Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শাল পাতার ডায়েরি ঃ আট

শাল পাতার ডায়েরি ঃ আট

সুষেন সম্পর্কে দু চার কথা

অমিত মাহাত

বড়কোলা গ্রামটি  শেষ হয়েছে মাইতিপাড়ায় বটতলার কাছে। সোজা নদীর পার বরাবর পথটি মাইতিপাড়া। বটতলা থেকে আরো একটি রাস্তা ডানদিক হয়ে গেছে। এটিই মেইন রোড।  গোহমিডাঙা হয়ে ধরমপুর। আ…




শাল পাতার ডায়েরি ঃ আট

সুষেন সম্পর্কে দু চার কথা

অমিত মাহাত

বড়কোলা গ্রামটি  শেষ হয়েছে মাইতিপাড়ায় বটতলার কাছে। সোজা নদীর পার বরাবর পথটি মাইতিপাড়া। বটতলা থেকে আরো একটি রাস্তা ডানদিক হয়ে গেছে। এটিই মেইন রোড।  গোহমিডাঙা হয়ে ধরমপুর। আরও কিছু টা এগোলে মুলিয়াপাড়া। জিরাপাড়া হরিনা। ভুলকা। আঁধারজোড়া। এইসব। গ্রাম। মানুষ। লালপার্টি। কমিটি। বনপার্টি। মাওবাদ। হার্মাদ। এক একটি সংগঠন। এক দিনের বেলা গিয়ে শাসায়। পার্টি অফিসে তুলে আনে। ঘা কতক পড়ে। আর একটি পক্ষ সন্ধে হলে চরতে বেরোয়। যে গাঁয়ের লোক এসেছিল দিনের আলোয়। এবার তাদের বাড়িতে চড়াও হয় এই পক্ষটি। দরজা ফাটানো থেকে মেরে হাঁটুর নীচের টাঁক ফাটানো। এইসব ব্যাপার নিত্যকার। এগুলো না ঘটলে বুঝে নিতে হবে আরও জোরালো ফন্দি আঁটছে যুযুধান দু পক্ষ। দেখা যাচ্ছে কেউ একতিল জমি ছাড়তে চাইছে না। এবার লালপার্টি আমদানি করল হার্মাদ। কেশপুর। গড়বেতা ওদিকের খুনে বাহিনী ডেরা নিল লালপার্টির অন্দরমহলে।এদের টার্গেট হল মেয়ে বউদের মাংস ছেঁড়া। যে খবর মিডিয়া কভার করেনি। বাধা দেওয়ার কেউ রইল না। পুরুষ তো পুলিশের তাড়ায় পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। হার্মাদ আসছে। বাহিনী আসছে। মাওবাদের অতিসক্রিয়তা তারপর থেকেই।

রাস্তার দু পাসারি মাঠ। চাষের। বেগুন লংকা  ভেঁড়ি। আলু। সরষে উঠে গেছে। হালকা গরম পড়েছে। খসলা তিল একটি দুটি পাত মেলেছে দিনের আলো পেয়ে। বুড়াইস্টা ধাদরা বাঁধা কপি মাঠে কাটা মাথার মতো পড়ে আছে। বাজারজাত করা যায় নি এগুলো। করবে কী করে? বন্দুকবাহিনীর গ্রাম শাসানো যেভাবে ত্রাস ছড়িয়েছে। হাটে যাওয়ার মরদটিকে কি ঘরে থাকতে দিয়েছে? লালগড় বলো। ধেড়ুয়া বলো। দহিজুড়ি বলো। ঝাড়গ্রাম বলো। বস্তাবন্দি করে নিয়ে যাওয়ার হয়রানি পোহাতে হয় তো। এদেরকেই। তার উপর দেড় মাসের উপর টানা অবরোধ চললে টান তো পড়বেই।

গোহমি ডাঙা হাইস্কুল। যৌথবাহিনী দখলিকৃত। ছাদের উপরে নাক বরাবর খাড়া এস এল আর নিশান রাস্তার পথচারীদের দিকে। অনেকদূর থেকে।আড়চোখে দেখে নিন স্কুলটিকে। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে তাকিয়েছেন তো গিয়ে পড়লেন বাহিনীর জেরার মধ্যে। পুলিশি জেরা একরকম। উকিলি।জেরার মুখে অনেককেই পড়তে হয়েছে। কিন্তু যৌথবাহিনীর জেরার ধরন আলাদা। এক তো সমস্যা ভাষা নিয়ে। হিন্দি ছাড়া অন্য একটি শব্দও নেই। গাঁ ঘরের পথচলতি মানুষ ভালো করে বাংলাটাই বলতে পারে না। হিন্দিতে জবাব দেওয়া তো।আলাদা।

একবার হয়েছিল কি। খোলকত্তাল। হারমনিয়াম লুকড়িঝুকড়ি নিয়ে সাইকেলে করে একটি গ্রামে যাচ্ছিল কীর্তনগান এর দলটি। দশবারো জনের উপর একটি সাইকেল বাহিনী। লম্বা লাইন দেখেই ক্যাম্পের কাঁটাতারের মুখে আটকে দিয়েছিল সবকটিকে। জেরা। ভোটার আইডেন্টি প্রুফ মেলানো। মুখে চেহারায় মিল নেই। সৌজন্যে নির্বাচন কমিশন। ভোটার কার্ড।

"সাধের বাতাসা
তোর লাগে মোর কীর্তনে আসা। "
ব্যাপারটা এই জায়গায় দাঁড়াল। আইনের ধারা। একশ চুয়াল্লিশ পকেটে পুরে রাখ তোর। কাজ কাম নাই। একটা পোগ্রাম। তিন দিনের তিনবেলা ভাতমুঢ়ি। ফ্রি। রাস্তাখরচ দু পঞ্চাশ। কীর্তনের দলের কেউ হিন্দি তো জানেই না। কাবরা হিন্দি তে বাহিনী সামলায়।

--ইতনা সারি আদমি?
-লে সামলা! হিন্দি বলৈয়া যে! শুনঅ সাহাব হিন্দিটা বাংলা কর‍্যে বলল্যে হইত্য নাই?
-ইয়ে ক্যায়া হ্যায়?
--অ। ইটা ত কত্তাল। ছিনিক ছয়ক ছয়ং ছপক! বাজায় শুনাব?

--রোকিয়ে, রোকিয়ে।
-ইটা ত ঝুমকা। হিলালেই ঝুনুক ঝুনুক। এইটিক ধর‍্যে এইটিক ঘুইর‍্যে এইটিক বাজাতে হয়। ঝুম ঝুম ঝুমকা গিরা। রাক রাক পাঁয়তাহারা।

-খোল দো।
- দে তো বুচকা। সাহাবকে। বধয় বাজাবেক।

খোল তো চাপড়ালোই না। উল্টে মাটিতে ফেলে  বাদ্যটির শেষ বাতাসটি বার করে ছাড়ল। ক্রমে চাউর হয়ে পড়ল মুখে মুখে। এমন ঘটনা আদৌ হয়ত ঘটেনি। সামান্য জেরা হয়ত হয়েছিল। কিন্তু এ গল্প ছড়িয়ে পড়ল এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায়।

মুলিয়া পাড়া মাহাত অধ্যুষিত গ্রাম। মুলিয়া কথার অর্থ মজুর। শ্রমজীবি মানুষ। একসময় হয়ত চাষের কাজে চাষির রোজকার কাজের জন্য বাইরের মজুর  দুবেলা ভাত আর বছরদিনের কাজের আশায় এসেছিল। থাকতে শুরু করেছিল। একটি পাড়া হয়। মুলিয়াপাড়া। আবার এও হতে পারে যত কাজের লোক তুমি পাবে মুলিয়া পাড়ায়।

সুষেন মাহাত এই মুলিয়া পাড়ায় থাকত এক সময়। এখন থাকে না। তার মাথায় খেয়াল চাপল। পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াবে সে। নমিনেশন জমা দেবে লালগড় বিডো আপিসে। ধরমপুর অঞ্চলে এমনটি  আগে ঘটে নি। লাল পার্টির উল্টোদিকে এতদিন কেউ ভোটে লড়ার সাহস দেখায় নি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রত্যেকবার ধরমপুর অঞ্চল বোর্ড গঠন করে আসছে অনুজ ডালিম রা। সেই জায়গায় সুষেন ভাবল কি করে সিপিএমের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াবে!

সুষেন কিন্তু পিছিয়ে আসল না। ঝাড়খন্ড পার্টির হয়ে কুঠার চিহ্নে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ল। মুলিয়া পাড়া জিরাপাড়া আশেপাশের যারা সুষেনকে চিনত। ভালো বাসত। হিংসা করত। যারা পাড়ায় লালপাটির পুরনো সমর্থক ছিল। সুষেনকে বোঝাল।
--ভেবে দ্যাখ সুষেন। ভোটে লড়তে যাস নি। পান্ডের ব্যাটারা এক।একটা বড় গুন্ডা। তোকে আস্ত কাটি মাটি চাপা দিবেক।
সুষেন বলেছিল -আসুক দেখি। বাইমনার দম কত!

--অদের সাথে লাগ্যে তর লাভ?

লাভ ক্ষতি পরের হিসাব। সুষেন উল্টের ওর পাড়ায় যারা সিপিএম করে। ওদের ধমক দিতে শুরু করল। তার উপর বয়স কম। যৌবনের রক্ত। ভোটের দিনে ব্যাপক সন্ত্রাস। ছাপ্পা। রিগিং। সুষেনকে ভাগিয়ে দেওয়া হল। সে রাতেই তুলে আনা হল ধরমপুর পার্টি অফিসে। পিটুনি শুরু। ভোররাতে সুষেনের আর সাড়া পাওয়া গেল না। বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়া হল জঙ্গলে। তারপর আর সুষেনকে কেউ দেখেনি।

সুষেন কোথায় চলে গেল। ধরমপুর অঞ্চল অফিস আর অনুজ পান্ডের বাড়ি ভাঙার আবার কয়েক দেখল সুষেনকে। সুষেন তখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। যে কটা সিপিএমের লোক তার পিঠ ফাটিয়ে ফেলে দিয়েছিল। তুলে আনা হল ওদের।

সুষেনের হাত ধরে বিকাশ এসেছিল ধরমপুরে। সুষেন এখন মাও স্কোয়াড সদস্য।