Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শালপাতার ডায়েরি : রাতের আইন আর ডি এস পি

শালপাতার ডায়েরি ঃ এগারো

রাতের আইন আর ডি এস পি

অমিত মাহাত

সন্ধ্যের অন্ধকার হতে না হতে নির্মল কাকা আমার চালির খাটে এসে বসে পড়েছে। হাতে এভারেডি টর্চ। টর্চের গায়ে ও মুখে  ন্যাকড়া জড়ানো। ডিলার কাকাও আমাদের গলার আওয়াজ পেয়ে বাদাড় ডিঙিয়…




শালপাতার ডায়েরি ঃ এগারো

রাতের আইন আর ডি এস পি

অমিত মাহাত

সন্ধ্যের অন্ধকার হতে না হতে নির্মল কাকা আমার চালির খাটে এসে বসে পড়েছে। হাতে এভারেডি টর্চ। টর্চের গায়ে ও মুখে  ন্যাকড়া জড়ানো। ডিলার কাকাও আমাদের গলার আওয়াজ পেয়ে বাদাড় ডিঙিয়ে ওই আসছে। এসে পড়বে তিমির কাকাও। কাকাদের গোঠে আমি একমাত্র পুতরাছানা। রাত পাহারার টিমটি কে যে এভাবে সাজাল কে জানে। বিড়িতে টান দেব তারও উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।

গাঁয়ে পাকা কুয়াশালে যেদিন মিটিং বসেছিল, আমি ছিলাম না। আমাদের ডিএস পি। সে মিটিংএর মধ্যমনি। সে মিটিং এ পাশ হল প্রত্যেক ঘরের পুরুষদেরই পালা করে রাত পাহারা দিতে হবে। এটা দাদাদের অর্থাৎ মাওবাদীদের রাতের আইন। আমরা ছাপোষা লোক। না মেনে মরি আর কি। মংলা আর ভজা পেল ডাকৈয়া হাঁকৈয়ার পদ। এরা দুজন কবে কোথায় কোন মাঠে জড়ো হতে হবে এবং কোন সময়ে তা এদের মাধ্যমে সে খবরটি পাব। খবর কানে এল। চুপ করে রইলাম। তা করলে চলবে না। প্যাটবেথা, পাতলাহাগা এইসব বাহানা নট এলাও। মোট কথা হাজির থাকতেই হবে।

দলবেঁধে হইহল্লা করতে করতে মিটিং বা রাতের গন আদালতের মাঠে যাওয়া যাবে না। একা একা যেতে হবে। পথে কারও সাথেই কথা। ফিসফাস এসব চলবে না৷  টর্চ জ্বালানো চলবে না। বিড়ি খাওয়া চলবে না। কারণ বিড়ির আগুন অনেক দূর থেকে দেখা যায়। সেই মতো অনুসরণ করে হার্মাদ বা পুলিশের লোক কিংবা নিদেন বনপার্টির দাদারা এলে পিঠ বাঁচানো মুশকিল। পাহার সহ্য করতে পারলে হল। মার খাও। তা থেকে শিক্ষা নাও। পরে এইভুল বা বিড়ির মাশুল যাতে না গুনতে হয়।

সেদিন আমি ছিলাম না। পাড়ায়। রাত পাহারায় আমার নামও ঢুকিয়ে দিল। দিল তো দিল সব কাকাদের গোঠে। স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনা বা ফিসফিস কিছুই তো জমবে না। বিড়িও তো খেতে পারব না। কাকারাও গুটিয়ে রয়েছে। পুরো চুপচাপ।

নির্মল কাকা বলল, তিমিরটা আলেই বেরায় পড়তে হবেক।
তিমির কাকা এল সামান্য দেরিতে। ব্যালাডুবা আহারটি তো খেতে হবে আগে। গোটা রাত জাগতে হবে মাঠে কিংবা জঙ্গলে।

আমি বললাম -তাইলে কনদিগে বসা হবেক বঅ!
তিমির কাকা জানাল -রাস্তার ধারে থাকা যাবেক নাই। পুলিশের গাড়ি যে হারে চরকিছে। তাতে বিপদ।

নির্মল কাকা আবার ভয়ানক পেলু। গাড়ির শব্দ কিংবা আলো দেখতে পেলেই হাত পা কাঁপতে শুরু করে।
ডিলার কাকা চুপচাপ। আমাদের কথা শুনে যাচ্ছিল। অবশেষে ঠিক হল এমন একটি জায়গায় থাকতে হবে যেখান থেকে গ্রাম আর রাস্তা দুটোর উপর নজর রাখা সম্ভব।

সেইমতো আমরা। বনকোচড়ের টনে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যার গামছা বিছিয়ে শরীরটিকে এই কষ্টের ভেতরেও খানিক আরামের উপযোগী করে তোলা। সারারাতের ব্যাপার। ভ্যালা বাগানের মোহানে আমার গামছাটিকে বিছিয়ে তার উপর পোঁদ হেবজে দিলাম। এ ছাড়া আর কী করা যায়।
"পড়েছি যবনের হাতে
খানা খেতে হবে সাথে। "

মশার কামড়, পোকার কামড় সহনীয়। কিন্তু ঘুম যদি এসে কামড়ায়। মহুয়াচকের সামনে কয়েকটা মোটর সাইকেল দাঁড়াতেই নির্মল কাকার হামগুড়ি শুরু। পিছিয়ে পিছিয়ে আমারও পেছনে খেজুর বুদার আহড়ে সেঁটিয়ে গেল। দুটি টর্চ ভাচাক ভুচুক করে আমাদের দিকেই এগোতে শুরু করেছে। আর আমরা পিছোতে পিছোতে মড়াকোচার মাঠে ভেতর ঢুকে পড়েছি কখন।

টর্চএর মানুষ দুটির একজন। বিনয় অবতার। আজও মহুল গিলেছে। গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর একজন। গোঁসাইবাধের একটি ছেলে। এরা বেরিয়েছে টহল দিতে।

তারপর বিনয় শুরু করল আরেক গল্প। আজ রাতে ডি এস পি গোঁসাইবাঁধের গনমিলিশিয়া টিম নিয়ে বালিজুড়িতে চড়াও হয়। হাঁদুচরনের ঘর। সি পি এমের নেতা। দুবড়া অঞ্চল অফিসে এতদিন সে লুকিয়ে ছিল। মারের ভয়ে গাঁয়ে পা মাড়ায় নি। আজই সে ঘরে এসেছে। সে সুযোগে ব্যাটাকে ধরে রাম ক্যালানি। তারপর তাকে দিয়ে মুচলেকা লেখানো হয়। লাল পার্টি সে আর জান থাকতে করবে না। এইসব এইসব। একটা হেস্তনেস্ত করে বিনয় অবতার এই ছেলেটিকে সাথে করে কোন গাঁ কেমন সেন্ট্রি দিচ্ছে কি আদৌ দিচ্ছে কি না তা দেখতেই বেরিয়েছে।

মহুয়াচকে ডিএস পির বাইক দাঁড় করানো। এখন মাইন ফেরেস করছে। সামান্য না গলায় দিলে ভেতরের সিপিএম বিরোধী রাগ টা বাইরে  বেরতে পারে না। এই যেমন আজ হাঁদুর ধোলাই হল বালিজুড়িতে। সে তো এই ডিএস পির তেজে। খালি পেটে ধর্ম হয় না মশাই। গলায় পড়লেই বাঘের তেজ। ডি এস পি একটি মদের নাম। ডি এস পি  এখন দাদার ভূমিকায়।