে
লালিত আলতা মাখা পা
সারাঘর হেঁটে যায়
বুঁদ হয়ে সেই ছবি,সেই পদ ছাপ। সারা ঘরে...
একমাত্র সেই ভগ্নাংশে ভাঙে আমাকে।
আমি কি কখনো ঘর ভেঙে দিতে পারি!
---------------
।।মেঘ।।
কখনো দেখিনি তাকে
জামের পাতায় তার বিরহ
বসে আছে।
এই বৃষ্টিতে
কদমে বৃন্তে-পাতায়
তাকেই বিদ্যুৎ শিখা দেখাবো বলেই
সালোক মেঘে ডাকি।
বীজগন্ধ হাওয়ায় হাওয়ায়
সমুহ সম্ভ্রমে এই অনায়াস নিবিড় মরমে মরমে
তাকে দিই মৃত্তিকাকল্যাণ।
--------------------------------
।। হেমন্ত।।
চিরহরিৎ নই
পর্ণমোচী বৃক্ষ জন্ম এই।
পাতা ঝরা ঋতূ এলে
আরোগ্য আমারও হয়।
বাঁশপাতা আদর আর অলৌকিক সুখ
কুড়িয়ে জড়ো করে রাখি
আগামীর শীতে...
নাঙ্গা জীবন এই
ছাতিমগন্ধ মেখে মেখে
দীর্ঘতর শাখা প্রশাখায় ঋদ্ধিমান দোতারা বাজাই।
--------------;---------
।।বসন্ত।।
আজকেও পঞ্চমি তিথি ফুল ফুটিয়েছে।
শুদ্ধতার শাল ফুলে ফুলে
মায়াময় সেই বসতি।
খয়ের রাঙা তার ঠোঁটে উষ্ণতম প্রেম উজ্জীবন!
এমন নিবিড়তা পাই যখন
অমনি এক হরিৎ ডানার সেই পাখি
হাতের তালুতে এসে বসে।
চোখে তার কাজল নদী,
ডানাময় সরষের ক্ষেত,
ঠোঁট জুড়ে কুটুমের ঘন আস্বাদ
দুই গাছে থোকা থোকা পলাশ
লাল আভা গাঢ় হয়ে থাকে
-------------+//-----------
।।পূজা।।
বেজে যাও।যে ভাবে বাজাও নিজে
বেহেস্তের কাছে কার দায়!কিঞ্চিত মেনে
পাশুপত তীব্র তুমি ধারালো অসময়---
এসো না।তার চেয়ে হাঁটু গেড়ে বসো।
পান কর গীতিকা এই যে তরল,
আকাশকে ডেকে এনো। হোক অর্পণ।
সম্মতি দিয়েছি তো।পূজিতা আখ্যান।
আধারে রেখো না তাকে,মুঠি খুলে দাও।
আহ্নিকে কান্না থাক,প্রকৃত ক্ষনন!
---------------
।।ধ্যান।।
এই যে যেমন করে কথা বল
এই যে যেমন করে গাঢ় হয় সব প্রসাধন,লিপস্টিক
নিবিড়তা টুকুও যখন
আরো আরো আপন হয়
মনে হয় লতানো মাধবী ফুটে আছে...
হাঁস আর হাঁসের সাঁতার
জল কে পরিপাটি করে
যদি প্রতিবার
ক্যানভাসে প্রেম এঁকে দেয়
কারু মন্ত্র দাও তবে আমের পল্লব!
এই যে যেমন করে দানা দিই,
প্রতি ঋতূকাল
অনিঃশেষ সঙ্গমের শেষে
তা দেয় জননী-ধ্যান
কুসুম কুসুম ময় এই পরিযান!
-----------------------------
৷ প্রেম।
এমন আগুন তাই জ্বেলেছি, এমনই অসুখ
প্রদীপ জ্বালাও আজ সন্ধ্যায়, যাজন শুরু হোক
উষ্ণ কপাল জলপটি দাও জ্বর ভীষন জ্বর।
পুড়ুক আদর,সালতামামির সাধে সাধুক গান।
কৈশিকি চাঁদ, শাল পাতা এবং দৈনতা।
নে খেয়ে নে ভূতের মতোই এই যে কলিজা।
ও পর্যায়, সাথেই থেকো, সাত বহনি হয়ে।
কলসি তোমার মাথায় থাকুক আমিও থাকি সাথে।
ডুলুং পাড়ের এই যে নেশা মাদল বাজা রাত
ঝুমুর আদিম সুরেতে হোক মহুল অভিসার।
ঘরের পাশে এই যে বুড়ো মহানিম গাছ।
শিকড় বাকড় করেও তো রাখতে পারি তাকে
আমিও তো এমন করেই পাতা-সারুল গান
সার্থক প্রেম আমার যখন শাল ফুলে ফুলে।
বাঁউড়ি রাতের সোহাগ,আদর সঙগে রেখেছি।
এমন চকমকি আলো রোজই জ্বলে ওঠে
এই আলো'কে পান করি আর
চাঁদের ঘরে যাই
আড়বাঁশি ময় জোৎস্না গলে চিকন বিছানায়...
------------------------