Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ধারাবাহিক উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি

ধারাবাহিক উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি (পর্ব-১১)
তাপস দত্ত
*******
তুমি কি করে জানলে ?
এমনিই জানলাম।
 রাত নেমে এলাে পৃথিবীর বুকে। মারিয়া ঘুমিয়ে পড়ল। যিশুর সামনে মোমবাতি জ্বলছে।যেন স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন  মারিয়ার মুখমন্ডলে। চ…


ধারাবাহিক উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি (পর্ব-১১)
তাপস দত্ত
*******
তুমি কি করে জানলে ?
এমনিই জানলাম।
 রাত নেমে এলাে পৃথিবীর বুকে। মারিয়া ঘুমিয়ে পড়ল। যিশুর সামনে মোমবাতি জ্বলছে।যেন স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন  মারিয়ার মুখমন্ডলে। চন্দ্র গির্জার বাইরে বেরিয়ে এলাে। উঁচু ঢিপিটায় বসল। আকাশের দিকে তাকাল। অসংখ্য নক্ষত্র ফুটে উঠেছে। হাল্কা হাওয়া
চুলগুলােতে যেন মায়ের স্নেহ মাখা হাত বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মনে পড়ল সেই দোতলার ছাদের কথা, মনে পড়ল গােধূলির কথা। আচ্ছা ওকি ভাল আছে?

চন্দ্রের মনটা বড় উতলা হয়ে ওঠে। সব আছে। সেই আকাশ, সেই নক্ষত্র সেই হাওয়া কিন্তু শুধু গােধূলী নেই হারিয়ে গেছে। মনে পড়ল তনিমার ভয়ঙ্কর আচরণের কথা। ছিঃ ছিঃ ছিঃ ও না এলে জীবনে এত কিছু দুর্ঘটনা ঘটত না। যখন ভােরের ডাক এল চন্দ্র তখন বিছানায় আশ্রয় নিলাে। গভীর ঘুমের কালাে ছায়া ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাে।

অনেক দিন পর গােধূলি সুস্থ হয়ে উঠেছে। অনেকে চলে গেছে পৃথিবী থেকে। গােধূলি দোতলায় দাঁড়িয়ে থাকে। হয়ত চন্দ্র ফিরে আসার অপেক্ষায়। কিন্তু দিন যায় রাত আসে, কিন্তু ফিরে আসে না চন্দ্র। বইগুলােকে সামলে রেখেছে, ও যদি ফিরে আসে।  চন্দ্র আর ফেরে না। প্রতিদিন রাতে ঘুম ভেঙে যায় গােধূলির। মনে হয় কে যেন কবিতা আবৃত্তি করছে । মনে পড়ে ও কি যেন কবিতা আবৃতি করত...
 "স্নিগ্ধ সুশােভিত মায়ার কোলে,
নাওনা দুহিতা আমায় লুকায়ে
 আশাতিত বেদনায় বারে বারে হত
দাওনা শীতল পরশ জীবনের মতো"।
[30/03, 8:17 PM] Kobi Tapas datta2: আর মনে পড়ছে না -আচ্ছা চন্দ্র তুমি কি আমায় মরনের পরও ক্ষমা করতে পারবে? জানি না পারবে না। আমার ওপর তুমি অভিমান করেছ আমি জানি।

এই ভাবেই আপন মনে প্রশ্ন করে গোধূলি আপন মনেই উত্তর দেয়। এই ভাবেই শূন্য ঘর, শূন্য মন, শূন্য বেদনায় নিজেকে লুকিয়ে রাখে। সেদিন চন্দ্রের ঘরখানায়
 বইগুলাে উল্টাতে উল্টাতে চন্দ্রের ডায়েরীটা চোখে পড়ে  পড়তে শুরু করে গোধূলি। পড়তে পড়তে ডায়েরীর শেষ পাতায় গােধূলির চোখ আটকে যায়। যদি কোন দিন,তােমার হাতে পড়ে তুমি সেদিনই জানতে পারবে আমি কে! আমি
"স্বরসত্যম মহাবিদ্যালয় এর ছাত্র। তুমি আমি একই কলেজে দু'বছর পড়েছি। তােমার মনে পড়বে কিনা আমি জানি না। আমি চন্দ্র দত্তগুপ্ত বি.এস.সি.-তে পড়তাম।
তােমায় দেখে প্রেমে পড়লাম। একদিন তােমায় লাইব্রেরী রুমে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে গোলাপ ফুল দিতে গেলাম।তুমি আমায় গালি তাে দিলেই ফুলটাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলে। সেই থেকে....'

গােধূলি মুখ ওপরে তুলল। চোখ থেকে যেন শ্রাবনের ধারা বয়ে চলল। মনে মনে বলতে লাগল তােমার সঙ্গে অনেক অন্যায় ব্যবহার করেছি। যদি পারাে আমায় মৃত্যু দিয়ে যাও...। কান্নায় ওর গলা রােধ হয়ে এল। ডায়েরীটা বন্ধ করতে যাবে হঠাৎ একটা ছােট কাগজ পড়ে গেল পায়ের কাছে। ছােট চিরকুটে লেখা....

গোধূলি

নাইবা নিলে এই রক্ত গােলাপের রক্তিম ভালবাসা। নাইবা দিলে তােমার ভালবাসার পবিত্র সৌরভ।কত দিন মনে  গুনি। করি অসীম অপেক্ষা। পথ ভুলে ও তুমি এলে না।শুধু ই ভুল
বুঝে গেলে,দুঃখের বোঝা বাড়িয়ে দিলে!এখন আমি চলি। আমার অস্ত যাওয়ার সময় হয়েছে।তুমি সুখে থেকো,ভালো থেকো।
                                           তোমার  শুভাকাঙ্ক্ষী
                                                   চন্দ্রদা

 গোধূলির কণ্ঠ যেন রােধ হয়ে এল। তুমি আমায় এত ভালবাসতে চন্দ্রদা? এত এত চন্দ্র!

যেন কান্নায় ভিজিয়ে দিলো নীল আকাশের অসীম নিলিমাকে। উষা বৌদি ওর মাথায় হাত বােলাতে লাগল, বৌদির বুকে ও মাথা গুঁজে কাঁদতে  লাগল। দেখতে দেখতে অনেকদিন কেটে গেল। গােধূলির অন্য জায়গায় বিয়ের চেষ্টা চালাতে লাগল শরৎ।


চন্দ্র ঘুমিয়ে,মারিয়া নদীতে স্নান করতে গেল। স্নান সেরে যখন ঘন্টা খানেক পরে ফিরে এলো, তখনও চন্দ্র গভীর ঘুমে অচেতন। মারিয়া ওর মুখমন্ডলটিকে  ভাল করে নিরিক্ষন করতে লাগল। সত্যিই চন্দ্র দেখতে খুব সুন্দর, কেমন যেন অজানা দুর্বলতা ঘিরে ধরল মারিয়াকে। যেন মনে হলাে মারিয়া ওর মুখে একটা উষ্ণ চুম্বন এঁকে দেয়। পরক্ষনেই পিছিয়ে এলাে, ছিঃ ছিঃ একি ভাবছি।  সে একজন সন্যাসিনী। তার কামনা বাসনা মানায় না। যিশুর কাছে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতে লাগল। ঠাকুর আমার কামনা বাসনা সব তুমি নিয়ে নাও। এসব কথা যেন আমার মনের মধ্যে না আসে। চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে যেতে লাগল মারিয়ার। ক্রমে শীত নেমে এল। হাড় কাঁপুনি ঠান্ডাতে বাইরে বেরানাে যায় না। তবু দুর দুরান্ত গ্রামে বেরিয়ে যায় মারিয়া। মানুষের খোঁজ খবর নেয়।
কোন মাটিতে কোন ফসল ভাল হবে এই জানায় মারিয়া। ফেরে গ্রামে গ্রামে, কৃষকরা ভাল ফসল ফলাতে আরম্ভ করতে লাগল, সার, কীটনাশক, ঔষধ ব্যবহার করতে লাগল এর ফলে প্রচুর ফসল ফলতে আরম্ভ করল। কিন্তু মহাজন দাম ভাল দিচ্ছে না। ওজন ঠকিয়ে নিচ্ছে পয়সা কম দিচ্ছে। সুজন চাষিদের নিয়ে মারিয়ার কাছে এল। ওদের অভাব অভিযােগ শােনার পর বলল -তােমরা যে যার বাড়ি চলে যাও কাল সকালে মাধব মহাজনের কাছে যাব। ওরা সকলে তাই মেনে নিয়ে ফিরে গেল।

চন্দ্র এতক্ষন শুনছিল চুপচাপ -এই মাধব মহাজনটি কে ?

মারিয়া বলে-সুদখাের মহাজন। প্রতিদিন বস্তা বস্তা ধান লঞ্চে, নৌকায় নিয়ে যায়। অথচ দাম ভাল দেয় না চাষিদের। ওজন কমিয়ে লেখে, আর চাষিরা তাে মূর্খ বোঝে না।

এখন আপনি কি করবেন? কোথাও কি যাবেন ? বলে চন্দ্র।
-কেন বলুন তাে?
-না ও কিছু নয়।
-আমি যাব মােল্লাল গ্রামে, আপনি যাবেন?
-আমি যাব, একটা বাচ্চার অসুখ চলুন বেরিয়ে পড়ি। সেই যা এসেছি আর
যাওয়া হয়নি। ওরা দু'জনে চলতে লাগল।
চন্দ্র বলে একটা কথা বলব ? মারিয়া কিছুক্ষণ থামল। চন্দ্রের মুখটা নিরীক্ষণ করার পর বলল -বলুন!

আপনি তাে আমাদের দেশেরই মেয়ে না?
-হ্যাঁ, আমি এই দেশের মেয়ে আর আমি হিন্দু মেয়ে।
— আপনাকে দেখে বাঙালীই মনে হয়, যদিও আপনার শরীরের রঙ লাল আগুনের মতাে। কিন্তু চুল ঠিক কালাে মেঘের মতাে।