Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তাপস দত্তের ধারাবাহিক উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি

ধারাবাহিক উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি
তাপস দত্ত

 —হ্যাঁ, আছে ঔযে মােড়টা দেখছেনওইখানে। আপনি যান পেয়ে যাবেন। সব যন্ত্র কেনার পর কিছু ঔষধ কিনে নেয় চন্দ্র। তারপর আবার ফেরার পথে পা বাড়াল।

যাওয়ার পথে গ্রাম গুলােতে অসুস্থ মানুষদের সেবা ক…



ধারাবাহিক উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি
তাপস দত্ত

 —হ্যাঁ, আছে ঔযে মােড়টা দেখছেনওইখানে। আপনি যান পেয়ে যাবেন। সব যন্ত্র কেনার পর কিছু ঔষধ কিনে নেয় চন্দ্র। তারপর আবার ফেরার পথে পা বাড়াল।

যাওয়ার পথে গ্রাম গুলােতে অসুস্থ মানুষদের সেবা করতে লাগল। এবং সবাই কে
জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে বলল। ব্লিচিং পাউডার বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে চারপাশ পরিষ্কার করতে বলল।

ক্রমশ মানুষের কাছে চন্দ্র ডাক্তারবাবু নামে পরিচিত হয়ে গেল।

গ্রামের রজনী বুড়াে বলে-আমাদের চার পাঁচটা গ্রামে কোন ডাক্তার নেই।

প্রায় আমাদের কৃষ্ণপুর গ্রামে মানুষ-জন বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। ওই গ্রামে সিস্টার দিদিমনি, ফাদার-আর দুই জন কি করবে?এখনাে আমাদের গ্রামে এলেন ना! শুনেছি মোল্লাল গ্রামে চিকিৎসা করছে। ক্রমে সারা কৃষ্ণপুর, পলাশীগ্রাম-এচন্দ্র ডাক্তারের নাম ছড়িয়ে পড়ল। আন্ত্রিকের প্রকোপ থেকে ধীরে ধীরে মানুষ জন ভালাে হয়ে উঠতে লাগল। চন্দ্র একদিন রজনী বুড়ােকে ভেকে বললে-আমি এবার যাব এবান থেকে। অন্য গ্রামে অনেক লােক মারা যাচ্ছে-আপনারা আমায় বিদায় দিন, রজনী বুড়াের চোখে জল এল।

-আপনি না এলে এই অভাগা দের কি যে হতাে সে ঈশ্বরই জানেন। আপনি আমাদের কাছে দেবতা! বৃন্ধ রজনী ঝর ঝর কাঁদতে লাগল। হঠাৎ-ই বৃদ্ধা মহিলা চন্দ্র-এর পায়ে ধরে কাঁদতে লাগল। চন্দ্র কিছু বুঝতে পারার আগেই শুনতে পেল-আমার একমাত্র ছেলেটাকে আপনি বাঁচাইছেন!আপনার ঋণ আমি কোনো দিন শোধ করতে পারব না। ভগবান আপনাকে সুখি রাখুন।

ভগবান....আমাকে....সুখ....দুঃখের হাসি মুখ থেকে বেরিয়ে এল।
-চলি....

চন্দ্র অন্য গ্রামে পোঁছাল। দিনের পর দিন রােগগ্রস্থ মানুষদের সেবা করে

চলল। মারিয়া যখন মােল্লাল গ্রামে পৌঁছাল তখন মানুষদের মুখে শুনল ডাক্তার বাবুর কথা। ওদের কথায় ডাক্তার বাবু দেবতার মতাে এসেছিলেন আবার চলেও গেছেন অন্য গাঁয়ে। মারিয়ার ওই ঔষধগুলাে এবং প্রেসক্রিপশান দেখে মনে হল হ্যাঁ,খুব ভাল ডাক্তার সন্দেহ নেই। কিন্তু ডাক্তার যে কে বুঝতে পারল না মারিয়া। না আর অন্য গ্রামে গিয়ে কাজ নেই। এবার ফিরে যাওয়া যাক। ফাদার অসুস্থ খবর পেয়েছে। তাছাড়া সেই অচেনা অসুস্থ লােকটি কেমন আছে কে জানে? মারিয়া গির্জার পথে। পা বাড়াল। গির্জায় ফিরে এসে দেখল ফাদার মৃতপ্রায়। ফাদারের মুখ থেকে শেষ কথাটা শােনার চেষ্টা করল।

-ও টাকা চুরি করে পালিয়েছে!

ফাদার চলে গেলেন। অনেকক্ষন ফাদারের মৃত দেহের দিকে চেয়ে চুপচাপ বসে রইল। এক সময় সন্ধ্যা নেমে এল, বাতি জ্বালাল না মারিয়া। সারা গির্জা অন্ধকারে ছেয়ে গেল। মারিয়ার স্মৃতির পটে ভেসে এল সেই অচেনা লােকটির মুখ। সেকি সত্যিই চুরি করে পালিয়েছে। কিন্তু কেন ? আমি একা হয়ে গেলাম ফাদার
কান্না ভেসে এলাে ওর বুকের গভীর দুঃখ থেকে।

আজ অনেকদিন পরে চন্দ্র গির্জায় ফিরে আসছে। হঠাৎ দুর থেকে লক্ষ করল | গির্জায় আলাে জ্বলছে না। কিন্তু গির্জায় মারিয়া এবং ফাদার দুজনেই  ফিরে এসেছে লােকের মুখে শুনেছে। তবে কি গির্জাতে নেই ?তবু ডাক দেয়
ফাদার আছেন? কোন উত্তর আসে না।-সিস্টার মারিয়া আছেন?
 না কোনাে উত্তর নেই। এই সময় কি করবে ভেবে পেলনা, শরীরেও
যন্ত্রনা সহ্য হচ্ছে না চন্দ্রের।
 গির্জার ভেতর থেকে মারিয়া সাদা পােশাকে বেরিয়ে এলাে। হাতে জ্বলন্ত মােমবাতি। যেন মাতা মেরীর মতাে রূপ। কি স্নিগ্ধ ,  শান্ত সারা শরীর জুড়িয়ে গেল  এক অনাবিল আনন্দে।

-আমি চোর, ধরা দিতে এলাম।- সে তো দেখেই বুঝতে পারছি তুমি চোর।
ফাদার চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। তার সৎকার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
 চন্দ্র যেন চমকে উঠল। জিজ্ঞাসা করল-কখন?

—অনেকক্ষণ
-আচ্ছা, আমি ব্যবস্থা করছি। তুমি যাও। চন্দ্র একটা কোদাল নিয়ে গর্ত খুঁড়তে গেল গীর্জার পাশে ফাদারকে সমাধিস্থ করার জন্য।  চাঁদ কিরন দিতে দিতে পশ্চিমে ঢলে পড়ছে, মাঝে মাঝে শেয়ালের ডাক শােনা যাচ্ছে।

যখন ফাদার কে সমাধিস্থ করা হয়, তখন ভােরের আলো ফুটে উঠেছে।
মারিয়া বলল,চলুন স্নান সেরে আসা যাক। তারপর বিশ্রাম নেবেন। সুবর্ণরেখা নদীতে দু জনে স্নান করতে চলে গেল।

-প্রথমে আপনি স্নান করুন আমি ওই উঁচুতে বসছি। মারিয়া স্নান করতে নদীতে নামল।

এই নদী সব শেষ করে দিয়েছে । কেড়ে
নিয়েছে মুনাই, গােধূলিকে ওর কাছে থেকে আলাদা করে দিয়েছে।কত মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তার ঠিক নেই। হঠাৎ চোখ পড়ল সিস্টার মারিয়ার দিকে।
কোথায় যেন দেখেছে!  মারিয়ার নিটোল শরীর
 ক্রমশ জল থেকে উঠে এলাে। চন্দ্ৰ মুগ্ধ হয়ে গেল মারিয়াকে দেখে । মারিয়া ও
লক্ষ করেছে চন্দ্রের উদাস ভরা চাহুনিটিকে। কি ভীষণ কান্না পাইয়ে দেয় মনে। | মারিয়া তবু বলে আপনি স্নান করুন, আমি আসছি। মারিয়া চলে গেল।


চন্দ্র নদীতে  স্নান সেরে যখন গির্জাতে ফিরল, তখন সিস্টার মারিয়া প্রার্থনায় বসেছে। এক মনে প্রার্থনা করে চলেছে মারিয়া। চন্দ্র জিজ্ঞাসা করে-আপনি খাবেন না সিস্টার মারিয়া ? আসুন আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে।

-আপনি এখন খেয়ে নিন। আমি পরে খেয়ে নেব।-ও আচ্ছা। বলে চন্দ্র ভেতরে চলে গেল।না খেয়ে চন্দ্র ঘুমিয়ে পড়ে। অনেকক্ষন পর যখন ঘুম ভাঙল তখন মারিয়া ওর শিয়রে বসে। মারিয়া বলে আপনি খেলেন না কেন?

চন্দ্র বলল আপনিও তাে খাননি। আমারও ভুল হয়েছে। আমার সঙ্গে খাওয়া উচিত ছিল চলুন, এবার উঠুন। চন্দ্র বিছানা ছেড়ে উঠল।
ওরা দুজনে খেতে বসল, হঠাৎ মারিয়া জিজ্ঞাসা করে আপনি কি ভাক্তার?

—না,একটু আধটু ডাক্তারিটা জানি আর কি।
-একটু আধটু নয়, আপনি ভালই জানেন। ওরা আপনার খুব নাম করছিলেন।
-ওরা কারা?
-ওরা বলতে কৃষ্ণপুর ও মােল্লাল গ্রামের লােকেরা। ওরা আপনাকে তাে  দেবতার মতো শ্রদ্ধাকরে।
—ওরা সবাই বাড়িয়ে বলেছে।
-আচ্ছা তুমি টাকা নিয়ে কি করেছ?
-আমি ঔষধ ও কয়েকটি ডাক্তারি যন্ত্র কিনেছি।
-ও তাই বলাে। ফাদার যাওয়ার সময় কি বলেলন জানেন? কি আর বলবে?চোর ছাড়া কিছুই নয়!
...........

চলবে